২. ভুল থেকেই শিক্ষা নাও
তুমি প্রথম কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছ। প্রথমবারেই একেবারে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বসবে, সে সম্ভাবনা খুব বেশি নেই। প্রথমবার নয় শুধু, শুরু র দিকে বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হওয়াটাই তাই স্বাভাবিক। অনেককেই দেখেছি এই প্রথম দিককার ব্যর্থতায় হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিতে।
তোমরা মোটেও সেটি করবে না। ইংরেজিতে একটি কথা আছে–
Every master was once a terrible disaster.
অর্থাৎ যে কেউ তার কাজে পারদর্শী হয়ে থাকলেও, শুরু র দিকে তাদের প্রায় সবাই ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়েছেন। বিখ্যাত লেখিকা জে কে রাউলিং এর বিশ্বজোড়া জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা হ্যারি পটার সিরিজ প্রথমে কোনো প্রকাশকই নিতে চাননি। তিনি ব্যর্থ হয়েছেন, কিন্তু চেষ্টা থামাননি। একটা সময় যখন হ্যারি পটার প্রকাশিত হলো, বাকিটা ইতিহাস। এখন তিনি বিশ্বের সফলতম লেখকদের একজন।
সফল ব্যক্তিরা সারাজীবনই সফল ছিলেন না। ব্যর্থতার নাগপাশে বদ্ধ থাকতে হয়েছে তাদের অনেককেই। কিন্তু তারা বিজয়ী, কারণ ব্যর্থতাকে জয় করে সাফল্যের পথ চিনে নিয়েছেন তারা। তুমিও তাই প্রথম দিককার ভুলগুলো নিয়ে হতাশ না হয়ে ভুল থেকে শিক্ষা নাও। সাফল্য আসবেই!
৩. আত্মবিশ্বাসী হও
তোমার মেধার কমতি নেই। তোমার মাথায় আইডিয়া গিজগিজ করে। তুমি খুব করে চাও কোনো একটা প্রতিযোগিতায় জিততে। কিন্তু কোনো একটা কারণে হচ্ছে না। কথা বলার ওই মঞ্চে যাও তুমি অনেক আশা আর উত্তেজনা নিয়ে, কিন্তু কথা বলতে গেলেই সমস্যা।
এমন যদি হয় তোমার অবস্থা, তাহলে তুমি আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগছ। যেকোনো প্রতিযোগিতায় জিততে হলে এই আত্মবিশ্বাসের খুব বেশি প্রয়োজন। তোমার জ্ঞান বুদ্ধি সবই থাকতে পারে, কিন্তু আত্মবিশ্বাস না থাকলে এসব প্রতিযোগিতায় সাফল্যের দেখা খুব একটা পাবে না তুমি।
ধরো, তুমি একটা প্রতিযোগিতায় গেলে। একটা বিজনেস কম্পিটিশন। সেখানে তুমি অনেক তথ্য, অনেক কৌশল নিয়ে গেলে। কিন্তু আসল কথা বলার সময়, উপস্থাপন করার সময় আর ভালোভাবে বলতে পারলে না। কথা জড়িয়ে গেল। আটকে গেল তোমার বিজয়ের সম্ভাবনা।
অন্যদিকে, তোমার বন্ধুটির প্রস্তুতি তোমার মতো নয়। কিন্তু সে আত্মবিশ্বাসের শক্তিতে বলিয়ান। তার উপস্থাপনায় হয়তো তোমার মতো তথ্যের ভার নেই, কিন্তু আত্মবিশ্বাস আছে। তোমার বন্ধুটিরই কিন্তু বিজয়ী হবার সম্ভাবনা বেশি হবে!
তাই আত্মবিশ্বাসী হতেই হবে। একবার ভাবো তো, তোমার অমিত প্রতিভা, মেধা আর প্রস্তুতির সাথে যদি যুক্ত হয় আত্মবিশ্বাস- অসাধারণ কিছু করে ফেলতে পারবে তুমি! তাই আজ থেকেই প্রস্তুত হও আত্মবিশ্বাসী হতে, সারা জীবন সেটি তোমার কাজে দেবে!
আশা করা যায় এই তিনটি টিপস মাথায় রাখলে পরের যেকোনো প্রতিযোগিতায় তোমাকে আমরা দেখতে পাব বিজয়ী হিসেবে। বিজয়ীর বেশে ঘরে ফিরে তুমি বলবে, পরিশ্রম আর কৌশলই আমাকে সাফল্য এনে দিয়েছে!
.
আইডিয়াকে কাজে লাগাও, সাফল্যের পথে পা বাড়াও
আমাকে প্রায়ই অনেকে এসে জিজ্ঞেস করে, ভাইয়া আমার মাথায় দান একটা আইডিয়া আছে, কী করব এই আইডিয়া দিয়ে? এগুলোকে বাস্তবায়ন করব কীভাবে? আমি তখন চুপচাপ ওদের আইডিয়াটা শুনি। অবাক হয়ে আবিষ্কার করি, ছোট ছোট ছেলেগুলো অসাধারণ সব আইডিয়া নিয়ে ভাবে, এসব আইডিয়া নিয়ে কাজ শুরু হলে পুরো দেশের আদলই পালটে যেত!
সমস্যা হলো, এই আইডিয়াগুলো বেশির ভাগ সময়েই আইডিয়াই থেকে যায়। এগুলোর আর বাস্তবে রুপান্তর করা হয়ে ওঠে না। ব্যস্ততা, অপর্যাপ্ত ফান্ড এবং উদ্যোগের অভাব- সবমিলিয়ে আইডিয়াটা ভুলেই যায় সবাই। আর এই অসাধারণ আইডিয়াগুলো যাতে হারিয়ে না যায়, তার জন্যে একটা সূত্র আছে। সূত্রটা খুব সাধারণ।
Idea X Effort = Result
বিষয়টা একটু বুঝিয়ে বলা যাক। একটা গল্প বলা যাক। একজন মানুষ, ধরা যাক তার নাম সাদমান। সাদমান অস্বাভাবিক মেধাবী একটা ছেলে, সারাদিন তার মাথায় আইডিয়া গিজগিজ করে। খুব সম্প্রতি তাঁর মাথায় দারুণ একটা ক্যাম্পেইনের আইডিয়া এসেছে, যেটা করলে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা সমস্যার একটা দারুণ সমাধান হবে!
তো সে ক্যাম্পেইন করতে গিয়ে পদে পদে সমস্যায় পড়তে থাকল। প্রথমেই ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বলল এই ক্যাম্পেইন করার মত যথেষ্ট জায়গা নেই শহরে। সে লোকবল পেল না, প্রয়োজনীয় টাকাও যোগাড় করা গেল না। একটা সময় সাদমান মহা হতাশ হয়ে পড়ল, তার দারুণ আইডিয়াটি কি তাহলে জলে গেল?
এই গল্পের দুই রকম শেষ আছে। একটা হলো সাদমানের ব্যর্থতার। এত শত বাধা পেরিয়ে সাদমানের আইডিয়া নিয়ে কাজ করার আগ্রহটা চলে যায় একটা সময়। সে ওসব বাদ দিয়ে অন্য কাজে মনোনিবেশ করে। হারিয়ে যায় আইডিয়া, হারিয়ে যায় সেটি নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা।
আরেকটা হলো সাদমানের সাফল্যের। এই ভার্সনে সাদমান হার মানেনি। সে লড়াই করে গেছে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সাদমান চেষ্টা করে গেছে তার আইডিয়ার বাস্তবায়নের। অবশেষে, একটা সময় তার ক্যাম্পেইন সফল হয়, সে তার আইডিয়া নিয়ে কাজ করে যায়, ঢাকার জলাবদ্ধতা ধীরে ধীরে কমে আসে।
এই গল্পটার সাথে আজকের লেখার সূত্রটার বড় একটা মিল রয়েছে। গল্পে সূত্রটার এপিঠ-ওপিঠ দুটোই দেখা গেছে। একটা মজার ব্যাপার হলো, ছোটবেলায় শেখা সেই সূত্র, যে 0 এর সাথে কোনোকিছুর গুণ করলে ফলাফল শূন্য হয়- এটাই এখানে কাজে লেগেছে।