গঠনমূলক সমালোচনার কথাতেই আসা যাক। মনে করো তুমি একটা ভিডিও বানালে। খুব আগ্রহ করে বানিয়েছো ভিডিওটা, মজার মজার অনেক কনটেন্ট সেখানে। তোমার প্রথম ভিডিও, তুমি খুব উত্তেজিত মানুষের রিএকশন নিয়ে। ভেতরে ভেতরে হয়তো একটু টেনশনেও আছো, কী হয় কী হয় টাইপ অবস্থা।
এরকম সময়ে তোমার কোন পরিচিত মানুষ কমেন্ট করলো, যে ভিডিও বেশ ভালো লেগেছে, তবে শেষের দিকের কনটেন্টের সাউন্ড মিক্সিং ভালো করা দরকার ছিল। তুমি কিন্তু এই একটা কমেন্ট খুব মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করবে। এবং একটু পর আবিষ্কার করবে, সে তো ঠিক বলেছে! এই আবিষ্কারের পর তুমি শুরু করবে ভাবা, কীভাবে এগোলে পরের ভিডিওটা আরো ভালো হবে, কোন পথে এগোতে হবে। তুমি পাবে উদ্দীপনা। সাথে ওই মানুষটির সাথে সম্পর্ক ভালো হবে তোমার, পরের ভিডিওতেও অপেক্ষা করবে তার আরেকটা সমালোচনার।
এই যে এই সমালোচনার অংশটা? এটাই বলতে গেলে গঠনমূলক সমালোচনা। এই সমালোচনা করতে হলে কাজটা পুরোপুরি দেখতে হয়। তারপরে নিজের মাথা খাঁটিয়ে সমালোচনা করতে হয়। স্বভাবতই, গঠনমূলক সমালোচকদের সংখ্যা তাই খুব বেশি না।
ধ্বংসাত্বক সমালোচকের ব্যাপারটা আবার পুরোপুরি উল্টো। এই মহামানবদের বিন্দুমাত্র মাথা খাটাতে হয় না, তেনারা একাই একশো। তাঁদের কিছু আলাদা শব্দচয়ন আছে, সেগুলোর কোন কোনটিকে গালি বললেও ভুল হবে না। এই মানুষগুলো হয়তো কাজটা পুরোপুরি দেখেও না, নাম দেখেই উটকো একটা কথা বলে রেখে দেয়।
ভিডিওর গল্পে ফিরে যাই। তোমার অনেক সাধনার ভিডিওতে যদি কেউ সুন্দর করে দুই তিন বণের কিছু গালি দিয়ে বলে যে যাচ্ছেতাই ভিডিও হয়েছে, তুমি অনেক জঘন্য ভিডিও বানাও- তাহলে দুইটা বিষয় হবে। ওই সমালোচকদের তো মানুষ খারাপ ভাববেই, তাতে তাঁদের যায় আসার কথা না খুব একটা। কিন্তু তোমার উদ্দীপনায় বড় একটা বাঁধ পড়বে। মনে হবে, আসলেই মনে হয় আমি ভিডিও বানাতে পারি না, কী হবে আমার? হয়তো তুমি আর কখনোই ভিডিও বানাবে না, সে আগ্রহ হারিয়েছে কবেই!
এই যে এই সামান্য কিছু ধ্বংসাত্বক কথা- এগুলো বলে নিজের অজান্তেই Negativity ছড়িয়ে যাচ্ছে সবখানে, সব জায়গায়। এসব থেকে বের হতে হবে। কারণ এই কথাগুলোই হতে পারে কোন একজনের জন্যে হতাশার মূল! একটা বিষয় সত্যি, যে গঠনমূলক সমালোচনা করতে মাথাটা খাটাতে হয়। একটু বুদ্ধিমান হবার প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে ধ্বংসাত্বক সমালোচনা করা মানুষগুলোর মাথা তো খাটাতে হয়ই না, তারা আদতে কতোটা বুদ্ধি রাখে, এই নিয়ে প্রশ্নটা থেকেই যায়!
এখন তুমিই বলো, গঠনমূলক সমালোচনা করে বুদ্ধিমানের দলে নিজেকে রাখবে, নাকি ভীড়বে নির্বোধ সমালোচকদের মধ্যে? ১৩৮
.
নিজেকে জানা, Elevator Pitch এবং আমাদের অবস্থান!
আমাদের জন্মের পর থেকে এখনও পর্যন্ত আমরা কিন্তু নিজেদেরকে নিয়েই আছি। অথচ, যদি কখনও কেউ আমাদেরকে নিজেকে বর্ণনা করে এমন তিনটা শব্দ জিজ্ঞেস করে তাহলে আমাদের ঘাম বেরিয়ে যায়। একটা ঘটনা কল্পনা করা যাক।
ভাবো তো, একবার লিফটে তোমার সাথে বিল গেটস উঠলেন!
বিল গেটসের গন্তব্য ভবনের দশম তলায়; আর তোমার কাজ তৃতীয় তলায়, বিল গেটসকে লিফটে রেখে সম্মান ও ভদ্রতার খাতিরে হলেও তোমার থেকে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
তুমি আর বিল গেটস; মাঝখানে হাতে মাত্র ৩০ সেকেন্ড সময়। পুরো ব্যাপারটা তোমার হাতে! তুমি এ সংক্ষিপ্ত সময়টাকে কেবলমাত্র বিল গেটসের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে কিংবা একটা সেলফি তুলেই শেষ করে ফেলতে পারো। এতে তোমার বা বিল গেটসের কারও কি কোনও লাভ হলো? বড়জোর, তুমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু লাইক/কমেন্ট পাবে।
অথচ, এই ৩০ সেকেন্ডে একটু কৌশল অবলম্বন করলেই হয়তো তুমি বিল গেটসের সাথে কাজ করার মতো বিশাল একটা সুযোগও পেয়ে যেতে পারতে। এই কৌশলের নামই Elevator Pitch.
নামটা Elevator Pitch বলে ব্যাপারটা যে কেবল লিফটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা কিন্তু নয়। এটা অন্য যে কোনও জায়গায় স্বল্প সময়ে যেকোনও ব্যক্তির সামনে নিজেকে সংক্ষেপে তুলে ধরার প্রক্রিয়া। লিফটে সাধারণত আমরা খুব কম সময়ের জন্য অবস্থান করি। সে ধারণা থেকেই মূলত এ ধরণের নামকরণ।
অর্থাৎ, কখনও যদি লিফটে বা অন্য কোথাও এমন গুরুত্বপূর্ণ কারও সাথে দেখা হয়ে যায় যে কিনা তোমার কোনও উপকারে আসতে পারেন কিংবা তুমি তার সাথে কাজ করতে বেশ আগ্রহী সেক্ষেত্রে তার সামনে নিজেকে স্বল্প সময়ে যে অল্প কথায় উপস্থাপন করবে সেই ছোট্ট বক্তব্যের নামই Elevator Pitch.
এখন, প্রশ্ন হলো এই Elevator Pitch তৈরির উপায়গুলো কি কি?
১. খুঁজে বের করো তিনটি শব্দ
নিজেকে জানো। তোমাকে বর্ণনা করে করে এমন শব্দগুলোকে খোঁজার চেষ্টা করো। সেখান থেকে সবচেয়ে উপযুক্ত এবং যেগুলো তোমাকে অন্য সবার থেকে আলাদা হিসেবে উপস্থাপন করে সেরকম তিনটা শব্দ বেছে নাও। যেমন : শিক্ষক, বক্তা, উদ্দ্যোক্তা এ তিনটি শব্দ আমাকে বর্ণনা করে।
২. কিছুটা বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করো
ছোট করে লিখে ফেলো, ঐ শব্দগুলো কীভাবে তোমাকে বর্ণনা করে তা নিয়ে। ৩০ সেকেন্ডের জন্য এক পৃষ্ঠাই যথেষ্ট।