আব্বু সুন্দর করে বললেন, বাবা, আমাদের গ্রামে হালচাষ করার লোকের একটু কমতি দেখছি। তুমি না হয় যাও, হালচাষ কর? পড়ালেখায় তো মনে হচ্ছে হবে না তোমার!
আম্মু সাধারণত এসবে আমার পক্ষ নেয়, এবার দেখি আম্মুও আব্বুর সাথেই দুকথা শুনিয়ে দিল! সবমিলিয়ে বিশাল হতাশাজনক ব্যাপার। না, ধরা খেয়েছি সেজন্যে নয়, আসলেই কোথাও চান্স না পেলে তো মহা বিপদ! এই যে একটা ধাক্কা খেলাম, এই ধাক্কাটা পরে গিয়ে আমার অনেক কাজে লেগেছে।
সত্যি বলতে কী, এমন হতাশার পরে অনেকেই হার মানে, হাল ছেড়ে দেয়। আমি দেইনি। সব পরীক্ষায় গড়ে বিশ পেতে পেতেই একটা সময় বুঝতে পেরেছি কীভাবে ভালো করতে হবে, শেষমেষ তো আইবিএর মতো ভালো একটা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েই গেলাম!
ভর্তি যোদ্ধাদের উদ্দেশে তাই বলছি, পরিশ্রম করলে সাফল্য আসবেই। ভর্তি পরীক্ষার সময়টা সবার জন্যই খুব কঠিন যায়, তাই বলে হাল ছেড়ে দিও না। আমি যদি একশতে বিশ পেয়ে ভালো কোথাও সুযোগ পেয়ে যেতে পারি, তুমি কেন নও?
অনেককেই দেখি হতাশ হয়ে যায় তাঁদের এস,এস,সি বা এইচ,এস,সির রেজাল্ট ভালো না হলে। মজার ব্যাপার কী জানো? রেজাল্ট খারাপ নিয়েও কিন্তু অনেকে চলে যায় হার্ভার্ডের মতো প্রতিষ্ঠানে! চোখ রগড়ে ওঠার মতো কথা, তাই না? সত্যিটা হলো, একাডেমিক এসব হতাশা ভুলে নিজেকে বিশ্বের জন্যে প্রস্তুত করলে বড় মঞ্চে আরো বড় সাফল্য আসবে তোমার। সে সাফল্যের স্বাদ বড় মধুর!
.
এবার মানসিক অশান্তিকে জানাও বিদায়
বেশ কিছুদিন আগের কথা। 10 Minute School এর তখন কোনো অফিস ছিল না। একটা ফেসবুক গ্রুপ ছিল, সেখানে সব মেম্বাররা ছিল। ওই গ্রুপে কে কোন কাজ করবে, কি কি কাজ হবে সবকিছুর হিসেব রাখা হতো। যখন যার কোন এনাউন্সমেন্ট দেয়া লাগবে, সে তখন ফেসবুকে লাইভে গিয়ে সবকিছু বুঝিয়ে দিত। এরকমই একটা লাইভ সেশনে একদিন শামির মোন্ত জিদ বিভিন্ন স্কিল শেখাচ্ছিল, সবাই গোগ্রাসে গিলছিল ওর লেসনগুলো।
লাইভ ভিডিওর একেবারে শেষদিকে ছিল আমাদের মেন্টাল হেলথ নিয়ে ডিসকাশন। এখানেও কথা বলছিল বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের হতাশার কারণগুলো। তাদের Anger, Frustration, Stress. এসব নিয়ে কথা বলতে বলতে দেখা গেল যে, কমবেশি সবারই এ সমস্যাগুলো রয়েছে।
সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হলো, এই মানসিক সমস্যাগুলো চলে যায় না। আমরা যতই ভুলে থাকতে চাই, এরা আরো তত বেশি জেঁকে বসে। একটা সময় পারমানেন্টলি এই সমস্যাগুলো আমাদের ভেতরে গেঁথে যায়। ডিপ্রেসড জিম্বি হয়ে ঘুরে বেড়ায় তরুণ প্রজন্ম।
আমরা চিন্তা করে দেখলাম, এর একটা সমাধান দরকার। যেই ভাবা সেই কাজ, শামির বুদ্ধি দিল, এখনই আমরা একটা মেসেঞ্জার গ্রুপ থ্রেড খুলে ফেলি না কেন! এই থ্রেডে আমরা প্রতিদিন তিনটা করে কাজ বা ঘটনার নাম বলব, যার জন্যে আমরা জীবনের কাছে কৃতজ্ঞ। ব্যাপারটা শুনতে অবাক লাগলেও, ধীরে ধীরে দেখা গেল আমাদের সবার জীবনেই তিনটার অনেক বেশি কারণ রয়েছে বাকি জীবনভর কৃতজ্ঞ থাকার!
এতে যে ব্যাপারটা হলো, এই সুখের অভিজ্ঞতা, এই কৃতজ্ঞতার সন্ধান করতে গিয়ে সবার মনটাই ভালো হয়ে যায় আর তাতে এই যে মানসিক সমস্যাগুলো, ডিপ্রেশন বা স্ট্রেস আর হানা দিতে পারছে না কাউকেই! রাতারাতি ডিপ্রেসড প্রজন্ম হয়ে উঠল প্রাণোচ্ছল এক প্রজন্ম, আনন্দের আর শেষ নেই!
তুমি আর তোমার বন্ধুদের মাঝেও কি এমন ডিপ্রেশন আর অন্যান্য মানসিক সমস্যা বিরাজ করছে? তোমারও কি মনে হচ্ছে এই Anxiety বা। ফ্রাস্ট্রেশন এর সাথে চলতে বড় কষ্ট হচ্ছে? তাহলে তুমিও তোমার বন্ধুদের নিয়ে শুরু করে দিতে পার এই প্রক্রিয়াটি, হাসি ফুটবেই তোমাদের মুখে! এছাড়াও আরো বেশ কিছু কাজ করতে পার এসব মানসিক সমস্যা দূর করতে, যেমন :
১. নিয়ন্ত্রিত জীবন :
একটি সুন্দর নিয়ন্ত্রিত জীবন থাকলে কিন্তু হতাশা ঘিরে ধরতে পারে না। নিজের জীবনের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকলে কাজ কর্ম করেই আসলে দিন। কেটে যাবে, ডিপ্রেশন পাত্তাই পাবে না!
২. অনিদ্রাকে না বলো :
এটি একটি পরীক্ষিত ব্যাপার যে, বেশি রাত জাগলে সেটি মনের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে, জন্ম নেয় বিভিন্ন মানসিক সমস্যা। তাই রাত জাগা নিশাচর পাখি না হয়ে ঠিক সময়ে ঘুমিয়ে গেলে মন সুস্থ থাকবে, সুস্থ থাকবে দেহ। ফলশ্রুতিতে ফ্রাস্ট্রেশন দুরেই থাকবে!
৩. নৈরাশ্যবাদী হবে না
একটা গ্লাসের অর্ধেক পানি ভর্তি। গ্লাসটি সম্পর্কে একজন আশাবাদীর বক্তব্য হবে যে, গ্লাসটি অর্ধেক ভর্তি। আর একজন নৈরাশ্যবাদী বলবে, গ্লাসের অর্ধেক খালি। তুমি অবশ্যই নৈরাশ্যবাদী হবে না। কারণ নিরাশা একবার যদি নিজেকে ভর করে তাহলে অন্যান্য মানসিক সমস্যাগুলো এসে জুড়বে সাথে সাথে।
৪. নিজেকে ব্যস্ত রাখো
Procrastination বা অকারণে সময় নষ্ট করাটা এই প্রজন্মের জন্যে ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো কাজ না করে সময় নষ্ট করার পরপরই একটা সময় নিজের মধ্যে হতাশা কাজ করে। মনে হয় জীবন নিয়ে কী করলাম আমি? এখান থেকেই নানান মানসিক সমস্যা এসে যোগ দেয়। নিজেকে সবসময় কিছু না কিছু করে ব্যস্ত রাখতে হয় তবেই না রক্ষা চি এসব সমস্যা থেকে। নতুন কিছু করার চেষ্টা কর, নতুন নতুন আইডি জন্ম দিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখো।