তখন দেখা যায় বেশিরভাগই একটা শব্দও বলতে পারছে না। যারা দুএকটা বলেছে, তারাও নিজেদের শব্দগুলো নিয়ে নিজেই নিশ্চিত না!
মুচকি হেসে তখন বলতেই হয়, নিজেকে তাহলে আর কতটা চিনলে? ইন্টারভিউ বোর্ডে যদি তোমাদের জিজ্ঞেস করা হয়, নিজেকে নিয়ে কিছু বলতে, তাহলে কি আজকের মত আটকে যাবে? অথবা কোনো চায়ের কাপের আসরে যদি বলা হয়, তোমার পরিচিতি দাও- কী জবাব দেবে?
আমি যদি নিজেকে একই প্রশ্ন করি, উত্তর আসে- Teacher, Dreamer, Friend. তাই আমার নিজেকে নিয়ে আমি অন্তত এই ব্যাপারটায় ভীষণ পরিষ্কার। এখন প্রশ্ন হলো, তোমরা কীভাবে নিজেদের জানতে পারবে? সমাধান সহজ। ছোট্ট কিন্তু দরকারি বেশ কিছু কাজ করলেই আরামে নিজেকে জানতে পারবে তোমরাও। কাজগুলো এবার দেখে আসা যাক
১. নিজের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা রাখো
তোমার ব্যক্তিত্বই মানুষের কাছে তোমার আসল পরিচয়। তুমি ছেঁড়া জিন্স পর বা স্যুট পর, তোমাকে অন্যদের থেকে আলাদা করবে তোমার ব্যক্তিত্ব। তাই নিজের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা রেখো। ব্যক্তি হিসেবে তুমি কেমন, সেটা তোমার থেকে ভালো কেউ জানবে না, তাই নিজের খবর নিজেকেই রাখতে হবে।
২. নিজেকে প্রকাশ কর তিন শব্দে
চেষ্টা কর নিজেকে তিনটি শব্দে প্রকাশ করার। যদি তাও না পার, তাহলে দটি শব্দ। না পারলে একটি। ধীরে ধীরে দেখবে তুমি নিজেকে দেখতে পাবে তিনটি শব্দের মধ্যে। এরপর অপেক্ষা। প্রতিদিন তিনটি করে শব্দ লিখবে, দেখবে সেগুলোর কোনো পরিবর্তন আসছে কি না। পরিবর্তন আসলে সেই পরিবর্তনের মাঝেই নিজেকে জানবে তুমি।
৩. নিজের দোষ গুণগুলো খুঁজে নাও
Self-assesment বা নিজেই নিজেকে যাচাই করা খুবই দরকারি একটি পদক্ষেপ, যদি তুমি নিজেকে জানতে চাও। নিজের ভালো দিকগুলো, ভালো গুণ বা চরিত্রগুলো খুঁজে নাও। তারপর খারাপ দিকগুলোকেও আরেক পাশে রাখো। চিন্তা করতে থাকো, কী করে এই খারাপ দিকগুলোকে ভালোর দিকে আনা যায়। এভাবেই নিজেকে চিনবে তুমি।
৪. জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করো
তোমার জীবনের লক্ষ্য কী? সে প্রশ্নের উত্তরও যদি তোমার না জানা থাকে, তাহলে তুমি আসলেই নিজেকে ঠিকমত চেনো না। একজন মানুষ তার নিজের আত্মাকে চিনবে তখনই, যখন তার লক্ষ্য থাকবে নিশ্চিত, আর সে সেই লক্ষ্যে থাকবে স্থির, অবিচল। তাই নিজের লক্ষ্য ঠিক কর। যদি ডাক্তার হতে চাও, সে পথে এগোও। শিক্ষক হতে চাইলে শিক্ষকতার রাস্তায় এগিয়ে চলো। তবেই না নিজেকে জানবে!
৫. নিজের পছন্দ-অপছন্দের বিষয়গুলো ভালোভাবে জানো
তোমার কী কী ভালো লাগে, কী খেতে ভালো লাগে, কী করতে ভালো লাগে, সে সম্পর্কে তোমার পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার। ছোটবেলায় মা যেমন সব খাবার ভাতের সাথে মাখিয়ে খাওয়াতো, বুঝতেও না কী খাচ্ছো বড়বেলায় এমনটা করলে হবে না। তোমার কিসে ভালো লাগে, কিসে খারাপ লাগে সেটি পরিষ্কারভাবে জেনে নাও, নিজেকে আবিষ্কার কর। তাহলেই চিনবে নিজেকে।
সক্রেটিসের সেই Know Thyself উক্তিটির মতোই নিজেকে খুঁজে ফিরছে হাজারো মানুষ। তুমি কি তাদেরই একজন হবে, নাকি সাফল্যের বিজয় মঞ্চে উঠে আসবে নিজেকে সত্যি জেনে?
সিদ্ধান্ত কিন্তু তোমারই!
.
কিন্তু সিজিপিএ?
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া কাউকে ইদানীং তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন নিয়ে জিজ্ঞেস করলে দুই ধরনের উত্তর পাওয়া যায়। এক দল আছে যারা মহানন্দে নতুন এই জীবন উপভোগ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন এক্সটা কারিকুলার এক্টিভিটির পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের জীবনটা বেশ উপভোগ্যই বলতে গেলে।
আরেক দল হচ্ছে সিজিপিএ পাবলিক। এদের দিন দুনিয়ার সবকিছু ঘিরে শুধুই সিজিপিএ। ডিবেট করতে যাবার কথা বললে তারা সিজিপিএর দোহাই দেয়। গান গাইতে বললে সিজিপিএ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যেতে বললে সিজিপিএ; কোনো ক্লাবে যোগ দেবার কথাতেও তাদের ওই একটাই উত্তর কিন্তু আমার সিজিপিএর কী হবে? অবস্থা এমন যে এদের আবেগও হয়ে গিয়েছে সিজিপিএ নির্ভর। প্রেম তাদের শুধু সিজিপিএর সাথেই! সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো যে, এই দলের বেশিরভাগকেই যদি তাদের সিজিপিএ জিজ্ঞেস করা হয় মুখটা কেমন কালো হয়ে যায়। মৃদু স্বরে উত্তর আসে, ২.৯০!
আমরা আজকে প্রথম দলটা নিয়েই কথা বলব। যারা শুধু সিজিপিএ না, বরং চারপাশের দুনিয়াটারও একটা জীবন্ত অংশ হতে চায়। তাদের অনেকেরই প্রশ্ন, দ্বিতীয় দল এভাবে পাগলের মতো সিজিপিএর পেছনে হন্যে হয়ে ছুটছে কেন? খুব ভালো সিজিপিএ ছাড়া কি জীবনে সাফল্য পাওয়া যাবে না?
.
নিয়ন্ত্রণে রাখো নিজের সুখ
আমাদের জীবনে এমন অনেক কিছুই ঘটে, যা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করার কোনো সুযোগই নেই। সমস্যা হলো যে, এটি নিয়ন্ত্রণ করার কোনো সুযোগ নেই জেনেও আমরা ওই ঘটনাগুলো নিয়েই সারাদিন পড়ে থাকি, আমাদের মনোযোগ কেড়ে নেয় সেগুলো। আর তাই জীবন সবসময় সুখী হয় না, সুখে থাকতে পারিনা আমরা। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেজন্যে চমৎকার একটা সূত্র আছে।
সূত্রটার নাম 90/10 Principle। Stephen Covey নামের এক ভদ্রলোকের আবিষ্কার। তিনি এখানে দেখিয়েছেন কীভাবে জীবনের ছোটখাটো নিয়ন্ত্রণহীন খারাপ ঘটনাগুলোকে ইতিবাচকশক্তি বা Positive energy দিয়ে বশে আনা যায়। তিনি পুরো ধারণাটা একটা গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। গল্পটা বলা যাক।