আমরা আমাদের জীবনকে কীভাবে গড়ব, সেই বন্ধুদের মত বড্ড কঠিন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চালাতে পারি, আবার দ্বিতীয় শ্রেনির এই মানুষগুলোর মত সহজ দৃষ্টিভঙ্গিতেও রাখতে পারি। Choice কিন্তু আমাদের হাতেই!
২. নিজের জীবন থেকেই খুঁজে নাও সুখ
একটা গল্প বলি। দুটো বাচ্চার গল্প। একজন থাকে মস্ত একটা আলিশান বাড়ির আঠারো তলায়। আঠারো তলার জানালা থেকে সে দেখে, ছেঁড়া একটা হাফপ্যান্ট পরে আরেকটা বাচ্চা বৃষ্টির মধ্যে ফুটবল খেলছে। আলিশান বাড়ির বাচ্চাটাকে তার মা নামতে দেয়নি, বৃষ্টিতে খেললে যদি তার অসুখ করে!
আলিশান বাড়ির বাচ্চার মনে বড় কষ্ট। তার মনে হয় সে যদি এই ছেলেটা হতো, তাহলে বুঝি কতই না মজা করে বৃষ্টির মধ্যে ফুটবল খেলতে পারতো! মজার ব্যাপার হলো, ঠিক ওই সময় নিচের বাচ্চাটার মনে চলছে আরেক কথা। তার বাসায় অভাব, অনাহার। তার মনে হয় সে যদি ওই আলিশান বাড়ির ছেলেটা হতো, তাহলে না জানি কী সুখে থাকতে পারতো! বড় বাসা, ভালোজামা কাপড় ভালো খাবার সবই পেত সে!
পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষের মধ্যেও এই সমস্যাটা বিদ্যমান। অন্য মানুষ কী করে, তারা কেমন সুখে আছে এটি নিয়েই তারা প্রতিনিয়ত চিন্তিত। হতাশা তাদের শেষ হতেই চায় না! অথচ অন্যের জীবন নিয়ে না গবেষণা করে নিজের জীবনের খুঁটিনাটি একটু দেখলে, দুঃখভরা জায়গাগুলো একটু ভালো করার চেষ্টা করলে কিন্তু খুব ভালো থাকা যায়।
অন্যের কথা না ভেবে, অন্যের পথে না চলে, নিজেই নিজের জীবন গড়ে তুলতে পারলে আর কিছু লাগেই না। দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টালে তাই জীবনটাও হয়ে যাবে অনেক সুখের।
৩. স্বপ্নগুলোকে উড়তে দাও
প্রবাদ আছে, আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই ২৫ বছর বয়সে মরে যায় আর পঞ্চাশ বছর পর তার দেহটা কবর দেয়া হয়। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও কথাটা সত্যি। ২৫ বছরে গ্রাজুয়েশনের আগে আমাদের মনে কতই না স্বপ্ন থাকে, এটা করবো সেটা করবো। একের পর এক আইডিয়া আসতে থাকে মাথায়। দিতে ইচ্ছে করে ইউরোপ টুর, আরো কত কি! কিন্তু গ্রাজুয়েশনের পর পরিবার থেকে চাপ আসে বিয়ে করতে হবে, চাকরি নিতে হবে।
চাকরিগুলো বেশিরভাগ সময়েই মনমতো হয় না, হতাশা বাড়তে থাকে। সাথে থাকে সংসার চালানোর চাপ, আর জীবন হয় কষ্টের। সেই যে স্বপ্নগুলোর মৃত্যু হলো মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধের চাকরি করে আর সংসারের ঘানি টেনে, সেখানেই আমাদেরও আসলে মৃত্যু হয়। থাকে শুধু নিরস দেহটাই।
কিন্তু এমনটা হবার তো কোনো দরকার নেই! নিজের চিন্তা-ভাবনাকে একটু পাল্টিয়ে দেখি আমরা। চিন্তা করে দেখি, নিজের জন্যে, দেশের জন্যে বলার মত কী করছি আমরা, যদি কিছু না করেই থাকি, তাহলে করা শুরু করতে দোষ কী? বয়সটা হোক পঞ্চাশ কিংবা আরো বেশি, কাজের কাজ করলে সেটি কোনো বাধাই নয়। নিজে কিছু করা শুরু করলেই দেখবে নিজেরও ভালো লাগছে, ইচ্ছে করেছে আরো ভালো কাজ করতে!
.
চীনা বাঁশের গল্প
আমাদের দেশে আমরা এই যে গ্রামে গেলেই বাঁশঝাড় দেখি, এগুলো হতে কিন্তু খুব বেশি সময় লাগে না, মোটামুটি দ্রুতই বেড়ে ওঠে বাঁশগুলো। চীনা বাঁশের ক্ষেত্রে কিন্তু ব্যপারটা মোটেও এরকম না! চীনা বাঁশের কাহিনীটা একটু আলাদা।
ধরো তুমি একটা চীনা বাঁশের বীজ বপন করলে। এরপর তোমাকে সেই বাঁশটাকে পানি দিতে হবে, সার দিতে হবে, অনেক যত্নআত্তি করতে হবে। এখানেই শেষ নয়, নিয়মিত খেয়াল রাখতে হবে তার, পাশাপাশি অন্যান্য কাজগুলোও নিয়মিত করতে হবে।
অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এত কিছু করার পর দেখা যায় প্রথম বছরে চারার নামগন্ধ নেই, সেটি বাড়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। প্রথম বছর যায়, দ্বিতীয় বছর আসে। এ বছরেও কোনোরকম লক্ষণ দেখা যায় না। তৃতীয় বছরেও যখন দেখা যায় না কোনো সম্ভাবনা, অনেকেই মনে করতে থাকে বীজটা মরে গেছে। বাঁশ হবার সম্ভাবনা নেই। এই করেই একেবারেই নিষ্ফল চতুর্থ বছরও যখন যায়, তখন মোটামুটি সবাই আশা ছেড়ে দেয় বাশ হবার। চমক দেখা যায় এর পরপরই। চতুর্থ বছরের শেষে দেখা গেল ছোট্ট একটা চারার মত উঠেছে সেখান থেকে। পরের দিন থেকেই তুমি দেখবে হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে চীনা বাঁশগুলো! এক ফিট, দু ফিট করতে করতে এই দেখা যাবে ৫ সপ্তাহে ৯০ ফুটি দানব বাঁশে পরিণত হয়েছে এই চীনা বাঁশগুলো!
একেবারে হাল ছেড়ে দেয়ার অবস্থা থেকে রাতারাতি এই অস্বাভাবিক উন্নয়ন একটু ভাবার বিষয়ও বটে। বাঁশ গাছ থেকে এ শিক্ষাটা আমাদের জীবনেও নেয়া যেতে পারে। কীভাবে? এই পাঁচ বছরে চীনা বাঁশ কিন্তু থেমে থাকেনি, তারা মাটির তলে শক্ত ভিত গড়ে তারপরেই মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। জীবনে এই জ্ঞানটা কাজে লাগাতে পারলেই কেল্লাফতে! এই বাঁশ থেকেই জীবনের দরকারি ৩টা শিক্ষা নেয়া যায়ঃ
১. সবকিছুর শুরু সেই ভিত্তি থেকেই
চীনা বাঁশগুলো কিন্তু একেবারেই বড় হয়ে যায় নি। কারণ মূল শক্ত না হলে ৯০ ফুটি একটা বাঁশ দাঁড়াতেই পারবে না, এইজন্যে পাক্কা ৫ বছর ধরে এটি শুধুমাত্র মাটির তলে নিজের মূল-শেকড় ঠিক করেছে। আর ঠিক এই কারণেই যত ঝড়-ঝাঁপটা আসুক, যে দুর্যোগই হোক, চীনা বাঁশ টিকে থাকবে স্বমহিমায়! অন্যদিকে অন্য সাধারণ বাঁশের মত হলে সেগুলোর মত চীনা বাঁশও সহজে ভেঙে পড়ত।