তুমি নিজেই কিন্তু নিজের হতাশাকে সাফল্যে রূপান্তর করতে পার, দরকার কেবল একটু নিজের ওপরে নিয়ন্ত্রণ আর আত্মবিশ্বাস।
.
একটি ভিডিও বাঁচাতে পারে লক্ষ প্রাণ
কিছুদিন আগে কানাডায় একটা স্টুডেন্ট কনফারেন্সে গিয়েছিলাম। সেখানে বক্তৃতা দিয়েছিল এক ফ্রেঞ্চ ভদ্রলোক। হাস্যোচ্ছল মানুষ, তার সাথে একটা সেলফি তোলার সুযোগও হয়েছিল। সে হলো আমরা যাকে বলি ইন্টারনেট সেলিব্রেটি। সেসব অনেক দিন আগের কথা। এইতো সেদিন একটা ভিডিও ইন্টানেটে খুব বেশি ভাইরাল হলো, সোমালিয়াকে নিয়ে ভিডিও। দেখেই মনে হলো, আরে! এ তো জেরোম জার! খুব আগ্রহী হয়ে শুরু করলাম ভিডিওটি দেখা। দেখে মনে মনে তাকে একটা স্যালুট জানালাম, অসাধারণ কাজ করেছেন তিনি! সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহায়তায় যে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলা যায়, সেকথা এখন আর পুরনো নয়। কিন্তু জেরোম জার এবং আরো অনেকেই এই মাধ্যমটির সহায়তাকে নিয়ে গেছেন একেবারে অন্য এক মাত্রায়। জেরোমের গল্প বলি :
১. সোমালিয়ার কান্না
সোমালিয়ার নাম আমরা শুনেছি দুর্ভিক্ষপীড়িত আফ্রিকান একটি দেশ হিসেবে, গৃহযুদ্ধ আর অপ-রাজনীতির চাপে যে দেশটির মানুষগুলোর জীবন দুর্বিষহ। এ মুহূর্তে সেখানে একটা দুর্ভিক্ষ চলছে, আর দেশটার অর্ধেকের বেশি মানুষ সেখানে না খেয়ে আছে। ভয়ানক অবস্থা। কিছুদিন আগে একটা ছোট বাচ্চা পানির অভাবে মরে গেছে, আর এই খবরটা জেরোমের কানে এসেছিল। একজন সাদা মনের মানুষ জেরোম তখন গুগল করতে শুরু করলো, কীভাবে এমন ভয়ানক দুর্ভিক্ষের হাত থেকে বাঁচানো যায় সোমালিয়ার নিরীহ মানুষগুলোকে? অবাক হয়ে জেরোম আবিষ্কার করল যে, সাহায্য তো অনেক দূরের কথা, দেশটিতে বিমানব্যবস্থা বলতে মাত্র একটি এয়ারলাইন্স! Turkish Airlines নামে সেই এয়ারলাইন্সকে কেন্দ্র করে তাই জেরোম জার প্ল্যান করলেন সোমালিয়াকে বাঁচানোর।
বিশ্ব কাঁপানো এক ভিডিওঃ যেই ভাবা সেই কাজ, জেরোম তখনই এম ভিডিও বানিয়ে ফেললো। ভিডিওর শেষে দিল একটা হ্যাঁশট্যাগ, অছন ব্যাপার, এই এক হ্যাঁশট্যাগই বদলে দিল অনেক কিছু। তার পাশাপানি অন্যান্য সেলিব্রিটিরাও শেয়ার দিল এই ভিডিওটি, তারাও শুরু করল এই হ্যাঁশট্যাগ দিয়ে সোমালিয়াকে বাঁচানোর আকুতি।
২. রাজি হলো সবাই
অবাক কান্ড, ব্যাপারটা টার্কিশ এয়ারলাইন্সের কান পর্যন্ত গেল। তারা জেরোম জারের সাথে কথা বলল, এবং খুশিমনে রাজি হলো তাদের একটি কার্গো বিমান যেটা সোমালিয়াতে যায়, পুরোপুরি কার্গো ফ্রি করে জেবোমদের দিতে। কার্গোর ধারণক্ষমতা ছিল ৬০ টন। পুরোপুরি ফাঁকা এই কার্গো বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী আর খাবার নিয়ে ভর্তি করতে আবার দরকার প্রচুর টাকা। সেগুলো কোথায় পাওয়া যাবে?
৩. জেরোমের আরেক উদ্যোগ
জেরোম বানিয়ে ফেলল আরেকটা ভিডিও। এখানে সে পুরো বিশ্বকে দেখালো যে, ৬০ টন কার্গো ফাঁকা রয়েছে, এখন মানুষের সাহায্যই পারে এই কার্গোটি ভর্তি করতে। সে এবং তার এই Campaign এর সবাই মিলে তাই শুরু করল Crowd funding, যেখান থেকে টাকা উঠলেই কার্গোর জন্যে সবকিছু কেনা যাবে।
৪. সাফল্য
তাদের লক্ষ্য ছিল এক মিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল গঠন এবং পনেরো দিনে যেন সেটি তুলে ফেলা যায়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, তিন দিনেই জেরোম ও তার ক্যাম্পেইন তুলে ফেলল দু মিলিয়ন ডলার বা ১৬ কোটি টাকা! পুরো টাকাটা দিয়ে প্রচুর রিলিফ কেনা হলো, শুকনো খাবার কেনা হলো। এক কার্গোর আইডিয়াতেই দুর্ভিক্ষের কষ্টের অনেকটা উপশম হলো সোমালিয়ার দরিদ্র সেসব মানুষের।
আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি এখনো ফোনে আমার সাথে জেরোমের সেই সেলফি দেখছি, আর জেরোম সেই ফোন আর একটা ক্যামেরার সাহায্যে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলছে! অবাক হতেই হয়!
আমরা সবাই হয়তো জেরোমের মতো ইন্টারনেট সেলিব্রেটি নই। আমাদের ফেসবুক পোস্ট, ইন্সটাগ্রামের ছবি হয়তো তেমন শেয়ার হয় না। কিন্তু সবাই মিলে যদি এগিয়ে আসি যেকোনো সামাজিক সমস্যার পরিবর্তনে, তাহলেই কিন্তু বিপ্লব আনতে পারি আমরাও, সেটিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্যেই!
.
দোষটা কি আসলে তেলাপোকার?
গুগলের নতুন সিইও সুন্দর পিচাই। অসম্ভব গুণি এই মানুষটির একটি গল্প খুব জনপ্রিয় হয়েছিল কিছুদিন আগে। গল্পটি বলতে গেলে অনেকের ধারণাই পালটে দিয়েছিল নিজের জীবন সম্পর্কে! অথচ গল্পটি ছিল ছোট একটি তেলাপোকাকে নিয়ে।
সুন্দর পিচাইয়ের অভ্যেস প্রতিদিন সকালে একটা নির্দিষ্ট রেস্টুরেন্টে বসে সকালের নাস্তা করা। যেখানে বসে কফির কাপটা হাতে নিয়ে। চারপাশের মানুষগুলোকে পর্যবেক্ষণ করতে তার বড় ভালো লাগে। কোনো এক সকালে পিচাই যথারীতি সেই রেস্টুরেন্টে এসে বসেছেন। তার ঠিক পাশের টেবিলেই দুজন ভদ্রমহিলা বসেছেন। সকাল বেলা, রেস্টুরেন্ট বেশ জমজমাট।
এমন সময় হলো কি, কোত্থেকে একটা তেলাপোকা উড়ে এসে ঠিক সুন্দর পিচাইয়ের পাশের টেবিল, মানে ওই ভদ্রমহিলাদের টেবিলে বসল। ভদ্রমহিলা দুজন তো রীতিমতো লঙ্কাকান্ড বাধিয়ে ফেললেন। চিৎকার চেঁচামেচি করে সে এক ভয়ানক অবস্থা! ছোট্ট তেলাপোকা, সে এই শোরগোলের মধ্যে ভয় পেয়ে দিল এক উড়াল। পাশ দিয়ে যাচ্ছিল এক ওয়েটার। হাত ভর্তি গরম খাবার। একটুখানি এদিক সেদিক হলেই খাবারসহ পড়ে যেতে হবে তাকে। তেলাপোকা উড়ে এসে সেই ওয়েটারটির কাঁধে এসেই বসল। ততক্ষণে ভদ্রমহিলাদ্বয়ের চিৎকারে পুরো রেস্টুরেন্টের নজর ওই তেলাপোকার দিকে। সবাই রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে ওয়েটার কী করে দেখার জন্যে।