এই ধারণাটা যে কতোটা ভুল, সেটা একটা গল্প দিয়ে বলা যায়।
গল্পটা এমন, ধরা যাক রাশিক আলম নামের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে নিয়ে এই গল্প। ছেলেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, তার বিষয়টা নিয়ে বেশ একটা গর্ববোধ কাজ করে। আশেপাশের কিছু বন্ধুদের যখন যে দেখে ক্লাবিং করে বেড়াতে, কিংবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করতে, সে তখন ভাবে-কী দরকার? পড়ালেখা শেষ করেই এসব করা যাবে খন! রাশিকের বন্ধুবান্ধবরা সিভি বানিয়ে ফেলে, আর সে তার ওই ধারণায় পড়ে থাকে–সিভি থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজকর্ম সে করে ফেলবে পড়ালেখা শেষ করে। এক্সট্রা কারিকুলার কোনকিছুতেও সে নেই, সে শুধু নাকমুখ গুঁজে পড়ালেখা করে, ওইটুকুই।
যাহোক, একটা সময়ে পড়ালেখা শেষ হয় তার। সে শুরু করে চাকরি খোঁজা, সিভি বানানোর কাজটাও শুরু করে ফেলে সে। সিভি বানাতে গিয়ে সে অবাক হয়ে আবিষ্কার করে, তার সিভিটা আসলে আধা পৃষ্ঠাতেই আটকা পড়ে গেছে। সে চেষ্টা করে ফন্ট সাইজ বাড়িয়ে একটু বড় করতে, তাতে হয়তো টেনেটুনে এক পৃষ্ঠার একটা সিভি হয়, কিন্তু সেটা মোটেও খুব ভালো কিছু হয় না।
রাশিক একটা সময়ে গিয়ে খেয়াল করে, যে সব সিভিতেই এচিভমেন্ট, এক্সটা কারিকুলার এক্টিভিটিজ আর জব এক্সপেরিয়েন্সের কথা লেখা আছে। কিন্তু সে তো এগুলোর কোনটাই করে নি! তাহলে তার সিভি কী করে ভালো হবে? ১২৪
সত্যি বলতে কী, তার সিভি এখন আর ভালো করার কোন সুযোগ নেই। তবে, এই লেখাটা যারা পড়ছো, তোমাদের খুব ভালোভাবেই এই সুযোগটা রয়েছে, আর সেটা হেলায় হারানো মোটেও উচিত না। একটা কাজ এখানে করা খুব কার্যকর হবে।
তুমি যদি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া হয়ে থাকো, তাহলে প্রথম বর্ষেই সিভি বানিয়ে প্রতি সেমিস্টারে নতুন করে সিভিটাকে আপডেট করতে থাকো। যদি এক সেমিস্টারে সিভিতে নতুন কিছুই যোগ না হয়, তাহলে সেটা তোমার জন্যে একটা অশনি সংকেত, যে ওই সেমিস্টারে তুমি করার মতো কিছুই করো নাই! নিজের সিভির দিকে তাকালেই বুঝে ফেলতে পারবে পুরো সেমিস্টারে তুমি কী কী করেছো আসলে!
সিভি লেখার সময় খুব কমন কিছু ভুল করে এই প্রজন্ম, সেগুলো নিয়েও একটু বলা দরকার :
১. প্রথম ভুল
সিভিতে যে ছবিটা দাও তোমরা, তাতে দুই ধরণের ভুল থাকে। প্রথমত, সিভি হতে হয় ফরমাল ছবির। এখন তুমি যদি সিভির ছবিতে নিজের গোয়ালঘরের পাশে সানগ্লাস পরা ছবিটা দাও, সেক্ষেত্রে সেটা তো আর নেয়া যাবে না! আরেকটা সমস্যা হচ্ছে পুরনো ছবি দেয়া। হ্যাঁ, এটা হতে পারে যে তোমার সম্প্রতি কোন পুরনো ছবি দেয়া হয় নাই। তার মানে কিন্তু এটা না যে তুমি এমন একটা ছবি দিবা যেটা দেখে তোমার সাথে মিলের চেয়ে অমিল বেশি পাওয়া যাবে! তাই ছবি দিতে হবে ফর্মাল, ছবি হতে হবে সাম্প্রতিক, যেখানে তোমাকে চেনা যাবে।
২. দ্বিতীয় ভুল
এখনো অনেক সিভিতে মেইল এড্রেসে দেখা যায় angelfaria@gmail.com কিংবা bossbabzrakib@yahoo.com এরকম ছেলেখেলার মতো করে যদি সিভি দেয়া হয়, সেক্ষেত্রে ওই সিভিটা সিলেক্ট হবার সম্ভাবনা যে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর, সেটা তো বুঝতেই পারছো! ইমেইল আইডিতে যাবে নিজের নাম। সেখানে এসব উদ্ভট নাম দিলে আসলেই সম্ভাবনাটা আর থাকে না। ঠিক এই কারণেই ইমেইল আইডির নামটা ঠিকঠাক উপায়ে লিখতে হয়। কঠিন কোন কাজ তো আর না, নিজের ইমেইল আইডিতে নিজের নামটাই লিখে দিলে সমস্যা হবার তো কথা না!
৩. তৃতীয় ভুল
সিভিতে তুমি একাডেমিক ক্যারিয়ার যখন দেবে, তখন সেটা অবশ্যই হতে হবে সাম্প্রতিক থেকে পুরনো। শুরুতেই যদি এসএসসি দিয়ে রাখো, সেটা তাহলে আর সিভির ফরম্যাট হলো না। এই বিষয়টা তোমাদের কাছে হয়তো নতুন, কিন্তু শেখার জন্যে মহা দরকারি। একাডেমিক ক্যারিয়ারের শুরুতেই থাকবে তুমি এখন কীসে পড়ছো, সেটা। তারপরে তার আগের একাডেমিক ডিগ্রি, তারপরে তারও আগেরটা। এভাবেই উলটো করে চলবে সিভির একাডেমিক সিরিয়াল।
তাহলে আর দেরি কেন? নিজের একটা সুখী আর সুন্দর ক্যারিয়ার গড়তে এখনই বসে যাও সিভি বানাতে! ভালো একটা সিভিকে না করার সাধ্যি আছে কার?
.
ফেসবুকের সঠিক ব্যবহার করে হয়ে ওঠো আদর্শ নাগরিক!
ফেসবুক ব্যবহার করে না, বাঙ্গালি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই সংখ্যাটা দিনকে দিন এত অস্বাভাবিক হারে কমে আসছে যে কিছুদিন পর হয়তো আঙ্গুলের কর গুনে বলে দেয়া যাবে ফেসবুকে এখনো কোন তরুণ আসক্ত হয় নি! ফেসবুক অনেকদিন ধরেই আর নিছক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নয়, একে এখন বলা চলে ভার্চুয়াল একটা জগত, নীল সে জগতে বাস করছে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। এই ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তাকে কেবলমাত্র বিনোদনের কাজে না লাগিয়ে একটু চেষ্টা করলেই কিন্তু আমরা ফেসবুককে বানিয়ে ফেলতে পারি কার্যকর একটা জায়গা, যেখান থেকে সহায়তা পাওয়া যাবে চাইলেই! আজ বলবো এরকম কিছু উদ্যোগের কথা।
১. ফেসবুক সাংবাদিকতা
ফেসবুকের সাংবাদিক হবার সবথেকে ভালো বিষয়টা হচ্ছে যে তোমাকে কোন সাংবাদিকতায় ডিগ্রি নিতে হয় না। তোমার স্ট্যাটাস বারই হচ্ছে তোমার সংবাদ, ফেসবুকের নিউজ ফীড হলো সেই সংবাদপত্র। চারপাশে কিন্তু প্রচুর অসঙ্গতি দেখো তুমি। দেখারই কথা। হয়তো এগুলো দেখে হতাশ হয়ে চলে যাও তুমি। কিন্তু চাইলেই তুমি এর প্রতিবাদ করতে পারো, চাইতেই পারো একটা সুন্দর পৃথিবীর। যেটা করতে হবে, সেটা হলো এই ফেসবুককে কাজে লাগিয়ে শুরু করে দাও প্রতিবাদ!