আরেকটা বিষয়। তুমি যাকে কল করছ, এটা জেনেই কল করছ যে এই মানুষটি আসলে কে। তাই ফোন দিয়েই ভাই, আপনি কে বলছেন? বলে সময় নষ্ট করবে না। এতে যাকে কল করছ তিনি নিজেও মহা দিল উঠতে পারেন। কুশলাদি বিনিময় করলে ভালো হয় এ জায়গাটায়।
২. নিশ্চিত হয়ে নাও ফোনের ওপাশের মানুষটি ব্যস্ত কি না
তুমি ফোন দিয়েছ দরকারি কাজে। উনি ব্যস্ত থাকলেও হয়তো ফোন খাতিরে দুএকটা কথা বলে দিতে পারেন, কিন্তু তোমার দায়িত্বই বলা চলে যে উনি ব্যস্ত থাকলে পরে একসময় ফোন দেয়া।
এভাবে বলতে পার, আমি জানি আপনি অনেক ব্যস্ত একজন মানুষ, আপনার কি কথা বলার দুই মিনিট সময় হবে? এতে দুটো বিষয় হচ্ছে। উনি ব্যস্ত না থাকলেও তোমার কথায় অনেক খুশি হচ্ছেন, তোমার কথায় তাঁর নিজেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে তোমার কাছে। এই সুন্দর ব্যবহারটুকু অনেক কাজে দেবে ভবিষ্যতে।
৩. কথা শেষ মানে পরিচয় শেষ না
কাজের কথা বলা শেষ। এখন কী তুমি ফোন রেখে দেবে? মোটেও না। তোমার কাজের একটা Call to action রেডি রাখতে হবে না? জেনে নাও এরপরে তার সাথে কবে কথা বলা যাবে। কোথায় দেখা করা যাবে। ইমেইল আইডি নিয়ে রাখবে, হাল আমলের ফেসবুক আইডি জানা থাকলে তো আরো ভালো!
৪. বারবার কল নয়
ধরো তুমি একজন মানুষকে ফোন দিলে। সে ফোনটা রিসিভ করল না। তুমি কি তাকে বারবার ফোন দিয়ে জ্বালাতে থাকবে? একটু পর কল করতে থাকবে? মোটেও না। এটা খুব খারাপ দেখায়, মানুষটিও বারবার কলে বিরক্ত হয়।
এক্ষেত্রে তুমি যেটা করতে পারো, সেটা হচ্ছে উনার ফোনে একটা টেক্সট করে রাখতে পার। ফেসবুক-মেসেঞ্জারের যুগে মেসেজিং করাই হয় না আর তেমন। কিন্তু দেখ, বারবার কল না দিয়ে ফোনে একটা ছোট্ট টেক্সট করে রাখাটা কিন্তু অনেক কাজের হবে।
ধরো তুমি টেক্সট দিলে, যে তুমি একটা স্কুলের ডিবেট ক্লাবের প্রেসিডেন্ট, ক্লাবের ইভেন্ট নিয়ে তুমি কথা বলতে চাও। উনি কখন ফ্রি জানলে তুমি কল দেবে। এখানে দুটো বিষয় হয়। এক হলো যে, মানুষটি অর্ধেক জেনেই গেল কেন তুমি কথা বলতে চাও, এতে তোমার সময় বাঁচল। আরেকটা বিষয় হলো যে উনি তোমার জন্য সময় বের করে রাখতে পারবেন টেক্সট দেখে।
বাংলায় একটা কথা আছে, জানো তো? পাত্তা না দিলে পাত্তা আদায় করে নিতে হয়। সেজন্য যদি কখনো দেখ যে কেউ তোমার কল রিসিভ করছে। না বা ঠিকঠাক কথা হচ্ছে না, তাহলে বুঝবে শুরুর দিকের নিয়মগুলোতে কোনো না কোনো ভুল হয়েছে! শুধরে নিয়ে আবার কথা শুরু কর, দেখবে সুন্দর একটা প্রফেশনাল সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছে!
.
সালাম দেয়া এবং ভালো গুণের প্রশংসা করা
কয়েকদিন আগের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হচ্ছি, হঠাৎ দেখি বয়োজ্যেষ্ঠ একজন মানুষ, গালভরা দাড়ি, যিনি আমার পাশেই নামাজ পড়েছেন- এসে সুন্দর করে একটা সালাম দিলেন। আমাকে। একটু চমকে গেলাম, ভাবলাম যে সাধারণত ছোটরা বড়দের সালাম দেয়, আর এই সিনিয়র মানুষটি আমাকে সালাম দিলেন! উনি তো কোনো টিচারও হতে পারেন!
আমার অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা দেখে মানুষটা মুচকি হাসলেন। বললেন, অবাক হচ্ছ, বাবা? এ আর এমন কী, প্রায় সবাই অবাক হয়ে তাকায়! আমি আমতা আমতা করে বললাম, আসলে এমন তো কখন হয়নি আমার সাথে, তাই একটু চমকে গেছি। ভদ্রলোক বললেন, যে এই সালাম দেয়ার কাজটা শুরুর পর অনেকেই অবাক হতো। উনি সিনিয়র মানুষ, তাই অবাক হওয়ার মাত্রাটা একটু বেশিই হতো। মজার ব্যাপার হলো, এই বিষয়টা বুঝতে পেরে তিনি বেশি করে সালাম দেয়া শুরু করেন। নিজের থেকে ছোটদের সালাম দিতেন, নিজের স্টুডেন্ট দেখলেও সালাম দিতেন।
এ পর্যায়ে বুঝলাম যে ভদ্রলোক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। আরো ভালো লাগল, একজন শিক্ষক এমন একটা দারুণ কাজ করে যাচ্ছেন! কথায় কথায় তিনি জানালেন, কাউকে যদি অবাক করতে চাও, তাহলে এই কাজটা করে দেখতে পার। মানুষটা অবাক হবে, পাশাপাশি তার মনটাও ভালো হয়ে যাবে!
আমার কাছে একটু অবাক লাগছিল, যে একটা সালাম কী করে মন ভালো করে দিতে পারে? আমি নিজেই তখন সবাইকে সালাম দেয়া শুরু করলাম। বাসার দারোয়ানকে দেখলে সালাম দিতাম, ড্রাইভারের সাথে দেখা হলে সালাম দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করতাম, দোকানদার মামার কাছ থেকেও শুনতাম কেমন আছেন তিনি। এখানে যেটা হতো, এই সালাম বা কুশলাদির কোনোটাই আশা করতেন না তারা। এজন্য যখন তাদেরকে এগুলো দেয়া হতো, অন্যরকম একটা আনন্দ পেতেন কর্মজীবী মানুষগুলো। আসলেই মনটা ভালো হতো তাদের।
বিদেশে যখন গিয়েছিলাম, তখন দেখেছি রাস্তা দিয়ে যাওয়া আসার সময়ে, মানুষেরা একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে হাসি দেয় একটা। মুচকি হাসি, কিন্তু অপরিচিতজনের সেই হাসিতে মনটা একটু হলেও ভালো হয়ে যায়! বাংলাদেশে আমি চেষ্টা করেছিলাম এরকম, মানুষজন এমন ভু কুঁচকে তাকিয়েছে, যে বুঝেছি এদেশে আপাতত হাসি থেরাপি কাজে লাগবে না। তাই সালামই সই!
মানুষের দিনটাকেই সুন্দর করে দেয়ার আরো কিছু টিপস দেয়া যেতে পারে এখানে।
প্রশংসা করা :
আরে! তোর কালকের স্ট্যাটাসটা তো অসাধারণ ছিল!
দোস্ত, ছবি যেইটা তুলেছিলি গতকাল, অন্য লেভেলের হয়েছে, সত্যি!