৩. গসিপ
দোস্ত, জানিস? ওই মেয়েটার না এক মাসেই ব্রেক আপ হয়ে গেছে!
এই শোন, আবুলের ভাই হাবুল কিন্তু তোর ক্রাশের সাথে লাইন মারে!
সেদিন তোর গার্লফ্রেন্ডকে দেখলাম আরেকজনের সাথে রিক্সায়, কাহিনী কী? নিজের প্রেমিকাকে সামলাতে পারিস না?
এই কথাগুলো বলতে অনেকেই অনেক মজা পায়। গসিপ করা, কুকথা কানকথা ছড়ানো, এসব করতে অনেকেরই বেশ ভালো লাগে। সমস্যা হলো যে, এই আবুলের ভাই হাবুলের খোঁজ নিতে যে সময়টা নষ্ট হলো, এই সময়টা পড়াশোনায় বা কোন রিসার্চে দিলে অনেক কাজে লাগতো। কিন্তু, অকারণে এসব গসিপে সময় নষ্টের কারণে সেটা আর হলো কই?
বিষয়টা হলো যে, এসব গসিপ করে আদতে তোমার নিজের কোন লাভ হয় না। বরং অনেকের বিশ্বাসভঙ্গের কারণ হও তুমি, নষ্ট হয় তোমার সময়। তাই আজ থেকেই প্রতিজ্ঞা করো, এসব গসিপের কথা ছুঁড়ে ফেলে দেবে তুমি। এই সময়টা লাগাবে নিজের উপকারে, অন্যের অপকার খুঁজে নয়!
৪. ফেসবুক
এখানে তোমার একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে। ফেসবুক এমন একটা জায়গা, যেখানে তুমি চাইলে সারাদিন কাটিয়ে দিতে পারো অন্যের প্রোফাইলে লাইক শেয়ার কমেন্ট করে বা কারো সাথে চ্যাটিং করে। আবার এখানেই তুমি এরকম কার্যকর কোন লেখা পড়তে পারো, চাইলেই বিভিন্ন দরকারি ইভেন্টে মানুষের কাজে আসতে পারো।
এজন্যে ফেসবুকের পেছনে যেটুকু সময় তুমি দাও, চেষ্টা করবে সেটি যেন তোমার কাজে লাগে। এঞ্জেল তামান্নাকে হাই দিয়ে চ্যাট শুরু করে সময় নষ্ট না করে, ফেসবুককে কাজে লাগাও। তাহলেই দেখবে তোমার সময় আর নষ্ট হচ্ছে না।
৫. ইউটিউব
কিন্তু ইউটিউবে তো টেন মিনিট স্কুলের ভিডিও দেখি, সেটাও কী সময় নষ্টের কারণ?
এমন প্রশ্ন যদি মাথায় চলে আসে, তাহলে এটা জেনে রাখো, যে ফেসবুকের মতো ইউটিউবও এমন একটা জায়গা, যেখানে তুমি রাতদিন কাটিয়ে দিতে পারো ফানি ক্যাট ভিডিও বা ট্রেন্ডিং ভিডিওগুলো দেখে। আবার, এখানেই তুমি চাইলে বিশ্বের যেকোন বিষয় নিয়ে ক্লাস দেখতে পারো, শিখে নিতে পারো অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের খুঁটিনাটি।
তাই ইউটিউবকে আমি বলবো না সময় নষ্টের কাজ, কিন্তু অযথা র্যান্ডম ভিডিও, যেগুলো তোমার কোন কাজেই আসছে না- এমন ভিডিও দেখে সময় নষ্ট করো না। সেসব ভিডিওই দেখো, যেগুলো তোমার কাজে দেবে। হ্যাঁ, বিনোদনের ভিডিওর দরকার আছে। কিন্তু তোমার মূল্যবান সময়ের সবটাই ফানি ভিডিওর পেছনে ব্যয় করো না।
৬. আড্ডাবাজি
বন্ধু ছাড়া জীবন অচল, বন্ধুদের সাথে বসে চিল না করলে ভালোই লাগে না- এরকম মনে হয় অনেকেরই। সত্যি কথা বলতে কি, বন্ধুদের সাথে ঘোরাফেরায় যে বিনোদনটা হয়, সেটা অনেক কাজে দেয়। কিন্তু এই আড্ডাবাজি যদি তোমার দিনের সিংহভাগ সময় নিয়ে নেয়, তাহলে সেটা হবে সময় নষ্টকারী কাজগুলোর অন্যতম।
বন্ধুদের সময় দিতে হবে, সেটা তোমার জন্যে দরকারি। কিন্তু এটা মাথায় রাখতে হবেই, যে দিনের কাজগুলোও যেন ঠিকভাবে হয়, আড্ডা মারা বা চিল করতে গিয়ে যেন তোমার দরকারি কাজগুলো পড়ে না থাকে।
৭. গেমস
কম্পিউটার গেমস বলল, বা মোবাইল গেমস- এগুলো যদি তোমার নেশায় পরিণত হয়, এগুলোর কারণে যদি তোমার দৈনন্দিন কাজ আটকে যায়, তাহলে এগুলোকে অবশ্যই সময় নষ্ট করে এমন কাজের লিস্টে রাখা দরকার। হ্যাঁ, গেমস খেললে অনেকসময় মাথা পরিষ্কার হয়, তোমার কাজকর্মে দ্রুতো আসে। কিন্তু এই গেমসই যদি তোমার জীবনে নেশার আরেক নাম হয়ে পড়ে, তাহলে এগুলো খেলা কমিয়ে দেয়া উচিৎ।
৮. টিভি সিরিজ
টিভি সিরিজ দেখা বর্তমান সময়ে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে খুব বেশি জনপ্রিয় হয়েছে। গেম অফ থ্রোনস, ব্রেকিং ব্যাড, পার্সন অফ ইন্টারেস্ট- বাহারি নামের চমৎকার এই সিরিজগুলো একবার শুরু করলে আর শেষ করতে ইচ্ছা করে না। এক একটা এপিসোডের পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সেগুলো নিয়ে দীর্ঘ আলাপ আলোচনা তো আছেই!
টিভি সিরিজ আমারও খারাপ লাগে না, সময় পেলে, একটু বিনোদনের দরকার হলে আমিও চোখ বুলাই টিভি সিরিজে। বুদ্ধি প্রখর হয়, মনের শান্তিও আসে। কিন্তু ওই যে, সময় পেলে, হাতে কাজ না থাকলে তখনই। সব কাজ ফেলে যদি টানা টিভি সিরিজ দেখতে বসে যাও, আর তার রেশ যদি সারাদিন থাকে, তাহলে টিভি সিরিজ দেখা কমিয়ে ফেলা উচিৎ তোমার। মনে রাখবে, আগে দরকারি কাজ, তারপরে বিনোদন। এর উল্টোটা যেন না হয়!
আমার এই লেখাটার উদ্দেশ্য কিন্তু মোটেও তোমাদের আদর্শ অভিভাবক হয়ে জ্ঞানী জ্ঞানী কথা শোনানো নয়! তরুণ প্রজন্মের একজন হিসেবে আমি জানি, আমাদের জীবনে বিনোদনের কতোটা দরকার। আমার কথা একটাই, আর সেটা হলো তুমি বিনোদন নাও, কিন্তু সেটা যেন মাত্রা ছাড়িয়ে না যায়। পড়ালেখা ও দৈনন্দিন দরকারি কাজের সাথে মিলে মিশে যদি বিনোদনও নিয়ে নিতে পারো, তবেই না তুমি সুখী সফল মানুষ হবে! .
.
সময় ব্যবস্থাপনার ৫টি কার্যকর কৌশল
ডিজিটাল এই যুগে আমাদের মধ্যে যে সমস্যাটা দেখা যায়, সেটা হলো যে আমরা ফেসবুক-ইউটিউব-স্ন্যাপচ্যাট এবং এরকম সব সাইটের ভীড়ে কাজের সময়টা ঠিক করে উঠতে পারি না। একবার ভেবে দেখো তো, ঘুম থেকে উঠে ফেসবুকের নিউজ ফীডে যে সময়টা নষ্ট হয়, সেটা অন্য কাজে লাগালে কিন্তু বিশাল কোন কিছু হয়ে যেতে পারতো!