ডুবে যাওয়া এই যে খরচ, একে আসলে খুব বেশি পাত্তা দেবার কিছু নেই। এমন খরচ থাকবেই, আর তাই এই খরচকে এক পাশে রেখে নিজের যেটা ভালো, সেইদিকে লক্ষ্য রাখলে তবেই না সাফল্য আসবে!
.
ইন্টারভিউয়ের কথকতা
বেশ কিছুদিন আইবিএর জন্যে একটা কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করার কারণে অনেকগুলো মক ইন্টারভিউ বা ছায়া ইন্টারভিউ নেবার সৌভাগ্য হয়েছিল। এরপরে তো টেন মিনিট স্কুল, সেখানকার ইন্টার্ন এবং অন্যান্যদের ইন্টারভিউ নিতে নিতে পুরো বিষয়টা নিয়ে এক ধরণের আইডিয়া হয়ে গেছে। আমার এই লেখার উদ্দেশ্য অবশ্য কীভাবে ইন্টারভিউ নিতে হয় সেটি নিয়ে নয়, আমার লেখার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পাঠকদের ইন্টারভিউ বোর্ডে কীভাবে সহজভাবে সুন্দর ভাষায় কথা বলা যায় তা নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করা :
১. নিজেকে জানো
প্রায় সব ইন্টারভিউ বোর্ডেই এই প্রশ্নটা সাধারণ থাকে- Introduce Yourself. মজার ব্যাপার হলো অতি কমন এই প্রশ্নে অনেকেই ঘাবড়ে যায়, নিজেকে ঠিক কীভাবে প্রকাশ করবে সেটাই বুঝে উঠতে পারে না। ফলাফলে তাঁদের ইন্টারভিউটা ওই শুরুতেই শেষ হয়ে যায়। মূলত একটা ইন্টারভিউয়ের শুরুর এক মিনিট বা তারচেয়েও একটু কম সময় পাবে তুমি। এই সময়ে নিজেকে যতটুকু ফুটিয়ে তোলা যায়, এ সময়ে নিজেকে যেভাবে দেখাতে পারো তুমি, বোডের ওপাশের মানুষটি ততোটাই ইমপ্রেসড হবেন।
নিজেকে নিয়ে বলার ক্ষেত্রে যদি তুমি এভাবে শুরু করো, যে তোমার নাম অমুক, তোমার বাবার নাম তমুক, তুমি ওই স্কুল ওই কলেজে পড়েছো, তোমরা কয় ভাই বোন- তাহলে কিন্তু সেটা আর নিজের পরিচয় না, পরিবারের পরিচয় হয়ে গেল! এবার হয়তো তোমার মনে খটকা লাগছে, তাহলে কী বলবো? কীভাবে পরিচয় হবে আমার?
তুমি তোমার নিজের বিষয়গুলো বলবে। তোমার শখ কী, কীসে কীসে পারদর্শী তুমি, প্রফেশনাল স্কিল কী কী আছে তোমার, কো কারিকুলার কোন কাজগুলোতে তুমি সেরা, তোমার স্বপ্ন কী- এসব নিয়ে বলতে পারো। পাশাপাশি যদি একটু নিজের টার্গেটটা ফোকাস করে সেটা নিয়েও বলতে পারো, তাহলে তো সোনায় সোহাগা!
২. সম্মান দেখাও, কিন্তু মাটিতে মিশে যেও না
ভাইভা নিতে গিয়ে আমি প্রায়ই খুব ইন্টারেস্টিং কিছু মানুষকে দেখেছি। এদেরই একজন একদিন এসে বললো, ভাইয়া কাল আমার মক ভাইভা, একটু সাজেশন দেন কীভাবে কী করবো। আমি তো স্বভাবতই বলে দিলাম যে সোজা হয়ে সুন্দর করে কথা বলবা, স্মার্টলি থাকবা। পরদিন।
সেই ছেলেকে ডাকা হলো। ছেলে দেখি একেবারে ঠায় সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বসতে বললাম, সে বসে না! প্রশ্ন করলাম আমরা তিনজন, সে সব প্রশ্নের উত্তর একদিনে তাকিয়ে দিলো, এক চুল পর্যন্ত নড়লো না! বিষয়টা অদ্ভুত, আমি তাই তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম কেন সে এইরকম করছে। সে মাথাটা একেবারে উটপাখির মতো নিচু করে ফেলে একটা উত্তর দিলো।
উত্তরটা আরো উদ্ভট। তার ভাষ্য, এতে সে সম্মান দেখিয়েছে মাননীয় ইন্টারভিউয়ারদেরকে!
আরেকজনকে পেলাম, সে আবার আমার পাবলিক স্পিকিং শুনে বেশ অনুপ্রাণিত হয়েছে। সে ইন্টারভিউ বোর্ডে আসলো, এবং তারপরে দেখা গেল যে আমার প্রিয় ছাত্র হাত পা নাড়িয়ে বিচিত্রভাবে উত্তর দিচ্ছে। প্রশ্ন করলাম, তোমার স্বপ্ন কী? সে উত্তর দিলো, চমকার প্রশ্ন করেছেন স্যার, এর উত্তর রেডি আছে আমার কাছে!
এভাবে যদি কেউ ইন্টারভিউ দেয়, তাহলে বুঝতেই পারছো, ফলাফল কী হতে পারে! খেয়াল করে দেখবে, এরকম ছোট ছোট ভুলের কারণেই কিন্তু তোমার চাকরি বা অ্যাডমিশন রসাতলে চলে যেতে পারে, হতাশ হয়ে যেতে পারো তুমি!
৩. বডি ল্যাংগুয়েজকে কাজে লাগাও
একটা ইন্টারভিউ বোর্ড তোমাকে কথাবার্তা ছাড়াও, বাহ্যিক অবয়ব বুঝে জাজ করে ফেলতে ঠিক কতোটুকু সময় লাগে জানো? ৭ সেকেন্ড। হ্যাঁ, তমি কোন কথা বলার আগেই, রুমে ঢুকে চেয়ারে বসা পর্যন্ত যে সময়টা যায়, সেখানেই তোমার অনেক কিছুই বুঝে নিতে পারে বোডেব্র মানুষেরা। ঠিক এই কারণেই দুটো জিনিস খুব দরকার ইন্টারভিউতে গেলে। একটা হচ্ছে ঠিকঠাক গেটআপে যাওয়া। ধরো, ইন্টারভিউতে যদি তুমি নোংরা একটা শার্ট পরে যাও, সেটা যদি ইস্ত্রি না করা থাকে, জুতার বদলে যদি স্যান্ডেল পরে যাও–এগুলো অবশ্যই চোখে পড়বে বোড়ের মানুষদের। তারা খুব সুক্ষভাবে তোমাকে জাজ করে বসবে, আর সেখানে তোমার কিছুই করার থাকবে না!
আরেকটা বিষয় হচ্ছে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ। তুমি কীভাবে দাঁড়িয়ে কথা বলছো, কীভাবে হাটছো, প্রশ্নের উত্তর দেবার সময় তোমার ভাবভঙ্গি কেমন কিংবা প্রশ্নগুলো তুমি হাত পা নাড়িয়ে দিচ্ছো, আত্মবিশ্বাসের সাথে দিচ্ছে কি না এসবই কিন্তু ইন্টারভিউ বোর্ডে দেখা হয়। আর ঠিক এজন্যেই বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এত দরকারি একটা বিষয়!
ইন্টারভিউ বোর্ড খুবই অদ্ভুত একটা জায়গা। তুমি নিজের মতো করে সব প্রশ্নের উত্তর দিলে তোমাকে রোখার সাধ্যি নেই কারো। কিন্তু এই যে, আজকের লেখাটার মত কমন কিছু বিষয় খেয়াল রাখতেই হবে। তবেই না তুমি পারবে সেরা একটা ইন্টারভিউ দিতে!
.
এখনই লিখে ফেলো তোমার সিভি!
আমাদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে একটা সমস্যা খুব প্রকট। এই সমস্যাটা অনেকদিন থেকেই হয়ে আসছে, আর এর কোন প্রতিকারও দেখি নি। এখনো। সমস্যাটা হলো, আমাদের প্রজন্ম মনে করে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে সিভি লেখার কোন দরকার নেই, পড়ালেখার পাট চুকিয়ে, চাকুরির সন্ধান করার সময়ে সিভি লিখলেই তো চলে!