এখানেই শেষ না গল্পের। পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখি, ও এম আর শিটে পেন্সিল দিয়ে ভরাট করা যায় না, শুধুমাত্র বলপয়েন্ট পেন লাগে। মনে হলো, আম্মুর ভোঁতা করা পেন্সিলগুলো যেন আমার দিকে তাকিয়ে হাহা করে হাসছে, আর বিদ্রূপ করছে আমার মন্দ ভাগ্যকে!
যাহোক, পরেরদিন পরীক্ষা দিতে গিয়েছি। হলের কাছাকাছি গিয়ে দেখলাম আমার এক পরিচিত বন্ধু ওদের গাড়ি থেকে নামছে। ওদের আবার বিশাল নোয়াহ মাইক্রো, ভাবটাই আলাদা! আমি ওকে দেখেই স্বভাবস্বরুপ চিৎকার করে ডাক দিয়ে একটা দৌড় দিলাম। মাঝপথে গিয়ে খেয়াল করলাম, বন্ধুর মুখ থমথমে। বুঝলাম কোন একটা সমস্যা হয়েছে। ওদিকে আর না গিয়ে দেখতে থাকলাম কী হয়। যা দেখলাম সেটা অতীব আশ্চর্য।
মাইক্রো থেকে এক এক করে ছেলেটার মা, বাবা, নানা, নানী, দাদী, চাচা এবং সম্পূর্ণ অচেনা একটা মানুষ নামলেন। আর কিছু সময় পরে দেখলাম সদ্যজাত একটা বাচ্চাও বের হলো গাড়ি থেকে, সাথে তার বিরক্ত মা। সবমিলিয়ে বিশাল অবস্থা। আমি বুঝলাম, বন্ধুর হতাশার কারণটা কি! এই ঘটনার পর থেকে আমি কোন পরীক্ষায় আর বাবা-মা বা আত্মীয় স্বজনকে নিয়ে যাই না। একাই চলে যাই। অনেক শান্তি, আসলেই!
পরীক্ষার কথাই যখন আসলো, তখন পরীক্ষার একটা অসাধারণ টেকনিকের কথাই শোনাই তোমাদেরকে। তোমরা যখন হাসো, তখন তোমাদের একটা হরমোন কাজ করে। হরমোনের নাম হচ্ছে ডোপামিন। তো এই ডোপামিন যখন কাজ করতে শুরু করে, তখনই তুমি হাসো। তোমার এই হাসিটা কিন্তু হয়ে উঠতে পারে অন্যের নার্ভাসনেসের কারণ!
ধরো তোমার বন্ধু যদি তোমাকে এসে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে, দোস্ত, পড়া কদুর? সে তোমার কাছ থেকে আশা করবে একটা নেতিবাচক উত্তর, যে তুমি বলবে কিছু পড়ো নাই, তাতে তাঁর একটা মানসিক প্রশান্তি আসবে। তুমি যদি তাকে উলটো হেসে বলো, যে দোস্ত সব পড়েছি, সব পারি- তাহলে কিন্তু সে নার্ভাস হয়ে যাবে! সে যদি তোমার প্রতিদ্বন্দী হয়, তার উপরে এই কৌশল প্রয়োগ করতেই পারো, তাই নয় কি?
পরীক্ষার বিষয়টা খুব মজাদার ছিল একটা সময়ে, এখন কেমন যান্ত্রিক হয়ে গেছে সবকিছু। আমার এখনো মনে পড়ে, একটা সময় পরীক্ষা হতে উৎসবের মতো। সেই দিনগুলোকে খুব মিস করি এখন, বড় হয়ে গিয়েছি বলেই মনে হয়!
.
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন গড়ে তোলো এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রম দিয়ে
পড়ালেখা শেষ করার পরপরই চাকুরির চিন্তা। আর এই চাকুরি পেতে গেলে কিছু বিষয়ে পারদর্শী হতে হয়। আমি দেখেছি, এই প্রজনেস অনেকেই পড়ালেখার পাট চুকানোর পরে চাকুরির সন্ধানে গেলে চরম হতাশাজনক একটা চক্রে পড়ে যায়। চক্রের নাম এক্সপেরিয়েন্স চক্র।
এই চক্রের শুরুটা হয় প্রথম জব এপ্লিকেশনের সময়ে। জবদাতা প্রতিষ্ঠান সবার আগে অভিজ্ঞতা বা এক্সপেরিয়েন্স খোঁজে। কিন্তু সদ্য পড়ালেখা শেষ করা ছেলেটি কী করে বা কোথা থেকে পাবে এত এক্সপেরিয়েন্স? এই প্রশ্নটা থেকেই যায়, আর ঠিক সেই কারণেই চাকরি আর মেলে না।
চক্রের শুরু কিন্তু হয়ে গেছে। ছেলেটিকে চাকরি পেতে হলে তার দরকার হবে এক্সপেরিয়েন্সের, কিন্তু এক্সপেরিয়েন্স পেতে হলে তো তাকে চাকরি পেতে হবে সবার আগে! এ যেন সেই গল্পের ডিম আগে না মুরগি আগে এর মত অবস্থা! অনেকেই এই চক্রের ঘুরপ্যাঁচে আটকে যায়, সহজে আর বের হতে পারেই না!
এমন একটা চক্র থেকে বের হতে চাইলে কী করা দরকার? কীভাবে মেলে মুক্তি? প্রশ্নটা রয়েই যায়। আর এই প্রশ্নের উত্তর হলো ক্লাব, ফোরাম আর অর্গানাইজেশন। পড়ালেখা করার সময় তুমি যদি শুধু পড়ালেখাই করো, অন্যান্য কোনকিছুতে চোখ না দিয়ে, তাহলে দিনশেষে ওই আধা পৃষ্ঠার সিভি আর অভিজ্ঞতার অভাব নিয়েই বসে থাকতে হবে, কারণ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এগুলোর পাশাপাশি ক্লাবগুলোর গুরুত্ব অনেক।
হয়তো তোমার মনে হতে পারে, ক্লাবে গেলে তো শুধু শুধু সময় নষ্ট, সেখানে গিয়ে শেখার আবার কী আছে? মজার ব্যাপার হলো, ক্লাব বা ফোরাম কিংবা কোন সংস্থা থেকে তুমি যতো কিছু শিখতে পারবে, পাঠ্যবইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে তার সিকিভাগ শিখবে কি না, সন্দেহ!
ক্লাব বা কোন অর্গানাইজেশন সবার আগে তোমাকে যেটা শেখাবে সেটা হলো দায়িত্ববোধ। তোমাকে একটা কাজ দেয়া হলে কতোটুকু দায়িত্বের সাথে সেটা করছো তুমি, তার উপর নির্ভর করে তোমার কতোটুকু অভিজ্ঞতা হলো। আবার একসাথে একটা টিমে কাজ করার যে টিমওয়ার্ক, যেকোন জব ইন্টারভিউতে এই দক্ষতাটা খুবই দরকারি। এর পাশাপাশি সৃজনশীলতা, বুদ্ধির ব্যবহার থেকে শুরু করে আরো হাজারো কাজ শিখে নিতে পারো তুমি এগুলো থেকে। পড়ালেখাময় বোরিং জীবনে এইটুকুও যদি না করো, অভিজ্ঞতা আসবে কোত্থেকে?
হ্যাঁ, এটা সত্যি যে তুমি যখনই কোন ক্লাব বা ফোরামে থাকবে, সেখান থেকে তুমি কোন টাকা পাবে না। সেটা কিন্তু মোটেও মুখ্য বিষয় না! এই ক্লাব বা সংস্থার যখন তুমি যাবে, সেখানে তুমি যে স্কিলগুলো পাবে, সেগুলো কিন্তু অন্তত টাকা দিয়ে কেনা যায় না, সেগুলোকে অর্জন করতে হয় নিজের শ্রম দিয়ে। এই লেখাটায় আমি এরকম ৫টি স্কিলের কথা বলবো।
১. অর্গানাইজিং স্কিল :
তুমি একটা ক্লাবে যখন কাজ করবে, তখন সেখানে তোমাকে হরেক রকম ইভেন্ট নামাতে হবে, ভিন্ন ভিন্ন ইভেন্টের জন্যে ভিন্ন ভিন্ন কাজ করতে হবে। বেশ খাটাখাটুনি হবে তাতে, আর সাথে তোমার অভিজ্ঞতার ঝুলি বাড়তে থাকবে। তুমি কাজ করে একটা ইভেন্ট নামিয়ে ফেলছো, সেটা সফল হচ্ছে, ভাবতেই অসাধারণ লাগছে না? এই অর্গানাজিং স্কিলটা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই বানিয়ে ফেলা, এর থেকে ভালো সুযোগ আর নেই।