তাই আমি স্বপ্ন দেখি সেই দিনের, যখন শুধু গোল্ডেন জিপিএ পাবার জন্যে কেউ পড়ালেখা করবে না, শেখার জন্যে পড়ালেখা করেই গোল্ডেন পেয়ে যাবে।
৩. Never Stop Learning :
এমন এক যুগে আমাদের বসবাস, যেখানে আমরা সিলেবাসের বাইরে এতটুকুও পড়তে চাই না। সিলেবাস তো সিলেবাসই, এর মধ্যেও আমরা শুধু পড়তে চাই পরীক্ষায় যেগুলো আসতে পারে। সাজেশন নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা হয়ে গেছে আমাদের। কিন্তু ব্যাপারটা হলো, শেখার কোনো শেষ নেই।
মানুষ হিসেবে আমরা সবাই এক-একটা বইয়ের মত। কেউ হয়তো ফিলোসফির বই, কেউ ফিজিক্সের। সবার কাছেই কিছু না কিছু শেখার আছে। সেজন্যে শেখার মানসিকতাটা ধরে রাখতে হবে। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যেন আমরা শিখে যেতে পারি, সে স্বপ্নই দেখি আমি।
৪. মুখস্ত নয় বুঝে পড়ো :
নকল করা খুব খারাপ একটা কাজ। বাড়ী থেকে মুখস্ত করে এসে পরীক্ষা হলে উত্তর দেয়াটাও কিন্তু একরকম নকলই বলা চলে! একগাদা তথ্য মুখস্ত করে সেটা দিয়ে পরীক্ষায় পাশ করাটা মোটেও কাম্য নয়। মুখস্ত করার দরকার আছে, কিন্তু অবশ্যই সেটি বুঝে বুঝে করতে হবে। তাই আমি স্বপ্ন দেখি এমন এক বাংলাদেশের, যেখানে সব ছাত্র ছাত্রী ঝাড়া মুখস্ত করে বুঝে বুঝে পড়ালেখা করবে।
৫. পড়ালেখার পাশাপাশি সহশিক্ষাকে কৃতিত্বদান :
আমাদের মনের মধ্যে একটা ধারণা ঢুকে গেছে যে, সিজিপিএ বা। জিপিএতে ভালো গ্রেডিং অর্জনই হচ্ছে জীবনের সব। এছাড়া জীবনে ভালো। কিছুই করার নেই। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে, বিভিন্ন মানুষ কিন্তু বিভিন্ন বিষয়ে ভালো। একটা বনে একটা বাঁশ পুতে দিয়ে যদি সিংহ, নেকড়ে, বাঘ, হাতি আর বানরকে বলা হয় যে, যে প্রাণী আগে বাঁশে চড়তে পারবে, সে-ই সেরা। তাহলে বানর হেসেখেলে চড়তে পারবে সেখানে। তার মানে কি সে সেরা? মোটেও না!
একইভাবে, সিজিপিএ ভালো না হলেই যে সে ভালো নয়, এমন ধারণা পাল্টাতে হবে। কেউ হয়তো ভালো ছবি আঁকে, ভালো গান গায়, ভালো কবিতা লেখে যা সিজিপিএতে কখনো আসবে না। তাই বলে কি এসব গুণের কোন মূল্য নেই? আমার স্বপ্ন হলো, এমন একটা দিন আসবে যখন একাডেমিক পড়ালেখার কৃতিত্বের পাশাপাশি এসব সহশিক্ষাকেও কৃতিত্বের সাথে দেখবে সবাই!
৬. বুদ্ধির পরিচয় শুধু পড়ালেখায় নয় :
অনেকেরই ধারণা, বুদ্ধিমত্তা যাচাই করার একমাত্র উপায় হলো পড়ালেখা। পড়ালেখায় ভালো তো সে বুদ্ধিমান আর পড়ালেখায় খারাপ তো তার বুদ্ধি কম। কিন্তু আমি বলব, পড়ালেখায় ভালো হওয়াটা বুদ্ধিমত্তার স্রেফ একটা অংশ। এছাড়াও অনেক কিছু আছে, যেগুলো না জেনে শুধু পড়ালেখায় ভালো হলে তাদের দিয়ে পৃথিবীর খুব বেশি উপকার আসলে হয় না। তাই আমি স্বপ্ন দেখি, বাংলাদেশের সবাই পড়ালেখার পাশাপাশি অন্যান্য সহশিক্ষামূলক কাজেও উদ্বুদ্ধ হবে।
সত্যি বলতে কি, বাংলাদেশে পড়ালেখাটা আসলে মোটেও আনন্দের নয়। কিন্তু সেটিকে যদি আনন্দময় করে তোলা যেত, শিক্ষার্থীরা যদি হাসতে হাসতে শিখতো, তাহলে ব্যাপারটা অসাধারণ হতো না? আমাদের এই স্বপ্নগুলো পূরণ হলে আমরা এমন এক বাংলাদেশ দেখব, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা আনন্দের সাথে শিখছে। ভাবতেই কি দারুণ লাগে, তাই না?
.
দৃষ্টিভঙ্গী বদলালেই বদলে যাবে জীবন
আমাদের তরুণ প্রজন্মের বড় একটা অংশকে আমি দেখি হতাশায় ভুগতে। তারা অনেক ডিপ্রেসড জীবন নিয়ে মহা চিন্তিত। আমার মনে প্রশ্ন জাগে, এই হতাশা আসছে কোত্থেকে? উত্তর মেলে, এই হতাশার মূলে আছে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি। এই এক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে পারলে কিন্তু জীবনটা অনেক সহজ হয়ে যায়, জীবনের অঙ্ক মেলাতে আর হতাশ হতে হয় না। আজ তাই দৃষ্টিভঙ্গি বদলে সুখী একটা জীবন পাবার তিনটি উপায় বলে দিচ্ছি।
১. সবকিছুকে কঠিন করে না নিয়ে সহজভাবে চিন্তা কর
আমাদের সবারই কিন্তু এ ধরনের বন্ধু আছে যারা সবসময় বলতে থাকে দোস্ত আমার কী হবে, আমি পড়া কিছু পারি না! আর রেজাল্ট বের হলে দেখা যায় ফাটাফাটি একটা নম্বর পেয়ে যায় তারা। আবার আরেক রকম বন্ধু আছে যারা বেশি পড়ালেখা করে না, আর সেটি নিয়ে তাদের মাথাব্যথাও নেই। একশতে পাশ নম্বর চল্লিশ তুলতে পারলেও তারা খুশি।
প্রথম ধরনের বন্ধুদের মনে সবসময় চলতে থাকে যে, বেশি করে ভালোমত পড়াশোনা না করলে রেজাল্ট খারাপ হবে, তার চাকরি-বাকরি হবে না, বিয়ে হবে না, কিচ্ছু হবে না! তার জীবনে নেমে আসবে মহা অন্ধকার। আর দ্বিতীয় ধরনের বন্ধুদের মাথায় খেলা করে অন্য বিষয়। পরীক্ষা তাদের কাছে স্রেফ একটা পরীক্ষাই। এটায় খারাপ করলে পরেরটায় ভালো করবে, সুযোগের তো আর অভাব নেই এমনই চিন্তাধারা তাদের। তাহলে যেটা দেখা যাচ্ছে, স্রেফ দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা বলে দুজন বন্ধুর পরীক্ষা নিয়ে ধারণা বেমালুম আলাদা হয়ে যাচ্ছে!
আমাদের জীবনটাও কিন্তু ঠিক এরকমই। চারপাশে তাকালে দেখা যাবে প্রচুর মানুষ আছে যারা অনেক কিছু করেও সুখী না, তাদের কাছে জীবনটাই একটা হতাশার নাম, সবকিছুই কঠিন তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে। ভালো কিছু করলেও সেটিকে তাদের কাছে অনেক কম মনে হয়!
কিছু মানুষ আবার জীবনটাকে খুব সহজভাবে নেয়। তাদের কাছে সম্ভাবনা এলে তারা তা হাসিমুখে গ্রহণ করে, সাফল্য পায়। আবার ব্যর্থতায় ভেঙে না পড়ে তারা নতুন কিছুর পথে এগিয়ে যায়। সবকিছুকে সহজভাবে নেয়ার বিরল প্রতিভা তাদের।