তিনি দূরদর্শিতা দেখালেন, তাই প্রতিশোধ, রাগ কিছুই দেখালেন না। উল্টো নিজে প্রেসিডেন্ট হয়ে ২৭ বছর আগে তাকে কারাবন্দী করা F.w. De klerk কে নিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট বানালেন গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়ে। সকল শত্রুকে ক্ষমা করে দিলেন তিনি, এমন মহানুভবতা পৃথিবীর ইতিহাসে বড়ই বিরল।
ম্যান্ডেলা যখন প্রথম প্রেসিডেন্ট হন, দক্ষিণ আফ্রিকা তখন তুমুল বিপর্যস্ত একটি দেশ। বর্ণবাদ ছড়িয়ে গেছে সবদিকে, প্রকাশ্যে খুন-ধর্ষণ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। সবাই ধরেই নিয়েছিল, একটা রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ কিংবা আর্মিদের ক্ষমতা নেয়া ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে কখনোই দক্ষিণ আফ্রিকার উন্নয়ন সম্ভব নয়। এখানে ম্যান্ডেলা আবারও বিস্ময় দেখালেন। দেশটি থেকে বর্ণবাদ দূর করলেন কোনোরকম রক্তক্ষয় ছাড়াই। শান্তির বাণী ছড়িয়ে ধ্বংসপ্রায় একটা দেশকে উন্নত করার দিকে নিয়ে গেলেন মাদিবা। আর প্রমাণ করলেন, Positive Energy থাকলে সবই সম্ভব। নিজের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব থাকলে অনেক কিছুই করে ফেলা যায়। এ যেন ইচ্ছে থাকলে উপায় হয় প্রবাদটির আফ্রিকান প্রমাণ!
বন্ধুদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হয়, মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে যায়, এটি অনেক সময় কদর্য একটা আকারও নিয়ে নেয়। অথচ ম্যান্ডেলা তাকে ২৭ বছর জেলে বন্দী করা মানুষটার সাথে মিলে দেশ চালিয়েছেন! এখান থেকে তোমাদের অনুপ্রেরণা নেয়া উচিত, যে ম্যান্ডেলা পারলে তুমিও পারবে।
জীবনে সুখী থাকার খুব দরকারি একটা টিপস হলো Negative Energy কে নিজের ভেতর থেকে বের করে দেয়া। জীবন থেকে সব রকম নেতিবাচক চিন্তা চলে গেলেই সুখী, সুন্দর জীবন হবে সবারই।
.
আমার ভর্তি যুদ্ধের গল্প
আমার ভর্তিযুদ্ধের শুরু টা হয় একটা বড় ধাক্কার মধ্য দিয়ে। সে এমন এক কাহিনি, ভাবলে এখনো অবাক লাগে!
খুলেই বলি। সবে এইচ,এস,সি দিয়েছি। পরীক্ষার পরে যা হয় আর কী, মনের মধ্যে বেশ ফুরফুরে একটা ব্যাপার হচ্ছে। এর মধ্যেই আবু আম্মু ধরে বেঁধে একটা ভর্তি কোচিংয়ে ভর্তি করে দিলেন। বেশ নামজাদা কোচিং, একগাদা স্টুডেন্ট। সবার মুখ ভার, সবাই এমন সিরিয়াস চোখে তাকিয়ে আছে যেন প্রথম দিনই তাদের ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে! আমার উলটো এসব দেখে বেশ হাসিই লাগল, মনে হলো এরা অকারণেই এত সিরিয়াস, এসব কদিন পরেই কেটে যাবে!
প্রথম ক্লাস। বোরিং লেকচার হচ্ছিল ভেক্টর নিয়ে। এই চিহ্ন ওই চিহ্ন দেখতে দেখতে মাথাটা একটু ধরে এসেছিল। একটু পরেই দেখি, সেই ইন্টারনেট মিমগুলোর মতোই ফাঁকা বোর্ড ভরে উঠেছে একগাদা আঁকিঝুঁকিতে! মাথায় হাত আমার, কিছুই তো বুঝলাম না! একটু পর আবার। ভাইয়া বলে বসলো, পরের ক্লাসে পরীক্ষা নেয়া হবে। আমি আগাগোড়াই ফাঁকিবাজ মানুষ, মনে করলাম এমনিই হয়তো ভয় দেখাচ্ছেন ভাইয়া।
পরের ক্লাস। ভাইয়া এসেই বললেন পরীক্ষা নেবেন। আমার তো মাথায় বাজ পড়ল, প্রিপারেশনও তো নেইনি সেরকম! যাহোক, পাশে দেখি একজন দুটো ক্যালকুলেটর বের করলো। আমি দেখে অবাক, একটা ক্যালকুলেটর দিয়েই তো হয়ে যায়, দুটো কেন দরকার হবে? মুচকি হেসে ভাবলাম, এই ছেলে পাক্কা নার্ড মনে হয়! ওমনি দেখি পাশের জনও দুটো ক্যালকুলেটর বের করলো! সেটা আবার যে সে ক্যালকুলেটর নয, ES 991 লেখা শক্তিশালী একটা ক্যালকুলেটর। আর আমি? একটাই ক্যালকুলেটর, সেটা আবার MS 100, নিজেকে মনে হলো Nokia 1100 ফোন নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে এসেছি আইফোনের সাথে!
পরীক্ষার প্রশ্ন বেশ কঠিন ছিল। অন্তত আমার কাছে আর কী! প্রিন্স নেইনি, আর জীবন তো রূপকথা না, তাই আমি এই পরীক্ষায় এক বিশের বেশি আর তুলতে পারলাম না। শুধু এই পরীক্ষাই না পায়। অনেকগুলো পরীক্ষায় বিশ পার হচ্ছিলই না! এখানে একটা সমস্যা ছিল ৮ পরীক্ষার নম্বরগুলো বাসায় টেক্সট করা হয়। আমি বেঁচে গিয়েছিলাম কারণ। বাসার নম্বর দেয়া ছিল আম্মুর, আর আম্মু কখনো টেক্সট চেক করেন না। কিন্তু ওই যে, চোরের দশ দিন গৃহস্থের একদিন! একদিন ফেঁসে গেলাম। আমিও। আব্বু আম্মুর ফোন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছিলেন, হুট করে তার চোখে পড়ল একগাদা মেসেজ। তিনি বলে উঠলেন, আরে! এতগুলো টেক্সট এগুলো কিসের নম্বর!
ডাক পড়ল আমার। তিনি তার সুপুত্রকে ডেকে বললেন, বাবা, এ কী অবস্থা তোমার নম্বরের?
আমি এযাত্রায়ও বেঁচে গেলাম এটা বলে, যে পরীক্ষাগুলো সব হয় বিশ নম্বরে! ভাগ্যক্রমে ওই মেসেজগুলোতে মোট নম্বর বলা হতো না, আর এই সুযোগে আরো একটাবার রক্ষা পেয়ে গেলাম!
বিড়ালেরও নয়টা জীবন থাকে, আমার ভাগ্য কী আর সবসময় ভালো হবে? হয়ও নি। সর্বনাশটা হলো অন্য আরেকদিন। আমার এক মহা ট্যালেন্টেড বন্ধু আমার সাথেই নিয়মিত পরীক্ষা দিতে যেত। তো একদিন আমাদের গাড়ি আসতে দেরি হয়েছে, আমার বন্ধুটি বাসায় এসে বসেছে। অমনি আব্বুর আক্রমণ, পড়ালেখা এবং অন্য সব নিয়ে। কথায় কথায় তিনি বললেন, বাবা, তোমার পরীক্ষার নম্বর কেমন আসছে?
বন্ধুটি ইনিয়ে বিনিয়ে বলল, যে তার পরীক্ষা ভালো হচ্ছে না, নম্বর কম আসছে। এই যেমন গত পরীক্ষাতে মাত্র ৫৭ পেয়েছে সে!
আন্ধু আমার দিকে, আমি আব্বুর দিকে- এমন এক অবস্থা হয়ে গেল। ভারতীয় বাংলা সিরিয়ালগুলোর মতোই! বাংলায় বজ্রাহত বলে একটা কথা আছে, আমার অবস্থা তখন তেমনই। আব্বু কিছু বললেন না। সন্ধ্যায় কোচিং থেকে ফিরলাম, ফিরে এসে শুরু হলো আমার উপর ঝাঁড়ির রোলার কোস্টার চালানো।