তোর এত সুন্দর গানের গলা, মাশাআল্লাহ!
এই ধরনের প্রশংসা করতে কখনো দ্বিধা করবে না। কারো প্রতিভা থাকলে তার প্রশংসা করলে সে আরো বেশি উদ্দীপনা পাবে এগিয়ে যাবার, তার পরের কাজগুলো আরো ভালো হবে!
গুণের কদর করা :
তুই না থাকলে আজকে ক্রিকেট ম্যাচটা হেওে যেতে হতো!
রাত তিনটায় তুই যদি রক্ত দিতে না আসতি, কী যে হতো!
মানুষের অনেক মানবীয় গুণাবলী আছে। সেগুলোর যথাযত মূল্যায়ণ করলে তারা অনেক বেশি সুখী হবে। তোমার কোনো বন্ধু যদি অনেক কষ্টে কোনো কাজ কওে, সেই গুণের কদও করবে, দেখবে তারা আরো বেশি সহায়তা করবে পরে!
অনুপ্রেরণা দেয়া :
দোস্ত, কোনো চিন্তা করিস না। আমরা আছি না? সব ঠিক হয়ে যাবে।
যেকোন সমস্যায় খালি আমাকে একটা কল দিবি। সব মুশকিল আসান করে দেব!
মানুষের অনেক রকম সমস্যা চলতে পারে, ব্যাড প্যাঁচ যেতে পারে, সময়টায় বন্ধু বা পরিচিত একজন হিসেবে তোমার প্রথম কাজ হবে তা সহায়তা করা। তাদের সমস্যায় বন্ধু হিসেবে এগিয়ে যাওয়া, বিভিন্ন কাল করে দিয়ে তাদের সময়টা যাতে আরেকটু ভালো হয় সে খেয়াল রাখা। তাদের জন্যে অনুপ্রেরণার কারণ হও, তারা খুশি হবেই!
সমাদর করা :
মা, আজকের কাচ্চিটা যা হয়েছে না!
আব্বু, তোমার এই গিটটা ফাটাফাটি হয়েছে!
মানুষ মানুষের জন্যে অনেক কিছুই করে। কিন্তু সবকিছুকে ঠিকভাবে সমাদর করি না আমরা অনেকেই। তাতে মানুষটি মনে একটু হলেও কষ্ট পায়, মনে করে তার এই পরিশ্রম বুঝি বৃথা গেল! তাই সব কাজকে সমাদর করবে। ধন্যবাদ দেবে, এপ্রিশিয়েট করবে। তাহলে মানুষগুলো খুশি থাকবে।
এই কাজগুলো কিন্তু রাতারাতি একদিনে হয় না। এগুলোর জন্য গড়ে তুলতে হয় সু-অভ্যাস। তাই, সুখে থাক, সুখে রাখ- এ লক্ষ্যে অভ্যাসগুলো রপ্ত করে ফেল, দেখবে নিজেরই ভালো লাগবে!
.
“তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না” থেকে আত্মরক্ষার কৌশল
গতানুগতিক পড়ালেখার বাইরে নতুন কিছু করতে গেলেই অনেকগুলো বাধার মুখে পড়তে হয়। নিজের বাসায় পরিবারের বাধা তো আছেই, বাইরের অনেকগুলো মানুষের কথা শুনতে হয়। পদে পদে এসব বাধা জয় করে নিজের স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাওয়াটা বেশ কঠিন মনে হয় তখন। দেখে আসা যাক কেমন সে বাধা!
১. পরিবারের আপত্তি
বাংলাদেশের বেশিরভাগ পরিবারের সন্তানদের কাছে আশা থাকে যে ছেলে বড় হয়ে পড়ালেখা করে ভালো চাকরি করবে, অর্থ উপার্জন করে পরিবারের দেখভাল করবে। সন্তান বড় হয়ে যখনই অন্যরকম কিছু করতে যায়, তখনই শুরু হয় বিভিন্ন রকম বাধা! ধরো তুমি নতুন কিছু করলে। নতুন একটা উদ্যোগ শুরু করলে। পরিবার থেকে বলবে,
এসব করে কোনো লাভ আছে? ফিউচার কী এসবের?
তুই যে এগুলো করিস, মানুষ শুনলে কী বলবে?
তোর মামা-চাচার ছেলেমেয়েরা কত বড় বড় জায়গায় আছে, তোর কী হবে?
এত শত প্রশ্নের পর যখন তোমার উদ্যোগটা একটু হলেও দাঁড়িয়ে যাবে, তখন শুরু হবে আরেক সমস্যা। এবার বাসা থেকে শুরু করবে তোমার পড়ালেখা নিয়ে কথা বলা।
পাশের বাড়ির আপার দুই ছেলেই দেখ মেডিকেলে। আর তুই? কী সব করে বেড়াস!
এই যে এসব করিস, নিজের সিজিপিএর দিকে একবার তাকিয়েছিস?
এমনকি তুমি তোমার কাজ নিয়ে জনপ্রিয় হলেও তাঁদের হতাশা কাটবে না। তারা বারংবার প্রশ্ন তুলেই যাবেন!
২. পাশের বাসার আন্টি
শুধু প্রতিবেশীরাই নয়, এই শ্রেণিতে পড়ে তোমার দুরসম্প আত্মীয়রাও। এদের খোঁজ পাওয়া যায় না কখনোই, শুধু তোমার পরী রেজাল্টের সময় এদেরকে দেখা যায়। আর দেখা যায় তোমার কোনো নতুন উদ্যোগের শুরুতেই বাগড়া বাধাতে।
ভাবী, আপনার ছেলে পড়ালেখা বাদ দিয়ে এসব কী করছে? মানা করেন বখে যাবে!
আপা, সময় থাকতে ছেলেকে পড়তে বসান। রেজাল্ট কেমন হচ্ছে ওর?
আমার এক পরিচিত আপার ছেলেও এইসব কাজ করে বেড়াতো। এখন ঘুরে বেড়ায়, বেকার। বুঝলেন তো ভাবী?
এত শত কথার ভিড়ে পরিবারের চাপটা খুব করে ঘাড়ের উপরে আসে, সে আর নামতেই চায় না!
লোকে কী ভাবলো!
আরেকটা হচ্ছে তোমার নিজের ভয়। পরিবারের এত শত কথা শোনার পর তোমার নিজেরও মনে হয় এটাই মাথায় আসে, যে তুমি যে কাজটা করছ সেটা ঠিক হচ্ছে তো? যদি এই কাজে ব্যর্থ হও, তাহলে বাসায় কী বলবে? এই ব্যর্থতা মাথায় নিয়ে কাজ করাটা ঠিক উচিত হবে না হয়তো! সাথে বাসায় বলা কথাগুলো মাথায় বাজতে থাকে–
এইসব করতে থাকলে বিয়ে দিয়ে দিব একেবারে। বউ-সংসার চালাতে গেলে সব পাগলামি যাবে!
চাকরি-বাকরি তো হবে না, এইসব করে আর কতদিন চলবা?
দুধ-কলা দিয়ে কালসাপ পুষলাম এতদিন। এই ছেলে তো আমার মানসম্মান নষ্ট করবে পুরা!
এসব কথার পরে তোমার নিজের ভেতরের উদ্যমি মনটা একটু একটু করে নিস্তেজ হয়ে পড়বে, শোকাহত হবে।
৩. সহজ সমাধান :
একটা বিষয় সব সময় মাথায় রাখবে। তুমি একটা সমাজে বাস কর, তাই সমাজকে বাদ দিয়ে তুমি চলতে পার না। আর সমাজের সাথে চলতে থাকলে সমাজের অদ্ভুত মানুষগুলোর উদ্ভট চাপ তোমার উদ্যোগকে বাধা দিতেই থাকবে। তোমার হাতে এখন দুটো অপশন খোলা :
ক. সমাজের চাপে একদম সংকুচিত হয়ে হাল ছেড়ে দেয়া।
খ. সমাজের চাপকে থোড়াই কেয়ার করে নিজের কাজ করে যাওয়া।
এখন তুমিই বলো, নিজের স্বপ্নকে পাথরচাপা দিয়ে কি তুমি প্রথম অপশনটি বেছে নিতে পারবে? তাহলে তোমার সাথে ইন্টারনেটের ওই বিখ্যাত মিমটির পার্থক্য কী? সেখানে বলা হয়, বেশিরভাগ মানুষের জীবন তিন ধাপে শেষ হয়, জন্মানো- লোকে কী বলে এই ভয়ে কিছু না করা- মৃত্যু!