তোমাদের তাই বারবার একটা কথাই বলব, হাল ছেড় না। আইডিয়াগুলোকে হারিয়ে যেতে দিও না। নিজের স্বপ্নকে ফলো কর, সাফল্য দেখা দেবেই!
.
সুন্দর মানসিকতা গড়ে তোলার ৬টি উপায়
Great minds talk about ideas; average minds talk about events; small minds talk about people.
এই উক্তিটা প্রথম যেদিন শুনেছিলাম, মনে হয়েছিল কেউ যেন সপাটে একটা চড় মেরেছে আমাকে। নিজের কাছেই মনে হয়েছিল, আমিও তো প্রায়ই মানুষকে নিয়ে একথা সেকথা বলি, সমালোচনা করি। ব্যাপারটা বেশ খারাপ লেগেছিল তখন। আমার বন্ধু শামিরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, যে এমনটা আসলে কেন হচ্ছে আমাদের সাথে? সবজান্তা শামিরের উত্তর ছিল, যে আমরা আসলে নিজেদের সামর্থ্য নিয়ে প্রায়ই সংশয়ে থাকি, নিজের আত্মবিশ্বাসটা থাকে না। এইজন্যেই অন্য কারো নামে খারাপ কিছু বললে বা সমালোচনা করলে এক ধরনের আত্মতুষ্টি পাওয়া যায় আর কী।
ভেবে দেখলাম, কথা কিন্তু মিথ্যা না। ছোটবেলায় যখন মা এসে বলতো, স্কুলে ফার্স্ট হতে পারিস না কেন? তখন আমার অজুহাত তৈরিই থাকতো, যে ফার্স্ট বয়ের অনেক টিচার, তার আসলে ব্রেইন নেই, টিচারের জোরে ফার্স্ট হয়। কলেজ বা স্কুলে কো-কারিকুলার কোনো কাজে কেউ ভালো করলে আমরা বলতাম, ও তো পড়াশোনায় অনেক বাজে, এজন্যে ডিবেট করে নাম কুড়াচ্ছে। এমন কি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কম্পিটিশনে যখন কোনো প্রাইজই আনতে পারছিলাম না, তখন বন্ধুদের বলতাম, আরে দোস্ত, আমার আইডিয়াটা সবচেয়ে বেশি ব্রিলিয়ান্ট ছিল, জাজগুলো সেটা বুঝতেই পারলো না!
আসলে ব্যাপারটা সত্যি। আমরা অন্যদের ব্যাপারে খারাপ কথা, সমালোচনা করে নিজের দোষগুলোকে, নিজের অপ্রাপ্তিগুলোকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করি। তাই Great Mind তো পরের কথা, অন্তত Small Mind যাতে আর না হতে হয়, সে চেষ্টা টা তো করাই যায়। সমস্যা হলো, অন্যদের নিয়ে কথা বলাটা আমাদের একরকম অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। কী করে রক্ষা পাওয়া যায়। এমন অভ্যাস থেকে? এই প্রশ্নের কয়েকটি সমাধান রয়েছে।
১. সংকীর্ণমনা হবে না
নিজের মনকে ছোট্ট খাঁচায় বন্দি করে রাখা যাবে না। শুধুমাত্র শোনা খবরে বিশ্বাস করতে হবে, এমনকোনো কথা নেই কিন্তু! তথ্যের এই যুগে চেষ্টা করো নিজেকে ছড়িয়ে দেয়ার, যতোটা পার তথ্য জেনে নেবার। এতে যেমন তোমার জ্ঞান বাড়বে, তেমনি বিবেকবোধ আরো উন্নত হবে, অন্য মানুষকে নিয়ে কথা বলবার ইচ্ছটাই থাকবে না!
২. গসিপ থেকে দূরে থাকো
মানুষ তোমাকে নিয়ে গসিপ করতেই পারে, তোমার পেছনে তোমার নামে আজেবাজে কথা ছড়াতে পারে। তার মানে এই নয় তুমিও তাদের নিয়ে গসিপ করা শুরু করবে। তাহলে ওদের সাথে তোমার পার্থক্য থাকলো কোথায়?
৩. মানুষ নয়, সমস্যার দিকে ফোকাস করো :
তোমার অফিসের বস কিংবা সহকর্মী কিংবা স্কুলের সহপাঠি কোনো কাজে ভুল করলে বা সমস্যা সৃষ্টি করলে তাদের সমালোচনা না করে সমস্যার দিকে নজর দাও। মানুষ ভুল করতেই পারে, অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাদের দোষ না দিয়ে সবার আগে সমস্যার সমাধানের দিকে ফোকাস করো।
৪. শুধু নিজেকে নয় বিশ্বকে নিয়ে ভাবো :
বর্তমান বিশ্ব কিন্তু খুব সুখে নেই। বিভিন্ন রকম দূষণ, দেশে দেশে যুদ্ধ, জঙ্গিবাদ থেকে শুরু করে নানা সমস্যায় পৃথিবী এখন জর্জরিত। তাই আশেপাশের মানুষদের সমালোচনায় তোমার সময় নষ্ট না করে শুরু করো বিশ্বকে জানার, বিশ্বের সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করার। কারণ পরোক্ষভাবে হলেও বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর প্রভাব তোমার উপরেও পড়বে!
৫. নিজের ইচ্ছেমতো হুট করে সিদ্ধান্ত নেবে না
কোনো ঘটনা ঘটলে সেটি নিয়ে দ্রুত কোনো সিদ্ধান্তে চলে আসবে না। আগে ভাবতে থাকো কি বিষয়ক সমস্যা, এই নিয়ে বাকিদের কি মতামত। কেনো এই সমস্যা বা ঘটনাটি ঘটেছে, এবং এই নিয়ে কি করা যায় সমাধান হিসেবে। ঘটনার একদম মূলে চলে যাও, তবেই সত্যের সন্ধান পাবে।
৬. শুধু সমস্যা নয় সমাধানের দিকে তাকাও
আমাদের বড় একটা সমস্যা হলো কোনো বিপদ বা সংশয়ে আমরা সমাজ না খুঁজে একজন আরেকজনের দোষ খুঁজতে থাকি। এটাই আসলে আমাদের হিসেবে আরো বেশি প্রতিষ্ঠিত করে তোলে। এজন্যে যেকোনো সমস্যায় সমাধানের দিকে ফোকাস করা খুবই দরকারি। সমাধানের খোঁজ বের হলে কিন্তু আর মনের মধ্যে খচ খচ করবে না কার দোষ এটা খুঁজে বের করতে! আর এই সমাধান বা আইডিয়াই তোমাকে Great Mind. হতে সাহায্য করবে।
তুমি চাইলেই নিজেকে Poor Mind থেকে Great Mind এ পরিণত করতে পার, দরকার শুধু একটু চেষ্টা আর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। কথায় বলে, দৃষ্টিভঙ্গি বদলালেই বদলে যায় জীবন, তাই তুমিও বদলে যাও, হয়ে যাও একজন Great Mind এর মানুষ!
২. সিজিপিএ আসলে কতটা প্রয়োজন?
সিজিপিএ আসলে কতটা প্রয়োজন?
সিজিপিএ হচ্ছে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোমার একাডেমিক সাফল্যের প্রমাণ। সিজিপিএর অবশ্যই প্রয়োজন আছে। আমরা যখন এসএসসি দিয়ে কলেজে ওঠার ভর্তিযুদ্ধে প্রবেশ করি, তখন ভালো কলেজ পেতে হলে কিন্তু এসএসসির রেজাল্টটাই দেখা হয়। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার সময় সেই এইচএসসির নম্বরটাও কিন্তু যোগ করা হয় ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলের সাথে, আর সেটা বড় একটা ভূমিকা রাখে নম্বরে। ঠিক একইভাবে তোমার প্রথম জবে সিজিপিএ-ও ভালোই ভূমিকা রাখবে। কারণ যারা জব দেবে, তারা তোমাকে চেনে না, জানে না তোমার প্রতিভা আর কৃতিত্বের কথা। তারা তখন তোমার সিজিপিএ দিয়েই তোমাকে মূল্যায়ন করবেন। প্রথমবারের এই ঝক্কিঝামেলার পর থেকে পরের সব জবে তোমার অভিজ্ঞতা আর কর্মক্ষমতাই তোমার হয়ে কথা বলবে। এ বিষয়ে চলো আরো কিছু আলোচনা করি–