আমাদের জীবনটাও অনেকটা এরকমই। জীবনে আমরা দুই ধরনের সাফল্যের পেছনে ছুটতে পারি। দ্রুত এবং ক্ষণিকের বা শর্ট টার্ম সাফল্য, আর বিলম্বিত বা লং টার্ম সাফল্য। শর্ট টার্মে তুমি বেশ সফল হয়ে যেতে পার, কিন্তু তোমার এই সাফল্য বেশিদিন থাকবে না। অন্যদিকে লং টার্ম হতে অনেক সময় নিলেও, দীর্ঘস্থায়ী সাফল্য নিশ্চিত! তাই নিজেকে গোড়া থেকে তৈরি কর, নিজের বেসিক ভালো করে তারপর নিজেই এগিয়ে যেতে থাকো সাফল্যের দিকে।
২. ছোট ছোট ধাপে এগিয়ে যাও
চীনা বাঁশগুলো কিন্তু রাতারাতি বিশাল বড় হয়ে যায়নি। তারা সময় নিয়েছে, এবং একটা সময়ে এসে এগুলো বড় হয়েছে। টানা ৫ বছর ধরে ছোট ছোট ধাপে এরা নিজেদের মূলের উন্নতি করেছে, সেগুলোকে ধারণক্ষম করেছে। তারপরই না এদের সগর্ব আত্মপ্রকাশ!
আমাদের জীবনটাও এমনই। তুমি চাইলেই হুট করে বিশাল কোনো সাফল্য পেয়ে যেতে পার না। সময় লাগবে, শ্রম আর ভাগ্যের সহায়তাও লাগবে। তাই তুমি যে কাজে ভালো, যা নিয়ে তোমার আগ্রহ আছে; সেটি তুমি তোমার মতো করে ছোট ছোট ধাপে করতে থাকো, উন্নত হও। একটা সময়ে দেখবে তুমিও সেই চীনা বাঁশের মতো বিশাল মহীরুহ হয়ে উঠছে।
৩. অধ্যবসায়, ধৈর্য, বিশ্বাস
চীনা বাঁশ যখন ৪ বছরেও হচ্ছিল না, তখন অনেকেই হতাশ হয়ে আর যত্ন আত্তি করেনি বাঁশের। তাদের মনে বিশ্বাস ছিল না। তারা ভেবেছিল এই গাছ মরে গেছে। কিন্তু আর একটা বছর পরে যে একটা মহীরুহ জন্মাবে সেই ছোট্ট জায়গাটিতে, সে খবর তারা জানত না। যারা কঠোর অধ্যবসায়ের সাথে দিনের পর দিন গাছের যত্ন নিয়েছে, ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেছে-তারাই বিশাল বাঁশের মালিক হতে পেরেছে।
আমাদের জীবনেও এই তিনটি গুণের খুব বেশি দরকার। তুমি জীবনে সফলতার মুখ সহজে নাও দেখতে পার, হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে থাকতে পার। কিন্তু তাতে যদি হাল ছেড়ে দাও তাহলে কোনো লাভ নেই। অধ্যবসায় দেখাও, লেগে থাকো যে কাজটি ভালোবাস তার পেছনে। একটু ধৈর্য ধরো, নিজের উপর বিশ্বাস রাখো- সাফল্য আসবেই!
চীনা বাঁশের গল্পটি শুধু গল্প নয়, জীবন বদলে দেয়ার মত একটি অনুপ্রেরণা এটি। আশা করছি সবাই মিলে চেষ্টা করবে সুন্দর ও সফল জীবন গড়ার!
.
মাদিবা থেকে আমাদের অনুপ্রেরণা
দক্ষিণ আফ্রিকার একজন কিংবদন্তির নাম শোনেনি এ পৃথিবীতে এমন মানুষের দেখা পাওয়া ভার। অনেকে তাকে চেনে মাদিবা হিসেবে, অনেকের কাছে তিনি নিপীড়িতদের মুক্তির দূত। শত বর্ণবাদ দূর করে এই মানুষটি এগিয়ে গিয়েছিলেন মুক্তির পথে, হয়েছিল একটি দেশের জাতির পিতা। শুধু তাই নয়, পুরো বিশ্বে অনুপ্রেরণার আরেক নাম তিনি। নাম তার নেলসন ম্যান্ডেলা।
যদি প্রশ্ন করা হয় ত্যাগ ও তিতিক্ষার চরমতম প্রমাণ দিয়ে কে নিজের আদর্শকে বাস্তবায়ন করেছেন? উত্তর আসবে, নেলসন ম্যান্ডেলা। কিছুদিন আগে প্রয়াত কিংবদন্তীতুল্য এই মানুষটি পুরো বিশ্বের কাছে পরিচিত তার সংগ্রাম আর ক্ষমাশীলতার জন্যে। তার গল্প শুনে আসি তাহলে!
একজন বিপ্লবীর উত্থান
তরুণ ম্যান্ডেলার মনে সবসময় বিরাজ করত একটি স্বপ্নবর্ণবাদহীন, শান্তি পূর্ণ একটি দক্ষিণ আফ্রিকার। সে লক্ষ্যে রাজনীতিতে প্রবেশ করেছিলেন তিনি। সুষ্ঠু আর সুন্দর এক শাসনব্যবস্থার স্বপ্ন ছিল তার মনে। বর্ণ যাই হোক, সবার অধিকার সমান–এই লক্ষ্যে লড়াইটা তিনি শুরু করেছিলেন তখন থেকেই। জনপ্রিয়তার শুরু টা সেখানেই। পুরো দক্ষিণ আফ্রিকা যখন সম অধিকারের জন্যে গনগনে কড়াই হয়ে উঠেছিলো, সেসময়ে ম্যান্ডেলাই ছিলেন বিপ্লবের মধ্যমণি।
কারারুদ্ধ
ম্যান্ডেলার এই অবাক উত্থান শাসকদের মোটেও পছন্দ হয়নি। জনতার নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে তারা ক্রমশ নিজের শত্রু ভাবতে শুরু করেছিল। আর শত্রুর শেষ রাখতে নেই, তাই হত্যাচেষ্টাও হয় তার উপর। যদিও মানুষের ভালোবাসাই বারবার বাঁচিয়ে দেয় তাকে। কিন্তু একটা সময় সরকার তাকে ধরে ফেলে। ম্যান্ডেলার বহু বছরের জেল হয়। তৎকালীন সরকার প্রধান FW. De klerk এর দেয়া কারাবন্দিত্ব মেনে নিতে হয় মাদিবাকে।
জেলজীবন
কারাগারের জীবনটা খুব সুখের ছিল না ম্যান্ডেলার জন্যে। অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবন, নিজের প্রিয় দেশটার দুরবস্থা মেনে নিতে বড় বেশি কষ্ট হচ্ছিল তার। পরিবারকে রেখে থাকাটা কষ্টকর, দেশের মানুষগুলোর দুঃখে নিজেও দুঃখিত হতেন তিনি। কিন্তু আগুনের দিন শেষ হচ্ছিল না। জেলজীবনে এই মানুষটা যেই অধ্যবসায় আর দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন, তা সত্যিই অনন্য।
মুক্তি
অবশেষে মুক্তির দিন ঘনিয়ে এলো। তুমুল বিপ্লবের মুখে নেলসন ম্যান্ডেলা মুক্তি পেলেন টানা ২৭ বছর কারাবন্দী থাকার পর। তারপরের গল্পটা বিজয়ের। যে ম্যান্ডেলাকে দুই যুগেরও বেশি জেলে বন্দী থাকতে হয়েছে, সেই মাদিবা ধীরে ধীরে দেশের প্রধান হয়ে উঠলেন! প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা, আর শপথ নিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সকল সমস্যার সমাধান তিনি করবেনই, শান্তিপূর্ণভাবে! ধৈর্যশীলতার অনন্য। নিদর্শন দেখালেন মাদিবা, বিশ্ব অবাক হয়ে দেখল তার কীর্তি!
এ কেমন ক্ষমা?
সাধারণ কোনো নেতা নির্দোষ হয়েও ২৭ বছর জেল খেটে আসলে তাকে যে কারাবন্দী করেছে তার সঙ্গ ত্যাগ করে, প্রতিশোধ নেয় বা নিদেনপক্ষে তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ম্যান্ডেলা যে অস্বাভাবিক রকম উদার একজন নেতা!