একটু বড় হয়ে দেখলাম যে এসব আর কুল নয়, কুল হলো স্পাইক করা চুল নিয়ে ঘোরা। যেই ভাবা সেই কাজ, লেগে পড়লাম চুল স্পাইক করার মিশনে। এখনো মনে আছে, গোসল করে মাথায় টুপি পরে ঘুরতাম যাতে চুলগুলো স্পাইক করা থাকে! বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে দেখি আরেক কাহিনি। এখন ইংরেজিতে কথা বলা, ইংরেজি মুভি দেখে সেই নিয়ে বকবক করাটা অনেক কুল, তাই সেটা শুরু করলাম।
পড়ালেখা শেষ করে এখন বুঝতে পারছি, সত্যিকারের কুল আসলে কী। না, এতে কোনো ভাব নেই। বলছি সামাদ চাচার কথা। এই মানুষটি সত্যিকারের কুল, তিনিই আসল সুপারহিরো। বাস্তবের সুপারহিরোরা আলখেল্লা পরে পৃথিবী বাঁচায় না, একজন রিকশাচালকও তার সামর্থের সবটুকু দিয়ে গাছ লাগিয়ে পৃথিবী বাঁচাতে পারেন।
ডেইলি স্টার ও সামাদ চাচা :
সামাদ চাচার খবর এখন আর পৃথিবীর অজানা নয়। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে অনেকেই এখন তাকে চেনেন। বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিকগুলোর একটি, The Daily Star এর ২৬ বছর পূর্তিতে সামাদ চাচাকে ঢাকায় এনে সংবর্ধনা দেয়া হলো। ভাগ্যক্রমে আমিও সেখানে ছিলাম, তাই এমন। একজন মাটির মানুষের সাথে কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার।
দেখলাম, সামাদ চাচার মুখ ভার। তার মুখে হাসি নেই। সবাই জিজ্ঞেস করছে তাকে, কিছু লাগবে কি না, তিনি কিছু খাবেন কি না। তবুও তাকে চিন্তাগ্রস্ত লাগে। অবশেষে একসময় সত্য জানা যায়। উনি ঢাকায় এসে আজ একটা গাছও লাগাতে পারেননি, তাই তার মন খারাপ।
তৎক্ষণাৎ একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, সামাদ চাচাকে গাছের চারা এনে দেয়া হলো, তিনি মহাব্যস্ত হয়ে গাছ লাগালেন। তার মুখে হাসি ফিরে এলো। তিনি স্বস্তি পেলেন, একদিনের জন্যেও গাছ লাগানো মিস হলো না! আর আমরা অবাক হয়ে তাকিয়ে ভাবলাম, এ কেমন মহামানুষ?
সামাদ চাচার মতো চার যুগ ধরে গাছ লাগানোর মত প্রায় অসম্ভব কাজ বা হয়তো কেউই পারব না। কিন্তু আমরাও কিন্তু চাইলেই প্রতিদিন একটি করে ভালো কাজ করতে পারি। সেটা হতে পারে এলাকার বৃদ্ধ এবং বড় কোনো মানুষকে একবেলা ভরপেট খাওয়ানো, কিংবা পথশিশুদের জামাকাপড় কিনে দেয়া ইত্যাদি অনেক কিছু! সবকিছুই করা সম্ভব, যদি তোমার সেই সদিচ্ছাটুকু থাকে।
.
সময় বাঁচানোর শতভাগ কার্যকর কৌশল
বর্তমান প্রজন্মের বড় একটা সমস্যা হলো যে তারা এত বেশি আর ভিন ভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে যে, প্রায়ই দেখা যায় কোনো না কোনো কাজ করার জন্যে সময় জোগাড় করাই যায় না। শুধু সেটাই না, এই কাজগুলো আর পরে করার সময় পাওয়া যায় না। ডেডলাইন মিস হয়, জমা হয় আক্ষেপ। পরমুহূর্তেই আবার নতুন নতুন ডেডলাইন আসে, নতুন কাজের নিচে চাপা পড়ে যায় না করা কাজগুলো। এভাবে একবার না করা কাজগুলো আর কোনোদিনই করা হয়ে ওঠে না। ব্যস্ততা সেগুলোয় আর হাত দিতে দেয় না, একসময় ফুরিয়ে যায় তার প্রয়োজনীয়তা।
আমারও ঠিক এরকমই হতো কাজ করার সময়। একগাদা কাজের ভিড়ে পুরনো কাজ খুঁজে পেতাম না, সেগুলো আসলেই আর করা হতো না কোনোদিনই। এরকম সময়ে সন্ধান পেলাম দারুণ একটা ট্রিকের। এটাকে বলা হয় Time hack! খুব বেশি সাধারণ এই পদ্ধতিটা অবলম্বন করার পর থেকে সময়ের কাজ সময়ে করে ডেডলাইন পার করতে আর কোনো অসুবিধা হয়নি আমার। ভালোভাবেই করে ফেলেছি সব কাজ!
এই পদ্ধতিটা কয়েক ধাপে করে এগোতে হয়। সবগুলো ধাপ শেষ করার পর দেখবে যেকোনো ডেডলাইনের আগেই তোমার কাজ প্রস্তুত! দেখে নাও সে ধাপগুলো :
ধাপ-১ : প্রথমেই তোমাকে কাগজে একটা লিস্ট করতে হবে। লিস্টে থাকবে পরের দিন যে কাজগুলো করবে, সেগুলোর নাম আর বিবরণ। এ কাজটা করতে হবে ঘুমাতে যাবার ঠিক আগে, কারণ তাতে নতুন কোনো কাজ যোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।
তোমার হয়তো মনে হবে, কাজ লিস্টে লিখে কী লাভ, এমনিতেই তো মনে থাকে! সত্যিটা হলো, এগুলো আসলে মনে থাকে না। ঠিক যেমন ক্লাসের পড়ার নোট না নিলে দুই দিন পর ক্লাসে কী হয়েছে সেটা আর মনে থাকে না, কাজের ক্ষেত্রেও তাই। এজন্যেই লিস্টে সুনির্দিষ্ট করে সবগুলো কাজের নাম লিখতে হবে।
ধাপ-২ : দিনের শুরু থেকেই লিস্টের কাজ একে একে শেষ করতে হবে। হ্যাঁ, এটা সত্যি যে, দিনের শুরু হলেই আমাদের নিজের কাজ বাদে অন্য কিছু করতে ইচ্ছা করে, কারো হয়তো ইউটিউবে গান শুনতে ইচ্ছা করে, কারো একটু ফেসবুকিং করতে। কিন্তু এগুলো করার আগে লিস্টের কাজ শেষ করার দিকে মন দিতে হবে। লিস্টের কাজ শেষ হয়ে গেল কোনো সমস্যাই নেই, কিন্তু শেষ করার আগে অপ্রয়োজনীয় অন্যান্য কাজ না করাই ভালো।
ধাপ-৩ : এক একটা কাজ শেষ করবে, এবং তারপর সেগুলো এক এক করে কেটে দিবে। হ্যাঁ, তোমার মনে হতে পারে কাজ শেষ হলে সেটা তো মনেই থাকবে, কাটার কি দরকার। কিন্তু এই যে একটা কাজ শেষ করে কেটে দিলে যে একরকম বিজয়ের আনন্দ মেলে, এটা আর কোথাও পাবে না তুমি। তাই কাজ শেষ করা মাত্র সবগুলো কেটে দেবে।
ধাপ-৪ : সবগুলো কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করবে প্রতিদিন। হ্যাঁ, তোমার হয়তো অনেক ব্যস্ততা থাকতে পারে, অন্য কিছুতে তুমি ব্যস্ত থাকতেই পার, কিন্তু লিস্টের কাজের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। তাই চেষ্টা করবে দিনের কাজ সব দিনেই শেষ করে ফেলতে।