খেয়াল করে দেখ, গল্পের শেষটার প্রথম ভার্সন, যেখানে সাদমানের আইডিয়াটি হারিয়ে যায় সেখানে সাদমানের Effort এর জায়গাটায় 0 বসেছে। আর ওই 0 এর সাথে আইডিয়ার গুণফল কিন্তু শূন্যই হয়েছে! সে এখানে Effort দেয়নি, শুধুমাত্র আইডিয়া নিয়েই কাজ করে গেছে। ফলাফল হিসেবে শূন্যের বেশি কিছুই আসেনি!
গল্পের শেষটার দ্বিতীয় ভার্সনে আবার দেখা গেছে সূত্রটার সত্যিকার ব্যবহার। এই ভার্সনে সাদমান হাল ছেড়ে দেয়নি। সে তার মতো করে Effort দিয়েই গেছে, আর তার ফলাফল হিসেবে Result ও এসেছে, সাদমান পেয়েছে সাফল্যের দেখা!
সূত্রটাকে এভাবে দেখা যায়, যে তোমার যত ভালো আইডিয়াই থাকুক না কেন, আইডিয়াকে কাজে না লাগালে, আইডিয়ার পেছনে খাটাখাটুনি না করলে কোনোভাবেই তুমি এগোতে পারবে না। তাই সময় থাকতেই আইডিয়া নিয়ে কাজ শুরু করে দাও। হাল ছাড়বে না, শত বাধা পেরিয়ে তুমিই পারবে বিজয়ী হতে!
.
মার্শমেলো টেষ্ট ও দুরদর্শীতা
ষাটের দশকে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক খুব মজার এস, পরীক্ষা করেন। তিনি চার বছর বয়সের কয়েকজন শিশুকে একটা কমে মধ্যে রাখেন। শিশুদের সবার সামনে একটা করে মার্শমেলো, যেটা একজাতীয় মিষ্টি খাবার, রাখা হয়। সবাইকে এবার একটা শর্ত দেয়া হয়। শর্তটা হলো, যে পনেরো মিনিট পরে ওই শিক্ষক রুমে আসবেন, এবং কেউ যদি ওই পনেরো মিনিটে তার মার্শমেলোটা না খেয়ে থাকে, তাহলে আরেকটা মার্শমেলো পাবে সে।
লোভনীয় প্রস্তাব, কিন্তু চার বছরের শিশুরা সে প্রস্তাবের কতটুকুই বা বুঝবে? যাহোক, ক্যামেরায় পুরো এক্সপেরিমেন্টটা ধারণ করা হয়। পনেরো মিনিট পরে শিক্ষক রুমে প্রবেশ করেন, এবং দেখেন যে বেশিরভাগ সময়েই গড়ে প্রতি তিনজন শিশুর একজন তার মার্শমেলোটা রেখে দিয়েছে, যাতে সে পরে আরেকটা মার্শমেলো খেতে পারে!
পরীক্ষার পরের ধাপে এই শিশুগুলো একটু বড় হলে, একাডেমিক পড়ালেখা শুরু করলো। স্ট্যানফোর্ডের সেই শিক্ষক শিশুদের বেড়ে ওঠার দিকে নিবিড় লক্ষ্য রাখেন, দেখেন কে কোনদিকে ভালো করছে। শিশুরা বড় হয়, কলেজে ভর্তি হয়। এসময়ে ওই শিক্ষক একটা বিষয় খেয়াল করেন। সেই যে, তিন জনে একজন মার্শমেলো না খেয়ে জমিয়ে রেখেছিল। সেই ছেলেগুলো তিনটি ক্ষেত্রে অন্যদের থেকে অনেক বেশি এগিয়ে আছে।
১. SAT Score :
SAT হচ্ছে আমাদের দেশের ভর্তি পরীক্ষাগুলোর মতো। বাইরের দেশে। এই স্কোরের উপর ভিত্তি করেই বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে ভর্তি নেয়া হয়। দেখা যায় যে, এই এক্সপেরিমেন্টের বাচ্চাগুলোর মধ্যে মার্শমেলো জমিয়ে রাখা বাচ্চারা SAT এ অন্যদের থেকে অনেক ভালো নম্বর পেয়েছে!
২. Low Drop Out Rate :
আরেকটা বিষয় খেয়াল করা যায় ওই শিশুগুলোর মধ্যে। যারা তখনই মার্শমেলোটি খেয়ে নিয়েছিল, তাদের মধ্যে ড্রপ আউট বা কলেজ থেকে বের হয়ে যাবার প্রবণতা বেশি ছিল। অন্যদিকে, যারা জমিয়েছিল, তাদের এই ড্রপ আউটের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য! নেই বললেই চলে।
৩. BMI Rating :
BMI বা Body Mass Index রেটিং থেকে বোঝা যায় একজন মানুষ কতটুকু সুস্থ, সে শারীরিকভাবে কতটুকু ফিট, ফ্যাটের পরিমাণ কেমন আছে মর। এই রেটিংয়ে ভালো থাকাটা সুস্থ ও সুন্দর থাকার জন্যে অনেক বেশি দরকার। আর ওই মার্শমেলো জমানো ছেলেগুলো রেটিংয়ের দিক দিয়ে একেবারে উপরের দিকে ছিল!
এই পরীক্ষার একটা ফল দেখা যায়। সেটা হলো যে, শর্ট টার্ম গ্র্যাটিফিকেশন বা সাময়িক মোহকে পাত্তা না দিয়ে দীর্ঘস্থায়ী কোনো সিদ্ধান্ত যারা নেয়, জীবনে তাঁদের সফল হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এই টেস্টের যে ছেলেগুলো মার্শমেলো পনেরো মিনিটের জন্যে জমিয়ে রেখেছে, বড় হয়ে তারাই অন্যদের থেকে এগিয়ে গেছে। এই একটা দক্ষতা আছে বলেই তারা এটা পেরেছে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কিন্তু এটাই অহরহ ঘটতে থাকে। সাময়িক মোহের পেছনে ছুটতে থাকি আমরা, কখনো তার দেখা পাই আমরা, কখনো পাই না। কিন্তু এই ছোটাছুটিতে দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনাগুলো আর কাজে লাগানো হয় না আমাদের। এক পর্যায়ে সাময়িক মোহের চক্রেই আটকা পড়ে যেতে হয়।
আজ ঘুমাতে যাবে বলে যে পড়ালেখাটা কম করলে, সেটা গিয়ে তোমার পরীক্ষায় বাজে ফল আনতে পারে। কিংবা বন্ধুদের সাথে ডিল করবে ভেবে যে প্রজেক্টের কাজটা বাদ দিলে, সেই কাজটাই তোমার জন্যে এনে দিতে পারে বিশাল সাফল্য?
তাই চেষ্টা কর দীর্ঘ মেয়াদী চিন্তা করতে। সাময়িক এসব মোহ, আনন্দ বারবার আসবে। এগুলো হারিয়ে যাবে না। কিন্তু এদের পেছনে ছুটলে দীর্ঘ মেয়াদে গিয়ে ভুগতে তোমাকে হবেই! তাই এই সাময়িক মোহ বা Instant Gratification কে ত্যাগ করে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করলেই দেখবে সাফল্য আসবে। এখন তো জেনে নিলে, এই প্রক্রিয়াটা বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত!
.
নিজেকে জানো
আমি একটা সময় নিয়মিত ব্যাচে পড়াতাম। তো সব ব্যাচের প্রথম ক্লাসে আমার কমন প্রশ্ন ছিল, তুমি নিজেকে কতটুকু জানো?
প্রায় সবাই হাত তুলে বলত, তারা নিজেকে পুরোপুরি জানে।
তারপর তাদের বলা হতো, আচ্ছা, তাহলে বলো দেখি, তিনটা শব্দ, যা তোমাকে বর্ণনা করবে?