২. টিমওয়ার্কিং স্কিল :
তুমি এর আগে হয়তো অনেক কম্পিটিশন জিতেছে, অনেক কাজ করেছে, কিন্তু সেগুলো একা একাই। সবাই মিলে একটা কাজ সফলভাবে করে ফেলার যে একটা ভালো লাগা, সেটা তুমি বুঝতে পারবে কোন ক্লাব বা ফোরামে কাজ করলে। একটা টিমে কাজ করার অভিজ্ঞতাটা এতো বেশি কাজে লাগবে চাকুরি জীবনে, তোমার কোন ধারণাই নেই! কারণ একটা অফিসে টিমওয়ার্ক ছাড়া কোন কাজ কি চলে?
৩. নেটওয়ার্কিং স্কিল :
একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোন ক্লাবে নিয়মিত হলে যে বিষয়টা হয়, প্রচুর মানুষের সাথে খাতির জমে, অনেকের সাথে পরিচয় হয়। এতে নেটওয়ার্কিংটা অনেক বেশি দৃঢ় হয়। এদের মধ্যেই কেউ হয়তো জীবনে অনেক সফল হয়ে বিশাল কিছু করে ফেলবে, আর তুমি হয়তো কোন এক জব ইন্টারভিউতে তাকেই পাবে ইন্টারভিউ বোর্ডের ওপাশে! তাতে আর যাই হোক, তুমি নির্ভয়ে, টেনশন ছাড়াই ইন্টারভিউ দিয়ে আসতে পারছে তাই নয় কি?
৪. লীডারশিপ স্কিল :
বলা হয়, কোন একটা চাকুরিতে উপরে ওঠার সিঁড়ি হচ্ছে নিজের লীডারশিপ স্কিল দেখানো। তোমার অফিসের বস যদি তোমার মধ্যে দায়িত্বশীলতা আর এই লীডারশিপটা দেখতে পারে, তোমার প্রমোশন ঠেকায় কে? আর এই স্কিলটা অর্জন করতে পারবে ক্লাবের মধ্য দিয়েই। একটা ক্লাবের হয়ে তোমাকে ভিন্ন ভিন্ন কাজ করতে হতে পারে। এই কাজগুলো করতে গিয়ে যদি তুমি শিখে নিতে পারো নেতৃত্ববোধের এই স্কিল, তাহলেই কেল্লাফতে!
৫. কর্পোরেট স্কিল :
আমার চোখে এই স্কিলটা খুব বেশি দরকারি কোন অফিসে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হলে। বর্তমান যুগ হয়ে যাচ্ছে কর্পোরেট যুগ, সবাই মূলত এই কর্পোরেট স্কিলগুলো দেখে যখন কোন চাকুরি দিতে হয় বা প্রোমোশন দিতে হয়। আর এই কর্পোরেট গ্রুপিংটা হয় কোন অর্গানাইজেশনে কাজ করলে। এই গ্রুপিংটা জীবনের বাদবাকি কর্পোরেট অফিসে সবসময় কাজে দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনটাকে বলা যায় জীবনের শ্রেষ্ঠ চার বছর। এই চার বছরে তুমি যদি সারাদিন পড়ালেখা করেই কাটিয়ে দাও, তাহলে কী লাভ? বরং, ক্লাব বা অরগানাইজেশন কিংবা যেকোন ফোরামের হয়ে কাজ করতে থাকলে তুমি কাজ শিখবে, পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের আনন্দটাও পেয়ে যাবে!
.
Sunk Cost-কে না বলো, সাফল্যের পথে এগিয়ে চলো!
আমি যখন অনেক ছোট ছিলাম, তখন আমার খুব প্রিয় একটা কাজ ছিল হরলিক্সের বয়ম থেকে হরলিক্স চুরি করে খাওয়া। খুব মজা লাগতো খাবারটা, আর আম্মু খালি খালি হরলিক্স খেতে দিতেন না। তো একদিন হলো কি, গোপনে হরলিক্স চুরি করতে গিয়ে আম্মুর কাছে ধরা খেয়ে গেলাম। আম্মু বেশ ক্ষেপে গেলেন।
না, ক্ষেপে গিয়ে আম্মু অনেকগুলো ঝাড়ি দেন নি। তিনি যেটা করলেন, সেটা আরো আশ্চর্য। তিনি পুরো বয়মটা আমার সামনে এনে বললেন, খা এবার। পুরো বয়মটা আমার সামনে শেষ করবি তুই। রাগের মাথায় তিনি যেটা করলেন, এটার একটা নাম আছে। তার আগে আরেকটা কাহিনী বলি। এটা আমার ভাইয়ের ছোটবেলার গল্প।
আমার ছোটভাই, সাদমান যখন ছোট ছিল, তখন ওর কোকাকোলা খুব প্রিয় ছিল। তো একদিন হলো কি, বাসায় কোকের বোতলে অল্প একটু কোক ছিল। আমরা দুই ভাই দুটো গ্লাসে ভাগ করে নিলাম কোকাকোলা। আমার গ্লাসে ওর থেকে সামান্য একটু বেশি ছিল, সেটা দেখে হুট করেই ও খুব রেগে গেল, বললো তুমিই সব কোক খাও, যাও! বলে সে তার গ্লাসের কোকটাও আমার গ্লাসে ঢেলে দিয়ে চলে গেল। আমার লাভই হলো আখেরে, বেশি কোক পেয়ে গেলাম!
এই দুটো গল্পের মধ্যে একটা মিল আছে। মিলটা হলো, আমার মা এবং সাদমান- দুজনেই Sunk Cost করেছে। এর বাংলা করলে সম্ভবত ডুবে যাওয়া খরচ হবে। এটার মানে হচ্ছে যে খরচটা ইতিমধ্যে হয়ে গেছে, এবং যার রিটার্ন পাবার কোন সম্ভাবনাই আর নেই।
ধরো, তুমি ব্যুফে খেতে গিয়েছে। সেখানে ৪০০ টাকা দিয়েছে। এখন যেহেতু সেখানে টাকা দিয়েছে, সেই টাকা ফেরত পাবার কোন সম্ভাবনা নেই, সেহেতু ওই টাকাটা তোমার Sunk Cost. এখন বিষয় হলো দিয়েছে, সেজন্যে তুমি পেটপুরে সাধ্যের বাইরে খাবে, খেয়ে শরীরের ক্ষতি করবে, বিষয়টা এমন হলে কী চলে? চলে না।
Sunk cost এর থিওরিটাই এরকম। তুমি কোনকিছুতে অনেক বেকি পরিশ্রম করছো, নিজের শ্রমের অনেকটা দিচ্ছে সেখানে। যা দিয়েছে। সেটা কিন্তু অলরেডি সেই ডুবে যাওয়া খরচ, সেটা আর ফিরে আসবে না। কিন্তু এতে যদি তুমি কোন লাভ খুঁজে না পাও, তাহলে আর সেই পরিশ্রমের জন্যে থেকে যাবার কোন দরকার নেই!
প্রথম গল্পে আমি যে চুরি করে আম্মুর হরলিক্স খেতাম, এটা আমার আম্মুর জন্যে Sunk Cost। কিন্তু আম্মু সেই খরচের কারণে রাগ করে যে আমাকে পুরো বয়মটাই দিয়ে দিলো, তাতে কি লাভ হলো কোন? হলো না। আখেরে সেই খরচটাই বেড়ে গেলো আবার।
দ্বিতীয় গল্পে সাদমানও একই ভুল করে বসলো। এখানে আমার যে সামান্য একটু কোক বেশি ছিল, সেটাই ছিল ওর ডুবে যাওয়া খরচ। এই খরচটুকুর জন্যে ছেলেটা তার পুরো কোকই আমাকে রাগ করে দিয়ে দিলো। এতে লাভটা কার হলো? আমার নিজেরই। সাদমানের এই সিদ্ধান্তটা তাই ভুল ছিলো, বলতেই হয়।
এতকিছু বলার একটাই উদ্দেশ্য, Sunk Cost কে নিয়ে যাতে আমরা না ভাবি। অনেককেই আমি দেখেছি, একই চাকরিতে বা অর্গানাইজেশনে পড়ে আছে শুধুমাত্র কয়েক বছর ধরে সে সেখানে আছে, এই কারণে। এই অনেকদিন ধরে থাকাটাও এক ধরণের Sunk Cost, আর এই খরচের জন্যেই অনেকের আটকে যায় ভবিষ্যৎ!