Site icon BnBoi.Com

কমিউনিকেশন হ্যাকস -আয়মান সাদিক

কমিউনিকেশন হ্যাকস -আয়মান সাদিক

১. কমিউনিকেশন হ্যাকস কী?

কমিউনিকেশন হ্যাকস
আয়মান সাদিক ও সাদমান সাদিক

দয়া করে বইটি পড়বেন না

যদি…

…কেবল নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য কমিউনিকেশন শিখতে চান। কারণ, আপনি এই বইতে শক্তিশালী কিছু কৌশল শিখতে যাচ্ছেন যেগুলো অন্যদের উপর আপনার একটা বাড়তি সুবিধা দিবে বাকি সারাটা জীবনের জন্য। কিন্তু, আমরা চাই আপনি এই ক্ষমতাকে ভালো কাজে ব্যবহার করেন। কমিউনিকেশন তখনই আসলে সফল হয় যখন উভয় পাশেরই লাভ হয়। একপাশের লাভ আর অন্য পাশের ক্ষতিকে সোজা বাংলায় প্রতারণা বলে। তাই, এই বইতে আপনি যা কিছুই শিখবেন, দয়া করে পৃথিবীতে আরও বেশি বোঝাঁপড়া তৈরিতে ব্যবহার করবেন। যদি অন্য উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে আমরা অনুরোধ করবো যেন আপনি এই বইটি অন্য কাউকে দিয়ে দেন, অথবা বইটি না কিনে ওই টাকা দিয়ে নিজের পছন্দের কিছু একটা খেয়ে ফেলেন।

তো আশা করি, আপনি যদি পরের পৃষ্ঠায় যেতে চান তাহলে আমাদের শর্ত মানছেন। আমরা ভরসা করতে চাই যে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই ভালো এবং তারা ভালো করতে চায়। আর ভালো কমিউনিকেশন দিয়ে পৃথিবী পাল্টে ফেলা যায়। সেই আশা নিয়ে চলুন, শুরু করা যাক কমিউনিকেশন হ্যাকস!

কমিউনিকেশন হ্যাকস –কাদের জীবনে লাগবে?

তুমি যদি স্টুডেন্ট হয়ে থাকো
স্টুডেন্ট লাইফ থেকেই যদি তুমি কমিউনিকেশনে এক্সপার্ট হয়ে যাও, তাহলে তোমার সামনে গিয়ে নেটওয়ার্ক অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে। যেকোনো প্রতিষ্ঠানে সবচেয়ে কারিজম্যাটিক স্টুডেন্টটাকে খেয়াল করলে দেখবে, তার মূল কারিজমা হচ্ছে তার কমিউনিকেশন স্কিল। তুমি অন্য সব কিছুতে ডাব্বা মারলেও, এই এক কমিউনিকেশন স্কিল দিয়ে বহুদূরে এগিয়ে যেতে পারবা।

যদি পেশাগত জীবনে আরও ভালো করতে চান
বর্তমান সময়ে পেশাগত জীবনে সফট স্কিলস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর সফট স্কিলস-এর লিস্টে একদম উপরে থাকে ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন স্কিলস। লিডারশিপের জন্য আপনি যেই জায়গাতেই যান না কেন, কমিউনিকেশন স্কিলস লাগবেই। তাই, কর্পোরেট ক্যারিয়ারে যদি আপনি নিজেকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে নিতে চান, তাহলে এই বইটি আপনার জন্য। সাইকোলজি, সেলস এবং কমিউনিকেশন স্কিলস একসাথে মিলিয়ে কীভাবে আপনি আপনার সেরাটা দিতে পারবেন, সেটা এই বইতে চ্যাপটার বাই চ্যাপটার আমরা এক এক করে শিখবো।

যদি নিজেকে কমিউনিকেশন এক্সপার্ট করতে চান
পৃথিবীর অনেকগুলো সেরা কমিউনিকেশন, সেলস এবং সাইকোলজি বিষয়ক বইগুলো রিসার্চ করে লোকাল উদাহরণ দিয়ে এই বইটি লিখা হয়েছে। তাই, আপনি একদম নিজের ক্ষেত্রে নিজের ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহার করার জন্য এমন অনেক টিপস এবং ট্রিক্স পাবেন, যেগুলো আজকে থেকেই প্রয়োগ করতে পারবেন এবং ফলাফল পাবেন।

আপনি যদি ডিজিটাল জগতে কাজ করেন
কমিউনিকেশন নিয়ে যত কিছু শেখানো হয় এবং যত কন্টেন্ট আছে, অধিকাংশই অ্যানালগ যুগের। ডিজিটাল যুগের সাথে কমিউনিকেশনে। যে ইনোভেশনগুলো এসেছে, সেগুলোর কথা মাথায় রেখে এই বইতে চ্যাপটারগুলো লিখা হয়েছে। আপনি কমিউনিকেশনের যেই হ্যাকগুলো শিখবেন, সেগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারবেন তো বটেই, তার উপর ডিজিটাল মাধ্যমগুলোতেও পেশাদার কাজে বেশ ভালো ফলাফল দিবে।

কমিউনিকেশন হ্যাকস কী?

এই পৃষ্ঠাটি তাদের জন্য যারা কমিউনিকেশন হ্যাকস জীবনে প্রথমবারের মত শুনছেন। কমিউনিকেশন হ্যাকস নিয়ে প্রাথমিক ধারণা থাকলে আপনি এখনই সরাসরি বইয়ের কন্টেন্টে ঝাঁপিয়ে পড়ন। এই বইটি সিরিয়ালি পড়ার কোনে বাধ্যমাধকতা নেই। যেকোনো পৃষ্ঠা থেকে পড়লেও আপনি নতুন কিছু না কিছু শিখবেন।

কখনও বড় কর্মকর্তা বা নেতাদের স্কিল সেট পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন কি? দেখে না। থাকলে এখন একটু চিন্তা করে দেখেন। যে জিনিসটি সবার আগে আপনার চোখের। সামনে কিংবা মনে ভেসে উঠবে, সেটা হল সেই নেতার বা কর্মকর্তার কমিউনিকেশন স্কিল। তার হয়তো চার বছরের ইঞ্জিনিয়ার ডিগ্রি আছে, হয়তোবা সে প্লেন চালাতেও। ওস্তাদ, কিন্তু দিনশেষে তার দৈনন্দিন কাজে যেই জিনিসটি সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে। সেটা হল তার কমিউনিকেশন স্কিল।

এখন টেক্সটবুকের ভাষায়, কমিউনিকেশন হ্যাকস হচ্ছে আমাদের দৈনন্দিন কথাবার্তার মধ্যে ব্যবহৃত কিছু কৌশল যা আপনার বাচনভঙ্গি এবং সর্বোপরি ইমেজকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে। ফিউচার অফ স্কিলসগুলোর মধ্যে সবার জীবনে কার্যকরী। ভুমিকা রাখা স্কিলটি হল কমিউনিউকেশন।

জীবনের শুরুতে আমাদেরকে অক্ষর দান এবং আধো-আধো শব্দ শিখানোর মাধ্যমে যেই জিনিসটি শেখানো হয়, সেটা হল কমিউনিকেশন। আর পনেরো বছরের শিক্ষা জীবন শেষে শখানেক বই পড়ে, হাজারখানেক পরীক্ষা দিয়েও অনেকে নিজের মনের চিন্তাগুলো আরেকজনের সামনে প্রকাশ করতে পারে না।

কমিউনিকেশন স্কিল আবার শেখানোর কী আছে? আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষা কারিকুলামেই তো এসব জিনিস শিখে এসেছি। দরখাস্তের হাজারো নিয়ম, স্মারক লেখার কৌশল কিংবা দুই বন্ধুর মধ্যে ডায়ালগের বাহার, সবই আমাদের জানা, কিন্তু মজার বিষয় হল দিনশেষে না আমরা চিঠি লিখি, আর না আমাদের দিয়ে স্মারক লেখা হয়। শেষমেষ আমরা কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার আর ইমোতেই আমাদের দৈনন্দিন কথোপকথন সারি। কিন্তু, এসব তো কোনো কারিকুলামে ছিল না। এসব নিয়ম কোথায় পাওয়া যায় কিংবা এসব নিয়ম বানাছেহ বা কে? আমরা অবশ্য নিয়ম বানানোর দায়িত্ব নিচ্ছি না, বরং এসব মাধ্যমে কথা বলার কিছু কৌশল শিখিয়ে আপনার জীবনটাকে সহজ করার এবং আপনার কথার গুরুত্ব বাকিদের সামনে বাড়িয়ে তোলার অভিপ্রায় হল এই বইটি।

*

আপনার কমিউনিকেশন লেভেল কত?

দক্ষতা – হ্যাঁ/না

১ জায়গা, সময় এবং পরিবেশ অনুযায়ী কি আমি কথা বলি?

২ অন্যের মানসিক অবস্থা ভেবে কি আমি কথা বলি?

৩ নিজের মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করে কি আমি কথা বলি?

৪ আমি কি আমার কথা বলার ধরণ সম্পর্কে সচেতন?

৫ আমার কি আমার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে সচেতন?

৬ যার সাথে কথা বলছি তার সাথে সম্পর্কের গভীরতা অনুযায়ী কি কথা বলি?

৭ আমি কি বার্গার ফিডব্যাক মেথডে (প্রশংসা-সমালোচনা-প্রশংসা) কথা বলি?

৮ আমি কি সবাই, সবসময়, কখনই না, কেউই না, অসম্ভব –এসব শব্দগুলো বাদ দিয়ে কথা বলি?

৯ কোনো সমস্যা হলে আমি কি অন্যকে দোষ না দিয়ে নিজের উপর দায়ভার নেই?

১০ ব্যক্তিগত মতামতের চেয়ে কি যাচাই করা তথ্য কিংবা পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে বেশি কথা বলি?

১১ যা শুনতে ভালো লাগে, তার চেয়ে যা সত্য; তা শুনতে কি বেশি পছন্দ করি?

১২ কোনো কথা শোনার সময় ব্যক্তিগত ধারণার আঙ্গিকে না শুনে, প্রথমে মুক্তমনে কথা শুনি?

১৩ প্রথমে নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে কথা বলতে পারি কি?

১৪ যা চিন্তা করছি, তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে শব্দে প্রকাশ করতে পারি কি?

১৫ সাহায্য লাগলে সাহায্য চাইতে পারি কি?

১৬ দরদাম করতে পারি কি?

১৭ পাবলিক ঘোষণা দিতে কি পা?

১৮ বাচ্চাদের সাথে মিশে গিয়ে কথা বলতে পারি কি?

১৯ সিনিয়র সিটিজেনদের সাথে কথা বলতে পারি কি?

২০ রিক্সাওয়ালা, সিএনজিচালক এমন মানুষদের সাথে আড্ডা দিতে পারি?

১টি হ্যাঁ =৫ মার্ক। ১টি না =০ মার্ক

.

আমার কমিউনিকেশন লেভেল স্কোর ?/১০০

৮০-১০০ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা করা শুরু করেন

৬০-৭৯ প্রেজেন্টেশন দেয়া এবং ক্লাস নেয়া শুরু করেন।

৪০-৫৯ ডিবেট, পাবলিক স্পিকিং করা শুরু করেন।

২০-৩৯ কম্ফোর্ট জোনের বাইরে গিয়ে কথা বলা শুরু করেন

০-১৯ পরিচিত মানুষদের সাথে কথা বলা অনুশীলন করেন।

বইয়ের শেষে গিয়ে আবার এই প্রশ্নগুলো পাবেন। তখন আবার পূরণ করে দেখুন। ১ মাস পর পর পূরণ করে নিজের দুর্বলতা একটা করে ঠিক করে ফেলুন।

*

সূচিপত্র

॥ প্র্যাক্টিকাল কমিউনিকেশন

॥ রিভার্স সাইকোলজি হ্যাকস!

॥ ইল্যুশন অফ চয়েস

॥ নিচের দুটো অপশন একটু খেয়াল করে দেখুন তো, পার্থক্যটা কোথায়?

॥ ভালোবাসার কমিউনিকেশন

॥ বিগ বস কমিউনিকেশন

॥ স্টিকি কমিউনিকেশন

॥ ছন্দের কমিউনিকেশন

॥ আপনার সমস্যাটা কী?

॥ ক্যালেন্ডার বুক করে রাখেন

॥ সহজ সরল কমিউনিকেশন

॥ ব্যক্তিগত প্রশ্ন করার কৌশল

॥ ইট ডিপেন্ডস (It Depends)

॥ বিপজ্জনক কমিউনিকেশন

॥ একবারে পুরো মেসেজটি পাঠান

॥ আমাদের মন এবং তুষারপাত

॥ প্রশংসা আর নিন্দার কমিউনিকেশন

॥ যারা না বলতে পারেন না!

॥ ইমোটিকনে কমিউনিকেশন

॥ লিগ্যাল কমিউনিকেশন

॥ কমিউনিকেশনের মায়া

॥ বলে ফেলা ভালো, নাকি চুপ থাকা ভালো

॥ মিটিং কমিউনিকেশন

॥ কমিউনিকেশন শেখার সেরা সোর্স

॥ দক্ষিণে গিয়ে হাতের বাম দিয়ে সোজা গিয়ে পশ্চিমে!

॥ অফেন্সিভ কমিউনিকেশন

॥ WIIFY কমিউনিকেশন

॥ কোন কথাটা ভাইরাল হবে?

॥ স্টোনওয়ালিং (Stonewalling)

॥ আপনার মনমতো একটা সময়

॥ আমার জন্য আপনার কি প্রশ্ন আছে?

॥ নাম্বার সংগ্রহ করার কমিউনিকেশন

॥ ইমেইল লেখার আদব-কায়দা

॥ আজকে থেকে এগুলো বদলে ফেলুন

॥ আর একটা জিনিস!

॥ অজুহাতে কুপোকাত

॥ অধিকাংশ মানুষ

॥ ২ মাস আগের পরিকল্পনা

॥ ইংলিশে বলসে! তার মানে ঠিক বলতেসে!

॥ গত দশবার কথা কী দিয়ে শুরু হয়েছে?

॥ কল কাটার জন্য ব্যতিব্যস্ত

॥ সত্যিকারের সমালোচনা

॥ আমি, আমি, আমি

॥ স্বার্থপর কমিউনিকেশন

॥ শব্দ করে ব্যাগ গোছানো

॥ কষ্টের প্রতিযোগিতা

॥ মন দিয়ে শোনার ট্রিক

॥ সবচেয়ে কম জানা মানুষ হলে

॥ অনলাইনে যে ৮টি ভুল আমরা প্রায়ই অজান্তে করে ফেলি!

॥ না মানে কী?

॥ কমিউনিকেশনের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র

॥ কমিউনিকেশনের ইকোনমি

॥ সেলেবদের সাথে কমিউনিকেশন

॥ ফাঁপা ধন্যবাদ

॥ ভাবিকে সালাম

॥ মানুষ কখন আপনার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে?

॥ সংখ্যা দিয়ে মিথ্যা বলার কমিউনিকেশন

॥ কমিউনিকেশন ল্যাঙ্গুয়েজ গ্যাপ

॥ ভোক্যাবুলারি কেন শিখবো?

॥ আন্তর্জাতিক কমিউনিকেশন

॥ সবাই তো এটা জানেই!

॥ অন্যের সমস্যা বনাম নিজের সমস্যা

॥ পোশাকে কমিউনিকেশন

॥ ফিডব্যাকের কমিউনিকেশন

॥ চুপ কেন থাকবো

॥ কে ঠিক, কী ঠিক

॥ স্প্যাম বনাম ব্যক্তিগত কমিউনিকেশন

॥ সবচেয়ে মধুর শব্দ

॥ ৭৯ আরে আমিও তো!

॥ চাওয়া পাওয়ার কমিউনিকেশন

॥ শেয়ার করা মানেই সততা না

॥ কমিউনিকেশন ক্রেডিট

॥ চিন্তাভাবনার কমিউনিকেশন

॥ যখন আইডিয়া নিয়ে চিন্তা করবেন

॥ অদৃশ্য ভুল

॥ কমিউনিকেশনের বিপদসংকেত

॥ জুনিয়রের সামনে কমিউনিকেশন

॥ ম্যাজিক মিথ্যা জেনেও কেন মজা লাগে?

॥ বার্তাবাহক

॥ কাজের কথায় কমিউনিকেশন

॥ লাভের চেয়ে বেশি ক্ষতি

॥ কীভাবে স্যরি বলবেন

॥ নিজের ভ্যালু কমে যায়

॥ দুপুর ১২টা না কি রাত ১২টা?

॥ কাজটা কেন জরুরি

॥ অবচেতন মনে কমিউনিকেশন

॥ শুনতে ঠিক, আসলেই ঠিক

॥ চোখে চোখে কমিউনিকেশন

॥ যেই কথাগুলো না বললেও চলে

॥ শেয়ার করার মানুষ

॥ ঠাট্টা করে কমিউনিকেশন

॥ রঙের কমিউনিকেশন

॥ বিরক্তিকর কমিউনিকেশন

॥ দৈনন্দিন কমিউনিকেশন কোথায় শিখবো

॥ ঠিক বুঝেছি তো?

॥ জাজ না করা

॥ ইংলিশে ইংলিশ শেখানো

॥ কে বলেছে কার কথা?

॥ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কমিউনিকেশন

॥ কন্ট্যাক্ট দিয়ে কমিউনিকেশন

॥ মানুষের নাম্বার চাওয়া

॥ আপনি কি স্প্যাম করছেন?

॥ ডিজিটালি শেয়ার করার কমিউনিকেশন

॥ কমিউনিকেশন এবং আপেক্ষিকতা

॥ রিপ্লাইয়ের কমিউনিকেশন

॥ যাবেন কি যাবেন না?

॥ নিজের সম্পর্কে কথা বলুন

॥ নয়টার ট্রেইন কয়টায় ছাড়ে?

॥ নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে কথা বলা

॥ কার সাথে সবচেয়ে বেশি কথা বলেন?

॥ অর্ডার দেয়া

॥ মেসেজ দিয়ে রাখসি তো!

॥ সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট

॥ হেটারদের সাথে কমিউনিকেশন

॥ পিপল স্কিল : কী এবং কেন?

॥ যেভাবে কখনও কারও সাথে কথা বলা উচিত নয়!

॥ সতর্কতা : কথা বলা ও শোনার সময় যে কাজগুলো করা যাবে না!

॥ সাবধান : আপনি কি একজন Conversation Monster?

॥ সবার প্রিয় হতে চান?

॥ ইংরেজি ভাষা নাকি বিষয়?

॥ সমালোচনার পূর্বশর্ত!

॥ খুদেবার্তার আদবকায়দা

॥ টার্গেট অডিয়েন্স আসলে কারা?

॥ উপস্থাপক হতে চান?

॥ পাবলিক স্পিকিং নিয়ে ভয়?

॥ নিজে নিজে কীভাবে অনুশীলন করবো?

॥ আবদারের কমিউনিকেশন

॥ আপনি কাদের সাথে কথা বলছেন?

॥ অর্থহীন কমিউনিকেশন

॥ ২৪/৭ কমিউনিকেশন ॥

*

প্র্যাক্টিকাল কমিউনিকেশন

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় একটা প্রচলিত ধারণা আছে যে পৃষ্ঠা-ভরে লিখলেই নাম্বার পাওয়া যায়। যে যত বেশি পৃষ্ঠা নিবে, তার মার্ক তত বেশি। দাঁডিপালা দিয়ে খাতার ওজন মেপে নাম্বার দেয়া হয় বলে অনেকে লেখার মানের চেয়ে লেখার পরিমাণকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বসেন। হ্যাঁ! এইভাবে অনেক নাম্বার পেয়ে কারও কারও গোল্ডেন চলে আসে। কিন্তু, বাস্তবে আপনি মানুষকে রচনা বলতে যান, দেখেন কী হয়। যেখানে মানুষ ফেসবুক পোস্টে See More ক্লিক করে দুই লাইন অতিরিক্ত পড়তে চায় না, যেখানে মানুষের সারাংশ পড়ারই ধৈর্য নাই, সেখানে প্যারাগ্রাফ বলতে চাওয়াটাও অনেক বোকামি। তাই, পরীক্ষার খাতায় প্যারাগ্রাফ লিখতে গিয়ে রচনা লিখে ফেললেও, বাস্তবে যেন আমরা যত কম শব্দে সম্ভব নিজের আইডিয়াগুলো অন্যের সামনে উপস্থাপন করি।

শব্দের সংখ্যা বেশি হলেই যদি মান ভালো হত, তাহলে সাহিত্যে সবচেয়ে। বেশি নোবেল পেত ডিকশনারিগুলো!

*

রিভার্স সাইকোলজি হ্যাকস!

কমিউনিকেশন স্কিল আসলে পুরোটাই সাইকোলজির খেলা। একবার যখন আপনি মানুষকে বুঝবেন, মানুষের মানসিকতা বুঝবেন; তখন কখন, কোথায়, কী বলতে হবে–সেটা আপনি নিজ থেকেই বুঝতে পারবেন। যেমন- আমাদের একটা সাইকোলজি হচ্ছে যে, আপনার যা বলার কথা, তার ঠিক উল্টোটা বললে মানুষ বরং আপনাকে বেশি বিশ্বাস করে ফেলতে পারে। এই ট্রিকটা আমরা অনেক সময় বাচ্চাদের সাথে করে এসেছি। সবজিটা খাও!–এভাবে বললে খাবে না। কিন্তু যদি বলি, আমি জানি তুমি এত পিচ্চি যে এই সবজি খেতে পারবে না। তখন পারলে জেদ করে হলেও সে সবজিটা গিলবে! ইভেন্টে আসলে আমরা অনেক খুশি হব। আমরা চাই যে আপনি ইভেন্টে আসেন। কিন্তু, আপনার খুব যদি কষ্ট হয় তাহলে না বলতেও পারেন। আশা করি আপনার কাছ থেকে দ্রুত উত্তর পাবো।–এত ভদ্রভাবে বললে তো না বলতেও কষ্ট হবে!

*

ইস্যুশন অফ চয়েস

নিচের দুটো অপশন একটু খেয়াল করে দেখুন তো, পার্থক্যটা কোথায়?

অপশন ১ : আপনি কি বইটি কিনবেন নাকি কিনবেন না?

অপশন ২ : আপনি কি স্টুডেন্ট হ্যাকস কিনবেন নাকি কমিউনিকেশন হ্যাকস কিনবেন?

আগে আপনি মনে মনে একটি অপশন সিলেক্ট করে ফেলুন। এবার আসি ব্যাখ্যায়।

অপশন ১ : এ কেনার সিদ্ধান্তটাই নেয়া হয়নি। আপনার সব সময় টার্গেট থাকবে যেন মানুষের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াটা সহজ করা যায়। এমন যদি হত যে আসল সিদ্ধান্ত অর্থাৎ কেনার সিদ্ধান্তটাই নিতে না হত? ওটাই অপশন। ২-তে পাবেন। খেয়াল করে দেখেন যে দ্বিতীয় অপশনে না কেনার কোনো অপশনই দেয়া হয়নি। ধরেই নেয়া হচ্ছে যে আপনি বই কিনছেন, এখন অপশনাল সিদ্ধান্ত হচ্ছে আপনি কোন বই কিনবেন। এরকম আরেকটা সিচুয়েশন দেই।

অপশন ১ : লাঞ্চের আগে আসবি নাকি পরে আসবি?

অপশন ২ : তুই কি আমার বাসায় আসবি?

এখন আপনি একদম নিশ্চিতভাবে জানেন যে কোনটা বললে আপনার বন্ধুর আসার সম্ভাবনা বেশি। (আর ফ্রি লাঞ্চের কথা বললে কেনই বা আসবে না!)

*

ভালোবাসার কমিউনিকেশন

রেস্টুরেন্টে এক্সট্রা সস চাইতে অনেকে লজ্জা পেলেও ইনবক্সে গিয়ে দেখেন সেই একই মানুষ কবিতা, উপন্যাসে পারলে রবীন্দ্রনাথ, শেক্সপিয়রকে টেক্কা দিচ্ছে। আসলে, প্রয়োজন আর ইচ্ছা থাকলে আমরা অনেক কিছুই পারি। এবং সেটা আমাদেরকে শিখিয়েও দিতে হয় না। কিন্তু, ওই একই। ব্যাপারগুলো কেন যেন আমরা বাস্তব জীবনে ফলাতে পারি না। কিছু উদাহরণ দেই :

ব্রেকআপের সময় : আসলে তুমি একদম পারফেক্ট! দোষটা আসলে আমার। তুমি আমার চেয়ে আরও ভালো কাউকে ডিজার্ভ করো। রিজেক্ট করার সময় কত দরদভরা যুক্তি! কিন্তু, একটা অকাজের কাজে না বলার সাহস আনতে পারে না নাকি এই একই মানুষগুলো!

ইপ্রেস করার সময় :

তুমি কী চাও?

তোমাকে!

মনের সবচেয়ে গভীর অনুভূতি এক শব্দে বলতে পারে। কিন্তু, ৫ মিনিট দিলেও অনেকে নিজের আইডিয়াটা বলতে পারে না! কথা শুরু করতে চাইলে :

আসোলামু আলাইকুম!

আপনি কি জানেন না যে, সালামের উত্তর দিতে হয়!

ইনবক্সে যেভাবে সালামের চর্চাটা থাকে, ওই একই চর্চাটা ছোট, বড়, রিক্সাওয়ালা, দারোয়ান সবার প্রতি থাকলে কী সুন্দরই না হত। কিন্তু না! অন্যগুলো করতে বললে অনেকের অকওয়ার্ড লাগে!

শেখানোর বিষয় আর ইচ্ছা থাকলে সবাই আসলে নিজে থেকেই পণ্ডিত হওয়ার যোগ্যতা রাখে।

*

বিগ বস কমিউনিকেশন

আমরা যতই কমিউনিকেশনের কথা বলি না কেন, সিনিয়র কারও সাথে কথা বলতে গেলে আসলে অনেক ট্রিকই কাজ করে না। সোজা বাংলায় ক্ষমতাশালী মানুষকে অনেক কিছুই ভয়ের চোটে বলা হয়ে উঠে না। এমন অবস্থায় কী করা যায়?

নিজের জীবন থেকে একটা উদাহরণ দেই।

বিভিন্ন সময় ক্লায়েন্ট নিজের পাওয়ার দেখানোর জন্য ছোট-খাটো কাজে আমাকে ব্যবহার করছিল। এখন রেগে গেলে তো ব্যাপারটা খুবই আনপ্রফেশনাল দেখাবে। আবার মুখ বুজে তো নিজের সময়ও নষ্ট করা যাচ্ছে না। তার চেয়েও বড় কথা জিনিসটা আমার জন্য অপমানজনক। হচ্ছিলো। তো কীভাবে বোঝাই যে আমার সময় আর সার্ভিস ফ্রি না?

একদিন ক্লায়েন্ট বললো, তো শুনো, কালকে আমার বিল পেপারটা লাগবে। তুমি সকাল সকাল প্রিন্ট করে নিয়ে আসো।

(আমি জানি যে আমার এখানে কোনো দরকার নেই। কারণ আমি আর ক্লায়েন্ট দুইজনই জানি যে ফাইলটা ইমেইল করে দিলেই প্রিন্ট করে নেয়া যাবে অফিস থেকে। আমাকে কেবল পাওয়ার দেখানোর জন্য এই হুকুম।)।

আমার উত্তর ছিল, ভাইয়া, আমি আজকে ফাইলটা দিতে গেলে আপনার কাজটা করতে পারবো না। তাহলে ডেডলাইন এক দিনের জন্য মিস হবে। আপনার এতে সমস্যা না থাকলে আমি ফাইলটা দিতে চলে আসছি। এটা শুনে তিনি বললেন, না না। থাক। তুমি ফাইলটা মেইল করে দাও। আর কাজটা যত দ্রুত সম্ভব করে দাও।

একটা বাক্যের মাধ্যমে তার কাছে আমার কাজের মূল্য বাড়ালাম, সময় বাঁচালাম আর মনে মনে ছোটখাটো একটা বিশ্বজয়ের আনন্দ পেলাম। হ্যাঁ, সব ক্ষেত্রে উপরের মানুষজনকে কাবু করা যায় না, কিন্তু চেষ্টা না করলে মানুষ আপনাকে পেয়েই বসবে। তাই, এইদিক-ওইদিক করে বুদ্ধি বের করাটা কখনও থামাবেন না!

*

স্টিকি কমিউনিকেশন

হুস্টান বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সার্ভে করতে সাহায্য চেয়ে মানুষের কাছে প্রপোজাল পাঠানো হচ্ছিল। যার কাজ, সেই প্রফেসর সাহেব একটা এক্সপেরিমেন্ট করলেন। তিনভাবে তিনি প্রপোজালগুলো পাঠালেন। ১ম দলের প্রপোজালের উপর স্টিকি নোটে পার্সোনাল একটা চিঠি লিখে পাঠালেন।

২য় দলের প্রপোজালের উপর কিছু না লেখা স্টিকি নোট পাঠালেন।

৩য় দলের প্রপোজালে কোনো স্টিকি নোটই দেওয়া হয়নি।

ফলাফল?

১ম দল : ৭৬% সার্ভে করে দিলেন

২য় দল : ৪৮% সার্ভে করে দিলেন

৩য় দল : ৩৬% সার্ভে করে দিলেন

খালি তাই নয়, ২য় দল ৩য় দলের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুততার সাথে সার্ভে করে ফেরত দিল এবং ১ম দল ২য় দলের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুততার সাথে সার্ভে করে ফেরত দিল!

মোরাল অফ দ্য স্টোরি : আজই স্টিকি নোট ব্যবহার করা শুরু করুন! আর স্টিকি নোটই যে ব্যবহার করতে হবে এমন না। আপনি খামে করে নিজের হাতে লিখা কোনো চিঠি দিলেন কিংবা ছোট একটা চকোলেট; সেটাও কাজ করবে।

(এখানে একটা স্টিকি নোট ব্র্যান্ডের স্পন্সরশিপ নিতে পারলে বেশ ভালো। ইনকামও হত! ইশশ!)

*

ছন্দের কমিউনিকেশন

বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে চলা টেলিভিশন সিরিজ হচ্ছে ইত্যাদি। অনুষ্ঠানটির মূল সঞ্জীবনী শক্তি হচ্ছে উপস্থাপক হানিফ সংকেতের অসাধারণ উপস্থাপনা। পুরো দেশের মানুষ তার উপস্থাপনা পছন্দ করেছে। এমন একজন মানুষ যাকে পুরো দেশের মানুষ পছন্দ করে, তার কাছে শেখার নিশ্চয়ই কিছু আছে, তাই না?

আপনি যদি ইত্যাদি দেখে থাকেন (না দেখে থাকলে আজই ইউটিউবে ১/২টা এপিসোড দেখে আসুন!), তাহলে দেখবেন উপস্থাপক হানিফ সংকেত কথা বলার সময় সব কথাই ছন্দে ছন্দে উপস্থাপন করেন। হ্যাঁ! এটাই অনেক বড় একটা শিক্ষা! আমরা ছন্দ পছন্দ করি।

তাই বলে দিনে ২৪ ঘণ্টা ছন্দ করে কথা বললে অনেকেই বিরক্ত হবে। কিন্তু, ব্যবসার প্রচারণা, বিশেষ করে বিজ্ঞাপনে ছন্দের ব্যবহার করলে মানুষের মনে বেশি গভীরভাবে কথাগুলো গেঁথে যায়।

আমরা একদম শৈশবে ছন্দ-কবিতা পড়েছিলাম। বড় হয়ে হয়তো অনেক থিওরি পড়ে দুনিয়াটা অনেক কমপ্লেক্সভাবে চিন্তা করি। কিন্তু, মানুষের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য শৈশবের ছড়া এখনও কাজ করে!

*

আপনার সমস্যাটা কী?

মনে করেন, আপনি পাসপোর্ট অফিসে একটা সংশোধন করতে গেলেন। নিচের কোনটা শুনতে আপনার ভালো লাগবে?

অপশন ১ : আপনার কী সমস্যা?

অপশন ২ : আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?

দুইটা বাক্যই কিন্তু একই কথা বলে কিন্তু কত তফাত। পার্থক্যটা কথায়, অপশন ১-এ আপনার কী সমস্যা বললে মনে হয় সমস্যাটা আমার ব্যক্তিগত একটা ক্রটি। অন্যদিকে আমি কীভাবে সাহায্য করতে পারি বললে নিজের যে দোষ কিংবা সমস্যা আছে সেটা তো আমরা ভুলে যাই-ই, বরং আরও ভালো লাগে যে কেউ সমাধানে এগিয়ে আসছেন।

একই কথা, কিন্তু ডেলিভারিতে কত তফাৎ!

এমনই একটা সুন্দর রূপক আছে। একই জায়গা থেকে ২টি বল জোরে লাথি দিলে হয়তো দেখা যাবে বলগুলো একে অন্যের থেকে ৯০/১০০ ফিট দূরে গিয়ে পড়েছে। কিন্তু আসল বলটা কিক করার সময় মাত্র ৪/৫ মিলিমিটার এইদিক ওইদিক কিক করার কারণে শেষ ফলাফল অনেক বেশি ভিন্ন দেখায়!

*

ক্যালেন্ডার বুক করে রাখেন

যখনই কোনো মিটিং শেষ হবে, সাথে সাথে পরের মিটিং-এর জন্য ক্যালেন্ডার বুক করে ফেলেন এবং অন্য সবাইকে ক্যালেন্ডার বুক করে রাখার রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে রাখুন। কারণ, বেশিরভাগ সময় মুখে মুখে কথা হয় যে, সোমবার বসি আরেকবার চলেন।–এই বলে সবাই উঠে চলে যায়। কেউ হয়তোবা মিটিং-এর কথা ভুলেই যায়। অথবা, যেহেতু এটা কেবল মৌখিক একটা সিদ্ধান্ত, কেউ চাইলেই কল করে বলতে পারে আরেকদিন মিটিং করতে। এভাবে একটা একটা করে আপনার ক্লায়েন্ট মিটিং ছুটে যেতে পারে। তাই, মিটিং-এর সাথে সাথেই ক্যালেন্ডার বুক করে রিকুয়েস্ট পাঠাবেন। একবার ক্যালেন্ডার বুক করা থাকলে সেটা অফিশিয়াল হয়ে যায়। অনেকটা। তখন কেউ হুট করে মিটিং বাদ দিতে চাইলে ব্যাপারটা অনেক অপেশাদার লাগে। তাই, যখনই কোনো মিটিং-এর কথা আসবে, তখনই ক্যালেন্ডার বুক করে রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে রাখবেন।

আরেকটু ক্যাজুয়াল হলে মেসেঞ্জারে রিমাইন্ডার সেট করে রাখবেন। অনেকে মেইল কিংবা এসএমএস চেক করে না। এসব হতচ্ছাড়াদের লাইনে আনার শেষ উপায় হচ্ছে মেসেঞ্জারে দিনক্ষণ দিয়ে রিমাইন্ডার সেট করে দেয়া। ক্যালেন্ডার বুক করতে হলে আপনার Gmail অ্যাকাউন্টে গিয়ে তারিখ এবং সময় অনুযায়ী সুট বুক করে রাখুন।

*

সহজ সরল কমিউনিকেশন

প্রথম যখন Apple থেকে Ipod বের হয়, তখন অনেক তথ্য দিয়ে সেই পণ্যটা বিক্রি করা যেত। কতটুকু স্টোরেজ, কতটুকু র‍্যাম, কতগুলো সার্কিট, প্রসেসর আরও কত কী! এত কিছু না বলে কী বলা হলো?

এক পকেটে ১,০০০ গান

মানুষ র‍্যাম, স্টোরেজ, মেমোরি– এত কিছু না বুঝলেও; ১,০০০টা গান যে শুনতে পারবে–এটা বুঝে। এবং এটাই মার্কেটিং জিনিয়াস। যেকোনো কঠিন জিনিসকে একদম সহজ ভাষায় অন্যের সামনে উপস্থাপন করা। আইনস্টাইনের এমনই এক উক্তি ছিল, আপনি কোনো জিনিস তখন বুঝেছেন, যখন সেটা আপনি একটা বাচ্চাকেও বোঝাতে সক্ষম হবেন।

*

সহজ ভাষায় লেখার চেকলিস্ট!

১) আপনি কি আপনার পাঠক সম্পর্কে অবগত? কে বা কারা আপনার লেখা পড়ছে সেটা কি আপনি জানেন?

২) আপনার লেখায় কি আপনার পাঠক যা জানতে চায় সেটা আছে?

৩) আপনার লেখা কি আপনার পাঠকের মনের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে?

৪) আপনার লেখার মাধ্যমে আপনি যে বার্তা কিংবা। শিক্ষা আপনার পাঠকদের মাঝে পৌঁছতে চান সেটা কি সুস্পষ্ট ও নির্দিষ্ট?

৫) আপনার বার্তাটি কি ছোট, অর্থপূর্ণ এবং যৌক্তিক?

৬) আপনার পাঠক কি জানে আপনার কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষাটাকে সে কীভাবে কাজে লাগাবে?

৭) আপনার ব্যবহার করা অনুচ্ছেদগুলো কি প্রধান ধারণাটা দিয়েই শুরু হয়?

৮) আপনার লেখায় ব্যবহৃত বাক্যগুলো কি শক্তিশালী? বাক্যগুলো কি দৈর্ঘ্যে অনেক বড় বা অনেক ছোট?

৯) লেখাটা কি সংলাপের সুরে পাঠকের ভাষায় লেখা?

১০) শিরোনামগুলো কি লেখা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেয়?

১১) পরিচিত আর অনুভূতি প্রকাশক শব্দের ব্যবহার ঠিকমতো করেছেন তো?

১২) আপনার ব্যবহার করা সংজ্ঞাগুলো কি বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়?

১৩) লেখায় ছক আর তালিকার ব্যবহার রেখেছেন?

১৪) বানান আর ব্যাকরণজনিত ভুলত্রুটি যাচাই করেছেন?

১৫) পড়তে কি সহজ মনে হচ্ছে?

সাবাস! আপনি শেষ করতে পেরেছেন!

*

ব্যক্তিগত প্রশ্ন করার কৌশল

না, আমরা মানুষের বেতন কিংবা বয়স কীভাবে জিজ্ঞেস করতে হয় সেটা। শেখাবো না, কারণ অনেকের জন্যই প্রশ্নগুলো অনেক বেশি স্পর্শকাতর। তবে, এমন কিছু টেকনিক আছে যেগুলোর মাধ্যমে না উত্তর করা কিছু। প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সম্ভব।

মনে করেন আপনি একটি অফিসে কেমন পলিটিক্স হয়, সেটা বোঝার চেষ্টা করেন তাহলে হয়তোবা প্রশ্ন করতে পারেন :

আপনি কি অফিস পলিটিক্স করেন?

অনেকেই হয়তোবা নিজের ভয়ে অফিস পলিটিক্স করলেও বলবে না। এর চেয়ে আপনি যদি প্রশ্ন করেন,

আপনার কি মনে হয় ৭৫% এর বেশি মানুষ অফিস পলিটিক্স করে এই কোম্পানিতে?

এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত কোনো রিস্ক নেই। যদি অনেকেই হ্যাঁ উত্তর দেয়, তাহলে আপনি সামগ্রিকভাবে একটা ভালো আইডিয়া পাবেন যে আসলেও অফিসে পলিটিক্স হয় নাকি না।

*

ইট ডেপেন্ডস (It Depends)

আমি নিজের একটা ওয়েবসাইট বানাতে চাই। কেমন খরচ হবে?

–উপরের প্রশ্নের দুটো উত্তর দিলাম।

১) ভাইয়া, ইট ডিপেন্ডস। বলা যায় না ভাইয়া। একেক ধরণের ওয়েবসাইট বানাতে একেক ধরণের দাম পড়বে।

২) ভাইয়া, এটা কোনো সিস্টেম অনুযায়ী করতে পারলে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে আমাদের টিম ২১ দিনের মধ্যে আপনাকে কাজটা বুঝিয়ে দিতে পারবে। আর সেটা না পারলে আপনার সাথে আরেকদিন একটা মিটিং-এ সব পরিষ্কার করে নিতে হবে।

দুনিয়ার সব কিছুই আসলে ডিপেন্ডস। সবকিছুই কোনো না কোনো কিছুর উপর নির্ভর করে এবং এটা সবাই জানে। তাই, ইট ডিপেন্ডস বলার মতো অনর্থক জিনিস বোধ হয় কমই আছে। যদি বলতেই হয় তাহলে বলেন কিসের উপর নির্ভর করে। যেমন : উপরের উদাহরণে বলতে পারতো, এটা ভাইয়া ডিপেন্ড করে ডোমেইন, হোস্টিং, সাইট বিল্ডিং, ফিচার অ্যাড করাসহ আরও কিছু ব্যাপারের ওপর।

মানুষ প্রশ্ন করলে তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ন্যূনতম তথ্যগুলো দিয়ে। রাখবেন। এমন তথ্য যেগুলো তাদের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। যখন দরকার হবে, অন্তত আপনার কথা তারা একবার হলেও ভেবে দেখবে।

*

বিপজ্জনক কমিউনিকেশন

মানুষ যখন ঝগড়া করে, তখন সে শুধু নিজের না, তার আশপাশের পুরো পরিবেশটাকেই ডাউন করে ফেলে। কোনো মানুষের মেজাজে যখন বিস্ফোরণ ঘটে, তখন আপনার সেই মানুষটার আশপাশে না থাকাই ভালো। বিভিন্ন শপিংমলে যখন কাস্টমার মারামারির পর্যায়ে চলে যান, তাকে খুব কৌশলে অন্য কাস্টমারদের সামনে থেকে সরিয়ে ফেলার প্রটোকল থাকে। কারণ একজন রাগী মানুষ খালি নিজের না, তার আশপাশের সবার দিনটা খারাপ করে। এখন আপনি যদি সেন্স করতে পারেন যে কেউ ঝগড়া করতে এগিয়ে আসছে, তাহলে আপনার প্রথম টার্গেট হবে ঝগড়া করার পরিবেশটাই না দেয়া। কিন্তু, সব সময় তো সেটা সম্ভব হবে না। তাই, কিছু টিপস মনে রাখতে পারেন যখন উদ্ধত মানুষ আপনার দিনের শান্তিকে হুমকির মুখে ফেলতে চাইবে।

*

উদ্ধত মানুষদের কীভাবে সামলাবেন?

১) মনে করার চেষ্টা করুন সেইসব মুহূর্তের কথা যেগুলোতে আপনি মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার। করেছিলেন এবং মানুষ আপনাকে সেগুলোর জন্য মাফ করে দিয়েছিল। আপনি বদলাতে পারলে আপনার সামনের উদ্ধত মানুষটি কেন বদলাতে পারবে না? এই প্রশ্নের উত্তরে উদ্ধত মানুষটি সম্পর্কে আপনার সমগ্র ধারণাই পাল্টে যেতে পারে।

২) কোনো কথাকেই ব্যক্তিগতভাবে নিবেন না। হয়তোবা মানুষটি খারাপ সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।

৩) মানুষটিকে তার অতিমাত্রার আচরণের কথা উল্লেখ করুন যদি সে বেশি বাড়াবাড়ি করে। চুপ করে থাকলে বদ আচরণকে সে তার অধিকার মনে করবে।

8) মানুষটি যে কারণে রেগে আছে, সেটা সমাধান করার সুযোগ থাকলে নিজের দিক থেকে চেষ্টা করুন।

৪) উপেক্ষা করুন। কাউকে এর চেয়েও কম গুরুত্ব দেয়া সম্ভব না।

৫) মানুষটির কথাবার্তা এবং আচরণ তার। এ জীবনের সাপেক্ষে তুলনা করে দেখুন।

৬) তার নেতিবাচক দিকগুলো উপেক্ষা করে ভালো দিকগুলোর জন্য প্রশংসা করুন।

৭) বোঝার চেষ্টা করুন যে মানুষটি ব্যক্তিগত কারণে নাকি পারিপার্শ্বিক কাজের কারণে রেগে আছে।

৯) উদ্ধত মানুষটিকে জিজ্ঞেস করে দেখুন, আমি কীভাবে তোমাকে সাহায্য করতে পারি?

১০) কোনোভাবেই নিজেকে ছোট করে তার সামনে উপস্থাপন করবেন না।

১১) উদ্ধত মানুষটির আচরণ খারাপ থাকলে থাকতে পারে। কিন্তু, আপনি নিজে আচরণ খারাপ করলে, সে তার আচরণের জন্য অজুহাত পেয়ে যাবে।

১২) আপনার চেয়ে সিনিয়র কিংবা বস যদি উদ্ধত হয় তাহলে তাদের লেভেলের। কোনো সিনিয়রের সাহায্য নিন।

১৩) উদ্ধত মানুষটির বিষয়টি যে আপনাকেই সমাধান করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। আপনার ওপর চাপ বেশি হয়ে গেলে বিরত থাকুন।

১৪) অন্য মানুষটির আগে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণে আনুন।

১৫) হঠাৎ করে ব্যবহার পাল্টে যাবে, এমন আশা করবেন না। পরিবর্তন আসতে সময় লাগে। অথবা সে মানুষটাই বোধ। হয় এমনই।

আমরা হয়তোবা অনেকগুলো পয়েন্ট বললাম। এগুলোর তিন/চারটি এমনকি এক দুটি প্রয়োগ করলেই বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে একটা পরিবর্তন চলে আসার কথা।

*

একবারে পুরো মেসেজটি পাঠান

আপনি বন্ধুদের সাথে কিংবা অনলাইনে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে আড্ডা দেওয়ার অধিকার রাখেন। কিন্তু, পারলে কর্পোরেট কাজে কোষ্ঠকাঠিন্যমূলক বার্তা পাঠাবেন না! অর্থাৎ, একটা একটা লাইন না করে, পুরো কথাটা একবারে পাঠাবেন। খুবই ছোট্ট একটা তফাৎ, কিন্তু এটা করলে আপনার খুদে বার্তাগুলো আরও গোছানো লাগবে।

*

আমাদের মন এবং তুষারপাত

মনে করেন একটি পাহাড়ে অনেক তুষারপাত হয়েছে। এমন হলে বাইরের অনেক ঠান্ডার দেশে মানুষ স্লেজ গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পড়ে। পাহাড়ের উপর থেকে স্লেজ গাড়িতে করে স্লাইড করে নিচে চলে যায়। প্রতিবার স্লাইড করে নিচে যাবার সময় বরফের উপরের স্তর একটু করে দেবে যায়। তিন-চারবার স্লাইড করে নামার পর কিছু জায়গায় বরফের স্তর এতটাই দেবে যায় যে। এরপরে যতবারই কেউ স্লাইড করে নিচে নামুক না কেন, ওই দেবে যাওয়া। অংশ দিয়েই খালি নিচে নামে।

প্রথম প্রথম স্লাইড করে নামার কোনো বাধাধরা রাস্তা না থাকলেও, তিন চারবার নামার পর দেবে যাওয়া পথেই সবাই নামা শুরু করে।

আমাদের চিন্তা-ভাবনাও আসলে এভাবে কাজ করে। প্রথম প্রথম আমরা সব কিছু নিয়ে চিন্তা করতে পারি। কিন্তু, যতই আমরা কোনো জিনিস নিয়ে বেশি জেনে ফেলি, তখন আমরা ঐ একই লাইনেই কেবল চিন্তা করতে থাকি। আমাদের অধিকাংশের দৈনন্দিন চিন্তা-ভাবনার ৯০-৯৫ শতাংশই কিন্তু গতকালের চিন্তা-ভাবনা!

এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে কীভাবে আমরা নতুন চিন্তা-ভাবনা করবো? তিনটি জিনিস সহজেই করা সম্ভব :

১. নিজের বন্ধুমহলের বাইরের মানুষের সাথে কথা বলুন। (গত সাতদিনে চেনা-জানা মানুষের বাইরে কয়জন মানুষের সাথে কথা বলেছেন? কয়জন বিদেশি মানুষের সাথে কথা বলেছেন? নিজেই নিজেকে যাচাই করুন)

২. নতুন নতুন লেখকের বই পড়ুন, নতুন নতুন বিষয়ের বই পড়ন। যেমন : বেশিরভাগ দিন আত্মউন্নয়নমুলক বই পড়ে থাকলে কিছুদিন সাহিত্যের বইও পড়ুন।

৩. নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করুন। যেমন : কখনও রক্ত না দিয়ে থাকলে রক্তদান করুন, কখনও ভিডিও না বানালে নিজের একটা ভিডিও বানিয়ে দেখুন (আপলোড করা বাধ্যতামূলক নয়!), কখনও

আর্ট এক্সিবিশনে না গিয়ে থাকলে ঘুরে আসুন। নতুন নতুন বই পড়লে, মানুষের সাথে কথা বললে, নতুন নতুন অভিজ্ঞতা নিলে আপনার মনে নতুন করে তুষারপাত হয়ে আগের দেবে যাওয়া পথগুলো হারিয়ে যাবে। তখন আপনি আবার একদম নতুন করে পাহাড়ের উপর থেকে স্লেজ গাড়িতে করে সম্পূর্ণ নতুন পথে নামতে শিখবেন!

*

প্রশংসা আর নিন্দার কমিউনিকেশন

আপনি একটা কাজ ভালো করলে একটা প্রশংসা পেতে পারেন। আর আপনি যদি একটা কাজ খারাপ করেন, তাহলে সেই কথা সবাইকে বলে বেড়ানো। হয়। আমরা যেই আগ্রহ ও উদ্যমের সাথে গীবত করি, সেই উদ্যমের সাথে যদি মানুষকে আমরা উৎসাহ দিতাম, তাহলে সত্যি বলতে আমাদের বোধ। হয় আর কোনো মোটিভেশন লাগতো না।

ঠিক একইভাবে আমরা মানুষকে অন্যের সামনে যতটা মজার সাথে অপদস্ত করি, ততটা আনন্দের সাথে প্রশংসা করি না। আমরা যদি ব্যক্তিগতভাবে সমালোচনা করতাম এবং প্রকাশ্যে প্রশংসা করতাম, তাহলে দুনিয়া আসলেই বদলে যেত।

আর এই প্রশংসা আর নিন্দা আমাদের জীবনে সবথেকে বেশি প্রভাব ফেলে যখন আমাদের বয়স কম থাকে। এই বিষয়ে শিক্ষক এবং অভিভাবকরা যদি কিছু জিনিস মেনে চলতেন, তাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ব্যাপক আত্মবিশ্বাস নিয়ে গড়ে উঠতো।

*

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মধ্যে কথোপকথন কেমন হওয়া উচিত?

যেভাবে বলতে পারেন,

১) গুনের চেয়ে সেই গুনুটাকে কী করে কাজে লাগিয়েছে সেটা প্রশংসায় উল্লেখ করুন। যেমন- আপনার বাচ্চা নিজে নিজেই এই সমস্যার সমাধান করেছে। যেমন (কাজটার উদাহরণ)

২) আপনার ভূমিকাটাও উল্লেখ করুন। আপনি কী কী করেছেন ওকে বোঝানোর জন্যে সেটাও বলুন।

৩) নিজেকে অপর প্রান্তের মানুষটার জায়গায় বসিয়ে এরপর পরিস্থিতিটা চিন্তা করুন।

৪) সংক্ষেপে পুরো পরিস্থিতিটার ব্যাখ্যা দিন।

 যেটা না বলাই ভালো

১) প্রশংসা করার সময় কোনো গুণের কথা সরাসরি উপসংহার হিসেবে বলবেন না।
যেমন- আপনার বাচ্চা তো বেশ স্মার্ট।

২) কোনো ভুলের জন্য বাচ্চাকে দোষারোপ করবেন না।

৩) যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন না।

৪) অপভাষা ব্যবহার করবেন না।

*

যারা ‘না’ বলতে পারেন না!

মানুষের সব কথায় হ্যাঁ বলতে থাকলে আপনি মানুষের পুতুল হয়ে যাবেন। আপনি অন্যের পুতুল হবেন নাকি নিজের জীবন নিজে তৈরি করবেন সেটা আপনাকে নির্বাচন করতে হবে। এরপরও কয়েকটি মেন্টাল কনসেপ্ট মাথায় রাখলে আপনার জন্য না বলা সহজ হয়ে যাবে। সেই কনসেপ্টগুলো হল :

১. সবকিছুতে হ্যাঁ বললে আপনি এমন অনেক কাজে হ্যাঁ বলে ফেলবেন যেগুলো করার কোনো দরকার ছিল না।

২. নিজেকে বেশি সস্তা করে ফেলতে চান? সবকিছুতে সবাইকে হ্যাঁ বলতে থাকুন।

৩. হ্যাঁ বলে কাঁচুমাচু করার চেয়ে না বলে ক্লিয়ার থাকাটা সবার জন্যই ভালো।

৪. সব কাজ আপনার উপর আসলে আপনি হয় মানুষ চিনতে ভুল করেছেন, না হয় কাজ বুঝে নিতে ভুল করেছেন।

*

আমি আমার সোশ্যাল স্কিল কীভাবে বাড়াবো?

নিচের বাক্যগুলো আপনার জন্য সত্য হলে টিক এবং মিথ্যা হলে ক্রস দিন।

অন্যের মানসিক অবস্থা ভেবে কি আমি কথা বলি?

আমি খুব বেশি দিন বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখতে পারি না।

জয় কিংবা পরাজয়ের সময় আমার হুশ থাকে না।

কথা শোনার সময় খুব সহজেই আমার মনোযোগ চলে যায়।

আমি খুব সহজেই অন্যেদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মনের বিরুদ্ধে কাজ করি।

কী বলবো তা না জানা থাকায় অনেক সময় মানুষের সাথে কথাই বলা হয় না।

মানুষ কী চিন্তা করছে কিংবা অনুভব করছে সেটা আমার বুঝতে অনেক সমস্যা হয়।

রেগে গেলে আমি খারাপ শব্দ ব্যবহার করি এবং জিনিসপত্র ছোঁড়াছুড়ি করি।

মানুষ আমাকে প্রায়ই আরও ম্যাচিউর/পরিণত হতে বলে।

মানুষ আমার কথায় কখনই হাসে না।

আমি মাঝে মাঝে অশালীন ভাষা ব্যবহার করি।

মানুষের বডি ল্যাঙ্গুয়েজের মানে বুঝতে পারি না।

কী বলবো না তা না জানা থাকায় কথাবার্তা বেশি দূর আগাতে পারি না।

ধন্যবাদ, প্লিজ এসব শব্দ ব্যবহার করতে কার্পণ্য বোধ করি।

মানুষের পার্সোনাল স্পেসের মধ্যে অনেক সময় ঢুকে পড়ি।

নতুন বন্ধু বানাতে পারি না।

আমার আশেপাশে মানুষ থাকলে নার্ভাস হয়ে যাই।

নিজের কথার আওয়াজ অনেক সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

মানুষের আচরণে কষ্ট পেলে নিজের মধ্যে পুষে রাখি।

আমি আমার সোশ্যাল স্কিল বাড়ানোর চেষ্টা করছি (যেমন এই বইটা পড়ছি)।

.

বই আর ইন্টারনেট থেকে পাওয়া দুটো উক্তি দিয়ে শেষ করি,

সবাইকে খুশি করতে চাইলে নেতা না হয়ে আইসক্রিম বিক্রি করেন গিয়ে।

দ্বিতীয়টা স্টিভ জবস বলেছিলেন বোধ হয়, একটা আইডিয়াকে হ্যাঁ বলা মানে এক হাজারটা আইডিয়াকে না বলা।

*

ইমোটিকনে কমিউনিকেশন

এই ইমোটিকন জিনিসটা অনেক কনফিউজিং। একই ইমোটিকনের অর্থ একেকজনের কাছে একেক রকম। তাই, আপনি যা বলছেন, তা অন্যজন বুঝছে কি না, সেটা নিশ্চিত করাটাই ইমোটিকন কমিউনিকশনের মূল জটিলতা। একই বাক্য কেবল ইমোটিকন দিয়ে সম্পূর্ণ পাল্টে দেয়া যায়।

বর্তমান যুগে আমাদের অনেক কথা যেহেতু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়, তাই ইমোটিকনের ব্যবহারও অনেক বেড়ে গেছে। এখন সমস্যা হচ্ছে ইমোটিকনের ব্যাপারটা অনেক আপেক্ষিক। একেকজনের কাছে একেক ইমোটিকনের মানে একেকরকম হতে পারে। কিন্তু, নিচের ৩টি গাইডলাইন মানলে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে :

১. আপনার মোবাইলে যে ইমোটিকন দেখাচ্ছে, সেটা অন্যের মোবাইলে গিয়ে বদলে যেতে পারে। তাই, আপনি বলছেন দুষ্টুমি করে কিছু, সেটা অন্যের হ্যান্ডসেটে বদলে গিয়ে আদেশ হয়ে যেতে পারে।

২. পেশাগত কাজে যেমন ইমেইলে একদমই ইমোটিকন ব্যবহার করা উচিত না। বাইরের দেশে অনেক উদারমনা ম্যানেজার থাকলেও, লোকাল মেইলে ইমোটিকন ব্যবহার করে বিপদে পড়লে আমরা দায়ী থাকবো না কিন্তু!

৩. ইমোটিকন ব্যাপারটা আপেক্ষিক। আপনার কাছে একটা অর্থ থাকতে পারলে, অন্যজনের কাছে সেটার অর্থ বদলে যেতে পারে। এটা জেনেশুনে তারপর ব্যবহার করবেন।

*

লিগ্যাল কমিউনিকেশন

পেশাদার দুনিয়ায় কাজ করার সময় জীবনেও মুখের কথার উপর সম্পূর্ণ ভিত্তি করে কাজ করবেন না, যা কিছু করছেন, সবকিছুর লিগ্যাল কাগজপত্র রাখবেন; তারপর বাকি সব কাজ।

এখন আসি মূল প্রসঙ্গে। আপনি কখনও যদি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খুলে। থাকেন, তাহলে দেখবেন কয়েকশ শুধু শর্ত আর শর্ত। অফিশিয়াল অনেক ডকমেন্টে দেখবেন নিচে একদম ছোট করে সারির পর সারি কঠিন শব্দে অনেক কিছু লেখা থাকে।

এগুলো কেন লেখা থাকে? নিশ্চয়ই ব্যবসায়িক কারণে। তবে, এখানে শেখার অনেক কিছু আছে। আসল ব্যাপার হচ্ছে, আপনি যদি আপনার শর্তগুলোর মধ্যে ফাঁকফোকর রাখেন এবং কেউ যদি সেটা ব্যবহার করতে পারে, তাহলে আপনার করার কিছুই থাকবে না। তাই, একশ লাইন হলেও লিগ্যাল পেপারস এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন মানুষ সহজে এর ফাঁকফোকর ধরতে না পারে। এমন দুটো প্র্যাক্টিকাল উদাহরণ দিচ্ছি।

বাংলাদেশেরই বড় একটা সংস্থাকে একটা টেলিকম কোম্পানি অফার দিলো যে, আন্তর্জাতিক কল করার সময় প্রথম এক মিনিট ফ্রি এবং তারপরে প্রতি মিনিট টাকা কাটা হবে। আপনি চাইলে এখনই একটু চিন্তা করে দেখুন তো, অফারটার মধ্যে সমস্যাটা কোথায়?

কারণ, পরের মাসে টেলিকম কোম্পানি হুট করে দেখে তাদের কয়েক হাজার ডলার মূল্যের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু বিল এসেছে মাত্র কয়েক ডলার। কাহিনী অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেল যে, মানুষজন ৫৯ সেকেন্ড কথা বলে কেটে দিত। তারপর আবার কল দিয়ে ৫৯ সেকেন্ড কথা বলতো। এভাবে ৫৯ সেকেন্ড পর পর কেটে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলে যেত কিন্তু বিল আসতো না কারণ অফার অনুযায়ী প্রথম এক মিনিট ফ্রি! এই নিয়ে প্রচুর বাকবিতণ্ডা হয়ে গিয়েছিল!

তারা যদি প্রথম এক মিনিট ফ্রি না বলে যদি এককালীন এক মিনিটের টকটাইম ফ্রি বলতো, তাহলেও টেলিকম কোম্পানি হয়তোবা বেঁচে যেত!

এই গেল একটা অফারের ভুলের উদাহরণ। এমন সমস্যা যেকোনো প্রক্রিয়াতেই হতে পারে। আরেকটা উদাহরণ দেই। তখন মানুষ প্রথম প্রথম অনলাইনে টাকা পাঠানো শুরু করেছে। টাকা পাঠাতে হলে তারা টাকার অংক লিখে সেন্ড দিত এবং টাকা চলে যেত। কিন্তু, একজন পোদ্দার একদিন সংখ্যার সামনে একটা নেগেটিভ চিহ্ন বসিয়ে সেন্ড ক্লিক করলো। মানে সে, ১০০ টাকা না লিখে ধরেন–১০০ টাকা লিখলো। এবং অবাক হয়ে সে দেখলো যে অন্যের অ্যাকাউন্ট থেকে তার অ্যাকাউন্টে টাকা চলে এসেছে। এটা ছিল নেহাত প্রোগ্রামিং-এর সীমাবদ্ধতা। কেউ চিন্তাও করেনি যে খালি একটা নেগেটিভ চিহ্ন দিয়ে ব্যাংকের টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়াটাকেই পাল্টে ফেলা যাবে! পরে অবশ্য সেটা ঠিক করা হয়েছে। এখন আপনি চাইলেও ব্যাংকের এটিএমে গিয়ে এই কাজটি করতে পারবেন না।

শিক্ষার বিষয় হলো, ব্যবসার ক্ষেত্রে একটা সামান্য অক্ষর কিংবা চিহ্নও পুরো লাল বাতি জ্বালিয়ে দিতে পারে। তাই শর্ত প্রযোজ্য যত ছোট করেই লেখা থাকুক না কেন, ঠিকমত পড়ে যেন কাজে আগান।

*

কমিউনিকেশনের মায়া

নিচের ২টি কেস অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়। ব্যাপারগুলো খুবই স্পর্শকাতর, কিন্তু অনেকেই একদম অমানবিক একটা রিয়্যাকশন কিংবা কমেন্ট দিয়ে বসেন। একটার উত্তর আমরা দিয়ে দিলাম, অন্যটির উত্তর আপনি আপনার আশপাশের মানুষের সাথে কথা বলে বের করেন। এটা কাল্পনিক মনে হলেও অনেকে যদি একটু ইতিবাচক কথা বলতো, তাহলে হয়তোবা অনেক জীবন বদলে যেত। এমন অনেক ঘটনা আছে যেখানে সুইসাইড করার আগে অনেকেই ইশারা ইঙ্গিত দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেন একজন হলেও বন্ধু এগিয়ে আসে। আমার দুই ক্লাসমেট এভাবেই সুইসাইড করেছে। তাদের পোস্টের নিচে যদি একজন সহমর্মিতা নিয়ে কিছু লিখতো, তারা হয়তোবা আজ বেঁচে থাকতো। একটা অনুপ্রেরণামূলক কমেন্টও কিন্তু কখনই কম নয়। তাই, আমাদের দরকার কথার ভেতরের মানুষটিকে বোঝার।

*

কীভাবে মানুষকে আরও সহজে বুঝতে পারবেন?

চোখে চোখে কথা বলুন

কথা বলার সময় মানুষের মুখ, বিশেষ করে চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন যাতে তার অভিব্যক্তি এবং আবেগ বুঝতে পারেন।

বুঝলে বুঝতে দিন

মাথা নেড়ে, কিংবা আলতো হাসিমুখ দিয়ে প্রকাশ করুন যে আপনি বুঝতে পারছেন। আপনি বুঝতে পারছেন জানলে তিনি আত্মবিশ্বাস পাবেন এবং কথা রিপিট করবেন না।

মনে রেখেছি

এমন কোনো কথা যদি থাকে যেটা বললে মনে হবে যে আপনার আগের কথাগুলো বিস্তারিত মনে আছে, তাহলে সেগুলো শেয়ার করুন। কোনো বিষয়ে একমত থাকলে সেটাও শেয়ার করুন।

হুম যেন না বলতে পারে

আপনার প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ/না দিয়ে করা গেলে, অপর মানুষটির কাছ থেকে নতুন কিছু কিন্তু জানতে পারছেন না। তাই, এমন প্রশ্ন করুন যেগুলোর উত্তর করতে গিয়ে তারা আপনাকে কোনো তথ্য দিয়ে বসেন।

আয়নাবাজি

এটাকে বলে মিররিং। অন্য মানুষটি যেই বডি ল্যাংগুয়েজ দেখাচ্ছে, আপনি সেটা অনুকরণ করুন। মানুষ আপনার মাঝে তাদের নিজেদের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলে আপনার সাথে আরও সহজভাবে কথা বলতে পারবে।

বুদ্ধিমান তোতাপাখি

মানুষ যা বলছে, তাই নিজের মতো করে গুছিয়ে আবার তাকে বলুন। এটাতে দুজনের মধ্যে বোঝাঁপড়ার তফাতটা অনেক কমে যাবে।

*

বলে ফেলা ভালো, নাকি চুপ থাকা ভালো

একটা সিচুয়েশন দেই আপনাকে। মনে করেন আপনি একজন স্টুডেন্টকে পড়াচ্ছেন। এখন তার অবস্থা দেখে আপনি বুঝে গেছেন যে তার অ্যাডমিশনে ভালো জায়গায় চান্স পাওয়ার সুযোগ খুবই কম। এমন অবস্থায় আপনি দুটো জিনিস বলতে পারেন :

১. এখন অবস্থা যাই হোক না কেন! তুমি পারবে! মানুষ পারে না এমন জিনিস নেই! লেগে থাকলে অনেক কিছুই হতে পারে!

২. এখন অবস্থা অনুযায়ী তোমার স্বপ্নের ইন্সটিটিউটে চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এর চেয়ে তুমি তোমার দ্বিতীয় সারির পছন্দগুলো টার্গেট করে পড়লে রিস্ক অনেক কম।

দুটোই সত্য। কিন্তু, ব্যাপার হচ্ছে এই যে সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারটা রিস্ক নিবো না কি সেফ খেলবো?– এই সিদ্ধান্ত তো শিক্ষার্থীর নেওয়া উচিত কারণ এটা তার জীবন। আমরা ক্ষণিকের উৎসাহ দিয়ে আসল রিস্কের কথা না বলে হয়তোবা তাদের মন খুশি করছি, কিন্তু আসলে তার সত্যটা জানা উচিত।

আর এখানেই সমস্যাটা হয়। মন খারাপ করবে বলে অনেক সময়ই আমরা মানুষকে সত্যটা না বলে একটা বুলি শুনিয়ে দেই। এটাকে ইংরেজিতে বলে Sugarcoating। অর্থাৎ সত্যি কথা গায়ে লাগবে বলে, মিষ্টি কথা দিয়ে সেটা এড়িয়ে যাওয়া।

কিন্তু, এই সুগারকোটিং করলে কিন্তু আমরা মানুষটাকেই বিপদে ফেলছি। তাহলে আমরা কী করবো?

১. মন খারাপ করে ফেলতে পারে এমন সত্য বলবো?

২. সুগারকোটিং করবো?

পারলে, নিজের কথা রেখে অন্যেরটা চিন্তা করে সত্যটা বলুন। আপনার নিষ্ঠুর সত্যের জন্য আজ হয়তোবা আপনাকে ঘৃণা করবে, কিন্তু কাল যখন দেখবে বাকি সবাই নিজের মুখ বাঁচানোর জন্য সুগারকোটিং করেছিল; তখন আপনাকে বেশি শ্রদ্ধা করবে।

আর মনে রাখবেন, মানুষকে সত্য বলার ব্যাপারটা আপনার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ব্যাপার না। এটা আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

*

মিটিং কমিউনিকেশন

যেই কাজটা একটা এসএমএস, ফোন কল কিংবা ইমেইল দিয়ে শেষ করা যায়, সেই কাজের জন্য যেন কখনও মিটিং না করতে বসি। এবং মিটিং-এ কোনো ভূমিকা নেই, এমন মানুষ না রাখলে মিটিং আরও ফোকাসড হবে। তো চলুন, দেখে নেয়া যাক বাদবাকি মিটিং কমিউনিকেশন হ্যাকস।

মিটিং-এর কমিউনিকেশন কায়দা

গ্রহণযোগ্য

১) কান খোলা রাখুন। কান ঠিকমত খোলা রাখলে কিন্তু সবারই কথা বলার প্রয়োজন কমে যায়।

২) মিটিং রুমে চা-কফি রাখুন। বিশেষ করে লম্বা সময়ের মিটিং-এর জন্য।

৩) আমাদের মেমোরি অতটাও শার্প না যতটা আমরা মনে করি। তাই মিটিংয়ের সময় খাতায় কিংবা ডিজিট্যালি নোট নিন।

৪) মিটিং-এর আগে আপনার রিসার্চ এবং পেপারওয়ার্ক শেষ করে রাখুন।

৫) প্রশ্ন করে নিশ্চিত করুন যে আপনারা দুজন একই জিনিসই বুঝেছেন।

অগ্রহণযোগ্য

১) মানুষের যদি মনে হয় যে শুধু আপনিই কথা বলছেন, তাহলে তারা আপনার কথা শোনা বন্ধ করে দিয়ে নিজেদের কণ্ঠ জোরালো করার প্রতি মনোযোগ দিবে যেটাতে সবারই লস।

২) বেশি কুড়মুড় শব্দ করে এমন টোস্ট কিংবা পুরো রুম গন্ধ করে ফেলে এমন পেঁয়াজ–্রসূন দেওয়া হবার খাবেন না। বিশেষ করে ক্রমের ভেতর তো সিগারেট ধরাবেনই না।

৩) আপনি যতই ভালো স্যুট-টাই পরে ফরফর কথা বলেন না কেন, লেট করে মিটিং-এ গেলে আপনার ইমেজের ক্ষতি পোষানো বেশ কঠিন হয়ে যাবে।

৪) কথা বলার সুযোগের অভাব কখনই হবে না, তাই অন্যের কথার মাঝে তাকে থামিয়ে দেবেন না। সবারই সময়। আসবে।

২. কমিউনিকেশন শেখার সেরা সোর্স

কমিউনিকেশন শেখার সেরা সোর্স

আপনি যদি কোনো জিনিস দ্রুত শিখতে চান, তাহলে প্রথমেই এমন উদাহরণ বের করেন যেটা আপনি অনুসরণ করতে চান। এমন উদাহরণ যেটা আপনার জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। তাই, আপনি যদি একদম এক্সপার্ট লেভেলে কথা বলতে চান, তাহলে আগে আপনাকে দেখতে হবে এক্সপার্টরা কথা বলে কীভাবে। সেজন্য ইউটিউবে গিয়ে Ted Talk চ্যানেলের ভিডিওগুলো দেখুন। নিজেকে পৃথিবীর বিভিন্ন বিষয়ে আপডেটেড রাখতে চায়, এমন মানুষদের উচিত এই চ্যানেলটা সাবস্ক্রাইব করে রাখা।

আরেকটা ভালো সোর্স হচ্ছে Toastmasters International যেখানে পৃথিবীর সেরা বক্তাদের পুরস্কারপ্রাপ্ত ভিডিওগুলো দেয়া আছে। ভিডিওগুলোতে দেখার চেষ্টা করুন কীভাবে অল্প সময়ের মধ্যে তারা গল্পের মাধ্যমে কোনো বিষয় কিংবা জীবনের সুন্দরতম গল্পগুলো অসাধারণভাবে তুলে ধরছেন। বাংলায় শিখতে চাইলে এমন কোনো ইউটিউবার কিংবা উপস্থাপককে ফলো করুন, যার কথাবার্তা আপনার অনেক ভালো লাগে। মূল বিষয় হচ্ছে, আপনার একজন রেফারেন্স দরকার, যার মতো আপনি কথা বলতে চান। একটা পর্যায় পর্যন্ত তাকে কপি করে শিখুন, তারপরে আত্মবিশ্বাস চলে আসলে এক সময় আপনার নিজেরই একটা কথা বলার স্টাইল তৈরি হয়ে যাবে।

কমিউনিকেশন খুবই প্র্যাক্টিকাল একটা জিনিস। তাই, ভিডিও দেখে এবং নিজে অনুশীলন করে শেখাটা অনেক কাজের। তবে, কমিউনিকেশন কিংবা যেকোনো ফিল্ডে এক্সপার্ট লেভেলে যেতে হলে কিছু বই তো পড়তেই হয়। আপনার যদি সেই ইচ্ছাটা থাকে, তাহলে কমিউনিকেশনের জন্য অন্যতম ১০ টি সেরা বইয়ের লিস্ট এখানে আমরা দিয়ে দিলাম। আর যাই হোক, অন্তত How To Win Friends & Influence People বইটা কিন্তু সবারই পড়া আবশ্যক!

*

ভাবিয়া কহিও কথা, কহিয়া ভাবিও না

মাথায় প্রথম যখন কোনো কথা আসে

১) আমার কথাটা কি আরও ভালোভাবে বলা সম্ভব?

২) আমি কি কথাটা অন্য মানুষটিকে আঘাত করার জন্য বলছি?

৩) কথাটা কি না বললেও চলে?

৪) আমি কি অন্য মানুষটির মনের অবস্থা সম্পর্কে জানি?

৫) আমি কি অন্য মানুষটির দৃষ্টিকোণ বুঝতে পারছি?

৬) আমি কি সঠিকভাবে অন্য মানুষটির কথা শুনেছি?

৭) আমার কথা কি অন্য মানুষটিকে বিব্রত করবে?

৮) আমার কথাটা আমাকেই কেউ বললে আমার কেমন লাগতো?

*

দক্ষিণে গিয়ে হাতের বাম দিয়ে সোজা গিয়ে পশ্চিমে!

কোনো অপরিচিত জায়গায় গিয়ে দিক খুঁজছেন। রাস্তায় কাউকে জিজ্ঞেস করলে উনি হাতের ডান-বাম এবং গলির মাথার উত্তর-দক্ষিণ দিয়ে এমন দিকনির্দেশনা দিবেন, যেটা মেনে চলার চেয়ে ভাঙ্গা কম্পাস দিয়ে গুপ্তধন খোঁজা সহজ! এসব ডান-বাম-উত্তর-দক্ষিণ জানা ভালো, কিন্তু ডিজিটাল যুগে ১০০ বার ফোন করে জায়গাটা কই! জিজ্ঞাসা করার চেয়ে একবার গুগল ম্যাপে লোকেশন পিন শেয়ার করাটা হাজার গুনে সহজ। ফেসবুকেও লোকেশন পিন শেয়ার করা যায়।

একটা দুর্গম জায়গায় এক হাজার জন মানুষ আসলে তাদের প্রত্যেককে ইভেন্টের দিন একজন একজন করে দিকনির্দেশনা দেওয়ার চেয়ে লোকেশন পাঠানো অনেক সহজ। কেউ ম্যাপ ব্যবহার করতে না পারলে সেটা তার অজ্ঞতার জন্য আপনাকে সময় নিয়ে দিক-নির্দেশনা দিতে হবে। কিন্তু, ম্যাপ ব্যবহার করার অভ্যাসটা সবার করা উচিত।

*

অফেন্সিভ কমিউনিকেশন

এখন যুগটাই এমন যে, আপনি যা কিছুই বলেন না কেন, কেউ না কেউ কোনো না কোনো বাহানায় মাইন্ড করে বসবে, মানে অফেন্ডেড হয়ে বসবে। এখন এটা তো একদম কমন সেন্স যে, মানুষকে আঘাত করে উস্কানিমূলক কিছু আমরা বলবো না। কিন্তু, সমস্যা হয় তখন, যখন মানুষ মাইন্ড করতে পারে ভেবে আমরা একদম চুপ করে যাই।

এক্ষেত্রে দ্বি-স্তর সূত্র দিয়ে রাখি। আশা করি এটা ব্যবহার করলে অনেকে নিজেকে দোষী না ভেবে কথা বলতে পারবেন।

সূত্র ১ : সমস্যাওয়ালা কথা বলে মানুষ রাগালে আমার দোষ।

সূত্র ২ : সঠিক কথা বলে মানুষ রাগালে সেটা মানুষের পরমতসহিষ্ণুতার অভাব। আমার দোষ না।

মানুষের অফেন্ডেড হওয়ারও অধিকার আছে, আবার এইদিকে আপনার মতামত প্রকাশের অধিকারও আছে। সব সময় অন্যের কথা চিন্তা করে নিজেকে সেন্সর করতে গেলে এক সময় নিজের আওয়াজই হারিয়ে। ফেলবেন।

এবং পৃথিবীতে যত বিপ্লবী মানুষ আছেন, প্রথম যখন তারা মুখ খুলেছিলেন, অনেকেই অফেন্ডেড হয়েছিল। একবার খালি চিন্তা করে দেখেন, মানুষ অফেন্ডেড হবে– এই কথা চিন্তা করে যদি মানুষগুলো চুপ থাকতেন, তাহলে। পৃথিবীর আজ কী হত?

সব শেষে এমন কিছু জিনিস, যেগুলো নিয়ে কথা বলাটাই অফেন্সিভ :

১. ভাই, শুনলাম আপনার ডিভোর্স হইসে।

২. শুনলাম, আপনি নাকি বিদেশ থেকে ফেরত এসেছেন?

৩. আপনার চাকরি চলে গেসে কবে?

৪. এবার কোথাও চান্স পাইলা না কেন জানো?

৫. আপনি কিছু করেন না যে?

*

WIIFY কমিউনিকেশন

আমাদের বিজনেস ক্লাসে একদিন নেগোশিয়েশন শেখানো হচ্ছিল। কীভাবে মানুষের সাথে দরদাম করবেন। বিশেষ করে কর্পোরেট জগতে। কারণ, মিটিং রুমে গিয়ে তো, একদাম ১শ, বাইচ্চা লন ১শ! এসব বলা যাবে না। মিটিং-এ তো সবাই অনেক যৌক্তিকও বটে। এই আইডিয়া ভাই খালি আপনার জন্যই বানানো হয়েছিলো! বললেই যে ক্লায়েন্ট গলে যাবে, এমন ব্যাপারও কিন্তু আসলে না। তাহলে কী করতে হবে? WIFY দেখতে হবে।

WIIFY কী?

Whats in it for you?

অর্থাৎ, আমার কথার মাধ্যমে আপনার লাভটা কোথায়, সেটা আমাকে আগে থেকেই জানতে হবে। কোনো একটা ব্যবসায়িক চুক্তি হলে আপনার যে লাভ তবে সেটা আপনি, আমি, ক্লায়েন্ট সবাই জানি। কিন্তু, এখানে ক্লায়েন্টের লাভটা কী, সেটা বুঝে আপনাকে কথা বলতে হবে। কোনো ক্লায়েন্ট হয়তোবা নতুন আইডিয়া চাচ্ছে, তাকে আইডিয়া দেন। কোনো ক্লায়েন্ট হয়তোবা কম দামে কাজটা চাচ্ছে, তাকে লো-বাজেটের আইডিয়া দেন।

স্যার! এই প্রজেক্টটা না হলে আমার এই বছরের বোনাসটা পাবো না। 🙁 এটা না বলে, স্যার! এই প্রজেক্টটা হলে এই বছরে আপনি এই কোম্পানির বেস্ট এমপ্লয়ি হয়ে যাচ্ছেন, তাই না?

আপনি নিজেরটা বাদ দিয়ে অন্যের কথা আগে চিন্তা করতে পারলে কমিউনিকেশনে বহুদূর এগিয়ে যাবেন।

মনে রাখবেন, পৃথিবীতে দুই দলের মানুষ আছে। এক দলের লোক যখন কোনো রুমে ঢুকে, তখন সে বলে, আমি এসেছি! আরেক দল লোক রুমে ঢুকে বলে, আমি আরেহ! তুমিও এসেছো! –লেইল লোওনডেস।

*

কোন কথাটা ভাইরাল হবে?

এখন একটা কথা সব জায়গাতেই চলে, ভাই! ভাইরাল কন্টেন্ট লাগবে!। টাকা ঢেলে বুস্ট করলে সব কন্টেন্টেই ভিউস আনা যায়। কিন্তু, মানুষের শেয়ারের মাধ্যমে ভাইরাল হতে হলে কন্টেন্টে বিস্ময়কর, নতুন এবং জেনুইন (Genuine) একটা ব্যাপার থাকে। এসবের পরও ভাইরাল হবে কি না, সেটা স্থান, কাল, পাত্রবিশেষে ভিন্ন হয়। আমাদের নিজেদের ক্ষেত্রে দেখেছি যে, একই ভিডিও ফেসবুকে হিট হয়েছে কিন্তু ইউটিউবে নর্মাল। এর বিপরীতে এমনও ভিডিও আছে যেটা ইউটিউবে অনেক ভিউস কুড়িয়েছে কিন্তু ফেসবুকে হিট খায়নি। একই ভিডিও! কিন্তু, দুটো প্লাটফর্মে সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটো রিয়্যাকশন। এমন অনেকবারই হয়েছে এবং এখনও হয়। এর পেছনে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যালগোরিদমের হাত আছেই। তবে এখান থেকে আমাদের আরেকটা শিক্ষা হল, আপনার কথা অসাধারণ হলেও, সেটার সাফল্য নির্ভর করছে আপনি কখন, কোথায়, কার সামনে, কী উপলক্ষে সেটা বলছেন।

আপনি আর আপনার বন্ধু একই গান অনেকদিন ধরে শুনছেন। হঠাৎ ব্রেক আপ হওয়ার পর সেই চিরচেনা ভালোবাসার গান শুনতে গিয়ে দেখেন। আপনার বন্ধু কেঁদে ভাসিয়ে দিচ্ছে। গানের কথা একই আছে, কিন্তু গানের কথা শোনার প্রসঙ্গ (Context) বদলে গেছে। গানের কথাতেই যদি ম্যাজিক থাকতো, তাহলে সে আগে কেন কাঁদেনি?

একটা উক্তি হয়তোবা হাজারোবার শুনেছি। কিন্তু, প্রাণপ্রিয় সিনিয়র ভাইয়ের কোনো ভিডিও কিংবা লেকচারে শুনলে কেন জানি একদম কলিজায় গিয়ে লাগে। উক্তিতে যদি ম্যাজিক থাকতো, তাহলে লেকচারের শোনার আগে কেন অনুপ্রেরণা পাইনি?

আপনার কবের কোন কথা কার মনে যে দাগ কাটে, সেটা আমি আপনি কেউই বোধ হয় নিশ্চয়তার সাথে বলতে পারি না। তাই, আমাদের উচিত সব সময় আমাদের সেরাটা দেওয়া। আপনি একদম ক্যাজুয়ালি হয়তোবা কথা বলছেন, কিন্তু ওই সময়ে যদি কেউ শতভাগ আবেগ দিয়ে আপনার কথা শুনে, তাহলেও আপনি কি একই কথাগুলোই চালিয়ে যাবেন?

*

স্টোনওয়ালিং (Stonewalling)

উটপাখি নিয়ে একটা গুজব আছে যে বিপদ দেখলে তারা অনেক সময় গর্তে মাথা লুকিয়ে ফেলে। আমি যদি বিপদ দেখতে না পাই, তাহলে বিপদ বাস্তবেও নাই– মানসিকতার কথা বলা হয় এই উটপাখির গুজব দিয়ে। যদিও উটপাখি বিপদ দেখে মাটিতে মাথা লুকিয়ে ফেলে না, তবে অনেক মানুষ আছে যারা বিপজ্জনক কমিউনিকেশন দেখলে উল্টা ঘুরে দুই মাইল দূরে চলে যায়। এবং এটা একটা বড় ভুল।

কমিউনিকেশন ভুলভাবে করাটা যেমন বিপজ্জনক, ঠিক তেমনই বিপজ্জনক। হল, কমিউনিকেশন সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলা। এটাকে স্টোনওয়ালিং (Stonewalling) বলে। কথা বলে বিপদ হয়, তবে কথা না বলে আরও বিপদ কারণ তখন মানুষ তাদের কল্পনাশক্তি দিয়ে ঝামেলাকে তাদের মাথায় কয়েকগুণ করে ফেলে। আর কয়েকগুণ বড় হওয়া এই সমস্যা একে আরেকজনকে না বলে দুইজনের মধ্যে দূরত্ব আরও বড় করে।

তাই, চুপ করে থাকার চেয়ে কথা বলে সব বিষয় পরিষ্কার রাখা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। হ্যাঁ, কমিউনিকেট করতে গেলে অনেকে রেগে যাবে, মন খারাপ করবে। কিন্তু, ধীরে ধীরে নীরবতা ভেঙ্গে পরিণতভাবে কথা বলা শিখতে হলে এই আলোচনার পথে হাঁটতেই হবে।

*

আপনার মনমতো একটা সময়

আচ্ছা ঠিক আছে ভাইয়া, আমি তাহলে আপনাকে জানাবো পরে।

এমন পরে জানাবো, বলবো বল করতে করতে কতজন মানুষই পরে আর কখনও যোগাযোগ করেননি। এরপর থেকে আপনি যেটা করবেন।

আচ্ছা ঠিক আছে ভাইয়া, আমি তাহলে আপনাকে জানাবো পরে।

–অবশ্যই ভাইয়া, আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। রবিবার ২ টার সময় আমি নিজেই আপনাকে কল করে জেনে নিব।

আর একধাপ ভালো করতে চাইলে আমি রবিবার একটা রিমাইন্ডার পাঠিয়ে দিব আপনাকে মনে করিয়ে দিতে। এই বলে আপনিঃ

১. মেইল শিডিউল করে রাখুন (যেন রবিবার সকাল ১০টায় অটোমেটিক মেইল চলে যায়)।

২. এসএমএস শিডিউল করে রাখুন (যেন রবিবার সকাল ১০টায় অটোমেটিক এসএমএস চলে যায়)। আপনার ফোনে সেই অপশন না থাকলে ক্যালেন্ডার কিংবা কোনো অ্যাপে রিমাইন্ডার করে মেসেজটা সেভ করে রাখুন। রিমাইন্ডার আসলেই পাঠিয়ে দিন।

৩. মেসেঞ্জারে রিমাইন্ডার সেট করে রাখুন (দুজনের কাছেই রবিবার সকাল ১০টায় মেসেঞ্জার নোটিফিকেশন আসবে)।

একদম সংখ্যা ও সময় দিয়ে কথা শেষ করলে আপনার কথাবার্তা আর মাঝপথে হারিয়ে যাবে না, আর যেই কাজটা করতে চেয়েছিলেন সেটাও আটকে থাকবে না।

*

আমার জন্য আপনার কি প্রশ্ন আছে?

অপশন ১ : আপনার কি কোনো প্রশ্ন আছে?

অপশন ২ : আমার জন্য আপনার কি কোনো প্রশ্ন আছে?

দেখতে একদম একই রকম মনে হলেও, প্রথম অপশনে প্রশ্ন করার একটা চাপ তৈরি করা হচ্ছে দর্শকের উপর। আর দ্বিতীয় অপশনে, উত্তর করার ভারটা নিজের উপর দেখিয়ে প্রশ্ন করার চাপ দেয়া হচ্ছে না।

*

নাম্বার সংগ্রহ করার কমিউনিকেশন

যখন গুরুত্বপূর্ণ কারও কাছ থেকে নাম্বার চাচ্ছেন তখন তিনটি জিনিস খেয়াল রাখবেন :

১. অন্যদের সামনে নাম্বার জিজ্ঞেস করবেন না। আপনাকে হয়তোবা নাম্বার দেওয়া যেত। কিন্তু, অন্যরা নাম্বার পেয়ে যেতে পারে এই ঝুঁকিতে আপনাকে না বলে ফেলতে পারেন।

২. আপনি কি হুট করে এসে নাম্বার চাচ্ছেন না কি আপনাকে বিশ্বাস করার মত ন্যূনতম কোনো কারণ আছে?

৩. সরাসরি নাম্বার না চেয়ে বরং বলুন, স্যার, কোন নাম্বারে কল করলে আপনার সব থেকে বেশি সুবিধা হবে? কিংবা আরও ভালো হবে যদি আপনি বলেন, স্যার, আপনার অ্যাসিসটেন্টের নাম্বারটা কি দেয়া যাবে? আপনি অ্যাসিসটেন্টের কথা বলে তাকে বোঝাচ্ছেন যে আপনি জানেন যে তিনি অ্যাসিসটেন্ট রাখার মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। তখন আপনাকে আরও খুশিতে পারলে নিজের নাম্বারটাই দিবেন!

*

ইমেইল লেখার আদব-কায়দা

কাগুজে চিঠি-দরখাস্ত এখন বিলুপ্তির পথে। সময়স্বল্পতা আর ডিজিটাইজেশন এর অন্যতম কারণ। আগেকার দিনের চিঠি-দরখাস্তের জায়গা এখন নিয়ে নিয়েছে মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমেইলের মতো বার্তা আদান প্রদান মাধ্যমগুলো। অন্য চ্যাটিং সাইটগুলো বেশ ইনফর্মাল হলেও ইমেইল বা বৈদ্যুতিন চিঠি সাধারণত প্রফেশনাল কাজেই বেশি ব্যবহৃত হয়। আর কিছু নিয়ম কানুন সম্পর্কে জানা না থাকার কারণে ভুলও হয়ে যায় প্রায়ই এই ইমেইল পাঠাতে গিয়ে। যেহেতু ইমেইলের ব্যবহার এখনও শুধু প্রফেশনাল কাজকর্মেই আটকে আছে তাই এই ইমেইল পাঠানোর কতিপয় আদব-কায়দা আছে। কথা না বাড়িয়ে সেগুলোই শেখা যাক বরং।

*

To, Cc, Bcc কোনটা কখন আর কেন?

ইমেইল কম্পোজ করার সময় সবার প্রথমে থাকে To, Cc, Bcc. এখানেই বাঁধে প্রথম গোলমাল। কোনটায় কখন কার ঠিকানা যাবে? সহজ করে বললে এই তিন জায়গাতে যাদের যাদের ইমেইল অ্যাড্রেস থাকবে তারা সবাই পুরো মেইলটা পাবে। প্রশ্ন আসতেই পারে তাহলে পার্থক্য কী হলো এদের মধ্যে?

To : প্রকৃত প্রাপক বা যাকে মেইলটা লেখা হয়েছে।

Cc : Cc-এর পূর্ণরূপ Carbon Copy. এই অংশে যার ঠিকানা থাকবে সেও হুবহু একই মেইলটাই পাবে।

Bcc : Bcc এর পূর্ণরূপ Blind Carbon Copy. এই অংশে যার ঠিকানা থাকবে তিনিও একই মেইল পাবেন।

এবার প্রশ্ন করতেই পারেন, একই মেইল সবাই দেখবে তাহলে To তে রাখলেই হতো। এত কাহিনী করার কী আছে? To তে রাখা হলে প্রতিটি ঠিকানার জন্যে একটা করে আলাদা মেইল যেত সবার কাছে। কিন্তু Cc আর Bcc তে রাখা হলে মেইল যাবে একটাই। কিন্তু যাদের যাদের দেখা প্রয়োজন সবাই দেখবে।

এখন চট করে আপনাদের আরেকটা কনফিউশন ক্লিয়ার করি, ইমেইল অ্যাড্রেস একটি গোপনীয় তথ্য। একজনের ইমেইল অ্যাড্রেস তার অনুমতি নিয়ে অন্য কাউকে দেওয়া অনুচিত। তাই, আপনি যদি প্রাপককে জানাতে না চান যে এই একটা মেইল আর কাদের কাদের পাঠিয়েছেন। তাহলে Bcc তে অন্য ঠিকানাগুলো বসান।

*

সাবজেক্ট লাইন কেন লিখতে হয়?

৩৩ শতাংশ মেইল খোলা হবে নাকি না সেটা নির্ভর করে ইমেইলের সাবজেক্ট লাইনের ওপরে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাবজেক্ট লাইন ছাড়া মেইলগুলো খোলা হয় না। আমাদের মেইলের স্প্যাম ফোল্ডারে স্টোর হওয়া। মেইলগুলোর ৬৯% ও স্প্যাম হিসেবে শনাক্ত করা হয় এই সাবজেক্ট লাইন দেখেই। তাই আপনার মেইলটা কী বিষয়ে সেটা আপনার ইমেইলের সাবজেক্ট লাইনে উল্লেখ করুন। আর হ্যাঁ, একটা জিনিস মাথায় রাখা জরুরি। এখন আমাদের পাঠানো ৪০% মেইলই চেক করা হয় মোবাইল থেকে। আর মোবাইলে সাবজেক্ট লাইনের ৪-৭ টা শব্দ দেখা যায়। তাই খেয়াল রাখতে হবে সাবজেক্ট লাইনের প্রথম ৪-৭ টা শব্দই যাতে মেইলটা কী নিয়ে সেটা সম্পর্কে ধারণা দেয়। কী থাকা উচিত সাবজেক্ট লাইনে? একটা ইমেইলের সাবজেক্ট লাইনে যেন দুটো প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর থাকে। ইমেইলটা কী নিয়ে? কেন ইমেইলটা গুরুত্বপূর্ণ? এই দুটো প্রশ্নের উত্তর যেন উল্লেখ থাকে ইমেইলের সাবজেক্ট লাইনে।

*

ইমেইলের টোন কেমন হওয়া উচিত?

ইমেইল লেখার সময় আপনি কোন মেজাজে লিখছেন; আপনি কি বিরক্ত হয়ে লিখছেন নাকি আগ্রহ নিয়ে? আপনি কি প্রাপকের প্রতি খুশি হয়ে লিখছেন নাকি রাগ হয়ে? এই আবেগগুলো ইমেইলের টেক্সটে বোঝানোর উপায় হলো আপনার শব্দচয়ন। ইমেলের টোন খুব বেশি ফর্মালও হওয়া উচিত নয়। আবার খুব বেশি ইনফর্মালও হওয়া উচিত নয়। আর আপনার যথাযথ শব্দচয়নই ঠিক করে দেবে আপনি ঠিক কোন মেজাজে ইমেইল করছেন।

*

ফন্ট আর ফরম্যাট কেমন থাকবে?

আগেই বলেছি ইমেইল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রফেশনাল কাজে ব্যবহৃত হয়। তাই এর প্রতিটা শব্দ বুঝে শুনে ব্যবহার করা উচিত। কোন সাইজের, ব্রণের, রঙের ফন্ট ব্যবহার করছেন সেটা নিয়ে একটু সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

ফন্ট সাইজ–যেটা দেওয়া আছে সেটাই ব্যবহার করুন।

ফন্ট কালার-খুব জরুরি না হলে পরিবর্তন করার দরকার নেই।

হাইলাইটিং-আন্ডারলাইন/বোল্ড/ইটালিক যেকোনো একটা ব্যবহার করুন।

হাইপারলিংক-কী যুক্ত করছেন উল্লেখ করুন, এডিট অ্যাক্সেস দিন, লিংকটা সম্ভব হলে ছোট করে দিন।

*

স্যালুটেশন আর ক্লোজিং কখন কেমন হবে?

স্যালুটেশন আর ক্লোজিং অর্থাৎ ইমেইলের শুরুতে সম্বোধন কেমন হবে আর শেষটা কীভাবে করতে হবে সেটা নিয়েও আমরা প্রায়ই কনফিউশনে ভুগি। উদাহরণ দিয়ে বোঝালে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে।

স্যালুটেশনের বেলায়–

Formal Salutation

Hello Shafiq Bhai,
Dear Ejaj Sir,
Dear Parveen Maam

Informal Salutation

Hi Shams,
Hey Zihan
Howdz Shamir

ক্লোজিংয়ের বেলায়-

Formal Closing

Sincerely
Yours truly
Best regards

Informal Closing

Thanks
Best
Cheers

আশা করি, এবার ধরতে পেরেছেন কোন ধরণের মেইল কীভাবে সম্বোধন আর শেষ করা উচিত।

*

সিগনেচার কেন প্রয়োজন?

প্রতিটা ইমেইলই শেষ হয় প্রেরকের নাম দিয়ে। এই নামটাকেই আরেকটু প্রফেশনালি দেওয়া যায় ইমেইল সিগনেচারের মাধ্যমে। এই সিগনেচার একটা সেট করে রাখা যায় ইমেইল বা জিমেইলের সেটিংসে গিয়ে। এতে করে সব ইমেইলের শেষে অটোমেটিক ঐ নির্ধারিত সিগনেচার চলে যাবে। এটা যেকোনো মেইলকে বেশ প্রফেশনাল দেখাতে সাহায্য করে।

*

Reply বনাম Reply all; কোনটা কখন এবং কেন?

To, Cc, Bcc এর পর আরেকটা গোলমেলে জায়গা হলো এই Reply আর Reply all. এই অপশন মূলত কোনো ইমেইল গ্রুপের ক্ষেত্রে আসে। এই দুটোর কোনটায় ক্লিক করলে কী হয় সেটা জেনে নেওয়া যাক আগে।

Reply : এখানে ক্লিক করা হলে কোনো ইমেইল লুপের সর্বশেষ যে প্রেরক মেসেজ করেছেন তার কাছে মেসেজের উত্তর যাবে।

Reply all : আর এখানে ক্লিক করা হলে পুরো ইমেইল লুপে যতজন। আছেন সবাই মেসেজের উত্তর পাবেন।

কোনো শুভেচ্ছা বার্তার উত্তর, বাজেট শিট বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাঠানোর সময় ভুলেও Reply all ক্লিক করতে যাবেন না।

*

কিছু Email Acronyms-এর পূর্ণরূপ!

ইমেইল লেখার সময় আমরা কখনও কোনো শর্ট ফর্ম ব্যবহার না করলেও হতেই পারে কেউ আমাদেরকে পাঠানো মেইলে কোনো শর্ট ফর্ম ব্যবহার করে বসলো। এখন আমরা যদি না জানি যে ঐ শর্ট ফর্ম দিয়ে প্রেরক কী বোঝাতে চেয়েছেন তাহলে একটু ঝামেলা। কয়েকটা বহুল ব্যবহৃত Email Acronyms বা শর্ট ফর্মের পূর্ণরূপ জেনে নেওয়া যাক—

Short Form Meaning কেন ব্যবহৃত হয়?
FYI For your Information প্রাপককে কোনো তথ্য জানাতে
ASAP As soon as possible গুরুত্ব বোঝাতে
LMK Let me know প্রেরককে প্রয়োজনে জানাতে
OOO Out of Office ছুটিতে থাকলে
NRN No reply necessary উত্তর দেবার প্রয়োজন না থাকলে
EOM End of message মেসেজ শেষ
PRB Please reply by নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই উত্তর দিতে হলে
EOD End of Day নির্দিষ্ট দিনের মধ্যেই উত্তর দিতে হলে
BTW By the way নিজের মতামত উপস্থাপনে
IMO In my opinion প্রসঙ্গক্রমে কিছু বলতে হলে

ইমোটিকনের ব্যবহার করা উচিত নাকি অনুচিত?

ইমোটিকন ব্যাপারটা বেশ আপেক্ষিক আর ইনফর্মালও বটে। একেক ইমোটিকনের মানে একেকজনের কাছে একেকরকম। তাই ইমেইলে ইমোটিকনের ব্যবহার না করাই ভালো।

Out of Office Replies কী?

আমাদেরকে নিজেদের প্রয়োজনে ছুটি নিতে হতেই পারে। কিন্তু আমরা ছুটিতে গেলে যে কাজকর্মও ছুটি নেবে ব্যাপারটা তো তাও না। আপনার এক্সটার্নাল স্টেকহোল্ডারদের মেইল তো আসবেই। এক্ষেত্রে করা কী যায়? এই সমস্যার সমাধানই হলো Out of Office Replies. এই রিপ্লাই আগে থেকে সেইভ করে রাখা যায়। আপনার ছুটিতে থাকাকালীন সময়ে আপনার ঠিকানায় আসা সবগুলো মেইলের উত্তরে এই অটোমেটেড রিপ্লাইটা যাবে। কী কী থাকবে এই অটো রিপ্লাইতে? আপনি কতদিনের জন্যে ছুটিতে (একদিনের ছুটি হলে এই রিপ্লাই নিষ্প্রয়োজন), খুব জরুরি বিষয়ে কাকে জানাতে হবে, এবং অবশ্যই সাবজেক্ট লাইনে [OOO] যোগ করে দেবেন।

কতক্ষণের মধ্যে ইমেইলের রিপ্লাই দেওয়া উচিত?

একটা ইমেইল আসার কতক্ষণের মধ্যে রিপ্লাই করা উচিত এটা নিয়ে আমাদের অনেকেই কনফিউশনে ভোগেন। সহজ করে দেই একদম।

নিজের টিমের কারও অর্থাৎ সরাসরি আপনার কাজের সাথে যুক্ত এমন কারও মেইলের রিপ্লাই দেখামাত্র করুন। অফিসের অন্য সহকর্মীর পাঠানো মেইলের উত্তর দিন অফিসের ওয়ার্কিং আওয়ারের মধ্যে। আর চেষ্টা করুন বাকি অন্য প্রয়োজনীয় মেইলের উত্তর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দিয়ে দিতে।

নিখুঁত ইমেইল পাঠানোর কয়েকটি ট্রিক!

ইমেইল যেহেতু ইংরেজিতে লেখা হয় তাই পাঠানোর আগে কয়েকবার প্রুফরিড করে নিন যাতে বানান আর গ্রামার সংক্রান্ত ভুল না থাকে। ডাবল। চেক করুন যা যা অ্যাটাচ করার করেছেন কি না, প্রাপকের ঠিকানা সবার। শেষে বসান। আর রিপ্লাই করার সময় আবার চেক করুন আসলে রিপ্লাই দেওয়া উচিত নাকি সবাইকে রিপ্লাই করা উচিত।

ইমেইলে আমাদের করা ২ টি সাধারণ ভুল!

আমরা যেহেতু এখনও ইমেইলে অতটা অভ্যস্ত নই তাই এই ইমেইল করার বেলায় কিছু সাধারণ ভুল আমরা সবাই করি। প্রথম ভুল হলো, একটা ঠিকঠাক ইমেইল অ্যাড্রেস না থাকা। উল্টাপাল্টা নাম দিয়ে ইমেইল আইডি খুলবেন না। ইমেইল অ্যাড্রেসে নিজের নামের সাথে একটা সংখ্যা থাকলেই যথেষ্ট।

দ্বিতীয় ভুল হলো, ইমোটিকন আর অনেকগুলো আশ্চর্যবোধক চিহ্ন একসাথে ব্যবহার করা। ইমেইলে আমরা প্রফেশনালি কমিউনিকেট করি। ইমোটিকন ব্যবহারের কোনো দরকার নেই এখানে। আর একের অধিক আশ্চর্যবোধক চিহ্ন ব্যবহার করলে প্রাপক আশ্চর্য হয়ে যেতে পারে আপনার বুদ্ধি নিয়ে।

বিরাম চিহ্ন আর ব্যাকরণ ঠিক রাখা যায় কীভাবে?

ইমেইল বাংলায় লেখার প্রচলন এখনও শুরু হয়নি। যতদিন ইংরেজিতে মেইল করা হবে ততদিনই গ্রামার আর বানান নিয়ে একটু বাড়তি সতর্ক থাকা আমাদের জন্যেই ভালো। চারটা সাধারণ ভুলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে। কেননা এই ভুলগুলোই ঘুরে ফিরে আমরা সবাই করি।

১. “…” এর বাইরে নয় ভেতরে বিরাম চিহ্ন বসে।

২. (…) এর ভেতরে নয় বাইরে বিরাম চিহ্ন বসে।

৩. ( 🙂 কোলন দুটো আলাদা স্বাধীন বাক্যের সংযোজক। কোলনের পরের বাক্যের প্রথম শব্দের শুরুর আদ্যক্ষর বড় হাতের।

৪. ( 😉 সেমিকোলন দুটো আলাদা স্বাধীন সম্পর্কযুক্ত বাক্যের সংযোজক। সেমি কোলনের পরের বাক্যের প্রথম শব্দের শুরুর আদ্যক্ষর ছোট হাতের।

এই আদব-কায়দাগুলো মেনে ইমেইল করা গেলে আপনার ইমেইল কমিউনেশন হবে আরও অনেক বেশি প্রফেশনাল।

আজকে থেকে এগুলো বদলে ফেলুন

একদম চোখ বন্ধ করে বদলে ফেলুন! এগুলো ব্যবহার করতে বেশি চিন্তা করে লাগবে না।

যা বলা বন্ধ করতে হবে / যা বলতে হবে

আপনার কী সমস্যা? / কীভাবে সাহায্য করতে পারি?

আমি জিতেছি। / আমরা জিতেছি!

আমি পারবো না। / আমার সাহায্য লাগবে।

আমাকে দিয়ে হবে না। / আমার সময় লাগবে।

কষ্ট দিলাম! / বাসায় আসার জন্য ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ! / ধন্যবাদ + (ধন্যবাদের কারণ)

চুপ করো। / আমি একটু বলি?

কার দোষ? / এখন তাহলে কী করা যায়?

অসম্ভব! / কাজটা একটু কঠিন।

পারবা না। / হেল্প লাগবে?

এই বেসিক শব্দগুলো নিজের ভোকাবুলারিতে নিতে সক্ষম হলে এর পরবর্তী ধাপে আপনার মাথার ফিল্টার ঠিক করতে মনোযোগ দিন।

*

আর একটা জিনিস!

মনে করেন কেউ আপনার কথায় রাজি হয়ে কোনো একটা জিনিস কিনলো। যখন মানুষ আপনার সাথে কোনো চুক্তি করে মৌখিক, লিখিত কিংবা ব্যবসায়িক যাই হোক না কেন, তারা আপনাকে তখন অনেকটা বিশ্বাস করে

এবং যারা আপনাকে অনেক বিশ্বাস করে, তাদের কাছে আপনি আরেকটু কিছু চাইতেই পারেন। যেমন : আপনি একজনের কাছে একটা ব্যাগ বিক্রি করলেন। ব্যাগ বিক্রি করার পর আল্লাহ্ হাফেজ বলার আগে তাকে বলুন, স্যার! আমাদের এই কার্ডটা নিন, আপনার কোনো বন্ধুর এমন সুন্দর ব্যাগ লাগলে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিবেন।

খুব ছোট একটা জিনিস, কিন্তু এর পেছনের সাইকোলজিটা ব্যাখ্যা করলে আসলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে। মানুষ যখন কোনো জায়গায় শ্রম, সময় কিংবা অর্থ দেয়, তখন সে নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে সে সবচেয়ে ভালো কাজটাই করেছে। আপনার কাছ থেকে ব্যাগ কিনলে সে নিজেকে বোঝাবে যে ব্যাগটা অনেক ভালো। ব্যাগটা যদি ভালো না হয় তাহলে তো সে বোকার মতো টাকা ব্যয় করেছে! তাই সে নিজেকে এবং অন্যদেরকেও বোঝাবে যে তার ব্যাগটা কত ভালো।

মানুষ যখন তাকে এসে জিজ্ঞেস করবে ব্যাগটা কোথা থেকে কিনেছিস, সে অনেক খুশি হবে এই ভেবে যে মানুষ চিন্তা করে যে তার ব্যাগের চয়েজ অনেক ভালো। আর তখন নিজের দক্ষ শপিং স্কিলের কথা বলতে এবং ফ্রি উপদেশ দিতে গেলে কার দোকানের কথা সে বলবে? হ্যাঁ! আপনারটাই! কারণ তাকে তার নিজের সিদ্ধান্তটা যে ঠিক, সেটা প্রমাণ করতে হবে না! সোজা আপনার দোকানের দিকে এগিয়ে দেবে।

*

অজুহাতে কুপোকাত

দোস্ত, কালকে মিরপুরে আমাদের ফুটবল ম্যাচ আছে। তোকে আমাদের টিমে কিন্তু লাগবেই!

-না দোস্ত! বাসা থেকে অনেক দূরে!

আরে আয় না দোস্ত!

-না রে! আমার বুটও নাই!

এই দুইটা কারণে কি আসতে পারবি না?

-হ্যাঁ রে দোস্ত!

আচ্ছা ঠিক আছে। আমার আর তোর বুট সাইজ তো একই। আমি কালকে ৪ টায় তোকে বাসা থেকে পিক করে নিয়ে যাবো। রেডি থাকিস!

তাদের কাছ থেকে তাদের শর্তগুলো খালি বের করে নিন। মানুষ কোনো কিছু না করতে অনেক তালবাহানা করে। যেই অজুহাত তারা দিচ্ছে এ অফার করে তাদেরকে কুপোকাত করে ফেলুন। এরই একটা উদাহরণ না আমাদের দেশেরই।

একটা প্রজেক্টের জন্য মানুষকে অ্যাপ ইন্সটল করাতে হত। কিন্তু, অনেকেই করতে চায় না এবং তাদের অজুহাত, নেট নাই!। খুব ভালো। এরপর থেকে আমাদের কথাবার্তা এমন হত :

ভাইয়া…আমাদের অ্যাপ এই এই কাজ করে। আপনার মোবাইলে। ডাউনলোড করে দেখবেন প্লিজ?

–না ভাই, আমার নেট নাই!

তাহলে কোনো অসুবিধা নাই! আমরা নেট দিচ্ছি। এই নিন হটস্পট। ডাউনলোড করে বলুন অ্যাপটা কেমন?

একবার যখন বলে ফেলে যে নেট থাকলে ডাউনলোড করতাম তখন হটস্পট দিলে আর ডাউনলোড না করে থাকতে পারবেন না!

*

অধিকাংশ মানুষ

বিজ্ঞাপনে নিশ্চয়ই এমন দেখেছেন যে, ১০ জনের মধ্যে ৯ জন এই টুথপেস্ট ব্যবহার করতে বলেন। কিংবা শুনেছেন, বাংলাদেশের মানুষের আস্থা, তমুক ব্র্যান্ডের উপর।

মানুষের একটা বেসিক সাইকোলজি হচ্ছে, সে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পায়। কিন্তু, যখন দেখে অন্যরাও এই কাজ করছে, কিংবা কোনো অভিজ্ঞ মানুষ একটা কাজ করতে বলছেন, তখন তারা সেটা নির্ভয়ে অনুসরণ করে। মূল কথা হচ্ছে, মানুষ নিজে খুব বড় ঝুঁকি নিতে চায় না। সে অন্য মানুষের উদাহরণ দেখতে চায়। ক্লাসে অনেক সময় হয়তোবা দেখেছেন এটা। কারও একটা প্রশ্ন আছে লেকচার নিয়ে। কিন্তু, সে চুপ করে বসে অপেক্ষা করবে কখন আরেকজন তার মনের প্রশ্নটা স্যারকে করবে। নিজে থেকে প্রশ্ন। করতে পারলেও, অনেকে সেটা কেন করে না ভেবে দেখেছেন কি?

এখন এই বেসিক সাইকোলজি কীভাবে অন্য জায়গায় প্রয়োগ করবেন? রেফারেন্স দেবেন! আমাদের পণ্য অমুক এবং তমুক ব্যবহার করে অনেকে খুশি হয়েছেন, আপনিও করে দেখুন আজই!

এটারই একদম প্র্যাক্টিকাল আরেকটা উদাহরণ দেই একদম চোখের সামনের। বিভিন্ন ফেসবুক পেইজে, অ্যাপে কিংবা বই নিয়ে এখন রিভিউ দেওয়া যায় না? অনেক ফেসবুক পেইজ নিজ থেকেই বলে, আমাদের সার্ভিস ভালো লেগে থাকলে রিভিউ দিয়েন প্লিজ। কেন? কারণ অন্য মানষের রিভিউ দেখলে আমরা ভরসা পাই যে, এই পেইজ থেকে কোনো কিছু কিনলে আমি ঠকবো না।

*

২ মাস আগের পরিকল্পনা

আপনি যেদিন সব বন্ধুকে ডাকবেন, ওইদিনই সবার কোনো না কোনো কাজ। যখনই আপনি মানুষের অ্যাপয়েন্টমেন্ট চাইবেন, কমন একটা উত্তর হচ্ছে, ওইদিন আমার আরেকটা মিটিং আছে। আপনি যেদিন মিটিং করতে চাইবেন ওইদিন আপনি বাদে দুনিয়ার অন্য সবার সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে এমন একটা ভাব অনেকেই দেখাবে। এক্ষেত্রে একটু আগে থেকে পরিকল্পনা করলেই কিন্তু হয়ে যায়। বেসিকটা হচ্ছে, অধিকাংশ মানুষেরই ১ মাস তো দূরে থাক, ১ সপ্তাহের পরিকল্পনাটুকুও থাকে না। তাই, আপনি যদি অনেককে নিয়ে কিছু করতেই চান, ১০-১৫ দিন আগে থেকে বুকিং দিয়ে রাখেন। তখন তো আর বলতে পারবে না যে, ৪৩ দিন পর তোর ৪টার মিটিং-এর সময়ই আমার আরেকটা মিটিং আছে! হ্যাঁ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এত সময় পাওয়া যায় না।

*

ইংলিশে বলসে! তার মানে ঠিক বলতেসে!

ব্যাপারটা অপ্রিয় হলেও সত্যি যে আমরা সাদা চামড়া কিংবা বিদেশীদের প্রতি কেন যেন একটা বাড়তি ভালোবাসা দেখাই। খালি সেখানেই না, বিদেশীরা যদি ইংরেজি বলে, তাহলে আমরা ভাবি যে দারুণ কিছু একটা বলেছে।

আমরা অনেক সময় খেয়াল করেছি যে, মানুষ যখন জটিল প্রশ্ন করে তখন অনেকে নিজের জ্ঞানের গভীরতা বোঝানোর জন্য ইংরেজিতে উত্তর দেন। এবং খালি তাই নয়, অনেকে মেনেও নেয়। তাদের ধারণা, ইংলিশে বলেছে, ভুল কীভাবে বলে! হাস্যকর যত চিন্তাভাবনা।

ময়লার গাড়িকে ট্র্যাশ ক্যান বললেই গন্ধ পাল্টে পারফিউমের মতো হয়ে যায় না। তাই, এখান থেকে আমরা দুটো জিনিসে খেয়াল রাখতে পারি।

১. স্যুট টাই পরে বলছে, সাদা চামড়ার কেউ বলছে কিংবা বিদেশী ভাষায় বললেই সব কথা সত্য হয়ে যায় না।

২. মানুষের সামনে একটু আধিপত্য কিংবা নিয়ন্ত্রণ দেখাতে হলে দুই-চারটা কঠিন শব্দ কাজে দেয়। ব্যাপারটা যতই অযৌক্তিক হোক না কেন মানুষের সাইকোলজিতে এখনও জিনিসটা আছে। তাই, কোনো ভালো বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে এক দুইবার নিজেই ট্রিকটা ব্যবহার করতে পারেন কিন্তু! অর্থাৎ, কিছু কিছু পরিবেশে নিজের আধিপত্য তৈরি করতে দুই-চারটা ইংলিশ বললে মানুষ আপনাকে সিরিয়াসলি নিতে পারে।

*

গত দশবার কথা কী দিয়ে শুরু হয়েছে?

কোনো মানুষের সাথে যদি আপনার সম্পর্ক খারাপ হয়, তাহলে একটা জিনিস খেয়াল করে দেখেন। গত ৫ কিংবা ১০ বার যখন ওই মানুষটির সাথে আপনার কথা হয়েছে, শুরুটা কেমন ছিল? সালাম দিয়ে শুরু হয়েছে।

নাকি টিটকারি দিয়ে শুরু হয়েছে নাকি কাজ দিয়ে শুরু হয়েছে? সম্পর্ক নিয়ে আমাদের বলার অভিজ্ঞতা এখনও হয়নি যদিও তবুও একটা পর্যবেক্ষণ আমাদের আছে। একটা সময়ের পর স্বামী-স্ত্রীর শেষ ১০টি আলোচনা যদি আমরা খেয়াল করি, তাহলে দেখবো যে শুরু হয়েছে; পটল লাগবে, বাজার শেষ, খাবার ভালো হয়নি, এত দেরি কেন হল, বিরক্ত করো না তো এসব দিয়ে। একটা মানুষের সাথে যদি দেখা হওয়ার আগেই আপনি জানেন যে কোনো একটা নেগেটিভ কথা আসবে, তাহলে তো আপনি আরও পাশ কাটিয়ে যাবার চেষ্টা করবেন। পাশ কাটিয়ে কেন যাচ্ছেন, এটা নিয়ে তখন আবার শুরু হবে। দেখা হলেই যদি আপনি মানুষের কাছে আপনার দুঃখের কথা বলেন, কিংবা দেখা হলেই যদি টাকা চান, মানুষ তো আপনার সামনেই আসবে না।

তাই, যদি মনে হয় যে মানুষ আপনাকে এড়িয়ে চলছে, কিংবা আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে না; তাহলে একটু খেয়াল করে দেখুন গত ১০টা কনভারসেশনের কয়টিতে অন্য মানুষটির জন্য আনন্দদায়ক কিছু ছিল?

*

কল কাটার জন্য ব্যতিব্যস্ত

টাকা বেশি খরচ হবে চিন্তা করে যদি কেউ তাড়াহুড়ো করে ফোন কাটে তাহলে সেটা খারাপ চোখে দেখার মতো বড় কোনো ব্যাপার না। ব্যালেন্সের সামর্থ্যজনিত সমস্যা কারও থাকতেই পারে। এটা নিয়ে রেগে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু বিরক্তিকর এবং বেয়াদবিটা তখন হয় যখন কল দিলে আপনি, আর তাড়াহুড়ো করে কাটছে অন্যপ্রান্তের মানুষটি। আরেহ ভাই, টাকা কাটলে তো আমার কাটছে, আপনার এত কিসের তাড়া।

অনেকের এটা অভ্যাসের মতো হয়ে যায়, যে দ্রুত কল কাটতে হবে। সেটা নিজের খরচে করা ফোন হোক কিংবা অন্যের। সমস্যা হচ্ছে, এটা অনেকের কাছেই ব্যাপক বেয়াদবি মনে হতে পারে। কথা বলার মাঝখানে হুট করে উঠে যাওয়াটা যে কত বাজে সেটা আমরা বুঝি। কিন্তু, হুট করে ফোন কাটার বেয়াদবিটা অনেকে বুঝে উঠতে পারে না কারণ হুট করে ফোন কাটার পর, অপর প্রান্তের মানুষটির বিরক্তি তো আর সরাসরি তারা দেখতে পায় না।

তাই, ৭০ পয়সা বাঁচাতে যদি কেউ একটা সম্পর্কে ঝুঁকিতে রাখতে পারে, তাহলে তার জীবনে কালো মেঘই আছে। এবং এটা খালি ৭০ পয়সা বাঁচানোর ব্যাপার না, এটা বেসিক ভদ্রতা। ভবিষ্যতে একটা নিয়ম মেনে চলতে পারেন; বিশেষ করে সিনিয়রদের সাথে ফোনে কথা বলার সময়ে কথা শেষ করার পর আপনি ফোন না কেটে অপর প্রান্তের ফোন কাটার জন্যে অপেক্ষা করুন। ২ সেকেন্ডের বেশি হয়ে গেলে এরপর ফোন কাটতে পারেন। তাহলে আর মাঝপথে কোনো কথা মিস করে যাবার ঝুঁকি থাকবে না।

*

সত্যিকারের সমালোচনা

ব্যক্তিগত সমালোচনা হলে সেটা আপনি বাদে তো আর কারও শোনার দরকার নেই, তাই না? এজন্যই সমালোচনা যাকে করবেন, তাকে একদম আলাদা করে তারপর ফিডব্যাক দিন যাতে করে তিনি অন্যদের সামনে বিব্রত না হন। অনেকে অন্যদের সামনে বিব্রত যেন না হতে হয়, সেজন্য অনেক গঠনমূলক সমালোচনারও বিরোধিতা করে বসেন নিজেকে বাঁচানোর জন্য। তাই, সত্যিকার সমালোচনা করতে হলে :

*

আমি, আমি, আমি

সেলেব্রেটিদের ইন্টারভিউ বাদে কোনো মানুষ যদি নিজের সম্পর্কে টানা ১০ মান ধরে কথা বলে, বিশেষ করে প্রথম সাক্ষাতেই; তাহলে কেমনটা লাগবে?

যিনি শুনছেন তিনি মনে মনে ভাববেন,

এ কি নিজেকে সেলেব্রিটি ভাবে?

তোর কাহিনী শুনে আমি কী করবো?

ভাই! আমি তো আপনার অটোবায়োগ্রাফি চাই নাই!

বিরক্তিকর না? আমি নিশ্চিত আপনার এমন হয়েছে যে আপনি খেলতে যাচ্ছেন কিংবা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাচ্ছেন। এমন সময় কোনো এক আঙ্কেল এসে শুরু করলো, আরে বাবা, কেমন আছো! আচ্ছা তোমরা কখনও ফ্রেশ লাউ খাইসো? আমার গ্রামের বাড়িতে…।

আমরা কেউ ওই মানুষটি হতে চাই না যাকে দূর থেকে দেখলে মানুষ রাস্তা। পার হয়ে অন্য পাশে চলে যায়। তাই, নিজেকে সব সময় যেন একটা প্রশ্ন। করি, গত পাঁচ মিনিটে কয়বার আমি এবং আমার শব্দ দুটো বলেছি?

*

স্বার্থপর কমিউনিকেশন

একটা কথা আছে না? কাজ শেষ, খোদা হাফেজ! এমনই একটা অবস্থা প্রায়ই দেখি। হঠাৎ করে ফোন দিয়ে তুলকালাম! কী না কী প্রজেক্ট হবে। দুই-তিনদিন ধরে অনেক পরিকল্পনা, স্ট্রাটেজি ইত্যাদি। এত কিছু পেরিয়ে যেই মাত্র কাজটা জমা দিবেন, সাথে সাথে কথা শেষ।

ফাইলটা পেয়েছে নাকি পায় নাই, কোনো খবর নাই। ধন্যবাদ তো আরও দূরের ব্যাপার। আর টাকা দেওয়ার ব্যাপারে তো বললামই না। প্রজেক্টের সবকিছু নিয়ে কথা বলবে, বউ-বাচ্চার কথা বলবে, দূরসম্পর্কের চাচাতো ভাইয়ের ভাতিজার খনার কথা বলবে; কিন্তু আপনার পেমেন্ট নিয়ে কোনো কথা বলবে না! কাজ শেষ হলে সব অফ! কাজ করার পরও যে হাই-হ্যালো। করতে হয়, এই সৌজন্যটুকুও অনেক সময়ই খুঁজে পাই না। এবং এটা খালি সৌজন্যবোধের ব্যাপারও নয়।

অনেকেই এমন দেখেছি যারা একবার কারও সাথে ব্যবসা করে, কিংবা কোনো জিনিস বিক্রি করে আর কথা বলে না। লেনদেন শেষ, তো অচেনা মানুষ একদম! আরে ভাই! যেই মানুষগুলো আপনার কাছ থেকে কোনো জিনিস কিনেছে, তারা তো আপনার সবচেয়ে বড় ভক্ত। আসল ভক্ত তারাই যারা আপনার কাজের জন্য খালি প্রশংসা নয়, সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থও দিয়েছে। তাদের ধন্যবাদ দিলে, এক মাস পর খোঁজ নিলে তারা আপনার আরও পণ্য কিনতে ফেরত আসতে পারে। এবং ব্যাপারটা খালি ব্যবসায়িকই না। আমাদের জীবনে আমাদের সম্পর্কগুলোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সম্পর্কের চেয়ে যারা কাজের চেককে বেশি গুরুত্ব দেয়, তাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে একটা কোয়েশ্চেন মার্ক রয়েই যায়।

*

শব্দ করে ব্যাগ গোছানো

এটা একটা ছোটবেলার স্মৃতি চিন্তা করে দেখলাম যে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেও এই কাজ করতাম! কাজটা হলো, ঘণ্টা দেয়ার পরও যখন টিচার ক্লাস চালিয়ে যেতেন তখন আমরা আমাদের ব্যাগ গুছানো শুরু করতাম। খালি চাতাম না, শব্দ করে ব্যাগ ঝাড়তাম, শব্দ করে খাতা-বই বন্ধ করতাম। মানে হলো, ক্লাসের টাইম শেষ!

কেন করতাম এমন? কারণ সরাসরি তো অনেকে বলতে ভয় পেতাম যে। ক্লাসের সময় শেষ। তাই, অন্যভাবে ইঙ্গিত দিতাম। ছাত্রজীবনে এর মজাটাই আলাদা ছিল!

কিন্তু, বাস্তব জীবনে এমন অনেক পরিস্থিতি আছে যেখান থেকে আপনি বের হতে চাচ্ছেন কিন্তু শব্দ করে ব্যাগ গোছানোর ট্রিকটা কাজে দিবে না। কীভাবে বলবেন যে আপনি এই আলোচনায় থাকতে চাচ্ছেন না?

ভাইয়া! খুবই দুঃখিত, আপনার কথার মাঝখানে কথা বলছি। কিন্তু আমার এখন একটা মিটিং-এ যেতে হবে। এখন রওনা না দিলে দেরি হয়ে যাবে। কিন্তু, পরের দিন কিন্তু আপনাকে গল্পটা শেষ করতে হবে! আসি তাহলে! 😀

এভাবে বলতে পারেন অথবা নিজের মত করে একটা সমাপ্তি সংলাপ (Exit Dialogue) বানিয়ে নিন। এসব বলতে লজ্জা লাগলে একটা মানসিক হাতিয়ার আপনাকে দিয়ে দেই।

যেই মানুষটা আপনার সময়ের ও প্রাধান্যের তোয়াক্কা না করে নিজের গল্প বলে। যায়, সেই স্বার্থপর মানুষের জন্য কেন আপনি নিজের সময় নষ্ট করবেন?

–ভাই! অনেক সময় সিনিয়রদের বলা যায় না!

হ্যাঁ, ঠিক। কিন্তু, আপনি যদি কোনো সমাপ্তি সংলাপ (Exit Dialogue) না। বের করেন, তাহলে তারা ধরে নেবে যে আপনি তাদের কথা শোনার জন্য নিয়মিত সাবস্ক্রাইবার। হয় উপায় বের করেন, নাহলে আপনার সাথে এসব চলতেই থাকবে।

*

কষ্টের প্রতিযোগিতা

দোস্ত, আর বলিস না। ফুটবল খেলতে গিয়ে পা ফ্র্যাকচার করে ফেলসি

–আরেহ! এটা তো কিছুই না! আমি ফুটবল খেলতে যেয়ে ফ্র্যাকচার তো করসিই, তার উপর হাঁটুর বাটিও নড়ায় ফেলসি!

কিংবা,

রাস্তায় জ্যামে আটকেই দিনে ৩ ঘণ্টা চলে যায়।

-–আমাদের সময় আমরা ২৫ মাইল হেঁটে স্কুল যেতাম। যাওয়ার পথে পদ্মা নদী সাঁতরে পার হয়ে কেওক্রাডং-এর উপর দিয়ে পার হয়ে….

যখন কেউ কষ্টের কথা বলে, তখন আপনার কষ্ট কীভাবে বেশি সেটা বললে অন্য মানুষটির কষ্ট কমে যায় না বরং সে আরও বিরক্ত হয়ে যায়। তাই, কার কষ্ট বেশি এই প্রতিযোগিতাটা না করাটা বুদ্ধিমানের কাজ।

আরও বুদ্ধিমানের কাজ হল এই ব্যাপারটা বোঝা যে, মানুষ অধিকাংশ সময় যখন কষ্টের কথা বলে, তখন তারা কেবল শেয়ার করতে চায়। তারা কোনো বিশেষজ্ঞের মতামত কিংবা আপনার জীবন ব্রেকআপের পর কেন দুর্বিষহ– এসব মোটেও জানতে চায় না। তাই, মানুষ কষ্টের কথা বললে প্রতিযোগিতা আর দুঃখবিলাসের সুইচটা বন্ধ রাখাই সেরা পন্থা।

*

মন দিয়ে শোনার ট্রিক

এটা আমাদের আম্মুর কাছ থেকে শেখা। একদিন আম্মুকে দেখি বেশ ক্লান্ত। কথা বলে বুঝতে পারলাম যে মেহমান আপ্যায়ন করতে করতে আম্মুর দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাও আবার কাছের আত্মীয় না, একবার দুবার কথা হলেই মানুষ আসা শুরু করছে, ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলেই যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কাহিনী কী? তখন আম্মু বললো, আমি তো কিছুই বলি না। একদম চুপ করে থাকি। তবুও মানুষ কথা বলেই যায়!

তখন আমি বুঝিনি কিন্তু এখন জিনিসটা আন্দাজ করতে পারি। আম্মু কিছু বলতো না, তার মানে এই যে আম্মু সব কথা চুপ করে শুনতো। অনেক সময় এই আশায় যে, চুপ করে থাকলে মানুষ কথাবার্তা বেশি আগাবে না। কিন্তু মজার জিনিস হচ্ছে ঠিক এই কারণেই আন্টিরা আম্মুর সাথে বেশি কথা বলতো। কারণ, ঘণ্টার পর মনোযোগ দিয়ে চুপ করে কথা শুনবে, এমন মানুষই তো বাঁচালরা খুঁজছে!

এখান থেকে শিক্ষাটা কী?

আপনি যদি মানুষকে বোঝাতে চান যে আপনি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে কথা শুনছেন, তাহলে মিনিটে ১/২ বার হুম বলে বাকিটা সময় অফ থাকেন!

*

সবচেয়ে কম জানা মানুষ হলে

কোনো একটা রুমে যদি সবাই আপনার চেয়ে বেশি জ্ঞানী হয় তাহলে আপনি কী করবেন?

অনেকেই এমন পরিস্থিতিতে হীনম্মন্যতার কারণে বেশি কথা বলে নিজেকে জ্ঞানী প্রমাণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু, যারা আসলেই জানে, তারা সরাসরি কথার অসারতা বুঝে ফেলে। যত বেশি কথা বলবেন তখন, তত বেশি তারা আপনার জ্ঞানের অগভীরতা বুঝে ফেলবে। কিন্তু, একটু অন্যদিক থেকে যদি আমরা চিন্তা করি যে একটা রুমে সবাই আমার চেয়ে বেশি জ্ঞানী হলে, আমি কেবল চুপচাপ কথা শুনলেই অনেক নতুন কিছু জানতে পারবো। কিন্তু এই জিনিসটাই অনেক ইয়াং মানুষজন ভুল করে। আমরাও করেছি। যারা অভিজ্ঞ, তাদেরকে আপনার বোঝানোর দরকার নেই। বরং যত বোঝাতে যাবেন তত বেশি নিজেকে হঁচড়ে পাকা সাব্যস্ত করে বসবেন।

*

অনলাইনে যে ৮টি ভুল আমরা প্রায়ই অজান্তে করে ফেলি!

১. কাজের কথা ঠিক হলে নিশ্চিত করে Acknowledgment না পাঠানো। আপনাকে কোনো কাজ দেওয়া হলে আপনি সেটা ঠিকঠাক বুঝেছেন কি না, করতে পারবেন কি না, কতক্ষণের মধ্যে পারবেন, কীভাবে করবেন সেটা জানিয়ে কাজ শুরু করুন।

২. মনে রাখবেন অনলাইনে একবার শেয়ার হওয়া যেকোনো কিছু আজীবন অনলাইনেই থেকে যাবে। তাই, বিব্রতকর কিছু পাঠানো অনুচিত।

৩. শব্দের শর্ট ফর্ম (gdn8, alr8, tnq, cu, nc, r8, pls) ব্যবহার করা। শব্দের শর্ট ফর্ম লিখে আপনি যে সময়টা বাঁচান ঐ সময়টায় কী করেন বলেন তো?

৪. Caps Lock দিয়ে কথা বলা। কারণ Caps Lock দিয়ে কথা বলা চিৎকার করে কথা বলা একই জিনিস।

৫. চলে যাবার আগে জানিয়ে না যাওয়া।

কথা বলার মাঝখানে হুট করে গায়েব হয়ে যাওয়া অপর প্রান্তের মানুষটির জন্যে বিব্রতকর। তাই কোনো কারণে কোথাও যেতে জানিয়ে যান।

৬. অহেতুক গ্রুপ চ্যাটে কাউকে যোগ দেয়া। এটা নতুন মানুষ এবং গ্রুপ চ্যাটের অন্য সবার জন্যেই বিব্রতকর।

৭. হাই/ হ্যালো বলার পর মূল উদ্দেশ্যটা জানিয়ে না রাখা।

এখনকার সময়ে খুব কাছের না হলে একটা মানুষকে কাজ ছাড়া নক করা। হয় না কারও। এই নক করতে গিয়ে যদি হাই/হ্যালোর চক্করে ঘুরপাক খেতে থাকেন তাহলে সেটা আসলে সময় নষ্ট। তাই হাই/হ্যালো বলে। ছোট করে যে কারণে নক করেছেন সেটা জানিয়ে রাখুন।

৮. ফোন করার আগে অনুমতি না নেওয়া।

অপরিচিত কাউকে অনলাইনে ফোন করার আগে একটা টেক্সট পাঠিয়ে অনুমতি নেওয়া ভদ্রতা।

*

না মানে কী?

আমাদের দেশে লাখ লাখ মানুষ চাকরির পেছনে হন্যে হয়ে ঘুরছে। আর একেকটি চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে তাদের দিনের পর দিন চলে যায়। একটা ইন্টারভিউ বোর্ড থেকে আরেকটা ইন্টারভিউ বোর্ডে যেতে অনেক শ্রম, সময় এবং অর্থ চলে যায়। চাতক পাখির মত অনেকেই তাকিয়ে থাকে। কখন কোম্পানি থেকে ফোন আসবে। যাদের চাকরি হয়ে যায়, তাদের জন্য তো সেটা অনেক খুশির খবর। কিন্তু, এমন প্রায়ই হয় যে, যাদের চাকরি হয়নি, তাদের বলাও হয় না যে তারা বাদ পড়েছেন। তারা হয়তোবা অন্য চাকরির জন্য আবেদন না করে অপেক্ষা করছেন। এতে তাদের অনেক সময় নষ্ট হয় এবং এভাবে চুপ করে থাকাটাও খুবই খারাপ। যারা চাকরি পায়নি। তাদের সবাইকে বলতে সময় লাগলে, খালি একটা নোটিশ দিয়ে রাখা ভালো যে সিলেকশন প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছে।

আমাদের মধ্যে এই জিনিসটা আছে যে, হ্যাঁ বললে হ্যাঁ বলি কিন্তু না বলার সময় চুপ থাকি। ভাবি যে অন্য মানুষটা নিজে থেকেই বুঝে নিবে।

চুপ থাকলেই কি অন্য মানুষটা না বুঝে নেয়? নাকি নীরবতাই সম্মতির লক্ষণ ভেবে আসা নিয়ে থাকে? একটু পরিষ্কার করে বললেই বরং অনেক মানুষের অনেক সুবিধা হয়।

এবং ব্যাপারটা খালি অপেক্ষার না, অনেক জায়গাতেই আমরা না বলতে পারি না বলে অনেক বড় কমিউনিকেশন গ্যাপ তৈরি করে ফেলি।

বস হয়তোবা মেসেজ করলে, ফাইলটা কি হয়েছে? ফাইল যে হয়নি, এটা বললে মহা-ঝাড়ি খেতে পারে এই ভয়ে চুপ করে কাজ করতে থাকে। আরে ভাই, খালি বলে দেন, স্যার ৫টার মধ্যে পেয়ে যাবেন।

এসব না বলে চুপ করে থাকলে মানুষ আরও বেশি বিরক্ত হয়। তাই হ্যাঁ বা না যা হোক, পরিষ্কারভাবে সবাইকে বলে রাখুন সব সময়।

*

কমিউনিকেশনের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র

আপনার হাসি। যত যাই বলেন না কেন, হাসি সংক্রামক, আপনি হেসে কথা বললে অপর প্রান্তের মানুষটিও না চাইতেও একটু একটু করে হাসার চেষ্টা করবে। আজ থেকেই আমরা চাইবো আপনি একটা জিনিস করা শুরু করেন। সেটা হলো : যার সাথেই কথা বলেন না কেন, যেই হোক না কেন; একটা হাসি দিয়ে কথা বলা শুরু করেন। দেখবেন অচেনা মানুষ হলেও আপনার সাথে একটু আনন্দিত হবার ভান করে কথা বলা শুরু করবে। এমন। অনেক মানুষ আছে যাদের সাথে আপনার মাত্র এক-দুই লাইন কথা হয়। গার্ড, ক্যাশিয়ার, রিক্সাওয়ালা– এসব মানুষের সাথে যেই এক–দুটো লাইনও বলবেন, একটু খালি হেসে বলবেন। বিশ্বাস করেন, এটা যতটা না পৃথিবীকে উজ্জ্বল করবে, তার চেয়ে বেশি আপনার মনকে খুশি করবে। আপনি খালি করেই দেখেন না!

*

কমিউনিকেশনের ইকোনমি

মানুষ খালি গাড়ির ইকোনমি খুঁজে। কোন গাড়িতে সবচেয়ে কম লিটারে বেশি মাইল চলবে। একই ইকোনমি মানুষ যদি তাদের কমিউনিকেশনেও খুঁজতো তাহলে কেমন হত?

অর্থাৎ, আমরা যদি প্রতিটা শব্দ মেপে বলতাম? মনে করেন, আপনার জীবনে আপনি আর মাত্র ১ লাখ শব্দ বলতে পারবেন। যেই মাত্র আপনি ১ লাখ তম শব্দটা বলবেন, সেই মুহূর্তে আপনি মারা যাবেন (আমাদের আধকাংশ মানুষের জীবনেই আসলে এমন একটা সময় আসে যখন আমরা আমাদের মৃত্যু থেকে ১ লাখ শব্দ দূরে থাকি, কিন্তু আমরা সেটা কখনই জানতে পারি না)। এমন অবস্থা হলে, আপনি খালি পাঁচ মিনিট চিন্তা করে দেখেন যে, আপনি কীভাবে কথা বলতেন।

আরেকবার বলা যাবে এই কারণে আমাদের কমিউনিকেশনে আমরা অনেক ক্রটি রেখে দেই। মানুষকে কিছু একটা বললেন। পরের দিন আবার একই জিনিস জিজ্ঞেস করলে আপনাকে আবার বলতে হচ্ছে। আর আপনিও ম্যানেজার হলে তো একশবার রিপিট করতে হচ্ছে। তাই, একই কথা যদি দশবার রিপিট করতে হয়, তাহলে সেটা একবার লিখে রাখুন এবং তারপর সারকুলেট করুন। একই কথা, একই প্রসেস প্রতিদিন রিপিট করার চেয়ে একবার ইস্ট্রাকশন বানালে আপনার হাজারো ঘণ্টা বেঁচে যাবে। আমরা যেই প্রশ্ন বারবার পাই, সেগুলো নিয়ে আমরা ভিডিও বানিয়ে ফেলি। আমরা ঘুমাই আর বাইরে ঘুরতে যাই, ভিডিওর মাধ্যমে আমরা প্রতিদিন লাখ লাখ উত্তর দিয়ে যাচ্ছি অটোমেটিক। খালি ওখানেই নয়, স্টুডেন্ট লাইফ নিয়ে এত প্রশ্ন যে আমাদের আগের বই স্টুডেন্ট হ্যাকস পুরোটা ওই প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়েই ছিল। বই যতজনকে উত্তর দিয়েছে, সবাইকে নিজে মুখে উত্তর করতে যেই সময় লাগতো, সেই সময় দিয়ে হয়তো আরও দশটা বই লেখা যেত!

আমাদের পয়েন্ট হচ্ছে, যেই কথাগুলো একবার ব্যবস্থা করলেই আমরা অন্য কাজে মনোযোগ দিতে পারি, সেই কথাগুলো আমরা সিস্টেম করি না কেন? বিভিন্ন ব্যাংকে কিংবা অফিসে একই প্রশ্ন হাজারবার কর্মকর্তা, কর্মচারীরা উত্তর করছেন। প্রশ্ন-উত্তর (FAQ– Frequently Asked Question) করে দেয়ালে টাঙিয়ে রাখলেই কিন্তু কর্মকর্তা, কর্মচারীদের অনেক কর্মঘণ্টা বেঁচে যায়।

কিন্তু, তবুও কেন জানি আমরা বারবার উত্তর করেই যাই। হয়তোবা আমরা মানুষকে সাহায্য করতে অনেক আনন্দ পাই। তাই, মানুষ প্রশ্ন করলেই হয়তোবা বেশি খুশি হই!

*

সেলেবদের সাথে কমিউনিকেশন

মনে করেন, বিখ্যাত কোনো গায়কের সাথে আপনার দেখা হয়ে গেল এবং স্বভাবতই অনেকেই বলবে, আপনার গান আমার অনেক ভালো লাগে! আর নাহলে, একটা সেলফি তুলি?

এখন একটু সেলেব্রিটি মানুষটার কথা চিন্তা করেন। তিনি মাসে ৩০ টা দিন মানুষের কাছ থেকে তার গানের প্রশংসা শুনেন এবং সেলফির আবদার পান।

আপনি যদি একই কথা বলেন তাহলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন যে তার জন্য কথাটা কতটা বোরিং!

তাহলে কী করবেন? সেলফি নিতে চাইলে তাকিয়ে না থেকে সেলফি তোলার আবদার করতেই পারেন। কিন্তু যদি প্রশংসা করেন, তাহলে এমন কিছু নিয়ে প্রশংসা করেন যেটা নিয়ে হয়তোবা তিনি অনেক চেষ্টা করছেন কিন্তু হয়তোবা কেউ প্রশংসা করছে না। হয়তোবা তার বাচ্চার ভালো ফলাফল নিয়ে কিংবা তার কোনো চ্যারিটির কাজের কথা তাকে বলুন। তিনিও খুশি হবেন যে তার এসব কাজ মানুষ জানছে এবং সেই কথা আরও ছড়িয়ে দিতে হয়তোবা আপনার সাথে কিছুক্ষণ ওই বিষয়ে আলাপও করে বসবেন!

*

ফাঁপা ধন্যবাদ

আমাদের মধ্যে ধন্যবাদ দেওয়ার প্রবণতা তেমন নেই। কিন্তু, আমরা এই বইতে খুবই চেষ্টা করছি এই ধনবাদ দেয়ার ব্যাপারটাকে প্রমোট করার জন্য। আপনার যদি ধন্যবাদ দেয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে তো খুবই ভালো। আপনি যদি আরেকটু ভালোভাবে ধন্যবাদ দিতে চান তাহলে, কোন নির্দিষ্ট কাজের জন্য ধন্যবাদ দিচ্ছেন, সেটা মেনশন করে ধন্যবাদ দেয়ার চেষ্টা করবেন।

অপশন ১ : আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ!

অপশন ২ : দ্রুত কল করে ব্লাড ডোনার খুঁজে দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ!

দ্বিতীয় অপশনের মতো একজন কাজের কথা মেনশন করে ধন্যবাদ দিলে মানুষ অনেক বেশি খুশি হয়। আপনার পণ্য ব্যবহার করে একজন বলল, পণ্যটির জন্য ধনবাদ। এবং অন্যজন বলল, পণ্যটি ব্যবহার করে আমার ফিটনেস লেভেল অনেক ভালো হয়েছে। পণ্যটির কথা আমাকে জানানোর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ!

তাছাড়া, অনেক সময় মানুষ যদি না বুঝে যে সে ধন্যবাদ কেন পাচ্ছে, তাহলে সে হয়তোবা একটু কনফিউশনে থাকবে যে, হলোটা কী!

আরেকটা উদাহরণ দেই। মনে করেন ভিডিওর নিচে কমেন্ট করলাম, ভালো লেগেছে। যিনি ভিডিও বানিয়েছেন তার অবশ্যই কমেন্টটা পড়ে ভালো লাগবে। কিন্তু, তিনি সেখান থেকে কী বুঝছেন?

এর চেয়ে যদি আমি কমেন্ট করতাম, আপনার কন্টেন্টের রিসার্চের পেছনে শ্রম দেয়ার ব্যাপারটা আমার অনেক ভালো লেগেছে। এক্ষেত্রে ভিডিও নির্মাতা প্রশংসা শুনে খুশিও হচ্ছেন আবার এটাও বুঝে যাচ্ছেন যে তার কোন বিষয়ে আরও বেশি উন্নতি করা দরকার।

*

ভাবিকে সালাম

মানুষের স্বভাব হচ্ছে তেলা মাথায় তেল দেয়া। কোনো সিনিয়র মানুষ আসলে তাকে মাখন দিতে দিতে সবার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু, তারই কাছে। গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হয়তোবা তার পাশেই আছেন। হয়তোবা স্যারের আশপাশে সবাই ভিড় করেছে। আপনি গিয়ে ম্যাডামকে আপ্যায়ন করেন। সবাই যেখানে স্যারের কাছে ভিড় করেছে, সেখানে ম্যাডাম মনে রাখবেন যে আতিথেয়তা কে বেশি করেছে। হ্যাঁ, ভদ্রতা হিসেবে এটা অনেক ভালো। কিন্তু, নিজের কথা চিন্তা করলে দেখবেন, ম্যাডাম হয়তোবা আপনার কথা গিয়েই স্যারকে বলছেন যে আপনি কতটা অমায়িক ছিলেন! তখন আবার আপনি স্যারের সুনজরে পড়ে গেলেন। কিন্তু, এসব অফিস পলিটিক্স বাদ দেই!

অনেক সময় গ্রুপে একজন অনেক বেশি মেধাবী মানুষ থাকেন। তার সাথে কথা বলতে গিয়ে অন্যদের আমরা ইগনোর করে বসি। কিন্তু হয়তোবা ওই মানুষগুলোর মধ্যেও বেশ কাজের এবং মেধাবী কেউ আছেন। তাই, যেকোনো জায়গায় সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তির পিছে না ছুটে মাঝে মাঝে কিছু নীরব মেধাবীদের সাথেও আড্ডা দিয়েন।

*

মানুষ কখন আপনার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে?

একদম সহজ করে বললে চারটি অবস্থায় মানুষ আপনার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে :

১. উচ্চপদ : বেশিরভাগ মানুষ পদবিটাকে সালাম করে, মানুষটাকে নয়।

২. ইমোশন : আপনি ব্র্যান্ড ম্যানেজার হলে কোনটি বিজ্ঞাপনে দিতেন?

অপশন ১ : বাচ্চাদের জন্য দারুণ জুতো পাওয়া যাচ্ছে।

অপশন ২ : আপনার আদরের লিটল চ্যাম্পকে দিন খেলাধুলার সেরা উপহার– অমুক ব্র্যান্ডের কেডস!

প্রথমটি বিজ্ঞাপন, দ্বিতীয়টা আবেগে টোকা দেওয়া। আপনি নিজেই খেয়াল করে দেখেন। আপনার প্রিয় ৫টি বিজ্ঞাপনের কথা চিন্তা করলে দেখবেন বেশিরভাগের অফারের চেয়ে ইমোশনাল গল্পটাই বেশি আপনার মনে আছে।

দক্ষতা : নেতা না হলেও, মানুষ যদি জানে যে আপনি আপনার ফিল্ডের এক্সপার্ট; তাহলে আপনাকে সম্মানের জায়গা থেকে হলেও মনোযোগ দিয়ে আপনার কথা শুনবে।

আড্ডা; অজানা মানুষের সাথেও কিন্তু আড্ডা দেয়া যায়। কিন্তু, খুব কম। মানুষই অচেনা মানুষের সাথে আড্ডা জমাতে পারে। আড্ডা দেয়ার মানে হল, একদম মন খুলে জাজমেন্ট ছাড়া কথা বলতে পারা। যারা এভাবে কথা বলতে পারে এবং অন্যদের নিরাপদ অনুভব করাতে পারে, তাদের কথা মানুষ খুশি মনে শুনে।

এরপর থেকে কোনো জায়গায় কথা বলতে গেলে দেখবেন যে নিচের চারটির কোনটি আপনি ব্যবহার করতে পারবেন।

*

সংখ্যা দিয়ে মিথ্যা বলার কমিউনিকেশন

ভালো মানুষদের শুরুর দিকে একটা দুর্বলতা কী জানেন? তারা নিজেরা মিথ্যা বলতে পারে না, খারাপ কাজ করতে পারে না এবং এজন্য তারা ভাবে যে কেউই মিথ্যা বলবে না এবং খারাপ কাজ করবে না। আস্তে আস্তে ঠেকে ঠেকে তারা বাস্তবতা শিখে। তারা বুঝতে পারে যে তারা যেই সত্যের মানদণ্ডে নিজেদেরকে পরিচালনা করে, সেটা অন্য সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তাই, আমরা সব সময়ই সত্য বলবো, কিন্তু আমাদের এটাই জানতে হবে যে মিথ্যা কীভাবে বলে যেন কেউ আমাদের সহজে ঠকাতে না পারে। একটা বিষয় হচ্ছে, মিথ্যা বলতে সব সময় মিথ্যা বলতে হয় না। সত্য বলেও মানুষকে নিজের মনমতো গল্প বলা যায়। যেমন :

এই পণ্যে ৫% ফ্যাট আছে।

এটা শুনলে পণ্যের একটা ত্রুটির কথা মনে হয়। ওই একই কথা এভাবেও বলা হয়,

এই পণ্যটি ৯৫% ফ্যাট ফ্রি!

একই কথা কিন্তু! কিন্তু, পরের কথাটিতে পণ্যের ত্রুটিটাকেই একটা হাতবাচক বেনেফিট হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং এটাতে আপনার অবচেতন মনে ইতিবাচক একটা ধারণা তৈরি হবে।

৩. কমিউনিকেশন ল্যাঙ্গুয়েজ গ্যাপ

কমিউনিকেশন ল্যাঙ্গুয়েজ গ্যাপ

মনে করেন কেউ আপনাকে বলল, Thank you!

আপনি বললেন, Youre welcome!

এখন একই কথাই বাংলায় বলি,

কেউ আপনাকে বলল, ধন্যবাদ!

এখন আপনি কী বলবেন? শুভেচ্ছা?

আপনাকে যখন কেউ ধন্যবাদ দেয়, আপনি কী উত্তর দেন? খেয়াল করলে দেখবেন যে, আমাদের কিন্তু বাধাধরা কোনো নির্দিষ্ট উত্তর নেই ধন্যবাদের জন্য। তাই, অনেকে আমরা নীরবে ধন্যবাদ নেই আর একটা মুচকি হাসি দেই। আমাদের নিজেদের কথা বললে ধন্যবাদ পেলে আমরা বলি আপনাকেও ধন্যবাদ! কিংবা আপনি চাইলে স্বাগতম ও বলতে পারেন। যাই বলেন না কেন, অন্তত চুপ করে খালি ধন্যবাদ শুনবেন না, এই আরকি!

*

ভোকাবুলারি কেন শিখবো?

পরীক্ষার জন্য ভোকাবুলারি শেখার ব্যাপারটা আমার জন্য সবচেয়ে বেশি। বিরক্তিকর ছিল। তখন পরীক্ষা পাস করার জন্য হলেও কষ্ট করে। শিখেছিলাম। পরে বিভিন্ন ট্রেইনিং সেশনের জন্য রিসার্চ করতে গিয়ে এমন কিছু ব্যাপার জানলাম, যেগুলো আগে জানা থাকলে হয়তোবা আরও আগে থেকে এবং বেশি আগ্রহের সাথে নতুন শব্দ শিখতাম। ব্যাপারগুলো আপনাদের সাথে এখনই শেয়ার করি যেন বাকিটা জীবন ভোকাবুলারি আপনি নিজ আগ্রহেই শিখবেন।

১. আমরা অধিকাংশ চিন্তাভাবনা করি শব্দ দিয়ে। এমন কিছু জিনিস আছে যেগুলো শব্দ ছাড়া আমরা কল্পনা করতে পারি না। যেমন : সমাজ, আদর্শ, হিংসা ইত্যাদি যেগুলো অবস্তুগত চিন্তা। আপনি হয়তোবা অনেক কিছু অনুভব করতে পারেন, কিন্তু শব্দের মাধ্যমে আমরা সবচেয়ে ভালো ভাবে চিন্তা করতে পারি। আমাদের ভোকাবুলারির গভীরতা নির্ধারণ করে আমাদের চিন্তার ব্যাপকতা কতদূর হবে।

২. ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স শেখাতে গিয়ে আমরা একটা জিনিস শিখলাম। যে, আমরা যত স্পষ্টভাবে আমাদের ইমোশনগুলো শব্দ দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারবো, আমাদের জন্য ইমোশনগুলো নিয়ন্ত্রণ করা তত সহজ হয়ে যাবে। পরে দেখা গেল যে, বিভিন্ন জাতির ইমোশনের উপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কেমন। দেখা গেল চাইনিজরা ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে অনেক এগিয়ে আছে। এবং বুঝতেই পারছেন এর পেছনে কারণ কী? ভোক্যাবুলারি! তাদের ভাষায় ৩,৭০,০০০-এরও বেশি শব্দ আছে এবং কম্বিনেশন করে আরও অনেক। তারা আরও নিখুঁতভাবে নিজেদের প্রকাশ করতে পারে বলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা নিজেদের অনুভূতি সম্পর্কে অনেক সহজে জানতে পারে। তাই, নিজেকে জানতে এবং নিজের ইমোশনগুলো বুঝতেও ভোকাবুলারি জানুন।

৩. সব ভাষায় সব শব্দ থাকে না। কিংবা শব্দ থাকলেও একই অর্থ থাকে না। যেমন : ইংরেজিতে Thank You এর উত্তরে Welcome এর যে মানে, welcome এর বঙ্গানুবাদ করে শুভেচ্ছা বললে কিন্তু একই মানে তা না। তাই, বিভিন্ন অনুভূতি এমন আছে যেগুলো কেবল নির্দিষ্ট ভাষা ভাড়া অন্য কোনো ভাষায় নেই। যেমন- বাংলায় আছে কিংকর্তব্যবিমূঢ় কিংবা পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি। তাই নতুন ভাষার নতুন ভোকাবুলারি জানলে আপনার কমিউনিকেশন করার ক্ষমতা অন্যদের সাথে এবং নিজের চিন্তাগুলোর মাঝে অনেক বেড়ে যাবে।

*

আন্তর্জাতিক কমিউনিকেশন

আপনি নিশ্চয়ই টম অ্যান্ড জেরি, মিকি মাউস এসব কার্টুন দেখেছেন। চার্লি চ্যাপলিন কিংবা মিস্টার বিনের এপিসোডও আশা করি দেখেছেন। এগুলো সারা পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত। এর একটা কারণ কী জানেন?

টম অ্যান্ড জেরি, মিকি মাউস, চার্লি চ্যাপলিন কিংবা মিস্টার বিন– সবারই ভাষা আন্তর্জাতিক। না না, ইংলিশের কথা বলছি না!

আরেকটু ঠিকভাবে বললে বলবো এই বিশ্বপ্রিয় সিরিজগুলোর ভাষা বিশ্বজনীন। কারণ, এই সিরিজগুলোতে কোনো কথাই নেই! সব বডি ল্যাংগুয়েজ এবং অ্যাকশন দিয়ে প্রকাশ করা হচ্ছে। কোনো একটা নির্দিষ্ট ভাষায় কন্টেন্ট বানালে সেটা ওই ভাষায় কথা বলা মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে যতক্ষণ না সেটা অনুবাদিত হয়। কিন্তু, যেই কন্টেন্ট পুরোটাই ছবির উপর নির্ভর করে, যেমন ফটোগ্রাফি; সেই কন্টেন্ট তো পুরো পৃথিবীর মানুষ। বুঝতে পারে।

তাই, বিশ্ববাসীর জন্য কিছু বলতে চাইলে ইংলিশের চেয়েও একটা বড় একটা ভাষা আছে কিন্তু!

*

সবাই তো এটা জানেই!

আপনি যা জানেন, তা নিশ্চয়ই সবাই জানে না। কিন্তু, অনেকে ভাবে যে, আরেহ! এটা তো সবাই জানে! এটা আবার বলার কী হলো?

একটা উদাহরণ দেই আমাদের জীবন থেকে। বাংলাদেশে এখনও কোটি কোটি মানুষ আছেন যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন না। শহরেই এমন অনেক সিনিয়র সিটিজেন আছেন, যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করা শিখতে চান, কিন্তু হয়তোবা শেখানোর মতো সময় তাদের আশপাশের কারও নেই। এমন অবস্থায় আমরা কয়েকটা উন্মুক্ত ভিডিও কোর্স বানাই যে। কীভাবে গুগল ব্যবহার করতে হয়?, কীভাবে ইন্টারনেটে ব্রাউজ করতে হয়? ইত্যাদি।

আমাদের লক্ষ্য ছিল, যাদের ইন্টারনেট শেখানোর কেউ নেই, তাদের কাছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের মাধ্যমে এই ভিডিওগুলো পৌঁছে দেওয়া।

কিন্তু, অনলাইনে দেওয়ার পর মানুষ প্রচুর ঠাট্টা-বিদ্রূপ করলো কমেন্টে।

এইটা কি কোনো শেখানোর কিছু হলো নাকি?

কন্টেন্টের কি অভাব হয়েছে নাকি? ইত্যাদি।

অনেকেরই এই ধারণা ছিল যে, তারা দৈনন্দিন ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন বলে সবাই বোধ হয় গুগল, নেট ব্যবহার করতে পারে। এবং এই চিন্তাটার জন্য, আমি যা জানি ওটাতো অন্যরাও জানে!; অনেক প্রয়োজনীয়। তথ্য আমরা অন্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি না।

আরেহ! মানুষকে কি হাত ধোয়া শেখানো লাগে?

বিশ্বাস করেন আর নাই করেন, পৃথিবীতে লাখ লাখ স্বেচ্ছাসেবক মানুষকে বিভিন্ন দেশে হাত ধোয়া শেখাচ্ছে কারণ এই একটা কাজের মাধ্যমে লাখ লাখ প্রাণ অকালমৃত্যু থেকে বেঁচে যাবে।

আমি তো কেবল কলেজে, আমার কথা কার কাজে লাগবে?

–যারা স্কুল থেকে কলেজে ভর্তি হচ্ছে তাদের কাজে লাগবে!

আমি তো কেবল চাকরিতে জয়েন করেছি। আমি আবার কীভাবে হেল্প করবো?

–আপনি যেভাবে সিভি বানিয়ে ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরিটা পেয়েছেন, সেই প্রক্রিয়াটা শেয়ার করলে চাকরিপ্রার্থীদের অনেক কাজে লাগবে!

মোটকথা, আপনি নিজে যা জানেন, সেটা সব সময় যে অন্যরাও জানবে এমনটা কিন্তু নয়।

*

অন্যের সমস্যা বনাম নিজের সমস্যা

মানুষের একটা সহজাত প্রবৃত্তি : দুনিয়ার কোটি কোটি সমস্যা থাকলে। থাকুক, কিন্তু নিজের সমস্যাটা তার কাছে সব থেকে বড় সমস্যা।

এখন এই বেসিক সাইকোলজিটা আমরা আমাদের জীবনে কীভাবে কাজে লাগাতে হয় সেটা শিখবো। নিজের সমস্যার কথা অন্যের কাছে বললে খুব একটা লাভ নেই যদি না সে আপনার খুব কাছের কেউ হয়। আপনার সমস্যা অন্য কারো ব্যক্তিগত সমস্যা নয়। কিন্তু, সেটা অন্য কারও সমাধান কিংবা সাজেশন হতে পারে এবং সেভাবেই জিনিসটা উপস্থাপন করলে আপনারঙ্কাজ হাসিল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কয়েকটা উদাহরণ দেই।

আপনি যা বলতে পারেন—

স্যার, প্লিজ! একটা ইস্যুরেন্স করান। ইস্যুরেন্স না করাতে পারলে বস রেগে যাবেন!

স্যার এই ইন্স্যুরেন্সটা আমার আপনার কারও জন্যই না, এটা আপনার সন্তানের নিরাপত্তার জন্য করুন।

আপনার কথা। শুনে ক্লায়েন্ট যা ভাবতে পারে-

তাতে আমার কী!

আচ্ছা, হ্যাঁ! তাই তো। আমি না থাকলে আমার বাচ্চার কী হবে? এই কয়টা টাকার জন্য বাচ্চার ভবিষ্যত নিয়ে ঝুঁকি নেওয়া উচিত হবে না।

আরেকটা উদাহরণ দেই ইউনিভার্সিটি লাইফের জন্য। মনে করেন আপনার কোনো টিম মেম্বারের কাছ থেকে তার পার্টটা দ্রুত করিয়ে নিতে হবে, এমন। অবস্থায় কী করা যায়?

আপনি যা বলতে পারেন দোস্ত! তোর প্রেজেন্টেশনের পার্টটা একটু জলদি করে দে না! দোস্ত আজকে রাত ১১টার মধ্যে তোর পার্টটা করে দে। নাহলে কালকে তোর ফুটবল ম্যাচ বাদ দিয়ে কাজটা করতে হবে।
আপনার বন্ধু যা ভাবতে পারে আমি আর করসি! ও জানে যে কালকে আমার প্ল্যান কী। আজকে না পাঠালে কালকে টাইম আর জায়গামত আমাকে ধরে ফেলে খেলার বারোটা বাজায় দিবে। আজকের মধ্যেই করে ফেলি তাহলে!

একদম বেসিক একটা পানির বোতলের ছোট্ট উদাহরণ দিয়ে শেষ বলে ব্যাখ্যাটা করি। মনে করেন একটা টেবিলে আপনি আরেকজনের সাথে বসে আছেন এবং মাঝখানে একটা পানির বোতল। বোতলটির মুখ খোলা এবং যে কোনো সময় পানি পড়ে আপনাদের কাগজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এখন বোতলটি সাবধানে রাখতে বলবেন কীভাবে?

ভাই, আপনার বোতলটা একটু বন্ধ করে সাবধানে নিচে রাখেন নাহলে যেকোনো সময় বোতল উল্টে আমার কাগজ ভিজে যেতে পারে।

ভাই, আপনার বোতলটা একট বন্ধ করে সাবধানে নিচে রাখেন নাহলে যেকোনো সময় বোতল উল্টে আপনার কাগজ ভিজে যেতে পারে।

দেখলেন তো এক শব্দের কী কারিশমা! এখন নিশ্চয়ই আপনি একদম ক্লিয়ারলি বুঝতে পারছেন যে কেন আপনি ডানপাশের অপশনে কথা বলবেন!

একদম বেসিক হলেও এটার মাধ্যমে আসলে কী হচ্ছে? অন্য মানুষটি আপনার স্বার্থের কথা শুনলে আপনার উপর বিরক্ত হবে। কিন্তু, নিজের স্বার্থে রক্ষার কথা আপনার মুখ থেকে শুনলে আপনার উপর অনেক খুশি হবে। দিন শেষে একই কাজই কিন্তু হচ্ছে, একটা বোতল সরানো হচ্ছে; কিন্তু বলার শব্দের উপর নির্ভর করছে কাজটা কতটা বিনয় আর স্ব-ইচ্ছার সাথে হচ্ছে।

*

পোশাকে কমিউনিকেশন

একজন ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট একটা বড় কোম্পানির ম্যানেজারের সাথে ৫ মিনিটের একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেল। দুজন মিলে কোম্পানির পাশের রেস্তোরাঁয় বসলো। খাবার অর্ডারের পরে ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট কৌতূহলবশত ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করলো, স্যার! আপনি তো আমার চেয়ে অনেক বেশি সিনিয়র। তবুও এই ছোট্ট মিটিং করতে আপনি কোট টাই পরে এসেছেন। কেন? ম্যানেজার মুচকি হেসে বললেন, তুমি জুনিয়র বলে কি স্যান্ডো গেঞ্জি পরে মিটিং করতে আসবো!

সিনিয়র হোক আর জুনিয়র, সবাইকে সমান গুরুত্ব দিয়ে মিটিং করতেন বলেই হয়তোবা তিনি বড় কোম্পানির ম্যানেজার ছিলেন। দিনশেষে আপনি কী পোশাক পরবেন সেটা আপনার ব্যাপার, কিন্তু আপনার পোশাক আপনার সম্পর্কে অনেক কিছুই কমিউনিকেট করবে অন্যদের কাছে–সেটা আপনাকে মেনে নিতেই হবে।

ড্রেস নিয়ে আরেকটা কমন প্রশ্ন পাওয়া যায়।

ভাই! মার্ক জাকারবার্গ আর স্টিভ জবসকে চিনেন? তাদের প্রেজেন্টেশন তো কোটি কোটি মানুষ দেখে। কিন্তু, ওরা তো গেঞ্জি পরে প্রেজেন্টেশন দেয়!

তারা ভাই নিজেদের কোম্পানির বস! তার উপর তারা মাল্টি বিলিয়নিয়ার। তাদের আর কাউকেই ইম্প্রেস না করলেও চলবে এবং দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষ তাঁদেরকে চিনে। আপনিও যদি ওই লেভেলের বস হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি চপ্পল পরে প্রেজেন্টেশন দিলেও মানুষ দেখবে!

*

ফিডব্যাকের কমিউনিকেশন

আমাদের চোখের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে যে আমরা পুরো দুনিয়াটাকে দেখতে পারলেও, নিজেদের দেখতে পারি না সরাসরি। আমরা মানুষের বহুত ভুল ধরতে পারলেও নিজেদের ভুলগুলোর ব্যাপারে আমরা অন্ধ। তাই নিজেদের ভুলগুলো শুধরে নিতে অন্যদের সাহায্য দরকার। কিন্তু এখানেই সমস্যা। খুব কম মানুষের পক্ষেই সম্ভব একদম নিরপেক্ষভাবে নিজের সমালোচনাটা নেওয়া।

যখনই কেউ আমাদের সমালোচনা করে তখন আমরা কী করি?

–রেগে যাই

-–পাল্টা আক্রমণ করি

–সমালোচনাকারীর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলি

–মন খারাপ করে বসি

এত কিছু করি, কিন্তু কয়জন আছি যারা সমালোচনা শুনে সেটা দিয়ে নিজেকে শোধরানোর চেষ্টা করি? খুবই কম। কারণ, আমরা নিজের ব্যাপারে অনেক বেশি ডিফেন্সিভ। এবং এজন্যই একবার বিজনেস কমিউনিকেশন ক্লাসে স্যার আমাদের একটা এক্সপেরিমেন্ট করালেন। তিনি ক্লাসে বললেন যে, কে আছো, যে আরও সুন্দরভাবে সমালোচনা নিতে চাও? শুরুর দিকে সুযোগ পেলেই আমি ক্লাসের সামনে যাওয়ার চেষ্টা করতাম যাতে আমার কথা বলার দক্ষতা বাড়াতে পারি। তাই, আমি হাত তুললাম। স্যার আমাকে ক্লাসের সামনে এসে দাঁড়াতে বললেন। তারপর স্যার ক্লাসের উদ্দেশ্যে। বললেন, এখন তোমরা সাদমানের সম্পর্কে যা যা সমালোচনা আছে, তা করবা। এরপর স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, খালি একটাই কন্ডিশন, তুমি সমালোচনার কোনো জবাব কিংবা ব্যাখ্যা দিতে পারবে না। আমি ভাবলাম কিসের কী, এটা তো অনেক সহজ। কিন্তু, আমি তো জানতাম না যে আমি ডিফেন্স করতে না পারলে আমার নামে কত সমালোচনা উঠে আসবে। এক এক করে শুরু হলো, তুই বেশি দ্রুত কথা বলিস!, তুই কথা বলার সময় বেশি হাত নাড়াস!, আমাদের না বলে তই বলিস আমদের! আমি সাথে সাথেই বলতে গেলাম, আরে আমি তো সময়ের জন্য বলতে পারি না…; সাথে সাথে স্যার আমাকে থামিয়ে দিলেন। শর্ত একটাই যে, আমাকে চুপ থাকতে হবে। তারপর আরও অনেক সমালোচনা আসলো যেটা আসলেই আমাকে উন্নতি করতে সাহায্য করেছে। এক্সপেরিমেন্টটার উদ্দেশ্য ছিল এটা বোঝানো যে, আমরা যদি চুপচাপ সমালোচনা নিতে পারি, তাহলে আমরা নিজেদের সম্পর্কে আসলেই অনেক কিছু জানতে পারি। সমালোচনা শুনলেই যদি আমরা রেগে যাই, দুই-একটা কথার মোচড়ে অন্য মানুষটিকে কুপোকাত করে ফেলি; তাহলে আমরা কখনই অন্য মানুষদের কাছ থেকে গঠনমূলক সমালোচনা পাবো না। কারণ, তারা সব সময় ভয়ে থাকবে এবং জরুরি অনেক কথাও নিজের মধ্যে পুষে রাখবে।

*

চুপ কেন থাকবো

আমাদের পৃথিবীটা অনেক সহজ হত যদি ভুল করার সময় সাথে সাথে আমরা সঠিক গঠনমূলক সমালোচনা পেতাম।

আমরা বেশিরভাগ সময় কাজের ফিডব্যাক সময়মত পাই না। ইউটিউবে আমরা ভিডিও বানানোর সাথে সাথে কমেন্ট পাই, কোনটা ঠিক কোনটা ভুল। কিন্তু এই কমেন্টগুলোই যদি আমরা ১ বছর পরে পাই, তাহলে তো আমরা ভুলেই যাবো যে কী ইপ্রুভ করা যেত। তাছাড়া ১ বছর পরে। ফিডব্যাক পেলে এই যে মাঝের ১টা বছর গেল, সবগুলোতে ভালো করার চান্স মিস গেল। তাই, ফিডব্যাক থাকলে যেন আমরা সাথে সাথেই দেই।

আরেকটা উদাহরণ দেই। কোনো কারণে ঘুম না হওয়ার কারণে হয়তোবা আপনার কয়দিন ধরে খিটখিটে মেজাজ হয়ে আছে। সবাই বিরক্ত হচ্ছে কিন্তু কেউ ভয়ে কিছুই বলছে না। জানবেন হুট করে এমন কোনো একজনের কাছে। যে আর ব্যাপারটা নিতে পারছে না।

আপনি সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করছেন! পেয়েছেটা কী!

আপনি অবাক হয়ে খেয়াল করলেন আসলেই তো। কারণ ছাড়াও অনেকের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়ে যাচ্ছে। এটাই এত দেরিতে না বলে প্রথমে বুঝিয়ে বললে কিন্তু পুরো সপ্তাহজুড়ে নিজের ব্যবহারে আরও বেশি সচেতন হতেন।

একটা জিনিস খেয়াল করলে দেখবেন, আমরা পড়াশোনা ঠিক করছি না ভুল করছি, সেটা ছয় মাস কি বারো মাস পর আমরা রিপোর্ট কার্ডে জানতে পারি। যখন রিপোর্ট কার্ডে জানতে পারি কোথায় ভুল ছিল, তখন আর পড়াশোনার ভুলগুলো শুধরানোর সময় থাকে না। তাই, আমাদের উচিত যখন শিখছি, তখন একটা মিনি প্র্যাক্টিকাল করে যাচাই করে নেয়া যে আমরা আসলেই বুঝতে পেরেছি কি না।

কর্পোরেট দুনিয়ায় রিপোর্টকে বলে অ্যাপ্রেইল (Appraisal)। বছর শেষে বস যদি ঝাড়ি দেয় যে, আপনার কাজ ঠিক হয়নি; তাহলে লাভ কী? বরং কাজ যখন করছিলেন তখন একটু একটু করে ফিডব্যাক দিলে পুরো কাজটাই বছর শেষে ঠিকঠাক এগোতো। খালি চিন্তা করে দেখুন, ৩ মাস পর পর একটা করে ঝাড়ি খাওয়ার চেয়ে যদি প্রতিদিন আপনি যখন যেই ভুলটা করেন তখন যদি সেটা শুধরে দেয়া হত তাহলে আপনি কত দ্রুত উন্নতি করতে পারতেন!

তাই, ফিডব্যাক হচ্ছে ঋণের মত যত দ্রুত সম্ভব অন্য মানুষটিকে বুঝিয়ে দিন!

*

কে ঠিক, কী ঠিক

মনে করেন দুই পিচ্চির মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে,

১ম পিচ্চি : সূর্য উত্তর দিকে উঠে।

২য় পিচ্চি (মায়ের মোবাইলে কম্পাস দেখে) : এই দেখ! সূর্য দক্ষিণ দিকে উঠে!

আপনি দূর থেকে বুঝতে পারছেন কোনো পিচ্চিই সাধারণ জ্ঞানের হোমওয়ার্কটা এখনও করে নাই। কিন্তু, তারা তাদের নিজেদের অজানার মধ্যে ঝগড়া করে যাচ্ছে।

আমরাও অনেকে ওই দুই পিচ্চির মত মারামারি করে যাই। কে ঠিক এটা বের করতে যেয়ে ভুলেই যাই যে, কোনটা ঠিক?

আমাদের আগ্রুমেন্টের সাথে যেই মুহূর্তে আমরা আমাদের ইগো জড়িয়ে দেই, ঠিক সেই মুহূর্তে সেটা অনুসন্ধান না হয়ে মৌখিক বক্সিং হয়ে যায়। মৌখিক বক্সিং এড়াতে, গলার জোর না বাড়িয়ে কথার যুক্তি বাড়াবেন।

*

স্প্যাম বনাম ব্যক্তিগত কমিউনিকেশন

মেসেজ #1 মেসেজ #2
Hello Everyone!
I have started an online shop for gadgets. I have a special offer going! Give the page a like and share!
Hi Sadman Bhaiya!
Hope youre doing amazing! If you need any latest gadget just give me a call and I will manage it for you. My number : +8801400373965.
By the way, 5% special discount for you and your friends Bhaiya!
কোথায় ঘাটতি আছে কোথায় হ্যাকস আছে
Hello Everyone! বুঝা যাচ্ছে যে একই ম্যাসেজ কপি-পেস্ট করে সবাইকে পাঠানো হয়েছে। নাম বলার কারণে স্প্যাম মনে হবে না। তার উপর শুরুতে ফ্রেন্ডলি ধাঁচ আছে।
I have a special offer going! – কী অফার? কিসের জন্য? এখন কি আমাকে গিয়ে দেখতে হবে? কয়দিনের জন্য এই অফার? 5% special discount for you and your friends—অন্য জায়গায় দাম সহজেই আমি কম্পেয়ার করে দেখতে পারবো যে ডিসকাউন্ট নিলে আমার লাভ আছে  নাকি। ফেসবুক পেজে গিয়ে দেখতে হচ্ছে না কষ্ট করে খুঁজে।
Give the page a like and share!– কেন করবো ভাই? আমার কী ঠেকা? আমার বন্ধুদের জন্যও যেহেতু ৫% ডিসকাউন্ট, তাই আমি আরও অন্যদের কাছে এই পেজের কথা বলার উৎসাহ পাবো। কারণ অন্যদের ডিসকাউন্ট ম্যানেজ করে দিতে পারলে তারাও আমার উপর খুশি হবে।
কোনো কিছু জানতে হলে ওই পেজে গিয়ে তারপর টেক্সট দিয়ে উত্তরের জন্য বসে থাকতে হবে। নাম্বার দিয়ে দিয়েছে, তাই একদম সরাসরি যে কোনো সময় কল দিতে পারবো।

*

সবচেয়ে মধুর শব্দ

ছোটবেলায় পরীক্ষার পরীক্ষার খাতায় নাম্বার পাওয়ার জন্য আমরা অনেকেই হয়তোবা খাতায় লিখেছি যে মা শব্দটির মত মধুর শব্দ আর নেই এই পৃথিবীতে!

কিন্তু অনেকে তো আম্মা, আম্মু কিংবা মামনি ডাকে। তাদেরও কি মা শব্দটি সবথেকে বেশি প্রিয়? কিংবা মনে করেন যারা অন্য ভাষায় কথা বলে, মাদার, আম্মিয়া কি তাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় শব্দ? যদি তাই হয়, তাহলে তো মা শব্দের পাশাপাশি মা শব্দের অনুবাদগুলোরও সবথেকে মধুর শব্দ হওয়ার কথা!

আচ্ছা তর্কে না যাই! এটা ইমোশনের ব্যাপার। কিন্তু, সত্যি কথা বলতে আমাদের কাছে সবচেয়ে মধুর শব্দ হচ্ছে আমাদের নিজেদের নাম। সবচেয়ে মধুর শব্দ না হলেও, সবথেকে বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করে আমাদের নিজেদের নাম।

একটা হলরুমে আপনি মাইকে গিয়ে বলেন মা। কার মার কথা বলা হচ্ছে। এটা তো কেউ জানে না। তাই অনেকে হয়তোবা নিজেদের মোবাইলে আবার ডুবে যাবে। কিন্তু, আপনি কারও নাম বলেন। যাদের নাম, তাদের ১০০% মনোযোগ আপনি পেয়ে যাবেন। এতই যখন গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আমাদের নাম, এটাকে কীভাবে কমিউনিকেশনে কাজে লাগানো যায়?

১. মানুষের নাম মনে রাখা শুরু করেন। মানুষ অনেক খুশি হয় যখন তারা দেখে যে অন্য মানুষটি তাদের নাম মনে রেখেছে।

২. অনলাইনে যখন কথা বলছেন কিংবা এসএমএস করছেন, মানুষের নাম উল্লেখ করেন। এখন অনেক বিজনেস টুল আছে যেগুলো একই মেসেজ হাজারজনকে পাঠাতে পারে, কিন্তু সবার মেসেজে তাদের নিজের নাম এডিট করে বসাতে পারে। এতে করে মেসেজ পেলে মনে হয় যে আমাকে একান্ত ব্যক্তিগতভাবে মেসেজ করা হয়েছে।

*

আরে আমিও তো!

মানুষ দুটো জিনিস সবথেকে বেশি পছন্দ করে :

১। প্রশংসা এবং ২। সাদৃশ্য।

প্রশংসা পেতে যে সবারই ভালো লাগে এটা নিয়ে আসলে বলার নতুন কিছু নেই। তবে সাদৃশ্যের ব্যাপারটা কী?

মানুষ তার নিজের মতো কাউকে পেলে অবচেতনভাবে অনেক খুশি হয়। দুইজন যদি একই স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে থাকে, তাহলে একদম প্রথম দেখাতেই অনেক ঘনিষ্ঠ হয়ে যায়। একই ভাবে আপনি যদি আরেকজনের সাথে আপনার পছন্দের কিংবা জীবনের কোনো মিল খুঁজে পান, তাহলে সাথে সাথে সেটার কথা তুলুন।

আপনাদের দুইজনের যদি একই সিরিজ, গান কিংবা বই ভালো লাগে, তাহলে দুজনের মধ্যে কথা বলার অনেক সুযোগ তৈরি হয়ে যায়। এমনও হয়েছে যে দুইজনের মধ্যে কোনো মিল নেই, কিন্তু কোনো এক সময় আমরা একই কোম্পানিতে কাজ করেছি; সেটার কথা বলার সাথে সাথেই একটা কানেকশন তৈরি হয়ে গেছে!

তাই, মানুষকে যোগ্য প্রশংসা করুন এবং জীবনের কোনো মিল থাকলে সাথে। সাথে সেটার কথা মেনশন করুন।

*

চাওয়া পাওয়ার কমিউনিকেশন

কবি বলে গেছেন, যা চাই, তা ভুল করে চাই; যা পাই তা চাই না। এর মাঝে সত্য থাকলেও শতভাগ সত্য বলা যাবে না। কারণ, কিছু সময়। চাইলেই আসলে পাওয়া যায়, কিন্তু আমরা লজ্জা কিংবা ভয়ে চাই না।

কয়েকটা উদাহরণ দেই। একদিন বন্ধুদের নিয়ে খেতে গিয়েছি। একটা দারুণ অফার চলছিল। কিন্তু, অফারটা সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত প্রযোজ্য ছিল। তো এখন। বুঝতেই পারছেন যে আমরা দেরিতে পৌঁছেছিলাম। সাতটা পঁচিশ বাজে দেখে সবাই অন্য দোকান দেখা শুরু করলো। আমি বললাম, একবার জিজ্ঞেস করে। দেখ না। আমাকে বললো যে সময় শেষ হয়ে গেছে। আমি তারপরও একবার খালি গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসতে বললাম; যা না! খালি একটা প্রশ্নই তো! আর হ্যাঁ, আমার বন্ধুকে অবাক করে দিয়ে তারা রেস্টুরেন্ট ঠিকই আমাদের। জন্য অফারটা কন্সিডার করলো। এমন না যে তারা ঘড়ি ধরে থাকে যে সাতটা বাজলেই তারা তাদের অফার বন্ধ করে দিবে। তারাও মানুষ। তাদেরও এক বিচার-বুদ্ধি আছে। আমরা যদি জিজ্ঞেস না করতাম, তাহলে আমরা বেশি দামে অন্য কোনো খাবারই হয়তোবা খেতাম। খালি একটু সাহস করে জিজ্ঞেস করায় ওইদিন আমরা সবাই খুব মজা করে খেয়েছি। এবং যদি না বলতো? ক্ষতি কী? এমনিও সাতটায় অফার বন্ধ ছিল। প্রশ্ন করলে খালি জেতার সুযোগ। ছিল, হারানোর তো কিছু ছিল না!

এমন আরও অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে, যেখানে কেবলমাত্র একটু জিজ্ঞেস করার কারণে অনেক কিছু পেয়ে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু আমরা সেটা করি না। আরেকটা একদম সত্য ঘটনা বলি। একটা স্টুডিও মাইক্রোফোন কিনতে গিয়েছি। আমার অনেক কষ্টে বাজেট ছিল ১৪ হাজার টাকা। দোকানদার বললো ১৫ হাজার। প্রায় ৭-৮ মিনিট দরদাম করলাম। উনি শেষমেষ উনার প্রোডাক্ট লিস্ট খুলে দেখালেন যে মাইক্রোফোনটার দাম তার নিজের রেজিস্টারেই ১৪ হাজার ৫০০ টাকা লিখা ছিল, তাই তিনি এর কমে দেবেন না। তো এমন অবস্থায়, আমারও আসলে কিছুই বলার নাই, তার উপর মাঝখানে আমি নিজে আমাজনে গিয়ে পণ্যটির দাম দেখে এসেছি, তিনি মিথ্যা বলছিলেন না। তাই আমি চলে যাচ্ছিলাম, কিন্তু যাবার আগে খালি একবার বললাম ভাই, ১৪ হাজারই আছে। পারলে দিয়েন। উনি কী জানি ভেবে বললেন, আচ্ছা নেন।

আমি তো সেই অবাক! মাইক্রোফোন নিয়ে এসে আমি যতটা না খুশি ছিলাম, তার চেয়ে বেশি সন্দিহান ছিলাম যে আমাকে ২ নম্বর মাল গছিয়ে দিয়েছে কি না! কিন্তু, আজ অবধি তিন মাস যাচ্ছে এবং মাইক্রোফোন একদম টপ-নচ পারফরমেন্স দিচ্ছে। ওইদিন যদি আমি শেষে চুপচাপ কিছু না বলে আসতাম, তাহলে হয়তোবা এই সুন্দর সুযোগটা মিস করতাম। আমি আজও জানি না যে অচেনা মানুষটি কেন আমার কথায় হ্যাঁ বলেছিলেন, কিন্তু আমি এটা জানি যে কিছু কিছু সময় খালি একটু চাইলেও অনেক অবাক হওয়ার সুযোগ থাকে!

আসলে বলতে গেলে আমরা না শুনতে খুবই লজ্জাবোধ করি কিংবা ভয় করি। এক্সট্রা সস লাগলে খালি একটু গিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখেন; বেশিরভাগ জায়গাতেই আপনাকে দিয়ে দেবে। না বললে সমস্যা নেই; সসের জন্যও তো তাদের খরচ হয়। কিন্তু, জিজ্ঞেস করতে তো সমস্যা নেই। সসের কথা বলছি কারণ এই ছোটখাটো জিনিসগুলোর জন্য একটু চাওয়া শুরু করেন যেন আসতে আসতে বড় বড় চান্সেও প্রশ্ন করতে কার্পণ্য বোধ না করেন। কোনো একটা জিনিস হয়তোবা খুব পছন্দ হল, কিন্তু দাম জিজ্ঞেস করলে কিনতে বাধ্য করবে এই ভয়ে দাম না জেনেই চলে আসে অনেকে। আরে ভাই একটু জিজ্ঞেস করে দেখেন খালি, হয়তোবা ২০-৩০% ক্ষেত্রে দাম আপনার ধারণার চেয়েও অনেক কম।

চাইতে দোষ নেই, কিন্তু এটা ভাবায় দোষ আছে যে চাইলেই আমি পাতে যোগ্য। এটাকে এক শব্দে এনটাইটেলমেন্ট (Entitlement) বলে এনটাইটেলমেন্ট ছাড়া প্রশ্ন করার অভ্যাস আপনাকে এমন অনেক কিছ৯ এনে দিবে যা হয়তোবা আপনি চিন্তাও করতে পারছেন না। তাই, আজকে থেকে অযৌক্তিক ভয় আর লজ্জা পকেটে রেখে, মানুষের কাছে ছোট-খাটো জিনিস চাওয়ার অভ্যাসটা শুরু করেন।

*

শেয়ার করা মানেই সততা না

অনেকে ভাবে যে, আমি যদি সৎ হই, তাহলে তো আমার লুকানোর কিছু নেই। আমি তো সবাইকে সব বলতে পারবো!

আসলে সৎ হলেই যে সবকিছু বলতে হবে। কিংবা, সবকিছু শেয়ার না। করলে যে অসৎ, এই ধারণাগুলো ভুল।

তোমার পাসওয়ার্ডটা দাও যদি আমাকে বিশ্বাস করো। কারও কাছে বিশ্বাস কিংবা আস্থা প্রমাণ করার জন্য যদি আপনাকে আপনার প্রাইভেট কথা শেয়ার করতে হয়, তাহলে আপনার উপর সেই মানুষটার বিশ্বাস শর্তসাপেক্ষ। আপনি যতক্ষণ গোলাম হয়ে সব তথ্য শেয়ার করবেন, ততক্ষণ আপনাকে সে তার আস্থা দিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে রাখবে। তাই, মানুষের আস্থা পাওয়ার জন্য যে গোপনতম কথাগুলো শেয়ার করে নিজেকে দুর্বল করে ফেলতে হবে, এমন কোনো কথা নেই।

দ্বিতীয়ত, সব কথা সবার সাথে শেয়ার না করার কারণ হচ্ছে সবার মাঝে এমন কয়েকজন আছে যারা আপনার তথ্য আপনার বিরুদ্ধেই কাজে লাগাবে। সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে যখন মানুষ পরের বেলা ভাত কী দিয়ে খাবে– এটাও বলে বেড়াচ্ছে; সেখানে তাদের প্রতিযোগীরা ফেসবুকের কয়েকটা পোস্ট দেখলেও অনেক বড় বড় তথ্য পেয়ে যাবে। তাই, কিছু কথা নিজের কাছে রাখলেই ভালো এবং আপনার দলের অন্য মানুষজনেরও যেন বিষয়টা খেয়াল থাকে। অনেক কোম্পানির মানুষজনকে দেখেছি যে, কোনো কোম্পানির মিটিং করতে গিয়েছি সেটার মিটিং-এর ছবি ফেসবুকে দিয়ে রেখেছে। সব প্রতিযোগী তখন খুব সহজেই বুঝে যায় কার নেক্সট মুভ কী!

*

কমিউনিকেশন ক্রেডিট

যারা অন্যের কথা নিজের বলে চালিয়ে দেয়, তাদের কেউ পছন্দ করে না। এর চেয়েও বড় ব্যাপার হচ্ছে, কারও যদি আইডিয়া চুরির অভ্যাস থাকে, তাহলে কেউ তাদের সাথে আইডিয়া নিয়ে কথাও বলবে না।

এখন আপনি হয়তোবা ক্রেডিট হয়তোবা ক্রেডিট চুরি করছেন না ইচ্ছা করে। কিন্তু, মানুষ হয়তোবাদ আপনাকে ক্রেডিট চোর ভাবতে পারে। কারণ, কোনো একটা কথা হয়তোবা আপনার অন্য কারও সাথে মিলে গেছে। এবং এই বিষয়ে মার্ক টোয়েনের অসাধারণ একটা উক্তি আছে,

একদম প্রথম প্রজন্মের মানুষ হওয়ার একটা সুবিধা ছিল। নতুন চিন্তা করার সময় তারা নিশ্চিতভাবে জানতো যে তাদের আগে কোনো মানুষ কখনও এই বিষয়ে চিন্তা করে দেখেনি। তাই ক্রেডিট দেওয়ার চিন্তা নেই।

কিন্তু ডিজিটাল যুগে আপনি নিজে থেকে একটা আইডিয়া বের করলেও, ইন্টারনেটে সার্চ করে দেখবেন আপনার কথাই কেউ অনেক আগে বলে ফেলেছে। আর আপনার অজান্তে আসলেই যদি এমন কিছু বলে ফেলা হয়ে যায়, তাহলে মানুষ আপনাকে আইডিয়া চোর বলবে।

এখন এর সমাধান কী? নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলি। আমরা প্রচুর ভিডিও বানাই। আর একটা কথা বললে এক-দুটো ভিডিওর কথা তো মিলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। ভিডিও মনে করেন বাদ দিলাম, এই যে বই লিখছি, এই কথাগুলোই অনেকের সাথে মিলে যেতে পারে। তাই, আমরা সম্পূর্ণ দুই পৃষ্ঠাজুড়ে খালি আমাদের রেফারেন্স বইগুলোর কথাই বলেছি যাতে কেউ আমাদের কপিক্যাট বললে আমাদের ডিফেন্স হিসেবে রেফারেন্স থাকে!

আত্মরক্ষার জন্য তাই রেফারেন্স দিয়ে কথা বলবেন। কিন্তু এর চেয়েও বড় একটা হ্যাক আছে। মানুষ আপনাকে অনেক বেশি পছন্দ করবে যখন আপনি তাদেরকে ক্রেডিট দিবেন। এমনকি একটা কৌতুকও কারও কাছ থেকে শুনে থাকলে তার নামটা বলুন। মানুষটি সামনে থাকলে কৌতুকটা শুরু করে আসল হাসির অংশটা ওই মানুষটিকে শেষ করে সবাইকে হাসাতে দিন।

আপনি যদি মানুষকে ক্রেডিট ঠিকমত দিতে পারেন, তাহলে মানুষ আরও বেশি করে আপনার সাথে আইডিয়া শেয়ার করবে। তাই, আজই নিজের জীবনে খেয়াল করে দেখুন, আপনি গত ৩০ দিনে কয়জন মানুষকে সঠিকভাবে ক্রেডিট দিতে পেরেছেন?

বিস্ময়করভাবে কত কিছুই অর্জন করে ফেলা সম্ভব যদি কাজের ক্রেডিট কে পাবে–এই চিন্তা মাথায় না থাকে।

–হ্যারি ট্রম্যান

*

চিন্তাভাবনার কমিউনিকেশন

শব্দ এবং বাক্য আমাদের খালি অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে সাহায্য করে না। নিজের চিন্তাগুলোকেও ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে দেখতে সাহায্য করে। কয়েকটা উদাহরণ দেই।

এই জিনিসগুলো আমরা সাধারণভাবে সবাই জানি। কিন্তু, একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করলে বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনার ধারণা অনেক পাল্টে যেতে পারে। যেমন :

এটা বলা যেই কথা এটা মানেও একই কথা
শুভ নববর্ষ! তো… আজকে সূর্যের চারদিক পৃথিবী আরেকবার চক্কর দেয়া শেষ করেছে।
ট্যাক্স দেন! এই দেশে থাকার জন্য বার্ষিক সাবস্ক্রিপশন ফি দেন!

আমার প্রিয় উদাহরণ দিয়ে শেষ করি।

আপনি কি একদম ঘুটঘুঁটে অন্ধকার দেখেছেন?

–হ্যাঁ, দেখেছি।

ঘুটঘুঁটে অন্ধকারে কী দেখেছেন?

–কিছু দেখিনি তো ভাই! ঘুটঘুঁটে অন্ধকার ছিল বললাম না?

তাহলে কেন বলছেন যে ঘুটঘুটে অন্ধকার দেখেছেন?

এখন আপনার কাছে প্রশ্ন, ঘুটঘুটে অন্ধকারে কিছুই যদি দেখা না যায়, আপনি কি জীবনেও ঘুটঘুঁটে অন্ধকার দেখেছেন আসলেও? কিংবা আপনি ঘুটঘুঁটে অন্ধকারে বলতে যেই কালো দৃশ্য আপনি মনে মনে কল্পনা করেন, সেটা কি আদৌ ঘুটঘুঁটে অন্ধকার নাকি কেবলমাত্র আলোর অনুপস্থিতি?

চিন্তা করে দেখেন তো কিছুক্ষণ তাহলে, আপনি এতদিন ঘুটঘুঁটে অন্ধকার বলতে যা জানতেন, তা আসলেও নিজে পুরোটা বুঝেছেন কি?

এমনই আরও অনেক জিনিস, প্রতিটা শব্দ খেয়াল করে ভাবলে আমাদের অনেক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যাবে। তাই, শব্দ এবং বাক্য ব্যবহার করে এতদিন খালি আমরা কমিউনিকেট করেছি। আজ, সেই একই শব্দ এবং বাক্য খেয়াল করে আমরা আমাদের চিন্তার জগৎকে নতুন করে আবিষ্কার করি!

*

যখন আইডিয়া নিয়ে চিন্তা করবেন

যখন আইডিয়া নিয়ে চিন্তা করবেন তখন সমালোচনা বন্ধ রাখবেন।

আইডিয়া যতই বাজে হোক না কেন, আইডিয়া শেয়ার করার সময় সবাই যেন চুপ থাকে। একই সাথে পেন্সিল এবং রাবার যেন আমরা কখনই না চালাই।

আইডিয়া শেয়ার করার সময় আইডিয়ার ব্যবহারিক দিক নিয়ে কথা বললে:

১) অনেকে সমালোচনার ভয়েই আইডিয়া দেওয়া বন্ধ করে দেবেন; হয়তোবা তাদের মাথায় ভালো কোনো আইডিয়া ছিল!

২) আইডিয়া দেয়ার সাথে সাথে সমালোচনা করলে অনেকে সেটাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবে নেয়। কোনটা ব্যক্তিগত সমালোচনা এবং কোনটা আইডিয়ার সমালোচনা সেটা অনেকে তফাতটা বুঝতে পারে না। তাই, আইডিয়াটা মন দিয়ে শুনেন। কিন্তু, তাৎক্ষণিক সমালোচনা থাকলেও, পারলে তা ৫ মিনিট পর দিন কারণ সাথে সাথে আইডিয়ার সমালোচনা অনেকে সহজে নিতে পারে না।

৩. আইডিয়া ভালো হোক আর খারাপ হোক, শেয়ার করার সুযোগ দিন। এমনকি এক কোম্পানি ভালো আইডিয়া দেওয়ার জন্য যেমন পুরস্কার দিত, তেমনই একদম বাজে আইডিয়াকেও সাহসিকতার জন্য স্বীকৃতি দিত। এটা এজন্য করতো যেন অন্যরা যত বাজে আইডিয়াই হোক না কেন, প্রকাশ যেন অন্তত করে। এমন পরিবেশ তৈরি করতে।

খালি মিটিং রুম কিংবা গ্রুপে নয়। নিজে যখন চিন্তা করছেন তখনও চিন্তা করার সময় মনের সমালোচকটাকে পারলে একটু বন্ধ রাখবেন। বড় হতে হতে আমাদের মনের সমালোচক এত উচ্চমানের হয়ে যায় যে, আমরা সমালোচনার তোপে নতুন কোনো আইডিয়ার কথাই চিন্তা করতে পারি না। এবং এখানেই বাচ্চারা আমাদের চেয়ে ভিন্ন। তাদের চিন্তার কোনো বাধা নেই। ব্যবসা সফল হবে কি না, মানুষ পছন্দ করবে কি না, বস খুশি হবে কি না– এসবের একটা চিন্তাও বাচ্চাদের নেই। আর একারণেই তারা এমন সব চিন্তা করতে পারে যেটা বড়রা মাথাতেই আনতে পারেন না। তাই আবারও বলছি, পেন্সিল আর রাবার একসাথে চালাবেন না।

*

অদৃশ্য ভুল

আমরা অনেক সময় ইন্টারনেটে দেখি মানুষকে গালি দিতে এই বলে যে, অমুক একটা হিজড়া!

হিজড়া কিংবা তৃতীয় লিঙ্গের যারা, তারাও তো মানুষ। হিজড়া কীভাবে একটা গালি হয়? অনেকে হয়তোবা অনেক দিন ধরেই হিজড়াকে গালি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু, প্রতিবার যখন হিজড়া শব্দটা কেউ গালি হিসেবে ব্যবহার করছে, তারা কি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে অপমান করছে না? এবং এই অদৃশ্য ভুলটা কয়জনই বা এখনও বুঝতে পেরেছে? একইভাবে আমরা গালি হিসেবে কামলা, গ্রাম থেকে আসছে! এসব টুডে দেই। কেন রে ভাই? শহরে থাকার কারণে, কিংবা কংক্রিটের দেয়ালের মধ্যে কাজ করে বলে কি কেউ উচ্চপদের মানবসত্তা হয়ে গিয়েছে নাকি? বরং আমাদের দেশ চলে গ্রামের মানুষের কষ্টের ফসলের উপর, প্রবাসী ভাইদের রেমিটেন্সের উপর। মানুষ কতটা নিচ মানসিকতার হলে কামলা, চাষা, গ্রাম থেকে আসছে! –এসব শব্দকে গালি হিসেবে ব্যবহার করে।

একটু অগোছালো হলে এখন রোহিঙ্গা বলে গালি দেয়া হয়। গালির এতই সংকট যে, উদ্বাস্তু মানুষকে নিয়েও এখন কথায় কথায় নিজের দীনতা প্রকাশ করতে হয়।

এমনই আরও অনেক অদৃশ্য ভুল আছে যেগুলো আমাদের মানসিক সঙ্কীর্ণতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। ফেল করলে রিক্সাওয়ালা হয়ে যাবো যেই মুখ দিয়ে বের হয়, সেই মুখে সব পেশাই সম্মানজনক কথাগুলো আসলে খুব একটা মানায় না।

*

কমিউনিকেশনের বিপদসংকেত

একশ দুইশটা জিনিস না খুঁজে আমরা যদি একটা ব্যাপার খেয়াল করে জানতাম যে একটা বিয়ে টিকবে কি টিকবে না, তাহলে ব্যাপারটা বোঝা আমাদের জন্য অনেক সহজ হয়ে যেত না? এমনই একটা বিপদসংকেত কয়েক যুগের রিসার্চের পর সাইকোলজিস্ট জন গটম্যান বের করেছিলেন। আর সেই মহাবিপদসংকেত হল : অবজ্ঞা (Contempt)।

কাপলদের ১৫ মিনিটের কথাবার্তা রেকর্ড করে তিনি দেখছিলেন যে অবজ্ঞামূলক আচরণ কতটুকু ছিল তাদের মাঝে। যেমন : এমন ভাব করা যেন অন্য মানুষটি কিছু বোঝে না, অন্য মানুষটিকে দিয়ে কিছু হবে না। এমন ভাব-ভঙ্গি করা, কথা বলার সময় এমনভাবে চোখ ঘুরানো যেন অন্য মানুষটির কথার কোনো মূল্যই নেই–এসব অবজ্ঞামূলক আচরণ তিনি খেয়াল করছিলেন। এবং মাত্র ১৫ মিনিটের কথাবার্তার ভিডিও রেকর্ড করে তিনি সিংহভাগ সঠিক ধারণা করতে পেরেছিলেন কাদের বিয়ে টিকবে না।

ব্যাপারটা খালি বিয়ের জন্য নয়। দুটো মানুষের মধ্যে সম্পর্ক কতটা গভীর হবে সেটা নির্ভর করে তারা কতটা কম অবজ্ঞামূলক আচরণ একে অন্যের প্রতি করে। অর্থাৎ, সম্পর্ক গভীর করতে হলে একে অন্যের ব্যক্তিত্ব, কাজ এবং কথার প্রতি সম্মানসূচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখাতে হবে। না হলে খুব একটা ইতিবাচক সম্পর্কে আশা করা যাবে না।

*

জুনিয়রের সামনে কমিউনিকেশন

কমিউনিকেশনের একদম বেসিক দুটো ব্যাপার হচ্ছে, প্রশংসা করলে সবার সামনে করুন। এবং সমালোচনা থাকলে একান্ত ব্যক্তিগতভাবে গিয়ে ওয়ান টু-ওয়ান বলুন।

তার মানে ব্যক্তিগত সমালোচনাগুলো মানুষের সামনে করবেন না। বিশেষ করে জুনিয়রদের সামনে কাউকে অপদস্ত করবেন না। কারণ, এতে তার। সম্মান এবং অথরিটিতে বেশ আঘাত লাগে। জুনিয়র এমপ্লয়িদের সামনে তাদের বসকে ঝাড়লে পুরো টিমের মানসিকতাই ড্যামেজ হয়ে যায়। তাই, সমালোচনা কীভাবে করছেন সেটার উপর টিমের মোরাল এবং উপদেশের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি নির্ভর করে।

*

ম্যাজিক মিথ্যা জেনেও কেন মজা লাগে?

ছোটবেলায় ম্যাজিক দেখে আমি অনেক অবাক হতাম। কিন্তু, যেই পরিমাণে অবাক হতাম; বড় হয়ে ঠিক সেই পরিমাণেই হতাশ হয়েছিলাম যখন আমি ম্যাজিকের কারসাজিগুলো জানতে পেরেছি। এখন কাউকে ম্যাজিক করতে দেখলে মনে মনে জানি যে, এটাতে নিশ্চয়ই কোনো কৌশল আছে! লোকটার কোনো অলৌকিক পাওয়ার আসলে নেই। তবুও যতক্ষণ আসল কৌশলটা অজানা থাকে, ততক্ষণ ঠিকই উপভোগ করি। একইভাবে আরও অনেক কিছু আমরা ভেতরে ভেতরে ঠিকভাবে জানলেও উপরে উপরে আমরা পারফর্মেন্সটা কিংবা অভিনয়টা দেখতে চাই।

এটা নিয়েই একটা হ্যাক এখানে শেয়ার করি। মানুষ নিজের কষ্টের কথা সবাইকে বলতে চায়, শেয়ার করতে চায়। মানুষ আসলে চায় যে অন্যরা তাদের প্রতি সমবেদনা অনুভব করুক। আর এখানে আসল ব্যাপার হচ্ছে তারা একটু সহানুভূতি চায় এবং মনের কথাগুলো শেয়ার করতে চায়। তারা শ্রোতা চায় আসলে। কিন্তু, অনেক সময় কষ্টের কথা শেয়ার করতে গেলে অপর পাশের মানুষটি সমস্যার সমাধান দেয়ার চেষ্টা করে। অবশ্যই সমাধান দেয়ার উদ্দেশ্যটা মহৎ। কিন্তু, সাথে সাথে সমাধানের কথা শুরু না করে আপনি যদি খালি মন দিয়ে শুনেন, তাহলে মানস আরও অনেক বেশি খুশি হয়।

খেয়াল করে দেখেন একটা জিনিস। আপনি ২ সেকেন্ড শুনে যেই সমাধানটা দিচ্ছেন, সেটা কি ওই মানুষটা ২ মাস চিন্তা করে বের করতে পারেনি? অবশ্যই পেরেছে। সে সমাধান জানে। কিন্তু, সে খালি আপনার কাছে একটু ভেন্ট করতে চাচ্ছে, কথা বলে হালকা হতে চাচ্ছে। এবং এটাই হচ্ছে অনেক মানুষের স্বভাব।

মানুষ অনেক সময় সমাধান জানলেও, সমস্যা নিয়ে কথা বলতে চায়। কারণ, তারা সমাধান নয়, শ্রোতা চায়।

*

বার্তাবাহক

আমি বলি, আপনি বলেন আর অন্য কেউ বলুক, দুই যোগ দুই সব সময়ই চার হবে। এটা কে বলছে, তাতে কিছুই যায় আসে না। অর্থাৎ, আমাদের কথার সত্যতার সাথে আমাদের পরিচয়ের আসলে কোনো সম্পর্ক নেই।

কিন্তু, তবুও আমরা একটা সম্পর্ক তৈরি করে ফেলি। আমাদের সাইকোলজি বার্তার সাথে বার্তাবাহককে যুক্ত করে ফেলে। উদাহরণ দেই।

সিমেন্টের বিজ্ঞাপনে কন্ট্রাকশন সাইটে অভিনেতাকে একটা হলুদ হেলমেট আর সেফটি ভেস্ট পরিয়ে স্ক্রিপ্ট পড়ানো হবে যে, তমুক সিমেন্ট সেরা সিমেন্ট! আমি, আপনি সবাই জানি যে অভিনেতা ইঞ্জিনিয়ার না। কিন্তু, মানুষ সিমেন্টের কথা শুনতে চায় ইঞ্জিনিয়ারের মত দেখতে একজন মানুষের কাছে। একইভাবে বাচ্চাদের মিল্ক পাউডারের বিজ্ঞাপনে মডেল যেই হোক না কেন, একটা ডাক্তারের অ্যাপ্রন পরে পণ্যের গুনগান করলে আমরা শুনি। বাচ্চাদের বিজ্ঞাপনে মডেলদের সাধারণত শাড়ি পরানো হয়, কারণ মা হিসেবে মানুষ শাড়ি পরা একজন নারীকে বিজ্ঞাপনে দেখতে অভ্যস্ত। তাই ব্যাপারটা খেয়াল করেছেন? কোনো কথার সত্যতার চেয়ে আমরা বেশি। গুরুত্ব দেই যে কে কথাটা আমাদেরকে বলছে। কোনো সেলেব্রিটি যিনি নিজে যেই পণ্য কখনও ব্যবহার করেননি, সেই পণ্যের কথা বললেও মানুষ পণ্যটা কিনবে।

এটা আমাদের সীমাবদ্ধতা। কিন্তু, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমরা আসলেও মানুষকে কিছু বলতে চাই; তাহলে কী বলছি সেটার চেয়েও বশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে বিষয়টা কাকে দিয়ে বলাচ্ছি।

*

কাজের কথায় কমিউনিকেশন

কিছু মানুষের সাথে কথা বললেই তারা কাজ ধরিয়ে দেয়। এমন মানুষের কাছ থেকে সবাই লুকিয়ে থাকতে চায়। এখন প্রশ্ন হলো, আপনি কি ওই মানুষটা, যার সাথে কথা বললেই কাজ ধরিয়ে দেয়?

খেয়াল করে দেখুন একটু। নিজেকে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আপনার আশপাশের মানুষের সাথে শেষ দশবার যেই কথা হয়েছে, তার মধ্যে কয়বার আপনি কাজ নিয়ে কথা বলেছেন?

আমি এটা বলছি না যে, কাজের সময় কাজ নিয়ে কথা না বলে আড্ডা দেবেন। মোটেও এটা বলছি না। কিন্তু, কাজের বাইরে দেখা হলেও যদি কাজ নিয়ে কথা বলেন, তাহলে কিন্তু বিপদ। কারণ, আপনি চাচ্ছেন কাজ নিয়ে এগোতে। কিন্তু, অন্যরা কাজের কথা না শুনতে চেয়ে যদি আপনার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ায়, তাহলে কাজ তো আরও গোল্লায় যাবে। তাই, নিজের ক্ষেত্রেই একটু নজর রাখবেন যেন আপনি মানুষকে এতটা বিরক্ত না করে ফেলেন যে তারা আপনার সাথে লুকোচুরি খেলা শুরু করে!

*

লাভের চেয়ে বেশি ক্ষতি

মানুষের একটা সহজাত প্রবৃত্তি হলো, একই পরিমাণ লাভের চেয়ে লোকসানকে সে বেশি ভয় পায়।

বইটি পড়ে রিভিউ করলে আজই ১০০ টাকা জিততে পারেন! বইটি পড়ে রিভিউ না করলে আজই ১০০ টাকা খোয়াতে পারেন!

উপরের দুটো অপশনের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ দ্বিতীয় অপশনের দ্বারা বেশি প্রভাবিত হবেন। এমন অনেক সার্ভে করা হয়েছে। একটা উদাহরণ। দিয়ে বলি।

একটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলা হয়েছে যে, জিতলে ৫০ টাকা পাবেন, হারলে ৫০ টাকা দিবেন। সমান সমান জেতা হারার ব্যাপার থাকলেও মানুষ রিস্ক নিতে চায় না বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। তাই তারা চ্যালেঞ্জটা করে না। এমনকি জিতলে ৮০ টাকা আসবে, হারলে ৫০ টাকা যাবে–এমন অবস্থাতেও অনেকে চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করেন না। এর মানে হচ্ছে মানুষকে লাভের চেয়ে ক্ষতির কথা বলে বেশি প্রভাবিত করা যায়। এটাকে সাইকোলজির ভাষায়। বলে লস অ্যাভারশন প্রিন্সিপল (Loss Aversion Principle)।

তাই, অনেক বিজ্ঞাপনে দেখবেন লাভের কথা না বলে ক্ষতির কথা বলে মানুষকে কিনতে প্রভাবিত করা হয়। যেমন :

তমুক ব্র্যান্ডের আটা খেয়ে শরীরকে রাখুন ইয়াং! না বলে হয়তোবা বিজ্ঞাপনে বলা হবে, বিভিন্ন বার্ধক্য রোগ থেকে নিজেকে বাঁচাতে তমুক ব্র্যান্ডের আটা খান!

আমাদের টুথপেস্ট ব্যবহার করলে আপনার দাঁত সুন্দর থাকবে। না বলে হয়তোবা বলবে, আমাদের টুথপেস্ট ব্যবহার না করলে আপনার দাঁতে হবে ক্যাভিটি!

*

কীভাবে স্যরি বলবেন

আমাদের মা একটা কথা বলেন, খালি চামড়ার মুখ দিয়ে বললেই স্যরি হয়ে যায় না।

একদম সত্য। আসলে স্যরি যতটা না বলার জিনিস, তার চেয়ে বেশি করে দেখানোর ব্যাপার। এজন্য বলা হয় যে, মুখে স্যরি আসল স্যরি না, অপরাধবোধ থেকে একই ভুল রিপিট না করাটাই আসল স্যরি।

স্যরি বলতে অনেকে লজ্জা পান। কিন্তু আসল সত্য হল, নিজের ইগোটাকে সাইডে রেখে যারা স্যরি বলতে পারে, তারাই অতীতকে পেছনে ফেলে সামনে এগোতে পারে। মুহূর্তের সংকোচ যেন সারাজীবনের বোঝা না হয় আমাদের। এখন কিছু ব্যাপার স্যরি বলার সময় একটু ঠিক রাখা দরকার।

১. স্যরি বললে সরাসরি বলেন। ফোনের মাধ্যমে স্যরি বলাটা খুব একটা গ্রহণযোগ্য হয় না (যদি না সামনাসামনি দেখা করাটা অনেক কঠিন হয়ে যায়)।

২. কেন দুঃখ প্রকাশ করছেন, সেই কারণটা জ্ঞাপন করলে খুবই ভালো হয়। নিচের কোনটা বললে ভালো সেটা আপনারা পড়লেই বুঝতে পারবেন।

অপশন ১ অপশন ২
আমি স্যরি। আমার না জানিয়ে বইটা নেয়া উচিত হয়নি। বইটা হঠাৎ না বলে নিয়ে গিয়ে তোমাকে চিন্তায় ফেলে দিতে আমি চাইনি। আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। আমি স্যরি। সামনে থেকে আমার দরকার পড়লে জিজ্ঞাসা না করে কখনই নেব না।

৩) আসলেই অপরাধবোধ থাকলে স্যরি বলেন। অপরাধবোধ ছাড়া স্যরি বললে কিন্তু মানুষ ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পারে সেটা আপনি যতই

৪) সুন্দর করে বলেন না কেন। a অন্যের ভুলের বোঝা নিজের উপর নিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিজেকে ছোট করবেন না।

*

নিজের ভ্যালু কমে যায়

একটা চাকরি মেলাতে (Job Fair) কারা যায়? যারা চাকরি চায় তারা নিশ্চয়ই। এখন এই জায়গায় সবাই চাকরি চাইতে গিয়েছে কিন্তু চাকরি অফার করছে মাত্র কয়েকজন। এমন জায়গায় আপনি যদি চাকরি খুঁজতে যান, তাহলে আপনাকে আরও অনেকের দলে মিশিয়ে ফেলা হবে। আপনি হয়ে যাবেন অনেকের মধ্যে আরেকজন। এর চেয়ে, যেখানে ভিড় কম, সেখানে মানুষকে ভদ্র এবং পেশাদারভাবে অ্যাপ্রোচ করুন। ফেসবুকে যেখানে সবাই ব্যক্তিগত জীবনের প্যাচাল শেয়ার করে বারোটা বাজিয়ে। রেখেছে, সেখানে আপনি একদম পেশাদার কাজগুলো শেয়ার করে সম্ভাব্য চাকরিদাতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করুন।

বক্তৃতার পর সবাই যখন সেলফির জন্য আর নাম্বারের জন্য ভিড় করছে, তখন বক্তার কাছে যাবেন না। বক্তার জন্য যে ক্রেস্টটা আছে, কিংবা বক্তা যদি কোনো জিনিস নিজের সাথে এনে থাকেন, সেটা নিয়ে তাকে গাড়িতে পর্যন্ত এগিয়ে দিন। গাড়িতে উঠার সময় যখন আশপাশে কেউ থাকবে না, তখন আপনার কথা বলুন।

শিক্ষা হলে, ভিড়ের মধ্যে কথা বলে নিজের গুরুত্ব না কমিয়ে, এমন সিচুয়েশন তৈরি করেন যেখানে আপনি একান্তভাবে মনোযোগ পাবেন।

*

দুপুর ১২টা নাকি রাত ১২টা?

Send the file over by 12PM

কয়টার সময় ফাইলটা পাঠাতে হবে? দুপুর ১২টা? নাকি রাত ১২টা? আপনি হয়তোবা জানেন যে 12PM মানে দুপুর ১২টা। কিন্তু, আপনি জানলেই তো খালি হবে না। অন্য মানুষটি যদি দুপুর ১২টায় না পাঠিয়ে রাত ১২টায় ফাইল পাঠায়? তাহলে তো পুরো একটা দিন গ্যাপ হয়ে যাবে।

তাই, অন্য পাশের মানুষটি বুঝতে পারবে এই অনুমান বাদ দিয়ে একদম ভেঙ্গে বলাটাই সবচেয়ে ভালো। তাহলে কীভাবে বলা যায়?

উদাহরণ ১ : Send the file over by 11 :59AM in the early hour.

উদাহরণ ২ : Send the file over by 12PM noon.

উদাহরণ ৩ : বেলা ১২০০ ঘটিকার মধ্যে ফাইলটি পাঠিয়ে দিয়েন।

*

কাজটা কেন জরুরি

মানুষকে যখন কাজ দেবেন, সমস্যা না হলে পারলে তাদেরকে একটু বলে দিবেন যে কাজটা কিসের জন্য। এটা খুবই সহজ শোনালেও এর গুরুত্ব কতটা বেশি তা সাইমন সিনেক (Simon Sinek) এর একটা টেড টকে বুঝতে পেরেছিলাম। তিনি একটা ছোট্ট উদাহরণ দিয়েছিলেন।

মনে করেন, আপনাকে রুমের এক কোণায় দাঁড় করানো হল। এখন বলা হল সোজা হাঁটেন। আপনি সোজা হাঁটা শুরু করলেন। মাঝপথে আপনার। সামনে একটা বক্স বসিয়ে দেয়া হল। আপনি হয়তোবা দাঁড়িয়ে থাকবেন, কারণ আপনাকে সোজা হাঁটতে বলা হয়েছে।

এখন মনে করেন, সোজা হাঁটতে না বলে আপনাকে বলা হল, রুমের অপর কোণায় চলে যান। এবারও আপনি কোণাকোণি হাঁটা শুরু করলেন। কিন্তু, এবার পথের মাঝে যখন বক্স বসানো হলো, তখন আপনি পাশ দিয়ে হেঁটে কোণায় পৌঁছে গেলেন। কারণ, এবার আপনাকে কাজের শেষে কী হবে তার। পরিষ্কার ধারণা দেয়া ছিল। প্রোগ্রামিং-এর ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো আরও জোরালোভাবে চোখে পড়ে।

মূল বিষয় হল, মানুষকে কাজের উদ্দেশ্য বললে তারা নিজেদের থেকে কাজটা সমাধান করার সুযোগটা পায়। আপনি হয়তোবা কাউকে বললেন, দোকান থেকে একটা কাঁচি আনো। কাঁচি না পেলে সে শূন্যহাতে ফেরত আসবে। আপনি যদি বরং বলেন, আমাকে এই কাগজগুলো কেটে দাও তো। তাহলে কাচি না পেলেও সে বসে থাকবে না। হয়তোবা ব্লেড কিংবা আন্টিকাটার নিয়ে এসে কাজটা সেরে ফেলবে।

*

অবচেতন মনে কমিউনিকেশন

মানসিকতা গড়ার জন্য এই যুগে অনেক ট্রেইনিং প্রোগ্রাম আছে। অনেক ট্রেইনিং-এ ইতিবাচক মানসিকতা ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি করার জন্য কিছু স্ট্র্যাটিজিক শব্দ ব্যবহার করা হয়।

যেমন : ফিটনেস গোল সেট করার সময়, ৫ কেজি ওজন লুস করবো। না বলে ৫ কেজি ওজন ঝেড়ে ফেলবো বলা হয়। এখন আপনি বলতে পারেন, লুস করবো আর ঝেড়ে ফেলবো– এই দুটোর মধ্যে এমন কী তফাত? অনেক!

এবং তফাতটা বাহ্যিক নয়। তফাতটা অবচেতন মনে। আপনি যখন কোনো জিনিস লুস করেন, তখন আপনি কী করেন? হারিয়ে যাওয়া জিনিসটা খুঁজেন। আমাদের অবচেতন মনে প্রোগ্রাম করা আছে যে আমরা যখন কোনো জিনিস লুস করি, সাথে সাথে যেন সেটা আমরা খোঁজা শুরু করি। আপনি মুখে বলছেন, ওয়েইট লুস করবো। কিন্তু পেছনে আপনার অবচেতন মন (Subconscious Mind) সেটা আবার ফেরত আনার ফন্দি করছে! এমন অনেককেই দেখবেন কয়েকদিন সেই ব্যায়াম করে ওজন কমিয়ে আবার সেই মিষ্টিকুমড়ো হয়ে বসে আছে (কিংবা সোফায় শুয়ে আছে!) শব্দের প্রভাব অবচেতন মনে অনেক বেশি। এমনই আরেকটা উদাহরণ দেই।

শিক্ষকদের ট্রেইনিং নেওয়া উচিত যেন তারা কখনও এমনটা না বলেন যে, তমুক স্টুডেন্টটা অলস। বরং বলা উচিত, তমুক স্টুডেন্টটা এখনও বিষয়টাতে আগ্রহী না কিংবা মোটিভেটেড না। পার্থক্য কী?

আপনি যখন কাউকে অলস বলছেন, তখন আপনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন যে মানুষটা এমনই। এখানে আর করার কিছু নেই। কিন্তু, আপনি যদি বলেন যে কোনো স্টুডেন্ট এখনও বিষয়টাতে আগ্রহী হয়নি; তাহলে তাকে উৎসাহ পেয়ার, কিংবা নতুনভাবে শেখানোর অনেক কিছু করার আছে। অলস বলে আমরা উপসংহার টেনে হাল ছেড়ে দেই। অন্যদিকে, অনাগ্রহী বললে শেখানোর কায়দায় উন্নতি করার উদ্যোগ নেই আমরা।

আপনার হয়তোবা মনে হচ্ছে শব্দ দিয়ে আর কীই বা হবে। কিন্তু আমাদের চিন্তা-ভাবনার জগত এই শব্দগুলো দিয়েই তৈরি। চিন্তার বিল্ডিং ব্লক শব্দ-কে যদি আমরা সঠিকভাবে নিজের মাইন্ড প্রোগ্রামিং করতে ব্যবহার না করতে পারি তাহলে আমরা আমাদের অজান্তেই অদৃশ্য মানসিক কারাগারে আটকে থাকবো।

শেষে আমার প্রিয় একটা উদাহরণ দিচ্ছি। এটা আমার মানসিকতায় অনেক বড় পরিবর্তন এনে দিয়েছে। উক্তিটা রবার্ট কিয়োসাকির রিচ ড্যাড, পুওর ড্যাড বই থেকে নেয়া।

সাধ্যের বাইরে কোনো জিনিস দেখলে অসচ্ছল মাইন্ড বলে– এটা অর্জন করার সামর্থ্য আমার নেই। আর অন্যদিক সচ্ছল মাইন্ড নিজেকে প্রশ্ন করে। আমি কীভাবে এটা অর্জন করার সামর্থ্য তৈরি করতে পারি?

*

শুনতে ঠিক, আসলেই ঠিক

আপনি যদি আপনার কমিউনিকেশন এবং চিন্তায় আরও বেশি যৌক্তিক হতে চান, তাহলে নিচের প্রশ্নটি সবসময় আপনার মাথায় রাখবেন যখনই আপনার সামনে নতুন কোনো তথ্য আসবে।

কেবলমাত্র আমার পূর্ব ধারণার সাথে নতুন কথাটা মিলে যাচ্ছে জন্যই কি কথাটা সঠিক মনে হচ্ছে নাকি কথাটা আসলেও যৌক্তিকভাবে সঠিক?

কোনো একটা তথ্য সত্য হওয়ার সাথে আমাদের মতের সাথে মিল থাকার কোনো সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ, আমাদের পূর্ব ধারণার সাথে মিললেই যেন আমরা কোনো তথ্য গ্রহণ করে না নেই আর পূর্বধারণার সাথে সাংঘর্ষিক হলেই যে এড়িয়ে যাবো, এমন যেন না হয়।

*

চোখে চোখে কমিউনিকেশন

মানুষের সাথে কথা বলার সময় তাদের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন। তাই বলে পুরোটা সময় পেঁচার মত তাকিয়ে থাকতে হবে এমন না। কিছুক্ষণ। পরপর একটু আই কন্ট্যাক্ট করুন; চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন। আরও সহজ অভ্যাস করতে হলে, হয় খালি ডান চোখের দিকে, অথবা খালি বাম। চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন।

এমন অনেকে আছে যারা অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে কথাই বলতে পারে না। এতে সমস্যা কী?

১. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে আমাদের কমিউনিকেশনের মাত্র ২০/৩০% হচ্ছে আমরা কথায় যা বলছি। বাকিটা মুখের ভাবভঙ্গি এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজে থাকে। আপনার যদি মানুষের দিকে তাকিয়ে কথা। বলার অভ্যাস না থাকে, তাহলে আপনি অনেক ইশারা মিস করে। যাবেন। একটা উদাহরণ দেই। এমন বিরক্তিকর অবস্থায় পড়েছেন না, যেখানে আপনার তাড়া আছে, কিন্তু কেউ আপনাকে আটকে তার বাচ্চা কেন ঢ্যাঁড়স খায় না–এই গল্প শোনাচ্ছে। আপনি হয়তোবা মুখের অভিব্যক্তি ও শরীরের চঞ্চলতা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, ভাই আমাকে ছেড়ে দেন! আমাকে দৌড়াতে হবে এখন! কিন্তু, তারা আপনার অভিব্যক্তি না বুঝে আপনাকে চূড়ান্ত বিরক্ত করছে। এমন মানুষকে কেউই পছন্দ করে না। তাই, আপনি যেন এমন না হয়ে যান, তাই অন্য মানুষটার দিকে কথা বলার সময় খেয়াল রাখবেন।

২. অনেকে ভাবতে পারে আপনি তাদেরকে ইগনোর করছেন।

৩. মানুষ আপনাকে গম্ভীর বা অহংকারী ভাবতে পারে যে, আপনার এতই ভাব যে আপনি তাকানই না।

তাছাড়া, চোখ হচ্ছে মনের আয়না। চোখ এমন অনেক কিছু বলে যেটা শব্দে কখনই আসে না। মানুষ চোখের দিকে তাকিয়ে অনেক সময় মিথ্যা বলতে পারে না। তাই, কেবল রোম্যান্টিক কথাবার্তার জন্য নয়; ইমোশনাল কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কমিউনিকেশনের জন্যও আই কন্ট্যাক্ট করাটা খুবই জরুরি। মুখের দিকে না তাকিয়ে কথা বলা আর চোখ বন্ধ করে মিস্টার বিনের কমেডি দেখা একই জিনিস!

*

যেই কথাগুলো না বললেও চলে

অনেকে নিজেরাই জানে যে তারা অনেক বেশি কথা বলে। কিংবা অহেতুক কথা বেশি বলে। কিংবা এমন কথা বলে যেটা অন্যদের মুডটাই খারাপ করে দেয়। যেটাকে এখন ব্যাডবাজ (BadBuzz) বলে। এক্ষেত্রে একটা সিম্পল হ্যাক অনুশীলন করার অভ্যাস গড়ে তুললেই আপনার কথা অনেক নিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে।

হ্যাকটা হল : আমি এখন যেই কথাটা বলতে যাচ্ছি, সেটা কি পৃথিবীতে দুঃখের পরিমাণ বাড়াবে?

অথবা, আমি এখন যেই কথাটা বলতে যাচ্ছি, সেটাতে কি পৃথিবী কিছু বদলাবে?

রাস্তার পাশে আজকে দেখলাম একটা পাপি মরে পড়ে আছে–এটা বললে যাকে কথাটা বলছেন, তার শুনে খারাপ লাগবে। এক আপনার খালি কষ্ট লাগছিল, এখন আরেকজনের কষ্ট লাগছে। আপনার শেয়ার করার কারণে কি কিছু বদলাবে? পাপি মারা গেছে তো গেছে। হয়তোবা কেউ ওটাকে সরিয়ে ফেলেছে। কথাগুলো বলে কি কোনো দংখা বাড়ানোর দরকার আছে?

অবশ্য হ্যাঁ, এই কথা শেয়ার করে যদি পশুর প্রতি সচেতনতা বাড়াতে চান। কিংবা কেবল মনের বোঝা হালকা করতে চান তাহলে করতে পারেন। কিন্তু এমন কিছু জিনিস যেগুলো বলার কোনো ইতিবাচক দিকই নেই, সেগুলো আমরা কেন বলতে যাবো?

*

শেয়ার করার মানুষ

আপনার জীবনে কি এমন কেউ আছেন, যার সাথে আপনি সবকিছু শেয়ার করতে পারেন? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে খুবই ভালো। কারণ, একটি দীর্ঘ সুন্দর জীবনের জন্য ঘনিষ্ঠ কিছু মানুষের সাথে আপনার জীবনের চলার পথের গল্পগুলো ভাগাভাগি করে নেওয়াটা খুবই জরুরি।

কিন্তু, শেয়ার করার মানুষ না থাকলে একটু চেষ্টা করে দেখুন কারও সাথে কথা বলা যায় নাকি। কারণ, নিজের কথাগুলো কারও সাথে শেয়ার না করতে পারলে নিজেকে অনেক বিচ্ছিন্ন মনে হয়। সেখান থেকে অনেকে হয়তোবা ডিপ্রেশনে চলে যায়। সুইসাইড করে এমন অনেক মানুষেরই কাছের মানুষও জানে না যে মানুষটা কিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। কেন? কারণ, শেয়ার করার মত পরিবেশ ছিল না।

এখন প্রশ্ন হলো মানুষ কেন কথা শেয়ার করে না?

একটা কারণ হতে পারে শেয়ার করার মতো গ্রহণযোগ্য কোনো মানুষ নেই। কিংবা শেয়ার করলে সেই কথা অন্যজনের কানে লাগিয়ে বিপদ তৈরি হতে পারে। অথবা, শেয়ার করলে সেটা নিয়ে অনেকে আপনাকে জাজ করে বসবে, অর্থাৎ আপনাকে নিচু চোখে দেখা শুরু করবে। এমন অবস্থায় কী করা যায়?

১. একদম শুরুতে, ছোটখাটো জিনিস শেয়ার করুন। যেমন : কোনো একটা মুভি দেখার কথা, কিংবা আবহাওয়ার কথা। ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হবে এমন না। কেবল, কথা বলা শুরু করেন মানুষের সাথে।

২. আপনি ছদ্মনামে অনলাইনে আপনার আইডিয়া অনুভূতিগুলো শেয়ার করুন যদি একান্তভাবে মানুষের সাথে কথা বলার সুযোগ না থাকে।

৩. মানুষকে বলতে না পারলে কিংবা অনলাইনেও যেতে না পারলে, অন্তত কাগজে লিখে রাখুন নিজের কথাগুলো।

যেভাবেই হোক, মানুষের সাথে কমিউনিকেশন আপনাকে বাড়াতে হবে। অন্যের জন্য না, অন্তত খালি নিজের জন্য। সবথেকে ভালো হবে যদি আপনার কাছে শেয়ার করাটা চ্যালেঞ্জিং মনে হয়, তাহলে অভিজ্ঞ সাইক্রিয়াট্রিস্টের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করুন।

*

ঠাট্টা করে কমিউনিকেশন

সবথেকে ভালো গল্প তারা বলতে পারে যারা মানুষকে হাসাতে পারে, কিংবা কাঁদাতে পারে। ভালো কথা।

কিন্তু, অনেকে নিজেদের কৌতুকে এতটাই আত্মবিশ্বাসী যে, তাদের শো-এর টিকেট কাটেনি, এমন মানুষকেও তাদের স্ট্যান্ড-আপ জোকস শোনাতে থাকে। এখানে কিছু বিষয় আছে।

সব কিছুর একটা জায়গা আছে যেটা ইদানীং কিছু মানুষের কাণ্ডজ্ঞানের সৌরজগতের মধ্যে নেই। সেলফি তুলবি তো তোল। আইসিইউ কি বাদ রাখা যেত না? কিংবা কবরস্থান!

আপনি খুশি থাকতেই পারেন। কিন্তু, সবাই তো আর সব সময় খুশিমনে। আপনার দিলখুশ টোটকা শুনতে চায় না।

সিনিয়র মানুষজন যদি দেখে যে আপনি তাদের সামনে ইচ্ছামত হাসিঠাট্টা করে যাচ্ছেন, তাহলে তারা ভাবতে পারে যে আপনার বিচার-বুদ্ধি একটু কম। কিংবা ভাবতে পারে আপনি একদম ড্যাম-কেয়ার। হাসি-ঠাট্টা করুন অসুবিধা নাই, কিন্তু সবাইকে আপনার অডিয়েন্স ভাববেন না।

*

রঙের কমিউনিকেশন

কর্পোরেট দুনিয়ায় রঙ দিয়ে অনেক ব্র্যান্ডিং হয়। বাংলাদেশের চারটি টেলিকম কোম্পানির কিন্তু নির্দিষ্ট রঙ আছে যেগুলো তারা তাদের বিজ্ঞাপনে, মডেলদের পোশাকে সব জায়গায় ব্যবহার করে।

আমরা তো ভিডিও নির্মাণের জগতে বেশ কয়েক বছর ধরে আছি। এখানে আপনি এক ব্র্যান্ডের কন্টেন্টে অন্য ব্র্যান্ডের রঙ দিয়েছেন তো ঝাডি খেয়েছেন! এবং রঙ কিন্তু খালি ব্র্যান্ডিং নয়, রঙের মাধ্যমে অনেক ইমোশনও। প্রকাশ হয়ে যায়। একটা উদাহরণ দেই।

সাধারণত খাতা চেক করার সময় শিক্ষকরা লাল কালি দিয়ে কাটেন। এখন লাল কালি দিয়ে কাটা-কাটি করতে করতে লাল কালির মাধ্যমে বাচ্চাদের অবচেতন মনে একটা আশংকা হয়। তাই, কিছু বাইরের দেশের কিছু পাঠশালায় লাল কালি বদলে বেগুনি কিংবা নীল কালি দিয়ে খাতা চেক করা হয় যাতে বাচ্চাদের ফিডব্যাক দেয়ার সময় অবচেতনভাবে তাদেরকে আশঙ্কিত না করে ফেলা হয়।

তাই, রঙের মাধ্যমে আমাদের ইমোশনকে প্রভাবিত করা যায়। এখানে একটা প্রচলন আছে যে, কমলা রঙ তারুণ্যকে প্রকাশ করে, বেগুনি রঙ আভিজাত্যকে প্রকাশ করে ইত্যাদি। আসলে ব্যাপারটা কালচারের উপর অনেকটা নির্ভর করে।

*

বিরক্তিকর কমিউনিকেশন

আপনি কী বলছেন সেটার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে আপনি কোন পরিবেশে কথাটা বলছেন। আপনি দুনিয়ার সেরা স্পিচটাই তৈরি করেন আনেন না। এরপর মানুষকে বলা শুরু করেন। প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে দৌড়াচ্ছে। এমন কাউকে থামিয়ে আপনার মহামূল্যবান স্পিচ শোনাতে যান, দেখেন কী হয়? রাখেন আপনার স্পিচ, আমাকে যাইতে দেন আগে!

আরেকটা উদাহরণ দেই। কোন লেকচার সবথেকে বিরক্তিকর বলেন তো! কেউ হয়তোবা বলবে ক্যালকুলাস, কেউ বলবে জিওগ্রাফি আর কেউ বলবে ফিন্যান্স! যে যাই বিরক্তিকর ভাবুক না কেন, একটা লেকচার সবার জন্যই বিরক্তিকর। আর সেটা হচ্ছে ক্লাসের ঘণ্টা পড়ার পরও চলমান লেকচার। যদি না অসাধারণ কোনো শিক্ষক লেকচারটা দেন, ঘণ্টা পড়ার পর আর কারও কিন্তু শুনতে ইচ্ছা করে না, সেটা যতই গুরুত্বপূর্ণ কথা হোক না কেন।

তাই, খেয়াল রাখুন আপনি যেন বিরক্তিকর সময় কমিউনিকেশন না করেন। লাঞ্চের পর পেটে গরম গরম ভাত থাকলে ঘুম ঘুম ভাব চলে আসে। ঠিক তখন যদি আপনি ব্রেইনস্ট্ররমিং (Brain Storming) মিটিং রাখেন, তাহলে মানুষজন চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে যাবে!

*

দৈনন্দিন কমিউনিকেশন কোথায় শিখবো

বিজ্ঞাপন থেকে! হ্যাঁ! বিজ্ঞাপন থেকে কমিউনিকেশন শেখার অনেক কিছ আছে। বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য প্রতি সেকেন্ডে হাজারেরও বেশি গুনতে হয়। তাই কত কম সময়ে মানুষের নজর আকড়ে ধরে সম্পূর্ণ বিজ্ঞাপনের গল্প এবং অফার ফুটিয়ে তোলা যায়, সেটা নিয়ে বিজ্ঞাপন নির্মাতারা এবং অ্যাড এজেন্সিগুলো অনেক পরিশ্রম করে। তাই, বিজ্ঞাপন খুবই ভালো উদাহরণ যে আপনার কথা কত কম সময়ে কত ভালোভাবে মানুষকে বোঝানো যায়। বিজ্ঞাপন থেকে কয়েকটা লেসন এখানে শেয়ার করলাম যেন বিজ্ঞাপন থেকে শিখতে আপনি আরও বেশি আগ্রহী হন।

১. আপনার ইউটিউবে বিজ্ঞাপন দিলে প্রথম কয়েক সেকেন্ড পর মানুষ বিজ্ঞাপনটি স্কিপ করে যেতে পারে। তাই, ৩০ সেকেন্ডের অ্যাড বানালেও, প্রথম কয়েক সেকেন্ডে এমন আকর্ষণীয় জিনিস দেখাতে হয় যেন মানুষ ওই অংশের কারণ পুরোটা বিজ্ঞাপনই দেখে ফেলে।

২. বিজ্ঞাপনে মডেলদের পোশাক খেয়াল করবেন। মডেলদের পোশাকের রঙের সাথে ব্র্যান্ডের রঙ কিন্তু অধিকাংশ সময়ে মেলানো হয়।

৩. বিজ্ঞাপন মানুষ বেশি মনে রাখে যখন সেখানে জিঙ্গেল থাকে। তাই সুর করা ছন্দময় কথা বিজ্ঞাপনে রাখলে বেশি ভালো হয়।

৪. বাচ্চাদের খাবারের বিজ্ঞাপনে মা চরিত্র দেখানো হয়, রডের বিজ্ঞাপনে সেফটি হেলমেট পরা ইঞ্জিনিয়ার দেখানো হয়, এনার্জি ড্রিঙ্কের বিজ্ঞাপনে তারুণ্য দেখানো হয়–এসব চিন্তাভাবনা করে করা হয় যাতে পণ্যগুলো মানুষ আরও সহজে গ্রহণ করে নিতে পারে।

বলতে থাকলে পুরো বই লিখে ফেলা যাবে। আপনি যদি আসলেই এই বিষয়ে আগ্রহী হন তাহলে Ogilvy on Advertising বইটা পড়তে পারেন। মানুষের সাইকোলজি, কীভাবে মেসেজ দিতে হয়, কোন ধরনের বিজ্ঞাপন। বেশি কাজ করে–এসব নিয়ে দারুণ একটা বই। সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে আপনি বিভিন্ন ট্রেইনিং করতে পারেন। বিভিন্ন ক্লাবে জয়েন করতে পারেন।

*

ঠিক বুঝেছি তো?

বিশেষ করা মিটিং-এর পর আপনি একবার পুরো মিটিং-এর সামারি নিজের ভাষায় বলে নিশ্চিত করবেন যে, সবাই একই জিনিস বুঝেছেন কি না।

অর্থাৎ কমিউনিকেশন রিপ্লে করবেন। ক্রিকেট কিংবা ফুটবল দেখার সময় একটা আউট আমরা কত অ্যাঙ্গেল থেকে দেখে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তর্ক করি, এই আম্পায়ারটা ওই দলের নুন খেয়েছে! খেলা দেখার সময় রিপে করার উৎসাহ থাকে। ওই একই উৎসাহ যদি কমিউনিকেশনের মধ্যে থাকতো, তাহলে কত যে ভুল-বোঝাবুঝি শুধরে যেত!

এছাড়া একটি ভুল অধিকাংশ মানুষ করে। এটা হল, মিটিং শেষ করে চলে। যায়। আসলে তখন আপনার উচিত পুরো মিটিং সামারিটা লিখে মেইল করে দিবেন। যাতে, পরে তারা আমি তো ভাবসিলাম আপনি এটা বলেছেন!– অজুহাত দিতে গেলে আপনি সরাসরি মেইল খুলে দেখাতে পারেন যে আসলে তাদের দিক থেকে গাফিলতি ছিল।

সবসময়! অন্তত নিজের জন্য হলেও, সবকিছু লিখিত রাখবেন। পেশাদার জীবনে এটার গুরুত্ব যে কত বেশি, সেটা যতক্ষণ না কেউ কথার উপর পল্টি মারছে, ততক্ষণ বুঝতে পারবেন না।

*

জাজ না করা

ইদানীং দুটো শব্দ কমিউনিকেশনে বেশ প্রচলিত। একটা হচ্ছে, Judgemental আর অন্যটা হচ্ছে, Condescending। এই দুটো যেন আপনার কমিউনিকেশনের মধ্যে না আসে।

জাজমেন্টাল বলতে আসলে কী বোঝানো হচ্ছে? আপনি কথা বলার সময় যদি কেউ আপনার সম্পর্কে না জেনে উল্টাপাল্টা আন্দাজ করতে থাকে, তাহলে সেই ব্যক্তিটি জাজমেন্টাল। আর কেউ যদি এমন ভাব নেয় যে, সে তার মহামূল্যবান সময় ব্যবহার করে আপনার সাথে কথা বলে সে আপনাকে উদ্ধার করছে, তাহলে সে কনডিসেন্ডিং টোনে কথা বলছে।

এমনভাবে কমিউনিকেট করুন যেন কোনোদিন কেউ আপনার বিরুদ্ধে এই দুটি শব্দ ব্যবহার করতে না পারে।

*

ইংলিশে ইংলিশ শেখানো

এই ব্যাপারটা দেখলে আমার মাঝে মাঝে একটু খটকা লাগে। অনেক সময় ইংলিশ টিচারদের পড়াতে দেখেছি, যারা সম্পূর্ণ লেকচারটা ইংলিশে দেন। হ্যাঁ, ইংলিশে কথা বলতে বাধ্য করলে অনেকে হয়তোবা ইংলিশ শিখবে। কিন্তু, আমার মনে একটা প্রশ্ন আসে যে, যারা ইংলিশ শিখতে যায়, তারা ইংলিশ পারে না জন্যই তো ইংলিশ শিখতে যায়। তারা

এখন ক্লাসেও যদি লেকচার দিয়ে শেখানো হয়, তাহলে তারা বুঝবে কীভাবে? এটা অনেকটা এমন যে, আপনি ফ্রেঞ্চ ভাষা জানেন না, কিন্তু ফ্রেঞ্চ টিচার আপনাকে ফ্রেঞ্চ ভাষায় ফ্রেঞ্চের শব্দাবলী শেখাচ্ছে!

তাই, মূলকথা হল যা বুঝাতে চাচ্ছেন, সেটা বুঝার আগে যদি আপনার কথা বুঝতেই সমস্যা হয়, তাহলে সেটা শিক্ষার্থীর নয়, শিক্ষকের সীমাবদ্ধতা।

*

কে বলেছে কার কথা?

যখন কোন গীবতের আসর বসে, তখন মানুষের প্রথম প্রতিক্রিয়া কী হয়?

আমিও একটু শুনি! এখানে একটা বিষয় সব সময় মনে রাখবেন, যে মানুষ অন্যের কথা আপনার কানে ঢালছে, সেই মানুষগুলো আপনার কথাও অন্যের কানে ঢালবে।

তাছাড়া গীবত শুনলে অনেকেই সেখানে তাদের নিজেদের গীবতটাও ঢেলে দেয়, আরে হ্যাঁ! ওর ক্যারেক্টার খারাপ। ওই তো সে দিনই দেখলাম যে রিক্সার হুড উঠায় কাকে নিয়ে জানি কোথায় যাচ্ছিল! এই যে শেয়ার করলেন আপনার মনের কথা, এটা সে শীতকালের গোসল করার গরম পানির পাতিলের মত সাবধানে নিয়ে আরেকজনের কানে এমনভাবে ঢালবে যেন একটা ফোঁটাও তার নিজের গায়ে না পড়ে! গীবত শুনতে যতই ইচ্ছা করুক না কেন, গীবতকারি মানুষের কাছ থেকে একশ হাত দূরে থাকবেন। মনে রাখবেন, গীবত করা এককালীন ইভেন্ট না, গীবত করা অনেকের স্বভাব।

ঠিক একই সূত্র ওই মানুষদের প্রতি প্রযোজ্য, যারা অন্যের গোপন কথা আপনাকে বলে। বলার আগে আবার বলে নিবে, তোকে বিশ্বাস করি জন্যই বলছি, কাউকে বলিস না আবার! প্রশ্ন হল এই মানুষ আপনাকে বিশ্বাস করে তো বুঝলামই। কিন্তু, সে যদি আরও দশজনকে বিশ্বাস করে তাহলে কী হবে? কী হবে বলছি। আপনার কোনো গোপন তথ্য পেলে তার আরেকজন বিশ্বস্ত মানুষের কাছে বর্ডারের গরুর মত চালান করে দিবে। একটা কথা পরিষ্কার করে রাখি। আপনি যতই বিশ্বস্ত হন না কেন, অন্য কারও গোপন তথ্য আপনার জানার কোনো অধিকার নেই। তাই, আপনাকে যত বিশ্বাস করেই কোনো সিক্রেট বলা হোক না কেন, সেই সিক্রেটটা বলা হচ্ছে আরেকজনের প্রাইভেসি নষ্ট করে।

তাই গোপন তথ্য পাচারকারী এবং গীবতকারিরা যত বিনোদনমূলক গরম গরম খবরই লেটুস পাতা দিয়ে সুন্দর থালিতে পরিবেশন করুক না। আপনি সেটা ইগ্নোর করে ডায়েট করবেন!

*

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কমিউনিকেশন

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের অন্যতম আনন্দ হচ্ছে, মনের মধ্যে যা কিছু আছে, সব কথা কোনো ফিল্টার ছাড়া শেয়ার করে দেয়া যায়। পেশাদার জীবনে যত স্ট্রেস থাকে, র‍্যান্ট কিংবা ভেন্ট করে কথাগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উগরে দিয়ে অনেকে শান্তি খুঁজেন। এখন ব্যাপার হচ্ছে, রাগ ঝাড়ছেন তো ঝাড়ছেনই অনেকে, একদম পাবলিক হাইওয়েতে তাদের ক্লায়েন্টের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করছেন। অন্যরা তো। আপনাকে দেখছেই; হয়তোবা আপনার ক্লায়েন্টও আপনার পোস্ট পড়ে জানতে পারলো যে ভেতরে ভেতরে আপনি কতটা চটেছেন!

কারও যদি ক্লায়েন্ট কিংবা অন্য কাউকে নিয়ে অনলাইনে গালমন্দ করার স্বভাব থাকে, তাহলে সেটা আপনার ক্ষেত্রেও করবে। তাই, এসব মানুষ থেকে তো একটু দূরে থাকতেই হবে; সাথে সাথে নিজের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে যে, আমি কি অনলাইনের রগচটা বাসিন্দা হয়ে যাচ্ছি কি না?

এবং খালি পাবলিকলি গালমন্দ না। অনেকে কলিগদের সাথে গ্রুপ খুলে সেখানে বসকে ইচ্ছামত আছাড় দেয়। সেটার আবার স্ক্রিনশট কেউ একজন বসকে দেখিয়ে প্রমোশন নেয়। তাই একদম রাগারাগি করে ঝাল যদি ঝাড়তেই হয়, তাহলে এমন মানুষের সাথে শেয়ার করুন যাদের সাথে। আপনার কর্মক্ষেত্রের মানুষের কোনো সংযোগ নেই।

এবং সবসময় মনে রাখবেন, ইন্টারনেটের দুনিয়ায় সবাই সবাইকে খুব। সহজেই চিনে ফেলতে পারে। তাই, কখনও এমনভাবে ধ্বংস করবেন না। যেন সেটার ধোয়া অন্য সবাইকে আপনার থেকে দূরে থাকার ইঙ্গিত দেয়।

*

কন্ট্যাক্ট দিয়ে কমিউনিকেশন

পেশাগত কাজের জন্য পেশাদার মেইল ব্যবহার করেন। এটা বিশেষ করে স্টুডেন্ট এবং সদ্যপাশ করা গ্র্যাজুয়েটদের মাঝে দেখা যায় যে তাদের ইমেইল অ্যাড্রেস–cool.boy.tonmoy619@hotmail.com। জীবনেও কোনো কোম্পানি চাইবে না যে এমন ইমেইল অ্যাড্রেস ব্যবহারকারী কোনো ব্যক্তি তাদের অফিসে কাজ করুক। অধিকাংশ ভাবে হকেই ইমেইল অ্যাড্রেস দিয়ে দেয়। আপনার না, সংখ্যা কিংবা BD কিংবা নিরপেক্ষ কিছু বসিয়ে ইমেইল তৈরি করুন।

দিয়েছেন তো গেছেন! — funkyboysadik@hotmail.com

ব্যবহারযোগ্য — sadmansadikofficial@gmail.com

পারলে hotmail, yahoo এসব ব্যবহার না করে gmail অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করুন। আরও ভালো হবে যদি আপনি নিজের কোম্পানির ডোমেইন দিয়ে ইমেইল তৈরি করতে পারেন যেমন-sadmansadik@10minuteschool.com আর হ্যাঁ! ব্যক্তিগত কাজের জন্য এবং অফিসের কাজের জন্য আলাদা মেইল ব্যবহার করুন। প্রয়োজন ছাড়া ব্যক্তিগত মেইল যেন অফিসের কাজে ব্যবহার না করেন।

*

মানুষের নাম্বার চাওয়া

মানুষের নাম্বার চাইতে হলে, ভাই, আপনার নাম্বারটা দেন এভাবে বললে স্প্যাম মনে হয় এবং তার চেয়েও বড় কথা–অপেশাদার মনে হয়। নাম্বার যদি চাইতেই হয়, তাহলে নিচের একটা উদাহরণ তুলে ধরলাম। মনে করেন মেসেঞ্জারে পাঠাচ্ছি—

আসোলামু আলাইকুম, আজনান ভাই!

আশা করি ভালো আছেন। আমরা অনলাইনে অনূর্ধ্ব ২,৫০০ টাকা মূল্যের পণ্যের কন্টেন্ট ডিসট্রিবিউশনের পরিকল্পনা করছি। একসাথে কাজ করলে আমাদের উভয়ের জন্যই একটা দারুণ সুযোগ হবে। তাই, আপনার একটা ৩০ মিনিটের অ্যাপয়েন্টমেন্ট চাইছিলাম।

প্রজেক্টের ওভারভিউ আমি নিচে অ্যাটাচ করে দিচ্ছি। আশা করি দ্রুত সাক্ষাৎ হবে। ধন্যবাদ!

Content DistributionPlan.PDF. Download Here

সাদমান সাদিক।

বিজনেস ডেভেলপমেন্ট হেড

টেন মিনিট স্কুল।

+০১৪০০৩৭৩৯৬৫

sadmansadikofficial@gmail.com

*

আপনি কি স্প্যাম করছেন?

স্প্যাম হচ্ছে সেইসব বিরক্তিকর বিজ্ঞাপনমূলক মেসেজ, যেগুলো আমাছে না জানিয়ে অচেনা মানুষজন আমাদেরকে পাঠায়। এখন বিষয় হচ্ছে আমাদেরকে অনেক সময় এমন মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে হয়, যাদের সাথে আমাদের আগে কখনও দেখা হয়নি। তাহলে, কীভাবে অচেনা মানুষ হয়েও, পেশাদারভাবে কাউকে মেসেজ করা যায়?

স্প্যামঃ

সবাইকে স্বাগতম! এই , বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে। কমিউনিকেশন শেখার দারুণ বই কমিউনিকেশন হ্যাকস! আজই কিনুন। এই মেসেজটি লাইক এবং শেয়ার করুন।

পেশাদার মেসেজঃ

প্রিয় তামিম ভাই,

আশা করি ভালো আছেন। আপনার নাম্বারটি আপনার ওয়েবসাইট থেকে। সংগ্রহ করেছি একটি বিজনেস প্রস্পেক্টের কারণে। শিক্ষার্থীরা যেন নিজেদের কমিউনিকেশন স্কিল বাড়াতে পারে সেজন্য আমরা দেশের লাইব্রেরীগুলোতে অনেক কম মূল্যে কমিউনিকেশন হ্যাকস সরবরাহ করছি। ১০০ কপি-এর মূল্য আমরা ৩৫% ডিসকাউন্টে দিচ্ছি শুধুমাত্র লাইব্রেরীর জন্য। আপনি যদি ইচ্ছুক হন, তাহলে আপনার সাথে শীঘ্রই দেখা করতে আগ্রহী।

সাদমান সাদিক

সেলস হেড,

অধ্যয়ন প্রকাশনী

+০১৪০০৩৭৩৯৬৫

sadmansadikofficial@gmail.com

*

ডিজিটালি শেয়ার করার কমিউনিকেশন

ডিজিটাল যুগে ফাইল শেয়ার করাটা অনেক সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু, একই সাথে এসেছে সাইবার সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসির সমস্যা। পেশাগত জীবনে ডিজিটাল কন্টেন্টের এই কয়টা বিষয় মাথায় রাখবেন :

১. আমাদের দেশে যদিও ২ যদিও কপিরাইটকে মানুষ খুব একটা তোয়াক্কা করে না, নো ছবি কিংবা কন্টেন্ট ব্যবহারের আগে শিল্পীর পারমিশন ভন্ন কিংবা তাকে রয়্যালটি বাবদ অর্থ দিয়ে দিবেন। কর্পোরেট কোনো কপিরাইটেড কন্টেন্ট পারমিশন ছাড়া ব্যবহার। যদি কারণ কাছে ধরা খান, তাহলে ব্যাপক বিপদে পড়তে পারেন যেমন একটা দৈনিক সাকিব আল হাসানের চিত্র পেপারের ফ্রন্ট আজে ব্যবহার করেছিল। তাও আবার শিল্পীর নাম লেখা অংশটা কেটে তা সেটা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে কি ঝড়! ওই শিল্পীর সমিশন নিতে কত সময়ই বা লাগতো? কিংবা ক্রেডিট না দিয়ে যত লাখ আমার ব্যান্ডের ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়ে সম্মানি হিসেবে ৫০ হাজার দিলেও হয়তোবা কমের উপর দিয়ে যেত। ইদানীং আরেকটা জিনিস অনেক হচ্ছে। বিভিন্ন এজেন্সি থার্ড পার্টি দিয়ে ভিডিও বানিয়ে নেয়। এখন অনেকে হয়তোবা জেনে না জেনে কপিরাইটওয়ালা মিউজিক ভিডিওতে দিয়ে দেয়। প্রমোশনের সময় যখন লাখ টাকা ঢেলে বুস্ট করা হয়, তখন কপিরাইট ক্লেইম খেয়ে এজেন্সি, কোম্পানিসহ সবাই ভূত হয়ে যায়! তাই, কন্টেন্টে শেয়ার করার আগে কপিরাইট খেয়াল রাখুন।

২. মানুষের কোন পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরলে পোস্টের নিচে তার নামটি মেনশন করুন। পারলে পোস্টের একদম শুরুতেই নামটা মেনশন করুন। যদিও করা উচিত নয়, তবুও, একদম নাম খুঁজে না পেলে সংগৃহীত লিখে দিবেন।

৩. অফিসের ডকুমেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করতে গেলে লিক হয়ে যাবার ভয় থাকে। তাই অনেক কোম্পানি Telegram, WhatsApp, Slack কিংবা Facebook Workplace ব্যবহার করে অভ্যন্তরীণ কাজের জন্য। তবুও অনেক জিনিস লিক হয়ে যায়। এমন অনেক কাহিনী আছে। যেখানে এজেন্সির কাছে পিচ করা আইডিয়া অন্য কোনো জায়গায়। ইমপ্লিমেন্ট করা হয়েছে পারমিশন না নিয়ে। সব সময় মনে রাখবেন, সফটওয়্যারের ভুলের চেয়ে মানুষের ভুলে লিক বেশি হয়।

*

ডিজিটাল মোলাকাতের (Icebreaking) কমিউনিকেশন

নতুন কর্মস্থলে কিংবা নতুন কোন টিমের সাথে যখন একটা প্রজেক্ট শুরু হয়, তখন নতুন চ্যাটিং গ্রুপ খোলা হয় Telegram, WhatsApp কিংবা Slack এ। এসব গ্রুপে অনেক সময় প্রজেক্ট চলার মাঝখানে নতুন সদস্য হিসে, আপনাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এসব গ্রুপে জয়েন করলে চুপ করে বল থাকবেন না। একটা মেসেজে বলে দিন :

১. এই গ্রুপ চ্যাট সংশ্লিষ্ট প্রজেক্টে আপনার কাজ কী?

২. আপনার পদ এবং ডিপার্টমেন্ট

৩. আপনার কন্ট্যাক্ট

একটা উদাহরণ দিয়ে রাখি :

সবাইকে শুভেচ্ছা! আমি সাদমান সাদিক। আমি ডিজিটাল মার্কেটিং সেলস। ফানেলের অ্যানালিটিক্সটা দেখছি। আমি ডেটা অ্যানালিটিক্স টিমে শামীর ভাইয়ার তত্ত্বাবধানে কাজ করছি। যেকোনো প্রয়োজনে আমাকে পাবেন +0১৪০০৩৭৩৯৬৫ এই নাম্বারে অথবা মেইল করতে পারেন এখানে। sadmansadik@10minuteschool.com

একইভাবে যখন একটা গ্রুপে আপনার কাজ শেষ হয়ে যাবে, সবাইকে বলে সেখান থেকে বিদায় নিন। একটা উদাহরণ দিলাম নিচে :

আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমাদের এই বছরের পারফর্মেন্স দারুণ ছিল। অনেক কিছু শেখার ছিল। আজ একটা মিশ্র অনুভূতির মেসেজ আছে। আমার তমুক কোম্পানিতে চাকরি হয়ে গেছে। ১০ জুনের মধ্যে আমি সব কাজ গুছিয়ে চলে যাবো। আপনাদের কাছে আমি অনেক কিছু শিখেছি। আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ। কোনোদিন কোনো কাজে লাগলে আমার ব্যক্তিগত নাম্বারে +০১৪০০৩৭৩৯৬৫ কল দিয়েন। আল্লাহ্ হাফেজ।–এই বলে চ্যাট গ্রুপ এক্সিট করে ফেলবেন।

এমন অনেকে আছেন যারা চাকরি ছেড়ে দেয়ার পরও চুপ করে গ্রুপে লুকিয়ে থাকেন। অনেকে হয়তোবা খেয়ালও করে না ব্যাপারটা। আমারই চেনা জানা এমন আছে যারা এক কোম্পানি থেকে অন্য প্রতিযোগী কোম্পানিতে গিয়েছে, কিন্তু ঠিকই আগের কোম্পানির প্রজেক্টের চ্যাট গ্রুপের আপডেটগুলো পায়! তাই, একজন সচেতন মানুষ হিসেবে যখন যার কাজ শেষ, তাকে গ্রুপ থেকে বিদায় জানাবেন, অথবা নিজে বের হয়ে গেলে বিদায় চেয়ে চ্যাট গ্রুপ থেকে এক্সিট করবেন।

৪. কমিউনিকেশন এবং আপেক্ষিকতা

কমিউনিকেশন এবং আপেক্ষিকতা

এই বইয়ের বিষয়বস্তুসমূহ স্থান, কাল এবং পাত্রবিশেষে পরিবর্ধিত, পরিশীলিত ও পরিমার্জিত হতে পারে। এই বইয়ের n-তম মুদ্রণে হয়তোবা আর ইন্টারনেটের অনেকগুলো কমিউনিকেশন হ্যাক প্রাচীন হয়ে যাবে। তাই বইটি যেই বছরেই পড়ছেন না কেন, আপনি যদি বইয়ের মূল কনসেপ্টটা বুঝে আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো খেয়াল করতে পারেন, তবেই আপনি কমিউনিকেশন হ্যাকসের বেসিক বুঝতে পেরেছেন।

*

রিপ্লাইয়ের কমিউনিকেশন

যখন কেউ মেসেজ দেয় অনালাইনে, তখন কেউ মেসেজটা দেখলে seen লেখা আসে। অপর পাশ বুঝে যে মেসেজটা দেখা হয়েছে। কিন্তু, মনে করেন। আপনি মেসেজ করলেন,

আজকে বিকেল চারটার মধ্যে ব্যাংক স্টেটমেন্টটা পাঠিয়ে দিতে পারবেন?

— seen 12.45PM

এর মানে কী? পারবেন? পারবেন না? সময় লাগবে? দেখছি?

কিছু কিছু সময় মেসেজ না দেখার চেয়ে seen করে রাখা বেশি বিরক্তিকর। এমন অবস্থায় হ্যাঁ হলে জানিয়ে দিন। না হলে বলে রাখুন যে দেরি হবে যাতে অন্য ব্যবস্থা করা যায়। অনেকে না বলতে লজ্জা পায়, তাই তারা চুপ করে থাকে। কখনই এমন করবেন না। ফাস্ট এবং ফার্স্ট রেসপন্স কমিউনিকেশন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই পরে রিপ্লাই করবো মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে মেসেজ আর মেইল দেখার সাথে সাথে রিপ্লাই করবেন।

*

যাবেন কি যাবেন না?

ইদানীং বিভিন্ন ইভেন্টের জন্য ফেসবুকে ইভেন্ট খোলা হয়। সেখানে আপনি চাইলে, Going, Maybe কিংবা Not Going দিতে পারেন। খুবই সিম্পল কিন্তু মানুষ কেন যেন জিনিসটাকে আরও বেশি জটিল করে ফেলে। অনেকে Going দিয়েও আসে না। দেওয়ার কাজ দিয়ে রেখেছি এমন একটা ভাব।

কারও বিয়ের দাওয়াতে Going দিয়ে রাখা মানে হল তাদেরকে আপনার জন্য আয়োজনের বন্দোবস্ত করতে বলা। আপনার একটা বাটন ক্লিক করার উপর কারও কষ্টে অর্জিত টাকার খরচ নির্ভর করছে। তাই আমাদের যেন এই ন্যূনতম ভদ্রতাগুলো আনার চেষ্টা আমরা করি।

*

নিজের সম্পর্কে কথা বলুন

আমার আপনার চেনা এমন অনেক প্রতিভাবান মানুষ আছেন, যারা তাদের কাজের স্বীকৃতি যথেষ্ট পরিমাণে পাচ্ছেন না। এর পেছনে একটা বড় কারন হচ্ছে, অনেকে এতটাই বিনয়ী যে, নিজের অর্জনগুলো কারও সামনে বলে লজ্জা পান। তারা ভয় পান যে, তাদের নিজেদের কথা বললে অন্যরা অহংকারী ভাববে। তাই তারা চুপ থাকেন আর পাশ দিয়ে অন্য ধুরন্ধর মানুষজন তাদের কাজের ক্রেডিট নিয়ে নেয়।

তো নিজের ঢোল একটু হলেও নিজেকে পেটাতে হবে। এখন কিছু দৃষ্টিকোণ আপনার সামনে তুলে ধরছি যেগুলো হয়তোবা আপনাকে নিজের এবং নিজের কাজ সম্পর্কে বলতে আরেকটু বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করাবে।

প্রথমত, আপনি মনে করেন অনেক সুন্দর একটা কেক বানালেন। কেক বানিয়ে তারপর সেটা আপনি আপনার ওভেনে রেখে আসলেন। এই অবস্থায় যদি কেউ আপনার কেক না খায়, তাহলে তো নিশ্চয়ই আপনি বলবেন না যে, কেউ আমার হাতের রান্না খেতে চায় না! বরং, দোষ আপনার যে, এত সুন্দর কেক বানিয়ে আপনি মানুষকে জানাননি। তাই, আপনি হয়তোবা দারুণ কোনো কাজ করছেন, কিন্তু মানুষকে না জানালে আপনাকে তারা কদর কীভাবে করবে বলেন?

দ্বিতীয়ত, আপনি কি আসলেই আপনার কাজে বিশ্বাসী? আপনি যদি আপনার কাজে বিশ্বাসী হন, তাহলে সেটার কথা মানুষকে জানান। আমরা যখন বইয়ের কথা মানুষকে বলি, আমরা জানি যে অনেকে ভাববে যে আমরা হয়তোবা বইয়ের বিক্রি বাবদ অর্থ পাওয়ার জন্য নিজেদের বইয়ের কথা বলছি। কিন্তু, বাস্তবে বই লিখারও অনেক আগে থেকে এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা ফ্রিতে শত শত ভিডিও দিয়ে এসেছি। আমরা আমাদের বইয়ের প্রতিটা কথার মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনায় বিশ্বাসী। তাই, আমরা বইয়ের কথা বলতে, মার্কেটিং করতে সংকোচ বোধ করি না।

তৃতীয়ত, আপনি নিজেই যেন নিজের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা না হন। আপনি হয়তোবা বড় কোনো কাজ করছেন, সুন্দর কোনো শিল্পকর্ম তৈরি করছেন। কিন্তু, মানুষের সামনে উপস্থাপন করতে যদি লজ্জা পান, তাহলে আপনার কাজ পৃথিবীকে যতটা ভ্যালু দিতে পারতো, তা সম্ভব হবে না কেবলমাত্র আপনার কথা বলতে অপারগতার জন্য। তাই, নিজের কাজকে ভালবাসলে, নিজের কাজকে আসলেই মূল্যায়ন করতে মানুষের সামনে নিজের প্রজেক্টগুলো নিয়ে কথা বলুন।

চতুর্থত, আপনি মনে করেন কোনো নন-প্রফিট সংস্থার জন্য কাজ করেন। আপনার কাজের সম্প্রসারণ হলে আরও অনেক শিশুর পড়াশোনা চলবে। এখন আপনি যদি নিজ থেকে এগিয়ে গিয়ে মানুষের সামনে কথা বলতে না পারেন, তাহলে আপনার নীরবতার জন্য হাজারো শিশু হয়তোবা শিক্ষার সুযোগ হারাবে। তাই, অনেক সময় খালি নিজের জন্য না, পারলে অন্যের। ভালোর জন্য হলেও আপনার প্রজেক্ট সম্পর্কে কথা বলুন।

*

নয়টার ট্রেইন কয়টায় ছাড়ে?

ওই কথাটা যখন প্রথম শুনেছিলাম তখন আসলে কৌতুকটা ধরতে পারিনি কারণ আমার নিয়মিত যাতায়াতের মাধ্যম ছিল বাস। ট্রেইনে ওঠাই হত না। বুঝতে পারছি না দেখে আমাকে আমার চাচু ব্যাখ্যা করলেন যে, নয়টার ট্রেইন কখনও নয়টায় ছাড়ে না। লেট করে কয়টায় ছাড়ে, এটা জানতে এবং একই সাথে একটা কৌতুক বিনিময় করতে আসলে প্রশ্নটা করা হয়।

এমন অনেক কথা আছে, যেগুলো প্র্যাক্টিকালি এক্সপিরিয়েন্স না করলে আসলে বোঝাটা কঠিন। মনে করেন আপনি বিদেশে গিয়ে বললেন যে, আপনার দেশে মানুষ বাম পায়ে আগে নামে। বিদেশীরা হয়তোবা ভাববে যে কুসংস্কারবশত বাঙ্গালীরা এই কাজটা করি। কিন্তু, আসল কারণ তো হচ্ছে। চলন্ত বাস থেকে আমাদের নামার স্বভাব। চলন্ত বাস থেকে ফট করে নেমে জড়তার কারণে মানুষ উল্টে রাস্তায় না পড়ে যায় সেজন্যই হেল্পাররা প্রায়ই চেঁচিয়ে বাম পায়ে নামতে বলে। চলন্ত বাস থেকে যে যাত্রীরা নামবে সেটা অনেক দেশের মানুষই বোধহয় কল্পনাও করতে পারবে না।

*

নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে কথা বলা

এই টপিকটা বোধ হয় ইন্ট্রোভার্টদের জন্য বেশি প্রযোজ্য। যারা চুপচাপ থাকেন, নিজে থেকে যেচে কথা বলেন না–তারা নিজেদের মত করে থাকতে পছন্দ করেন। কিন্তু, নেটওয়ার্কিং-এর জগতে আপনি চুপ করে বসে থাকলে কেউ এসে আপনাকে জিজ্ঞেস করে করে বের করবে না যে, আপনার প্রতিভা কী। আপনাকে নিজে থেকে গিয়ে নিজের পরিচয় দেন। নেটওয়ার্কিং করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। তাই, আপনার যদি নি থেকে এগিয়ে কথা বলতে বেশি লজ্জা লাগে, তাহলে আপনি কিছু হ্যাকস অ্যাপ্লাই করতে পারেন।

১. আপনার পরিচিত কারও সাথে যান এবং তাকে বলুন যেন আপনাকে অন্যদের সাথে তিনি পরিচয় করিয়ে দেয়।

২. কোনো অনুষ্ঠানের এমন জায়গায় দাঁড়াবেন যেখানে আপনাকে দেখা যায়। অনেকে এক কোণায় কিংবা দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে থাকে। এটা মোটেও চলবে না। নিজে থেকে কথা বলবেন না বুঝতে পেরেছি, কিন্তু মানুষ যেন আপনাকে খুঁজে বের করে কথা বলতে পারে, সেই সুযোগটা অন্তত করে রাখুন।

৩. কী বলে কথা বলা শুরু করবো?– চিন্তায় যারা কথা বলতে পারেন না, তাদের জন্য একটা মেন্টাল হ্যাক হচ্ছে, আপনি যেভাবে চান যে কেউ আপনার সাথে কথা বলা শুরু করুক, সেই একই বাক্যগুলো ব্যবহার করে আপনি অন্যদের সাথে কথা বলতে এগিয়ে যান।

৪. নেটওয়ার্কিং নিয়ে একটি বইয়ের নামই হচ্ছে, Your network is your net worth. উক্তিটা অনেক সত্য। আপনার জীবনে আপনি কোন কোন মানুষকে চিনেন এবং তাদের সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন সেটার। উপর আপনার পেশাদার এবং পারিবারিক জীবনের সফলতা অনেকটা নির্ভর করছে। তাই, যখনই মনে হবে যে কথা না বললেও তো চলে! –তখন মনে মনে এই উক্তিটি স্মরণ করবেন।

৫. ফার্স্ট ইম্প্রেশন যেন দারুণ হয়। অর্থাৎ, ঠিকমত ড্রেস-আপ করে যাবেন যেন নিজেকে কেমন দেখাচ্ছে এই বিষয়ে আপনার যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস থাকে। যখন হ্যান্ডশেক করবেন, তখন যেন হ্যান্ডশেকটা জোরালো হয়।

৬. সবসময় মনে রাখবেন। একটা কনভারসেশন চালানোর জন্য আপনাকে যে সবসময় কথা বলতে হবে, এমন কিন্তু না। মানুষ নিজের সম্পর্কে সবসময় কথা বলতে চায়। তাই, আপনি যদি অন্য মানুষটির প্রতি আপনার কৌতূহল প্রকাশ করেন, প্রশ্ন করেন তার আগ্রহের কাজ নিয়ে; তাহলে আপনি প্রথম দুটো কথা বলে চুপ থেকে শুনেন খালি, উনি। নিজে থেকেই পুরো কথাবার্তা চালিয়ে নিয়ে যাবেন!

*

কার সাথে সবচেয়ে বেশি কথা বলেন?

আপনাকে কেউ যদি সারাদিন উৎসাহমূলক কথা বলতো, সবসময় সাহস দিত, আপনার সম্পর্কে ভালো কথা বলতো তাহলে নিশ্চয়ই আপনার মন একটু হলেও ভালো থাকতো, কাজ উদ্যম আসতো। অনেকটা পার্সোনাল ট্রেইনারের মত, যে আপনার সাথে সবসময় থাকবে আপনাকে আরও ভালো পারফর্ম করার জন্য সাহায্য করতে।

আর যদি এমন হত যে কেউ আপনার কানে সারাক্ষণ খারাপ কথা বলেই যাচ্ছে। অনেকের জীবনে এমন মানুষ আসলেও আছে! সারাটা দিন খারাপ কথা, মন খারাপ করা কথা, তুমি পারবে না! এমন কথা শুনতে থাকলে আপনি যতই মোটিভেটেড মানুষ হন না কেন, আপনার উপর এই কথাগুলোর একটা নেতিবাচক প্রভাব আসবে।

এখন প্রশ্ন হল, কার সাথে আপনার সবচেয়ে বেশি কথা হয়?

আপনি হয়তোবা বলবেন, আপনার পরিবারের সাথে, কিংবা কোনো এক বেস্টফ্রেন্ডের সাথে। কিন্তু, আসলে যার সাথে সব থেকে বেশি কথা হয়, সেই মানুষটি হচ্ছেন আপনি নিজে! হা! একটু ব্যাখ্যা করি।

চিন্তা করা মানে কী? খেয়াল করলে দেখবেন, চিন্তা করা অর্থাৎ থিঙ্কিং হচ্ছে। নিজের সাথে নিজের কথোপকথন। চিন্তা করা মানে হচ্ছে সেলফ-টক (Self Talk)। আমরা যত না অন্যদের সাথে কথা বলি, তার চেয়ে বেশি চিন্তা করি। ঘুম থেকে উঠে সারাটা দিন আমাদের হাজারো চিন্তা। মানে নিজের সাথে হাজারো কথা। এখন প্রশ্ন হল, আপনি নিজে সাথে যে এত কথা বলছেন, এগুলোর প্রভাব আপনার উপর কেমন?

কিছু মানুষ মনে মনে বলতে থাকে, আমাকে দিয়ে এটা হবে না, আমি এই কাজটা পারি না, আমি আসলে এই কাজের যোগ্য না, আমি কেন যে এটা করতে গেলাম!, আমার আসলে এই ভুলটা করা উচিত হয়নি ইত্যাদি। এটা ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর চলতে থাকে। চিন্তা করে দেখেন (!), এভাবে নিজেকে মনে মনে ছোট করতে থাকলে একজন মানুষের আত্মবিশ্বাস, সঞ্জীবনী শক্তি কোথায় গিয়ে ঠেকবে? অন্যদিকে, এমন অনেকে আছে যারা একই কথা নিজেদেরকে ভিন্নভাবে বলে। আমি কাজটা শিখে ফেলবো ধীরে ধীরে, এই ভুলটা আর রিপিট হবে না ইনশা আল্লাহ, এই চ্যালেঞ্জটা এবার বেশ জমবে ইত্যাদি। এই মানুষগুলো সারাটা দিন নিজেদের মনে মনে উৎসাহ দিচ্ছে। একটু হলেও তো এর ইতিবাচক প্রভাব তার কাজে এবং জীবনে উঠে আসবে।

আমাদের সবার জীবনেই এমন একটা কণ্ঠ আছে, আমাদের নিজেদের কণ্ঠ যেটা আমাদের সব কাজে আমাদের সাথে কথা বলছে। কণ্ঠটা যদি অনুপ্রেরণার উৎস হয়, তাহলে বাইরের শত কমিউনিকেশনের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটা। তাই, অন্যের সাথে কমিউনিকেশনের আগে, নিজের মনের সাথে কমিউনিকেশনটা উন্নত করেন।

*

অর্ডার দেয়া

আপনি যদি চান যে কেউ একটা কাজ না করুক, তাহলে তাকে সেই কাজটা করতে অর্ডার দিতে পারেন। কারণ, যেই কাজ মানুষ এমনিই করতো, সেই কাজ বাধ্য হয়ে করতে হলে মানুষ সেটা ঘৃণা করে।

একদিন বাসে করে শাহবাগ যাচ্ছি। এক মহিলা এসে সরাসরি আমাকে বললেন, আপনি সরেন। পাশের সিটে যান। আমি এখানে বসবো। আমি মহিলা সিটে বসে ছিলাম না, তবুও তিনি কেন যে অর্ডার দিয়ে বললেন সেটা আমি জানি না। আমার চেয়ে বয়স একটু হয়তোবা বেশি। তর্কে না গিয়ে আমি সরে গেলাম। এখন ব্যাপারটা হচ্ছে, তিনি যদি আমাকে বলতেন, ভাইয়া, আপনি কাইন্ডলি একটু পাশের সিটে বসবেন?–আমি তাহলে খুশি মনে পাশের সিটে চলে যেতাম। অর্ডার করার পরও আমি একই কাজ করেছি, কিন্তু মনে অনেক বিরক্তি নিয়ে।

আপনি মানুষকে অর্ডার দিয়ে যতটুকু কাজ করাতে পারবেন, তার চেয়ে অনেক বেশি হয়তো আপনি পারবেন যদি এমন ব্যবস্থা করতে পারেন যেন তারা একই কাজটা খুশি মনে করে। এখন সব জায়গায় অবশ্যই অর্ডার কাজ করে। যেমন : মিলিটারিতে অর্ডার ফলো না করলে পুরো টিমের মহাবিপদ হতে পারে। কিন্তু, সামাজিক জীবনে যতটা কম সম্ভব অর্ডার করার অভ্যাসটা করতে পারেন।

যিনি আই ডোন্ট কেয়ার বলেছেন, তিনি কেয়ার না করলে কি কখনও আই ডোন্ট কেয়ার বলতেন?

*

মেসেজ দিয়ে রাখসি তো!

এক ক্লায়েন্ট একবার তার বসের কাছে বললো যে, সে বলে আমাকে (লেখককে) মেসেজ পাঠিয়েছে। বস এসে আমাকে ধরলো যে, মেসেজ পাঠানোর পরও কেন আমি কিছু করিনি। আমি বুঝলাম যে আমি মেসেজ পাইনি। কিন্তু, সেই এমপ্লোয়ি বলেই যাচ্ছে যে সে মেসেজ পাঠিয়েছে। এভাবে চলতে চলতে এক সময় প্রমাণ দেখানোর পালা আসলো। আমি বলাম, এসএমএস চেক করলে এবার আসলে বোঝা যাবে কে মিথ্যা বলছে। অবাক হয়ে দেখলাম যে লোকটা হোয়াটস অ্যাপ (Whats App) ওপেন করে দেখাচ্ছে যে সে মেসেজ পাঠিয়েছে।

প্রথম কথা, অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ করলে আমি কীভাবে বুঝবো যে উনি কে? দ্বিতীয়ত, হোয়াটস অ্যাপ কিংবা মেসেঞ্জারে মেসেজ পাঠিয়ে রাখলে। সেটা অনেক সময় ফিল্টার সেকশনে চলে যায়। তাই, কেউ যদি মনে করে যে, অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ পাঠিয়ে রাখলেই কর্পোরেট কমিউনিকেশন হয়ে গেল, তাহলে সে বোকার স্বর্গে বাস করছে।

আর প্রসঙ্গত বলে রাখি, অনেক সময় কাজ কেন হয়নি জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসে, আমি তো মেসেজ দিয়ে রাখসি। মেসেজ দিয়েছেন না কি দেননি, এটাতো বিষয় না, কাজটা ম্যানেজ করতে পারেননি–এটাই মূল বিষয়। মেসেজ পাঠিয়েই অনেকের কাজ যেন একদম শেষ। আরে ভাই দেখেন, মেসেজ দেখেছে না কি। কাজ শুরু করেছে না কি। কাজ কবে শেষ করে আপনাকে দিবে। তাই, মেসেজ পাঠানোটাই শেষ কাজ না। কাজটা আদায় করলেই কেবল কমিউনিকেশন সফল হবে।

*

সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট

কমিউনিকেশনের একটা বড় অংশ হচ্ছে আমাদের বডি ল্যাংগুয়েজ এবং সিচুয়েশন। এমনকি, আমাদের বসার জায়গাও অনেক কিছু কমিউনিকেট করে। আপনি হয়তো বিভিন্ন সরকারি অফিসের চেয়ারে টাওয়াল দেখেছেন, সেটাও একটা পদমর্যাদার ইঙ্গিত হিসেবে অর্থবহন করে। আপনি কোন জায়গায় বসছেন সেটাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। মিটিং রুমের এক সাইডের সিঙ্গেল চেয়ার, যেটা বসের জন্য বরাদ্দ, সেখানে গিয়ে ফট করে বসলে বিপদ হতে পারে। একটা বসার জায়গাও যে একটা অফিসে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা এখন বিভিন্ন কোম্পানি অনুধাবন করছে। জুনিয়র এমপ্লোয়িরা যাতে সিনিয়রদের সাথে সহজে কথা বলতে পারে, সেজন্য সবাই একই ফ্লোরে, একই ধরণের ডেস্কে বসছে ইদানীং বিভিন্ন কোম্পানিতে। বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম সেরা টেক সিইও ইলন মাস্ক বসেন অফিসের এমন জায়গায়, যেখানে তাকে সবথেকে সহজে দেখা যায়। সবাই যখন দেখে বস এত পরিশ্রম করছেন এবং চাইলেই তার সাথে কথা বলা যায়, তখন সবাই আরও বেশি অনুপ্রাণিত হয়। বিচিত্র এই দুনিয়ায় তাই আপনার বসার ধরণও অনেক কথা বলে!

বড় মিটিং টেবিলের দুই পাশে দুই সারি চেয়ারে দুই পক্ষ বসরে এবং টেবিলের এক সাইডে একটি মাত্র চেয়ারে উচ্চপদস্থ কিংবা সিনিয়ারদ্রোস্ট ব্যক্তি বসবেন। দুই সারির এক সারিতে না বসে আপনি যদি সরাসরি বসের চেয়ারে বসেন, তাহলে মানুষ ভাবতে পারে যে আপনি আপনার পাওয়ার মুভ দেখাচ্ছেন!

ইন্টেরোগেশন (Interrogation) এর দৃশ্যে সব সময়। দেখবেন যে, দুই পক্ষ একদম একে অরের মুখোমুখি বসেছে। মুখোমুখি বসাটা অবচেতনভাবে একটা সাংঘর্ষিক আবহ তৈরি করে। পুলিশ যখন ক্রিমিনালের মুখ থেকে কোনো তথ্য বের করার চেষ্টা করছে, তখন সরকম সেটআপ কাজে দিতে পারে।

আপনি যদি কারও সাথে আলাপ-আলোচনা করতে চান, একসাথে কাজ করতে চান, তাহলে সারলে মুখোমুখি না বসে পাশাপাশি কিংবা কোকোণি বসুন, তাহলে একটা সহযোগিতামূলক পরিবেশ অবচেতন মনে তৈরি হবে।

*

হেটারদের সাথে কমিউনিকেশন

ইউনিভার্সিটিতে একদিন ক্লাসে স্যার বোঝাচ্ছিলেন যে, কাস্টমার তিন ধরণের হয়। প্রথম শ্রেণির কাস্টমার হচ্ছে ফ্যানরা। তারা আপনার পণ্য খুবই পছন্দ করে। আপনার পণ্যের কথা অন্যদের সাথে শেয়ার করে এবং তারা আপনার নিয়মিত গ্রাহক। আপনি ১০ টাকা ডিসকাউন্ট দিলে তারা। আরও ১০০০ টাকার পণ্য কিনবে আপনার কাছ থেকে।

দ্বিতীয় শ্রেণির কাস্টমার হল তারা, যারা নিরপেক্ষ। আপনার পণ্য কিনেছে সে, কিন্তু ভালো-মন্দ কোনো অনুভূতি নেই। তাদেরকে ১০ টাকা ডিসকাউন্ট দিলে কোনো কিছু না হলেও, ৫০ টাকা ডিসকাউন্ট দিলে হয়তে আপনার কাছ থেকে ৫০০ টাকার পণ্য কিনবে।

তৃতীয় শ্রেণির কাস্টমার হল তারা, যারা আপনার পণ্য তো পছন্দ করেই না, বেত অন্যদেরকেও বলে বেড়ায় যাতে আপনার দোকানে কেউ না যায়। এসব কাস্টমারকে ১০০০ টাকা ডিসকাউন্ট দিলেও হয়তোবা পণ্য কিনবে না।

এখন মনে করেন আপনার বাজেট ১০০০ টাকা। এই ১০০০ টাকা দিয়ে আপনি ১০০ জন ফ্যানকে গিফট দিয়ে সুপার-ডুপার ফ্যান করে ফেলতে পারেন খুশি করে। অথবা ২০০ জন নিরপেক্ষ কাস্টমারকে আপনি আপনার ফ্যান বানাতে পারেন। নাহলে ১ জন হেটারকে আপনার কাস্টমার বানানোর চান্স তৈরি করতে পারেন। এখন বুদ্ধি থাকলে যে কেউ পুরো বাজেট ফ্যানদের জন্য বরাদ্দ রাখবে।

এই কনসেপ্টটা আমরা আমাদের জীবনে প্রয়োগ করি না কেন? যখন কেউ আমাদের নিয়ে খারাপ কিছু বলে তখন আমরা সমস্ত এনার্জি, সময় আর ইমোশন দিয়ে তাদের সাথ ঝগড়া করি। কিছু কি বদলায়, নাকি তর্ক আরও বেশি দূর গড়ায়? চিন্তা করেন খালি, আমরা যদি সেই একই এনার্জি, সময়। আর ইমোশন আমাদের যারা ভালোবাসে, স্নেহ করে–তাদেরকে দিতাম? তারা বহুগুণে সেই ভালোবাসা, স্নেহ আমাদের ফিরিয়ে দিতেন।

তাই, আজ থেকে যতই নিন্দুকের সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করুক না কেন, আগে দেখবেন আপনার শুভাকাঙ্ক্ষীদের যথেষ্ট সময় দিতে পেরেছেন কি না। তাছাড়া, ইগ্নোর করার চেয়ে বড় কোনো অপমান হতে পারে না।

*

পিপল স্কিল : কী এবং কেন?

অনেক যোগ্য মানুষের ভিড়ে আমরা কিন্তু আলাদা করে মনে রাখি সেই মানুষটিকে যিনি সুন্দর করে কথা বলতে জানেন। সুন্দর করে কথা বলতে পারার গুনটি শুধু জনপ্রিয় হবারই নয়, বরং কখনো কখনো সফল হওয়ারও একটি চাবিকাঠি। তবে, সবার সাথে সঠিকভাবে কথা বলার পাশাপাশি সঠিকভাবে শোনাটাও কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ স্কিল। কিন্তু Stephen R Covey এর মতে, Most people do not listen with the intent to understand. Most people listen with the intent to reply.

তো চলুন আজ শেখা যাক গুছিয়ে কথা বলা ও মনোযোগ দিয়ে কথা শোনার আদবকেতাগুলো!

১. কথা শোনা : মনোযোগ সহকারে কথা শোনা এক প্রকার শিল্প। যেটা সকলের পক্ষে রপ্ত করা সম্ভব নয়। অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন, কথা শোনার আবার কিসের মাহাত্ম? মনে রাখবেন, সৃষ্টিকর্তা আমাদের কান দিয়েছেন দুটো, মুখ দিয়েছেন একটা। অতএব, বলা আর শোনার অনুপাতটা কেমন হওয়া উচিত বুঝতেই পারছেন। তা আপনাদের এই শোনার ক্ষমতা অর্জনের। জন্যে আজ আপনাদের তিনটা ফর্মুলা দিচ্ছি। এই ফর্মুলাটা 3A পরিচিত! এই 3A এর মর্মার্থ হলো–

Acceptance–

আমরা যখন কথা বলি তখন অনেকক্ষেত্রেই আমাদের শ্রোতা যিনি বা যারা থাকেন তাদের ভাব-ভঙ্গি দেখে মনে হয় তিনি বা তারা আমাদের কথায় আগ্রহ পাচ্ছেন না। অনেক সময় তাদের দেখে মনে হয় তারা বেশ বিরক্ত। যখন আমরা শ্রোতা হই তখন আমরাও এরকম করে থাকি প্রায়শই। যেটা অনচিত। আমাদের সাথে যখনই কেউ কোনো ব্যাপারে কথা বলতে এইবেন, শ্রোতা হিসেবে আমাদের উচিত হবে তাকে সুন্দর করে স্বাগত জানানো, যাতে সে কথা বলায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। হতে পারে সেটা একটা উষ্ণ কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে!

Appreciation—

আমরা বাঙ্গালিরা উৎসাহ দেবার বেলায় বরাবরই বেশ কৃপণ। আমাদের কারও ভালো কাজে অনুপ্রেরণা দিতে বড় সংকোচ হয়। অথচ এই একটুখানি প্রশংসা, উৎসাহ, অনুপ্রেরণামূলক ভালো কথা মানুষের মধ্যকার সম্পর্কটাকে নিমেষে বদলে দেয়। যখন কেউ আপনার সাথে কোনো আইডিয়া বা প্ল্যান শেয়ার করবে আপনার উচিত সেটা শোনামাত্রই সেটার প্রশংসা করা, তাকে বাহবা দেওয়া। তাহলে দেখবেন মানুষটা আপনার সাথে কথা বলতে অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে।

Approval—

মানুষ সবখানে তার নিজের আইডিয়া বা প্ল্যানের গ্রহণযোগ্যতা খোঁজে। কারও কাছ থেকে কোনো আইডিয়া, বা প্ল্যান শোনার পর আপনি যদি কোনো কথা না বলেন তাহলে ওই মানুষটা দ্বিধায় ভুগবে। তার আপনি যদি তাকে জানান তার আইডিয়াটা কেমন ছিলো? কীভাবে করলে আরো চমৎকার হবে তাহলে ব্যাপারটা চমৎকার হবে। মানুষটাও আর সংশয়ে ভুগবে না।

আর এই 3A তথা Acceptance, Appreciation, Approval দিতে গিয়ে পুরোটা সময় আপনাকে যেটা দিতে হয় সেটা হলো Attention অর্থাৎ মনোযোগ। অথচ আমরা এই মনোযোগটাই দেই না কথা শোনার সময়। কেউ একজন কথা বলার সময় দেখা যায় আমরা অন্যমনস্ক হয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকি। কখনও দেখা যায় নিজের মুঠোফোনে ডুবে আছি, আবার কখনও দেখা যায় ঘড়িতে সময় দেখছি। অথচ এই ব্যাপারগুলো যিনি কথা। বলছেন তার জন্যে কতটা অস্বস্তিকর সেটা কখনও ভেবে দেখেছেন? কেউ কথা বলার সময় আপনি ঘড়ি দেখছেন এর মানে দাঁড়ায় আপনি অপেক্ষায় আছেন কতক্ষণে সবটা শেষ হবে। কারও কথা বলার সময় আপনি মুঠোফোনে মনোযোগ দিচ্ছেন কিংবা অন্যদিকে তাকিয়ে আছেন এর মানে হলো আপনি ওই মানুষটাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। অথচ কথা শোনা নামের যে দক্ষতাটা আপনি রপ্ত করতে চাইছেন সেটার প্রথম ও প্রধান কাজ হলো। মনোযোগ দেওয়া। আর একটা ব্যাপার হলো আমরা বাঙ্গালিরা কথা শুনি কেবল তর্ক করার জন্যে। জানা বা বোঝা আমাদের কথা শোনার উদ্দেশ্য না। কথা শুনতে হবে বোঝার জন্যে, জানার জন্যে। আর একটুখানি মনোযোগ ও গুরুত্ব দিয়ে কারও কথা শুনলে দেখবেন যে কারও মন গলিয়ে ফেলা সম্ভব কেবল তার কথা শুনেই!

এবার আসা যাক,

২. কথা বলা : কথা বলার সময়ও কয়েকটা ব্যাপারে খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে কী কী করতে হবে সেগুলো জেনে নেই!

কথা বলবেন হাসিমুখে : যখন যেখানে যার সাথেই কথা বলবেন না কেন, কথা বলার সময় মুখে একটা হাসি রাখবেন। যাতে কথা বলামাত্রই মানুষ আপনাকে বন্ধুসুলভ হিসেবে ধরে নেয়। কথা শোনার সময়ও হাসি মুখে শুনবেন।

মাথা নেড়ে সম্মতি জানাবেন : মাঝে মাঝে মাথা নেড়ে সম্মতি কিংবা নিজের মতামত প্রকাশ করবেন। কেননা আপনি যখন কথা বলেন তখন কেবল মুখেই কথা বলেন না, আপনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়েও কথা বলেন। তাই, মাথা নাড়ানোর ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন।

কথা বলবেন চোখের দিকে তাকিয়ে : এবার আসা যাক আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে। আমরা অনেকে কথা বলার সময় মাথা নিচু করে থাকি। কিংবা ডানে বামে বা অন্যদিকে তাকিয়ে থাকি। শ্রোতার চোখের দিকে তাকাতে ইতস্তত বোধ করি। এটা এক ধরণের অভদ্রতা। আর এটা না করলে শ্রোতার সঙ্গে সম্পর্কটাও ঠিকমতো গঠিত হয় না।

তাই, সবসময় মনে রাখবেন কথা বলার সময় শ্রোতার চোখের দিকে। তাকিয়ে হাসিমুখে কথা বলবেন। প্রয়োজনে মাথা নাড়বেন।

*

যেভাবে কখনও কারও সাথে কথা বলা উচিত নয়!

প্রথমে দুজন বন্ধুর কিছু কাল্পনিক কথোপকথন দেখে নেওয়া যাক!

কথোপকথন-০১

প্রথম বন্ধু- দোস্ত, জানিস? ফেইসবুকে কোনো ভিডিও মাত্র ৩ সেকেন্ড দেখা হলেই একটা ভিউ গণনা করা হয়। অন্যদিকে ইউটিউবে, ৩০ সেকেন্ড দেখলে তারপর একটা ভিউ গণনা করা হয়।

দ্বিতীয় বন্ধু– এইটা আর এমন কী? এ তো আমি সেই কত আগে থেকেই জানি। আসছে আমাকে ফেইসবুক আর ইউটিউব শেখাতে। আমাকে এসব শেখাতে এসো না। লাভ নেই!

কথোপকথন-০২

ধরা যাক, একজনের মন খারাপ। মুখ গোমড়া করে বসে আছে। তার বন্ধুর আগমন।

প্রথম বন্ধু–কী রে! কী খবর?

বন্ধু- দোস্ত, ভালো লাগছে না। কয়েকদিন ধরে একেবারেই মন মেজাজ ঠিক নেই। কোনো কাজে মনোযোগ দিতে পারছি না। বেশ অস্বস্তিকর মনে হচ্ছে সব কিছু। রাতে ঘুম হচ্ছে না ঠিকঠাক। আমি জানি না, ঠিক কী হচ্ছে আমার সাথে। বেশ হতাশ লাগছে।

প্রথম বন্ধু– আরে কী অদ্ভুত ব্যাপার! তোর জীবনের সব কিছুই ঠিকঠাক তাও তোর শুধু হতাশ লাগে। তাজ্জব ব্যাপার। এটা কোনো সমস্যা হলো। আমার জীবনে কি এগুলো হয় নাই? আমার জীবনে আমি লড়াই করি নাই? ফাজলামি করো নাকি? আজকাল ছেলেপেলের এই হলো গিয়ে এক সমস্যা। কিছু হলেই তাদের হতাশ লাগে, কিছু ভাল্লাগে না, রাতে ঘুম হয় না। আরে ভাই। সারারাত তো ফেইসবুক নিয়ে পড়ে থাকো, সিনেমা দেখো। ঘুমটা আসবে কোত্থেকে শুনি, হ্যাঁ?

পুরো ফ্যাশন হয়ে গেসে এই প্রজন্মের জন্যে এইসব ডিপ্রেশন, ফ্রাস্টেশন। অসহ্য ব্যাপারস্যাপার।

কথোপকথন ০৩

ধরা যাক, একজন কোনো প্রতিযোগীতায় বেশ কিছু অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। সে এটা নিয়ে বেশ খুশি। এমন সময় তার বন্ধুর আগমন।

প্রথম বন্ধু– এগুলো কী, দোস্ত?

দ্বিতীয় বন্ধু– দোস্ত, টেন মিনিট স্কুল ডিজিটাল মার্কেটিং অ্যাওয়ার্ডে- এ তিন তিনটা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। কী চমৎকার! তাই না?

প্রথম বন্ধু– এ কী! মোটে তিনটা অ্যাওয়ার্ড নিয়েই এভাবে লাফাচ্ছিস? কত কত এজেন্সি তো আঠারো-উনিশটা অ্যাওয়ার্ড পেয়েও তোর চেয়ে কম লাফাচ্ছে।

দ্বিতীয় বন্ধু– আমাদের স্টুডেন্ট নোটস- সেকশনটা গ্র্যান্ড প্রি অ্যাওয়ার পেয়েছে, দোস্ত! খুশি হবো না?

প্রথম বন্ধু- আরেহ এইগুলো কোনো ব্যাপারই না। অনেক এজেন্সি আছে ১২ ২০ টা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। আমি নিজেই তো গত বছর ৭ টা পেয়েছিলাম। টা পাওয়া কোনো ব্যাপার না। আগে ৮-১০ টা পাওয়ার অভ্যাস কর, এরপরে লাফাইস। এসব ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে এত উচ্ছ্বাস করার কোনো মানে নাই। আমার মনে হয় একটু বেশিই লাফাচ্ছিস এটা নিয়ে!

কথোপকথন ০৪

ধরা যাক, কেউ সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে চমৎকার একটা ছুটি কাটিয়ে ফিরেছে। এরপর তার বন্ধুর সাথে দেখা। চমৎকার সেই ট্রিপের গল্পটা বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে বলা শুরু করলো সে!

প্রথম বন্ধু- দোস্ত, এত সুন্দর একটা ছুটি গেল। সেন্টমার্টিন দ্বীপটা এত অসাধারণ। সাগরের পানি কী সুন্দর নীল! কী চমৎকার একটা জায়গা!

দ্বিতীয় বন্ধু–আরেহ, সেন্টমার্টিনের আলাপ বাদ দে তো তুই? তোর গল্প রাখ। আমারটা শোন। থাইল্যান্ড গিয়েছিস কখনও? আমি থাইল্যান্ড গিয়েছিলাম। থাইল্যান্ড এত সুন্দর। সেন্টমার্টিন একটা জায়গা হলো নাকি? সেন্টমার্টিনের গল্প কাউকে বলিস না, দোস্ত! বাদ দে। তোর সারা দুনিয়া দেখাই বাকি এখনও!

আমাদের প্রত্যেকের বন্ধুমহলেই এই ত্যাড়া বন্ধুর মতো মহা নেতিবাচক কিছু বন্ধু থাকে। যারা কি না আমাদের সবার কথা, অভিজ্ঞতা, সফলতা, ধারণা, অনুভূতি, বিশ্বাস আর অর্জনকে তাদের নেতিবাচক কথা দিয়ে একেবারে এক তুড়িতে নস্যাৎ করে ছাড়ে। আমাদের কোনো কোনো পরিবারের সদস্যও এরকম মানসিকতাসম্পন্ন!

আচ্ছা, একটা কথা বলুন তো? শুধু যদি বলেই বেড়ান, শুনবেন কখন? শুনি? একটা কথা মাথায় রাখবেন, প্রতিটা অর্জনই মূল্যবান। প্রতিটা অভিজ্ঞতাই দারুণ! আমাদের বন্ধু-বান্ধব, ভাই-বোন, বাবা-মা যখন অনেক আগ্রহ নিয়ে তাদের কোনো অভিজ্ঞতা, সফলতা, ধারণা, অনুভূতি কিংবা অর্জনের কথা আমাদের সাথে শেয়ার করতে আসেন তখন তাঁদের কাছের মানুষ হিসেবে। আমাদের উচিত সেটা গুরুত্ব সহকারে শোনা এবং মূল্যায়ন করা।

হতে পারে আপনি তাদের চেয়ে অনেক বেশি অভিজ্ঞ, অনেক বেশি জানেন, অনেক বেশি অর্জন করে ফেলেছেন, কিন্তু সেটার মানে কিন্তু এই না যে আপনি অন্যদের অর্জন আর অভিজ্ঞতাকে অবমূল্যায়ন কিংবা অবজ্ঞা করবেন। এ হতেই পারে আপনি অনেক অনেক পুরস্কার জিতেছেন, তার মানে এই না যে অন্য কারও পাওয়া কোনো পুরস্কারকে আপনি চোট দেখবেন। হয়তোবা হতাশা নামের নেতিবাচক অনুভূতির কোনো জায়গা আমার জীবনে কিন্তু তার মানে এই না যে আপনি অসম্মান করবেন অন্য কারও অনুভূতিগুলোকে।

এখন থেকে কেবল নিজে বলার অভ্যাসটাকে একটুখানি ছুটি দিন। অভ্যাস করুন শোনার। দেখবেন, মানুষের প্রিয় হয়ে ওঠা খুব একটা কঠিন কাজ নয়!

*

সতর্কতা : কথা বলা ও শোনার সময় যে কাজগুলো করা যাবে না!

কথা বলা বা শোনার সময় আমরা প্রায়ই এমন কিছু প্রতিক্রিয়া দেখাই যা অপরপ্রান্তের মানুষটির কথা বলা বা শোনার আগ্রহ আর উদ্যম নষ্ট করে দেয়। যেমন, আমি এইটা আগেই জানতাম।, এই সমস্যায় আমি কত পড়শি।, আমি এভাবেই কথা বলি।, গোত্রের উত্তর কিংবা অন্যদিকে তাকিয়ে থাকা, নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া দেখানো, মনোযোগ না দেওয়ার মতো প্রতিক্রিয়া। এই কথা বা কাজগুলো মানুষের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা অনেক কমিয়ে দেয়। আমাদের ব্যক্তিত্বকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরে।

শুধুমাত্র কথা বলা ও শোনার মাধ্যমেও মানুষের মন জয় করে নেওয়া সম্ভব। চলুন জেনে নিই সেরকম কয়েকটি কার্যকর কনভারসেশন হ্যাকস!

১. মানুষের উদ্যম নষ্ট করে দেবেন না।

আমি এটা আগেই জানতাম–আমাদের কাছে মাঝে মাঝেই আমাদের ছোট ভাইবোন বা বন্ধুরা সুন্দর কোনো আইডিয়া বা কথা শেয়ার করে। আর আমরা অনেকেই সেটার প্রত্যুত্তরে আমি এটা আগেই জানতাম- বলে থাকি। এই কথাটা অপর প্রান্তের মানুষটার উদ্যমটাকে একেবারে নষ্ট করে দেয়। এবং ফলাফলস্বরূপ ওই মানুষটা আর কোনোদিনও আপনার সাথে কোনো কথা শেয়ার করার আগ্রহ দেখাবে না। আর তাই আমি এটা আগেই জানতাম মানুষের উদ্যম নষ্ট করে দিয়েন না।

২. নিজেকে শোধরানোর চেষ্টা করুন।

আমি এভাবেই কথা বলি–এই কথাটা আমাদের সবার বেশ পরিচিত। আমাদের জেদি আর একগুয়ে স্বভাবের পরিচায়ক হলো এই উক্তিটা। আমড়া একবার ভাবুন তো, সবাইকে বদলানোর চাইতে নিজেকে বদলে ফেলাটা সহজ না? কী দরকার শুধু শুধু নিজেকে সবার কাছে জেদি আর একগুঁয়ে হিসেবে তুলে ধরার?

তার চেয়ে বরং আমি এভাবেই কথা বলি- না বলে নিজেকে শোধরানোর চেষ্টা করুন। সেটা সবার জন্যেই ভালো।

৩. সহানুভূতিশীল হতে শিখুন।

আমরা একেকজন মানুষ একেকরকম। আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ। পরিস্থিতিও আলাদা। আমাদের সমস্যা আলাদা, সমস্যা সমাধানের ধরণও আলাদা। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও আলাদা। আমাদের কাছে যখন কেউ কোনো। সমস্যা নিয়ে আসে তখন এই ঝামেলায় আমিও কতবার পড়েছি বলে ওই মানুষটার সমস্যাটাকে উড়িয়ে দেওয়াটা অনুচিত।

সাহায্য নাই করতে পারেন, অন্তত শুনতে তো পারেন। এতে অন্তত ঐ মানুষটা হালকা বোধ করবেন। সহানুভূতিশীল হতে শিখুন। কেউ কোনো সমস্যার কথা শেয়ার করলে এই ঝামেলায় আমিও কতবার পড়েছি বলে তাকে আর তার সমস্যাকে উড়িয়ে দেবেন না।

৪. তর্ক করার জন্যে নয়, বোঝার জন্যে শুনুন।

আমরা আসলে কথা শুনি মূলত জবাব দেওয়ার বা তর্ক করার জন্যে। কথার মধ্যে লুকোনো মেসেজটা বোঝার চেষ্টা না করেই আমরা উত্তর দেই, তর্ক শুরু করে দেই। এই অভ্যাসটা মানুষের কাছে আপনার ইম্প্রেশন নষ্ট করে। তাই চেষ্টা করুন বক্তার কথা বুঝতে। বুঝে উত্তর দিন। খামাখা তর্কে জড়াবেন না।

৫. কথা বলা বা শোনার সময় অন্যদিকে মনোযোগ দেবেন না।

আমরা অনেক সময় কথা বলতে গিয়ে শ্রোতার দিকে তাকাই পর্যন্ত না। মোবাইল অঁতোই কিংবা মাথা নিচু করে থাকি। এটা মানুষের আগ্রহ নষ্ট করে। তাই, কথা বলার সময় যাকে বলছেন তার দিকে তাকিয়ে কথা বলুন। আর যারা শুনছেন তারাও বক্তার দিকে তাকিয়ে তার কথায় মনোযোগ দিন।

৬. নেগেটিভ বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখাবেন না।

কারও সাথে কথা বলা কিংবা কারও কথা শোনার সময় কখনও এমন কোনো কারও আচরণ করবেন যাতে বক্তা বা শ্রোতা বুঝতে পারেন যে আপনার তার সাথে সতা বলা কথা শোনার বেলায় আগ্রহ নেই। এরূপ আচরণের মধ্যে হাই তোলা, অন্যদিকে তাকিয়ে থাকা, নিশ্চুপ থাকা অন্যতম। এই আচরণগুলো করা যাবে না। হাসিমুখে এবং মনোযোগ দিয়ে কথা বলুন, শুনুন, জবাব দিন।

৭. মাঝে মাঝে অবাক হওয়ার ভান করলেও মন্দ হয় না।

কেউ কোনো কথা বা আইডিয়া শেয়ার করতে চাইলে মনোযোগ দিয়ে শুনুন। কথা শোনাটাও অনেক বড় একটা স্কিল। আপনার জানা কোনো তথ্য বা আইডিয়া পুনরায় শেয়ার করা হলেও মাঝে মাঝে অবাক হবার ভান করে দেখতে পারেন। আপনার একটুখানি ভান যদি কাউকে খুশি করে দেয় তাহলে এইটুকুন ভান তো করাই যায়।

৮. কখন থামা উচিত বুঝবার চেষ্টা করুন।

কখন কথোপকথন শেষ করা উচিত সেটা বোঝার কিছু উপায় আছে। নেক্সট কবে দেখা হচ্ছে?, কিংবা কার্ড বিনিময়, হ্যান্ডশেক করা এই কাজগুলো সাধারণত কথোপকথনের সমাপ্তির লক্ষণ। এই ব্যাপারগুলোতে নজর রাখা উচিত।

এই কথাগুলো বা কাজগুলো হয়ে গেলে বুঝতে হবে এরপরে আর কোনো কথা বলা অনুচিত।

এখন থেকে কথা বলা ও শোনার সময় এই ট্রিকগুলো কাজে লাগাতে পারলে আপনি ধীরে ধীরে একজন আদর্শ বক্তা এবং শ্রোতা হয়ে উঠবেন।

*

সাবধান : আপনি কি একজন Conversation Monster?

আপনার আমার আমাদের সবার আশেপাশেই এমন কিছু মানুষ আছেন যাদের কথাবার্তা আর আচার-আচরণে কিছু সাধারণ অসঙ্গতি আছে যেটা ওই মানুষগুলোর সাথে আমাদের কথোপকথনে আগ্রহ কমিয়ে দেয়। কিছু নমুনা দেখানো যাক :

১. ইয়ে মানব : এরা সব বাক্যে একটা করে ইয়ে জুড়ে দেয়। এবং বেশ অদ্ভুতভাবে ওই ইয়ে টা ঘুরেফিরে সেই আসল কথার প্রতিস্থাপক।

ধরা যাক, কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে তার গ্রামের বাড়ি কোথায়? ই মানবের এর উত্তর হবে ইয়ে- তে। আরে বাপু আপনি যার সাথে কত বলছেন সে কি খাতা কলম নিয়ে অংক করতে বসেছে নাকি যে লাইনের পর লাইন ধরে ভেবে চিন্তে আপনার ইয়ে এর মান বের করবে।

২. উড়ে এসে জুড়ে বসা মানব : ধরা যাক, কথা বলছিলেন ক্রিকেট নিয়ে। উড়ে এসে জুড়ে বসা মানব নিজের সাথে কাঁধে করে উইম্বলডনের গল্প নিয়ে উড়ে এসে জুড়ে বসবে।

কথা হলো, টেনিস বল টেপে মুড়িয়ে ক্রিকেট খেলা পর্যন্ত হজম করা গেলেও ক্রিকেটের আড্ডায় কেউ টেনিস ঢুকিয়ে দিলে ব্যাপারটা হজম করতে একটু সমস্যা হয়ই।

৩. বাচাল : এদের কথা যদি একবার শুরু হয় তাহলে আপনার জন্যে শুভকামনা। উনি শুধু বলেই যাবেন, আপনার শোনা বা না শোনায় তার কিছু আসে যায় না।

৪. আজীবন সম্মান করে যাওয়া মাটির মানুষ : এই মানুষগুলো জীবনেও কারও চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলবে না। কোনো এককালে কোনো এক গুনীজন তাদের মস্তিষ্কে সম্মান প্রদর্শনের আরেক নাম চোখের দিকে না তাকানো।- এমন একখানা অদ্ভুত ধারণা প্রবেশ করিয়েছিলেন। এবং তারাও অনুগত চিত্তে উহা বেদবাক্যের মতো মেনে চলছেন।

৫. আমি মানব : এই আমি মানব এর জীবনে কেবল একজনই আছেন। সেটা হলো আমি! ওনার জীবনে উনি নিজে বাদে আর কিছু নাই। সবার সব কথা আর কাজের মধ্যে নিজের ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছাকৃত প্রবেশের মাধ্যমে তারা নিজেদের জীবনের সার্থকতা খুঁজে পান।

৬. মোবাইল আসক্ত : আমি মানব এর মতো এই মহামানবের জীবনেও সম্বল একটাই। সেটা হলো ফোন। সারাক্ষণ ফোনের মধ্যে সাঁতরে বেড়ায় এরা।

৭. নো প্রাইভেসি : এরা কারণে অকারণে মানুষজনকে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে বেড়ায়। নিজের চরকা বাদে অন্য সকলের চরকা নিয়ে তাদের বেজায় কৌতূহল। বেতন, পরিবার, রিলেশনশিপের মতো সংবেদনশীল ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলোতে এদের অনেক আগ্রহ।

৮. চুলকানি রোগী : কথা বলুক কিংবা শুনুক এদের হাত হয় মাথায় নয় ঘাড়ে নয় কান চুলকাতে ব্যস্ত থাকে।

৯. খেই হারানো- মানব : এই বান্দারা কথার মাঝখানে হারিয়ে যায়। মনোযোগ দিয়ে কখনও কথা শোনে না। এদের মনোযোগ বক্তা ছাড়া অন্য সবখানেই থাকে।

পাঠক এবার আপনার জন্যে প্রশ্ন, আপনি কি এদের কারও মতো? তাহলে আপনাকে বলছি, সময় থাকতে বদলে ফেলুন বদভ্যাস। নয়তো আপনার সাথে কথা বলার আগ্রহ সবারই কমে যাবে।

*

সবার প্রিয় হতে চান?

সবার প্রিয় হয়ে উঠতে কে না চায়? আমাদের আচরণ, অভ্যাস আমাদের ব্যক্তিত্বের প্রকাশক। আপনার কিছু ছোট অথচ সাধারণ বৈশিষ্ট্য আপনার গ্রহণযোগ্যতা সবার কাছে অনেকটা বাড়িয়ে দিতে সক্ষম। চলুন জেনে নেওয়া যাক, সবার প্রিয় হয়ে ওঠার ৫টি কার্যকর কৌশল

১. আগে দর্শনধারী এরপর গুনবিচারী।

নিজের পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-আচরণ, কথাবার্তা এই ব্যক্তিত্ব নির্দেশক কাজগুলো আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলতে পারে যদি এ বিষয়গুলোতে আপনি সঠিকভাবে সময় দেন। সবখানে আরাম খুঁজতে যাওয়াটা অযৌক্তিক। এমন কোনো কাজ বা আচরণ করবেন না যেটা আপনার সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে। সোজা হয়ে দাঁড়ান, মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। কথা বলুন সামনের দিকে ঘুরে শ্রোতার চোখের দিকে তাকিয়ে।

যতই বলি না কেন, Dont Judge a book by its cover. এর মতো আগে দর্শনধারী এরপর গুনবিচারী। ও সত্যবচনই বটে।

তাই নিজের পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-আচরণ, অঙ্গভঙ্গি, পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সতর্ক হোন। আত্মবিশ্বাসী, গোছানো, পরিপাটি ও সুন্দর থাকুন।

২. আশপাশের পরিবেশের ব্যাপারে সজাগ হোন।

চারপাশের পরিবেশ ও মানুষজনের প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন হোন। তারা ৯ ধরণের মানসিকতার, তাদের আগ্রহের জায়গা কোনটি, তাদের বলেন, ব্যাপারগুলো নিয়ে ধারণা থাকলে অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা ও কাজকর্ম কম হবে। একুশ শতকের অন্যতম প্রয়োজনীয় স্কিল Emotional intelle এর একটি প্রধান দিক হলো এই Self awareness. কখন কোন জায়গy কোন মানুষকে কোন কথাটা কীভাবে বলতে হবে সেটা নিয়েও যাতে আপনার একটা ধারণা থাকে।

তাই নিজের চারপাশ, পারিপার্শ্বিক মানুষ সম্পর্কে ধারণা রাখুন। সে অনুযায়ী কথায় ও কাজে প্রাসঙ্গিক হোন।

৩. শুনুন বোঝার জন্যে।

আমরা অধিকাংশ যতটা না শ্রোতা তার চাইতে বেশি তর্কপ্রিয়। আমরা উত্তর দিতে ভালোবাসি। কথার পিঠে কথা বলতে ভালোবাসি। তর্ক করতে ভালোবাসি। অথচ সবার প্রিয় হওয়ার জন্য অন্যতম কার্যকর দিক হলো একজন আদর্শ শ্রোতা হতে পারা। তাই কথার পিঠে কথা যুক্ত করে নিজেকে সবার কাছে তর্কপ্রিয় হিসেবে তুলে ধরার চাইতে বক্তা কী বলতে বা বোঝাতে চাইছেন সেটা ঠান্ডা মাথায় মনোযোগ সহকারে শুনে বোঝার চেষ্টা করুন।

আর সব কথারই উত্তর দিতে হবে অমনও তো কোথাও বলা বা লেখা নেই। তাই তর্ক করা বা উত্তর দেবার জন্যে নয় কথা শুনুন বোঝার জন্যে। তাহলেও সবার প্রিয় হয়ে উঠতে পারবেন।

কথায় বলে, Just because you are right that does not mean I am wrong. আর ইংরেজি ৯ কে উল্টো দিক থেকে দেখতে ইংরেজি ৬ এর মতোই লাগে। তাই কে কোন ব্যাপারটা কোন দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করছে। সেটাও দেখা জরুরি। আমরা প্রতিটা মানুষ আলাদা, আমাদের চিন্তাভাবনা আলাদা, দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। তাই মতভেদ হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। মতভেদ হলেই তর্কে জড়ানোটা খুব একটা ভালো সিদ্ধান্ত কখনই নয়।

৪. সহমর্মিতা দেখান।

আমাদের মধ্যে দিন দিন সহানুভূতি, সহমর্মিতা কমে যাচ্ছে। আমাদের কাউকে নিয়ে ভাবার সময় নেই, কারও কথা শোনার সময় নেই। ক্রমশ যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি আমরা। আমরা আমাদের আশেপাশের কারও আনন্দে। হই না, তাদের কষ্টে সমব্যথী হই না। এমনকি আমাদের ঠিক পাশের মানুষটার মনের মধ্যে কী চলছে সেটা আমাদের রা। আর আমরা জানার চেষ্টাটাও করি না। কারণ কারও জন্যে আমাদের সময় নেই। আমরা অনেক ব্যস্ত। অথচ আমাদের আশেপাশের সউই হয়তো তার সমস্যার কথাটা খুলে বলতে পারলে হাঁফ ছেড়ে বাচতো।

আপনার কাছে কেউ আগ্রহ নিয়ে কিছু বলতে আসলে এটা তো আমি আগে একেই জানি! বা এই সমস্যায় আমি কত পড়সি! বলে তার জানা, শেখা বা সমস্যাটাকে উড়িয়ে দেবেন না।

নিজের আশেপাশের কাছের মানুষ, বন্ধু, আত্মীয়ের দিকে নজর দিন। ওদের সমস্যার কথা শুনুন। সবসময় সাহায্য করতে নাই বা পারলেন কিন্তু কখনও কখনও যদি কারও সমস্যার কথা গুরুত্ব সহকারে শোনা হয় তাহলেও অপর মানুষটা অনেকখানি হালকাবোধ করেন। আর এতে করে আপনিও হয়ে উঠতে পারবেন অনেকের কাছের, নিজের আর ভীষণ প্রিয় কেউ।

৫. মহানুভবতা সংক্রামক।

সালাম, কুশলাদি বিনিময়ের মতো ছোট ছোট মহান অভ্যাস আপনাকে অনেকের থেকে আলাদা করে তোলে। এই কথাটা আমি প্রায়ই বলি। আমাদের বাবা আমাদের বন্ধুদেরকে দুই ক্যাটাগরিতে ভাগ করে রেখেছেন। আর ক্যাটাগরিটাও করা হয়েছে কারা দেখা হলে সালাম দেয় আর কারা দেয় সেটার ওপরে ভিত্তি করে। ব্যাপারটা বেশ মজার কিন্তু।

আপনার করা ছোট্ট কিছু সুন্দর ব্যবহার আর আচরণ যদি অন্য কারও দিন ভালো করে দেয় তাহলে ওই মানুষটার চোখে আপনার প্রিয় হয়ে ওঠাটা খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়।

চেষ্টা করুন সালাম দেবার, পরিচিতদের সাথে নিয়মিত কুশল বিনিময় করার, হাসিমুখে কথা বলার, ধন্যবাদ দিন সময়ে-অসময়ে, প্রশংসা করুন যেকোনো ভালো কাজের। দেখবেন আপনার এই ভালো দিকগুলো ছড়িয়ে পড়বে আপনার আশেপাশের মানুষগুলোর মাঝেও।

এখন থেকেই একটু একটু করে ওপরের পাঁচটি দিক নিয়ে নিয়মিত কাজ করা শুরু করুন। দেখবেন আশপাশের প্রতিটা মানুষ আপনাকে কত সহজে আপন করে নিচ্ছে।

*

ইংরেজি : ভাষা নাকি বিষয়?

ইংরেজি হলো একটি ভাষা। আর ভাষার কাজ হলো কমিউনিকেট অথচ আমরা ইংরেজিকে ব্যবহার করি একটি বিষয় হিসেবে। এবং তা লক্ষ্য হলো এ প্লাস পাওয়া। আর এজন্যে আমরা অনেক অনেক গ্রামাতে নিয়ম আর উদাহরণ পড়ি। এবং হয়তো শেষ পর্যন্ত এ প্লাসও পাই। আমরা জানি না এই গ্রামারগুলোর বাস্তবিক প্রয়োগ কেমন হয়। কোনটান সাথে কোনটা কীভাবে সম্পর্কযুক্ত।

ইংরেজির প্রয়োজন কিংবা গুরুত্ব কি মোটে এইটুকুই? এ প্লাস পেলেই হয়ে গেলো?

আমি আমার জীবনে বহু ইভেন্টে গিয়ে স্টুডেন্টদেরকে গিয়ে একটা খুবই সাধারণ প্রশ্ন করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত খুব কম সংখ্যকই সেই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

Article, Parts of Speech তো সেই শৈশবে পড়ে আসা ব্যাকরণ। আমার প্রশ্ন ছিলো, Article কোন Parts of Speech?

এই প্রশ্ন শোনামাত্র বেশিরভাগই বেশ বিভ্রান্ত হয়ে যায়। দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়। গুটিকয়েক মাত্র সঠিক উত্তরটা দিতে পারে।

আচ্ছা, চিন্তা করে দেখুন তো! আমি যদি এখন বলি,

I have a book.

অর্থাৎ আমার একটি বই আছে। এখানে, book এর আগে a আছে। এই a হলো Article! আর এখানে a আমার কথা কিংবা বক্তব্যের অংশ। তার মানে Article I Parts of Speech! Article কোন Parts of Speech? Article Adjective.

কীভাবে? সেটাও বলছি।

Adjective কী? Adjective হলো যেটা Noun বা Pronoun এর দোষ-গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ নির্দেশ করে! A book, An ant, The man এখানকার Article গুলো প্রতিটা Noun এর সংখ্যা নির্দেশ করছে। তাই Article হলো Adjective.

এই যে আমরা ছোটবেলায় Article, Parts of Speech এতবার পড়েছি, কিন্তু এই দুটোর মাঝেও যে সম্পর্ক আছে সেটা কিন্তু আমরা জানি না।

Tag Question এ আমরা পড়েছি,

He is a boy, isnt he?

কিন্তু কেন হয় এরকম সেটা আমাদের অজানা।

আসল কথা হলো, ইংরেজি নামের ভাষাটাকে বিষয় হিসেবে ব্যবহার করতে ভাষার আসল উদ্দেশ্যটাকেই গুলিয়ে ফেলেছি। ইংরেজিতে কথা বলার প্রসঙ্গ এলেই আমাদের ঘেমেনেয়ে বিশ্রী অবস্থা হয়। আমরা পালিয়ে বাঁচতে উল্টো দিকে দৌড় দেই।

যেহেতু, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার একদম শুরু থেকেই ইংরেজিকে একটা ভাষা হিসেবে আমাদের কাছে উপস্থাপন করা হয়। তাই ভাষা ইংরেজিকে তাতাস্থ করবার দায়িত্বটা আমাদের নিজেরই। কারণ আপনি যদি এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে ইংরেজিতে কথা বলতে অস্বস্তিতে ভোগেন তাহলে প্রতিযোগীতার দৌড়ে আপনাকে পিছিয়ে পড়তে হবে অনেকের চেয়ে। চাকরি পাবার আগে সিভি লিখতে গিয়ে, ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে চাকরি পাওয়া আটকে যাবে। চাকরি যদি পেয়েও যান, প্রেজেন্টেশন দিতে গিয়ে, ইমেইল করতে গিয়ে পদে পদে আপনাকে বিব্রত হতে হবে। ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে গিয়ে ইংরেজিতে কথা বলতে না পারার কারণে প্রমোশনটা ঝুলে যাবে। সবখানে অপদস্ত হতে হবে। তাই, শিক্ষাব্যবস্থাকে আসামী না করে এবার মাঠে নামুন।

কী করা যেতে পারে?

৪-৫ জন বন্ধু মিলে একটা গ্রুপ বানান। হোক সেটা আন্ডার গ্রুপ, সমস্যা নেই। আড্ডা দিন তবে ইংরেজিতে। নিয়ম করে প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট করে ইংরেজিতে গল্প করুন। এতে করে দেখবেন আপনার ইংরেজিতে কথা বলার জড়তা কমে যাবে, কথা বলার দ্রুততা বেড়ে যাবে। কয়েক মাস শেষে নিজের পরিবর্তন দেখে নিজেই চমকে যাবেন।

হ্যাঁ, আপনার মনে হতেই পারে যে বন্ধুরা পচাবে। কিন্তু আপনি তো তাদের সাথেই গ্রুপটা বানাবেন যারা নিজেরাও আপনার মতো শিখতে আগ্রহী। তাই না? তখন আপনারা নিজেরা নিজেরা ভুল করলেও কেউ কাউকে পচাবেন। আর এরপর যখন আপনাদের ইপ্রুভমেন্ট অন্যদের চোখেও পড়বে তখন অন্য যে বন্ধুটা আপনাকে প্রথম ব্যঙ্গ করেছিলো, সে ও চাইবে আপনাদের দলে ভিড়তে। এভাবে দেখবেন আপনাদের গ্রুপটা বড় হচ্ছে। আরেকটা কাজ করতে পারেন কিন্তু। যে ৪-৫ জন মিলে আড্ডার গ্রুপ বানিয়েছিলেন, তারাই একটা চ্যাটিং এর গ্রুপ খুলে ইংরেজিতে চ্যাটিং শুরু করে দিন না। দেখবেন ইংরেজি লেখার স্কিলটাও বেশ তাড়াতাড়ি ভালো হচ্ছে। পরীক্ষা তো দেই একদিন। চ্যাটিং করি সারাদিন। তাহলে কোনটা বেশি কাজে দেবে? বাংলিশে চ্যাট করে আপনারও কোনো লাভ নেই। আপনার বন্ধুদেরও। তাই ইংলিশে চ্যাট করে যদি নিজের কমিউনিকেশন স্কিলটা ভালো করা যায় তাহলে কেন নয়?

আর হ্যাঁ, এই চর্চাগুলো নিয়মিত করতে হবে কিন্তু। তা না হলে ফলাফল পাবেন না। তো আজ থেকেই শুরু করে দিন। দেখবেন সম্ভাবনাগুলো ঘুরে। বেড়াবে আপনার আশেপাশেই।

*

সমালোচনার পূর্বশর্ত!

মানুষ জাজমেন্টাল প্রাণি। আর আমাদের কথাবার্তার টপিকও হলো ঘুরে ফিরে মানুষই। মানুষকে নিয়ে কথা বলতে, নিন্দা করতে, জাজ করতে বড় ভালোবাসি আমরা। কাউকে জাজ করবার বেলায় খুব একটা সময় নেই না আমরা। শোনা কথায় কান দিয়ে মানুষকে ভুল বোঝার মতো ভুলটাও প্রায়শই হয়ে যায় আমাদের। তা কী করে এই ভুল থেকে বেরিয়ে আসা যায়? একটা গল্প বলা যাক! একবার এক লোক সক্রেটিসের কাছে তাঁর বন্ধু সম্পর্কে একটা কথা বলতে গেলো। তিনি প্রত্যুত্তরে তাকে জিজ্ঞেস করলেন তার আনা তথ্যটি ৩ ফিল্টার টেস্টে পাস করবে কি না? লোকটির ৩ ফিল্টার টেস্ট নিয়ে ধারণা ছিলো না! তাই সক্রেটিস তিনটি প্রশ্ন করে ৩ ফিল্টার টেস্টের ব্যাপারে বুঝিয়ে দিলেন।

১. তথ্যটি কি সত্য?

২. তথ্যটি কি কারও সম্পর্কে ভালো কথা?

৩. তথ্যটি কি প্রয়োজনীয়?

লোকটির প্রথম প্রশ্নের উত্তর ছিলো সত্য না মিথ্যা সেটা তার অজানা। সেটি আসলে শোনা কথা।

দ্বিতীয় উত্তর ছিলো, এটি আসলে কারও সম্পর্কে খারাপ কথা।

তৃতীয় উত্তর ছিলো, এটি আসলে শ্রোতার না জানলেও ক্ষতি নেই।

আমাদের শোনা অধিকাংশ কথাই আসলে এমন। তিন ফিল্টারের একটা ফিল্টারও অতিক্রম করে না। অথচ তবুও আমরা শোনা কথায় কান দিয়ে একটা মানুষকে চট করে জাজ করে বসি! এখন থেকে এই অভ্যাসটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

*

খুদেবার্তার আদবকায়দা

দুইটা নমুনা দেখাই বরং

1. Bro wanna talk. Its urgent. Call me.

2. This is my new number. Save it.

ঝামেলাটা এখানে কোথায় বলুন তো? মনে হয় ধরতে পেরেছেন। আচ্ছা বলেই দেই। এখানে নাম পরিচয় কিছুই নেই। কথা হলো কোনো অপরিচিত নাম্বার। থেকে এ ধরণের খুদেবার্তা আসলে মেজাজ খারাপ হওয়াটা কি অন্যায়?

চলুন কথা না বাড়িয়ে বরং খুদেবার্তা লেখার কায়দাকানুনগুলো শিখে ফেলি।

১. পুরোনো কথাই বলি। নাম লিখুন। যাকে খুদেবার্তা পাঠাচ্ছেন তাঁর নামটা উল্লেখ করুন শুরুতে। আমাদের নাম আমাদের খুব প্রিয়। আর নাম উল্লেখ করা হলে প্রাপক অন্তত নিশ্চিত হবে যে মেসেজটা আসলে তাকেই পাঠানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক বা সুপারভাইজারের নাম ভুল লেখার কারণে পুরো রিপোর্ট নতুন করে করার তিক্ত অভিজ্ঞতাও আছে অনেকের। তাই নামের বানানটা ঠিকঠাক লিখবেন।

২. একটা কমার (,) অনেক ক্ষমতা। ভুল জায়গায় কমা কিংবা একেবারেই কমা ব্যবহার না করলে আপনার কথার মানেটাই বদলে যেতে পারে।

উদাহরণ দেই

আয়মান ভাইয়া, একটা সমস্যা!

আয়মান ভাইয়া একটা সমস্যা!

তফাতটা বুঝলেন তো?

৩. কী প্রয়োজন বিস্তারিত গুছিয়ে বলুন।

৪. প্রাপকের সময় আর ব্যস্ততাকে সম্মান দেখান।

৫. কাজসংক্রান্ত কথা হলে পরে কখন আর কীভাবে যোগাযোগ করলে প্রাপকের সুবিধা সেটা জেনে নিন।

৬. সব লেখা শেষ হলে একটা লাইন গ্যাপ দিয়ে নিচে, ধন্যবাদ দিয়ে নিজের পরিচয়টা দিয়ে দিন। পরিচয় বলতে নাম, পদবি, কর্মরত সংস্থার নাম লিখে দিলেই হবে। আর যদি শিক্ষার্থী আর প্রতিষ্ঠানের কোনো ক্লাবের সদস্য হয়ে থাকেন তাহলে ক্লাবের নাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামটা উল্লেখ করে দিলেই চলবে। ক্লাবের সদস্য না হলেও সমস্যা নেই, কোন ক্লাস আর স্কুল লিখলেই যথেষ্ট।

এখন থেকে খুদেবার্তা লেখার সময় এই বিষয়গুলোতে খেয়াল রাখবেন। কারণ, আপনার খুদেবার্তাটাই প্রাপকের কাছে আপনার ফার্স্ট ইম্প্রেশন তৈরি করে দেবে। এটি পড়েই প্রাপক সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি আপনাকে সময়। দেবেন নাকি না।

*

টার্গেট অডিয়েন্স আসলে কারা?

পুঁথিগত সংজ্ঞা না দিয়ে সোজা করে বলি, টার্গেট অডিয়েন্স হলো আপনার কাজ বা প্রোডাক্ট যাদের জন্যে বানানো। এই যে ভিডিও বানানোর পর ভিউ কেন বাড়ে না সেটা ভেবে মাথার চুল ছিঁড়ছেন, ভেবে দেখেছেন কাদের জন্যে ভিডিওটা বানানো, কাদের জন্যে ভিডিওটা কাজে আসবে? সেই জায়গায় ভিডিওটা আদৌ পৌঁছেছে নাকি?

দৈনিক পত্রিকাগুলোর উদাহরণ দেই। তাহলে আরও সহজ হবে। প্রায় সব দৈনিক পত্রিকাগুলোর সাথেই সপ্তাহে ৭ দিন অতিরিক্ত একটা ছোট ট্যাবলয়েড দেওয়া হয়।

প্রথম আলোর কথাই ধরুন। সপ্তাহে ৭ দিন ৭টা আলাদা আলাদা ট্যাবলয়েড দেওয়া হয়।

এই একেকটা ট্যাবলয়েডে একেক রকমের বিজ্ঞাপন স্থান পায়। মূল পত্রিকারও একেক পৃষ্ঠায় একেক রকমের বিজ্ঞাপন স্থান পায়। কেন এটা ভেবেছেন?

এই একেকটা ট্যাবলয়েড আর পৃষ্ঠার টার্গেট অডিয়েন্স ভিন্ন। তাদের চাহিদাও ভিন্ন। এটাই আসল কারণ। আর এ কারণেই পড়াশোনা পাতা কিংবা শিক্ষার্থীদের জন্যে আসা ট্যাবলয়েডে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্টুডেন্ট স্কলারশিপের, স্টুডেন্ট ব্যাংকিং আর স্টুডেন্ট লোনের মতো বিজ্ঞাপন থাকে। অন্যদিকে যেই ট্যাবলয়েড বা পৃষ্ঠার টার্গেট অডিয়েন্স নারী তাদের জন্যে সেখানে শ্যাম্পু, ডিটারজেন্ট, মশলার বিজ্ঞাপনই থাকে।

তাই আপনি যে কাজটা করছেন বা যেই পণ্যটা বানিয়েছেন সেটা কাদের জন্যে সেটা খুঁজে বের করুন। আর তারপর সেটা জায়গামতো পৌঁছানোর জন্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন। একটা নির্দিষ্ট পণ্যের চাহিদা সবার থাকবে এমনটা কখনই হবে না। তাই, প্রচারণা চালান বুঝেশুনে।

*

উপস্থাপক হতে চান?

বর্তমান সময়ে পেশা হিসেবে উপস্থাপনা অর্থাৎ অনুষ্ঠান সঞ্চালনার জনপ্রিয়তা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। আর এই উপস্থাপনা আর সঞ্চালনা আমারও প্রিয় কাজগুলোর একটা। তা কীভাবে একজন আত্মবিশ্বাসী উপস্থাপক হয়ে ওঠা যায়? আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আপনাদের জন্যে রইলো কিছু পরামর্শ!

১. কিউ কার্ড এডিট করে নিন : বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইভেন্টের কিউ কার্ডের লেখক আর বক্তা ভিন্ন হয়ে থাকেন। লেখকের লেখার ধরণ আর বক্তার বলার ধরণে অমিল থাকাটাও তাই অস্বাভাবিক নয়। কিউ কার্ডের স্ক্রিপ্ট প্রয়োজনমতো এডিট করে নিন। স্ক্রিপ্টে লেখা কথা বলুন নিজের মতো করে। এতে করে আপনাকে আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী মনে হবে।

২. মাইক্রোফোন টেস্টিং : একেক একমের ইভেন্টে একেক ধরণের মাইক্রোফোন থাকে। একেকটার কাজ আবার একেক রকমের। মাইকগুলোকে নিজের সাথে অ্যাডজাস্ট করে নিন যাতে কথা ঠিকমতো শোনা যায়। মঞ্চে ওঠার আগেই মাইক্রোফোন টেস্টিং সেরে ফেলুন। কথা বলার সময় মাইক্রোফোনটা যেন সঠিক অবস্থানে স্থির রাখা হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে!

৩. অলসতা দূরীকরণ : লাঞ্চ বা যেকোনো স্ন্যাকস ব্রেকের পরপর দর্শকদের মধ্যে ঝিমুনি চলে আসে। তাই, খাওয়াদাওয়া আর ব্রেকের পর দর্শকদের আলস্য দূর করতে একটু আধটু মজার অ্যাক্টিভিটি করাতে পারেন।

৪. স্ক্রিপ্ট হুবহু না পড়াই ভালো : স্ক্রিপ্ট কিন্তু বেদবাক্য নয় যে পরিবর্তন, পরিমার্জন কিংবা সংশোধন করা যাবে না। গত্বাঁধা স্ক্রিপ্টই হুবহু পড়ে গেলে ব্যাপারটা বেশ একঘেয়ে হয়ে যাবে। তাই মাঝে মাঝে স্ক্রিপ্টের বাইরেও কথা বলুন।

৫. দর্শকদের নিয়েও ধারণা রাখুন : দর্শকদের নিয়ে একটুখানি গবেষণা মঞ্চে ওঠার আগেই করে নিন। মিলিয়ে নিন যেই কথা, তথ্য, গল্প কিংবা হিউমার আপনি দিতে যাচ্ছেন সেগুলো তাদের জন্যে প্রাসঙ্গিক কি না। পরে দেখা যাবে ঐ অঞ্চলের মানুষদের সামনে তাদের নিজস্ব কোনো সংস্কৃতি নিয়েই এমন কোনো মজা আপনি করে বসেছেন সে তাদের জন্যে একটু অপমানজনক ছিলো।

৬. মঞ্চে উঠে চর্চা করুন : মঞ্চে দাঁড়িয়ে অনেক মানুষের সাথে কথা বলা কখনই কোনো মামুলি ব্যাপার নয়। এটা নিয়ে ভয়ভীতি থাকতেই পারে। ফাইনাল ইভেন্টে মঞ্চে দাঁড়িয়ে কাঁপাকাপি করার চেয়ে বরং মঞ্চভীতি কাটাতে আগেভাগেই মঞ্চের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিন। অনুষ্ঠান শুরুর আগেই কয়েকবার মঞ্চে উঠে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। ভীতি কেটে যাবে।

৭. শুরুটা করুন চমকে দিয়ে : শুরুর বক্তব্যটা হতে হবে প্রাণবন্ত। গল্প, উক্তি, গান, কোনো আঞ্চলিক ঐতিহ্য যেকোনো কিছু দিয়ে শুরু করতে পারেন। দর্শক চমকে যাবে। শুরুতে দেওয়া চমক পুরো অনুষ্ঠানজুড়েও বজায় থাকবে।

৮. ঝিমিয়ে পড়া দর্শকদের জাগাতে কৌতুক বলতে পারেন : মজার মজার কিছু জোক বা স্টোরি আগেভাগেই রেডি রাখুন। ঝিমিয়ে পড়া দর্শকদের জাগাতে কাজে লাগবে।

৯. পোশাক নির্বাচনে সতর্ক থাকুন : ইভেন্টের ধরণ অনুযায়ী ড্রেসকোড মেইনটেইন করেন। কর্পোরেট ইভেন্টে ফরমাল পোশাক আর ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশীয় পোশাক পরতে পারেন।

১০. আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার আনবে বৈচিত্র্য : ইভেন্টে অঞ্চল অনুযায়ী আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করতে পারেন। তুলে ধরতে পারেন প্রাসঙ্গিক কোনো আঞ্চলিক ঐতিহ্য। দর্শক মজা পাবেন।

১১. সমাপ্তি হোক বিশেষ : কোনো ইভেন্টের শুরুটা যতখানি গুরুত্বপূর্ণ তেমনি শেষটাও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। তাই কেবল শুকনো ধন্যবাদ দিয়ে ইভেন্ট শেষ না করে চেষ্টা করুন কিছু কল টু অ্যাকশন অর্থাৎ ইভেন্টের পর দর্শকদের করণীয় কী সেটা নিয়ে একটু ধারণা দিতে। ওপরে উল্লেখ করা পরামর্শগুলো পুরোপুরি আমার নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তুলে ধরা। আমি নিজে উপস্থাপনা করার সময় এই কাজগুলো করার চেষ্টা করি। আশা করি আপনাদেরও কাজে লাগবে। ভবিষ্যৎ উপস্থাপকদের জন্যে শুভকামনা!

*

পাবলিক স্পিকিং নিয়ে ভয়?

যত যাই বলা হোক না কেন, পাবলিক স্পিকিং আর প্রেজেন্টেশন নিয়ে আমাদের ভয়টা বেশ পুরোনো। দুটো কাজেই অনেক মিল থাকলেও একটুখানি পার্থক্যও আছে। প্রেজেন্টেশন ব্যাপারটা এখনও ক্লাসরুম, মিটিং রুমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে এই প্রেজেন্টেশন জিনিসটাই যখন বড় কোনো কনফারেন্স রুম বা মিলনায়তনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে অনেক মানুষের সামনে দিতে হয় তখন সেটা আবার পাবলিক স্পিকিং হয়ে যায়। পুঁথিগত সংজ্ঞার দিকে না হয় আর না গেলাম। চলুন জেনে নেই কিছু পরামর্শ যেগুলো আপনাকে একজন চমৎকার বক্তা হিসেবে তুলে ধরতে সাহায্য করবে।

১. কীভাবে শুরু করবেন : বক্তব্যের শুরুতে দর্শকের মনোযোগ আর বক্তার ভয় দুটোই থাকে একেবারে চূড়ায়। তাই এই ব্যাপারটা কাজে লাগাতে হবে। এই প্রথম ১০-১৫ সেকেন্ডে দর্শক সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবে যে তারা আপনার পরবর্তী কথাগুলো শুনবে নাকি না। তাই শুরুটা এমনভাবে করতে হবে যাতে করে দর্শকের আগ্রহটা জন্মানোর আগেই নষ্ট না হয়ে যায়। গল্প, ফ্যাক্ট, প্রশ্ন, মজার কোনো প্রাসঙ্গিক তথ্য এর যে কোনো কিছু দিয়ে হতে পারে আপনার বক্তব্যের শুরু।

২. বরফ ভাঙ্গার খেলা : আমরা সাধারণত কোনো ইভেন্টে গেলে পরিচিত মানুষদের মধ্যেই ঘুরপাক খাই। বন্ধু বা কলিগ ছাড়া অন্য কারও পাশে বসিও না। একটা বিষয় মাথায় রাখা জরুরি একটা ইভেন্টে কিন্তু মোটামুটি সমমনা মানুষেরাই যায়। তাই আপনার আশেপাশের মানুষগুলো আপনার অচেনা হলেও তাদের আগ্রহ কিন্তু আপনার আগ্রহের সাথে মেলে। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে এখানে উপস্থাপক কী করবে। উপস্থাপক আসলে এই ব্যাপারটাই সবাইকে মনে করিয়ে দেবে যে ইভেন্টের প্রতিটি মানুষের আগ্রহের বিষয়বস্তুটা আসলে একই। দর্শকদের দিয়ে মজার কোনো এঙ্গেজিং অ্যাক্টিভিটি করাতে পারেন যেটা তাদের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ জড়তার বরফটাকে ভেঙ্গে গলিয়ে ফেলবে।

৩. দর্শক নিয়ে গবেষণা : একজন বক্তা হিসেবে আপনার কাজ হবে আপনি কাদের সামনে কথা বলতে যাচ্ছেন তাদের নিয়ে আগে থেকে ধারণা নিয়ে যাওয়া। তাদের পছন্দ, আগ্রহের বিষয়াদি নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করে নিয়ে এরপর সেটার সাথে মিল রেখে নিজের বক্তব্য তৈরি করে ফেলা। এতে করে একটা সুবিধা হবে, আপনি দর্শকের সামনে কোনো অপ্রাসঙ্গিক কথা, উক্তি বা তথ্য বলে ফেলার ঝুঁকি কম থাকবে।

৪. দর্শকদের অংশগ্রহণ : দর্শকদের মধ্যকার জড়তা ভেঙ্গে ফেলার মানে কিন্তু এই নয় যে এরপর আপনি একাই শুধু কথা বলে যাবেন আর দর্শক সেগুলো শুনে যাবে। আপনার বক্তব্যের সাথে দর্শকদের কানেক্ট করুন। ছোট ছোট কাজ করতে বলুন। একটা উদাহরণ দিলে পরিষ্কার হবে, কিছুদিন আগে TEDx এ একটা ছোট্ট বক্তব্য দেবার সুযোগ হয়। আমার। সেখানে কথা বলেছিলাম কী করে আমাদের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে। রূপ দেওয়া যায়। ধরা যাক আপনিও স্বপ্ন নিয়েই কথা বলছেন। স্বপ্নগুলোকে লিখে ফেললে সেটা লক্ষ্যে পরিণত হয়। একটা কাজ করুন না। আপনার দর্শকদেরকেও বলুন নিজের স্বপ্নটা চট করে তারিখসহ লিখে ফেলতে! ব্যস, দর্শক কানেক্টেড!

৫. চোখাচোখি : কারও চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা কারও কারও কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি। কিন্তু একজন পাবলিক স্পিকার বা উপস্থাপক তো আর মঞ্চের ফ্লোরের দিকে তাকিয়েও কথা বলতে পারবেন না তাই না? তো করা কী যায়? যে। মিলনায়তন বা হল রুমে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন, সেটার সামনের দিকে কয়েকটা পয়েন্ট সেট করে রাখুন। কথা বলার সময় ঘুরে ফিরে ওগুলোর দিকে তাকান, এতে করে ফ্লোরের দিকে কিংবা কারও চোখের দিকে না তাকিয়েও চোখাচোখি তথা আই কন্ট্যাক্ট মেইনটেইন করা যাবে।

৬. মঞ্চভীতি : মঞ্চে দাঁড়িয়ে অনেক মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের বক্তব্য সবার সামনে তুলে ধরাটা মামুলি কোনো কাজ নয়। এতে ভয়। পাওয়াটাই উল্টো অস্বাভাবিক। ভয়টাকে একবারে বিদায় করা না। গেলেও একটুখানি কমানো সম্ভব। আগেভাগে মঞ্চটার সাথে পরিচিত হয়ে নিন। মঞ্চে উঠে হাঁটাহাঁটি করুন। স্পিচটা বলে প্র্যাকটিস করুন ইভেন্ট শুরুর আগে। কোন কোন পয়েন্টগুলোর দিকে তাকিয়ে আই। কন্ট্যাক্ট মেইন্টেইন করবেন সেটা নির্ধারণ করুন। দেখবেন ভয় অনেকটা কেটে গেছে।

৭. বডি ল্যাঙ্গুয়েজ : আমরা মুখে যতখানি কথা বলি তার চেয়ে অনেক বেশি মনের ভাব প্রকাশ করি আমাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে। আমাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজের মোট দুটো অংশ আছে!

ক. Gesture : কথা বলা কিংবা কাউকে বোঝানোর সময় প্রয়োজনে আমরা অনেকেই হাত নেড়ে বোঝাই বা ব্যাখ্যা করি। এটাই হলো Gesture.

খ. Posture : কথা বলার সময় আমাদের দাঁড়ানো কিংবা বসার ধরণটাই হলো প্রকৃতপক্ষে Posture.

কথা বলার সময় এই Gesture আর Posture-এ যেন ভারসাম্য থাকে সে দিকে নজর রাখতে হবে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলতে হবে।

৮. যেভাবে বক্তব্য তুলে ধরবেন : বক্তব্য দেবার ক্ষেত্রে কী বলছেন তার চাইতে কীভাবে বলছেন সেটা অনেক বেশি জরুরি। আপনার দর্শকদের বয়স, মানসিকতার সাথে মিলিয়ে নিজের কথাগুলো তুলে ধরুন। গল্প বলুন। এমন কিছু করুন যাতে দর্শক সেটার সাথে রিলেট করতে পারে। ভুলেও স্ক্রিপ্ট হাতে নিয়ে মঞ্চে উঠবেন না। দেখেই যদি পড়বেন তাহলে পড়ার প্রয়োজন কী? দেখে দেখে পড়া আর বক্তব্য দেওয়া তো আর এক জিনিস নয়!

৯. টপিক নিয়ে গবেষণা : অধিকাংশ অনুষ্ঠানের বক্তব্যেই বক্তার বক্তব্যের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে ধারণা দেওয়া হয় না। যে বিষয়টা নিয়ে কথা বলা হচ্ছে সেটা নিয়ে বিস্তারিত জানতে হলে কোথা থেকে সাহায্য নেওয়া যেতে পারে সেটা জানানো হয় না। বক্তব্য দেবার আগেই বিষয়বস্তু নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করুন। দেখে নিন আগে এই টপিক নিয়ে কে কী বলেছে। চিন্তা করুন ইউটিউব, টেড টক রেখে মানুষের আপনার কথা শুনে কী লাভ। চেষ্টা করুন যাতে অনলাইনে পাওয়া বক্তব্য আর পরামর্শগুলোর চেয়ে আপনার বক্তব্য আর পরামর্শগুলো আলাদা হয়। সহজ বাংলায় লোকের পয়সা উসুল করতে সাহায্য করুন।

১০. ভেন্যু : দর্শক আর টপিক নিয়ে গবেষণার কথা তো আগেই বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি ভেন্যু নিয়েও একটু আধটু ধারণা রাখলে আখেরে আপনারই সুবিধা। ইভেন্ট শুরুর অন্তত কিছুক্ষণ আগে গিয়ে দেখে নিন ভেন্যুর অবস্থা। আয়োজকদের সাথে পরিচিত হয়ে নিন। দেখবেন জায়গাটা আর অপরিচিত লাগছে না।

১১. স্বরের ব্যবহার : শুধুমাত্র আপনার কণ্ঠস্বরের ওঠানামা করেই আপনি আপনার বক্তব্যে একটা আলাদা মাত্রা যোগ করতে পারেন। ৯ কণ্ঠস্বরের অবস্থা কিন্তু আমাদের মধ্যকার আবেগগুলোকে ফুটিয়ে তোলে। তাই আনন্দ, দুঃখ, বিস্ময়ের মতো আবেগগুলো যখন বক্তবে তুলে ধরবেন তখন নিজের কণ্ঠস্বরটাকেও সাবলীলভাবে কাজে লাগান।

১২. স্পিচ ডিলাইটস : ভেন্যু, দর্শক আর টপিক নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে প্রায়ই দেখবেন এর সাথে প্রাসঙ্গিক কোনো না কোনো মজার ঘটনা, তথ্য পেয়ে যাবেন। এগুলো কাজে লাগান। সুযোগ বুঝে এগুলো। আপনার বক্তব্যের সাথে জুড়ে দিন। দর্শক বেশ মজা পাবে। এই ব্যাপারগুলোকেই বলে স্পিচ ডিলাইটস।

১৩. গল্পের শক্তি : নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রের বিবৃতি মনে না থাকলেও নিউটনের মাথায় আপেল পড়ার পর যে মহাকর্ষ সূত্রটা আবিষ্কৃত হয়েছিল এই ব্যাপারটা আমাদের সবার মনে আছে। এই হলো গল্পের শক্তি। কারও মনে কোনো ব্যাপার বা ঘটনা গেঁথে ফেলতে চাইলে গল্প বলুন। গল্পের ছলে যা বোঝাতে চাইছেন বোঝান। অনেক দিন মনে রাখবে। আপনাকে দর্শক।

১৪. সমাপ্তি : শুকনো ধন্যবাদ দিয়ে আর কত বক্তব্যের শেষ করবেন বলুন তো? বক্তব্যের শেষে ব্যতিক্রম কিছু আনতে চাইলে এই শব্দ দুটোকে অতিক্রম করতে হবে! শুরুর মতো সমাপ্তিটাও করুন দর্শককে আরেক দফা চমকে দিয়ে। গল্প, উক্তি, ফ্যাক্ট, মজার কোনো প্রশ্ন কিংবা দরকারে এতক্ষণ যা যা বলেছেন সেটার সারমর্ম বলুন। অন্তত শুকনো ধন্যবাদের চেয়ে বেশি কাজে লাগবে।

নিজের মতামত, মনোভাব আর আইডিয়াকে সবার সামনে দাঁড়িয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে তুলে ধরতে পারাটা একটা অনেক বড় দক্ষতা। একবার অর্জন করে ফেলতে পারলে দেখবেন একুশ শতকের প্রতিযোগিতার দৌড়ে আপনি কতখানি এগিয়ে!

*

নিজে নিজে কীভাবে অনুশীলন করবো?

যুগে যুগে সবাইকে একটা উপদেশ দেয়া হয়েছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্র্যাক্টিস করো! তাহলে অনেক ভালো করতে পারবে। হ্যাঁ, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কিংবা খালি নিজে নিজে কথা বলে প্র্যাক্টিস করলেও অনেক লাভ। কিন্তু, ডিজিটাল যুগে একটা ডিজিটাল সমাধান তো দেওয়াই যায়, তাই না?

নিজেকে ভিডিও করেন। এবং বিশ্বাস করেন, এটা অনেক কাজে দিবে। আমরা দুই ভাই কয়েক বছর ধরে ভিডিও করে যাচ্ছি। এবং একদম শুরুর ভিডিওগুলোর সাথে এখনকার ভিডিওগুলোর তুলনা করলে আকাশ-পাতাল তফাত দেখতে পাই আমরা। এমন না যে আপনাকে ভিডিও করে আপলোড দিতে হবে। আপনি ভিডিও করে খালি দেখেন। শুধু বাচনভঙ্গি নয়, আপনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজেরও অনেক খুঁটিনাটি আপনার চোখে ধরা পড়বে।

প্রথম প্রথম নিজেকে দেখতে এবং বিশেষ করে নিজের কণ্ঠ শুনতে খুবই অস্বস্তি লাগবে, কিন্তু, খুব দ্রুতই আপনি অনেক কিছু শিখে যাবেন।

আর যদি অনলাইনে ভিডিও আপলোড করতে পারেন, তাহলে মানুষের সামনে কথা বলার আত্মবিশ্বাস পাবেন। মানুষ আপনাকে এমন অনেক সাজেশন দিতে পারবে যেটা আপনার চোখের সামনে থাকলেও আপনি দেখতে পারছিলেন না। এবং হেট কমেন্ট আসা শুরু করলে আপনি নিন্দুকদের সামলানোর টেকনিক শিখে ফেলবেন!

*

আবদারের কমিউনিকেশন

কমিউনিকেশনের একটা বেসিক কন্সেপ্ট আমরা সবাই ছোটবেলা থেকে ব্যবহার করে এসেছি। যেমন, আমাদের যদি কোনো খেলনা দরকার হত তাহলে আমরা দেখতাম যে আব্বু কিংবা আম্মু কখন সবচেয়ে খুশি আছেন। মেজাজ খারাপ থাকলে ধারে কাছেও ঘেঁষা যাবে না। কিন্তু যখনই তারা একটু খুশি থাকবেন, তখনই আব্বু আমাকে ওই গাড়িটা কিনে দাও না আ আ আ!

বাচ্চাকালেই আমরা জানতাম যে মানুষের মুড বুঝে কথা বলতে হয়। কিন্তু বড় হয়ে এই বেসিকটাই আমরা অনেক সময় ভুলে যাই।

কেউ হয়তোবা অনেক কাজের মধ্যে আছে। না বুঝে শুনে, অই দোস্ত! আমার এই কাজটা করে দে না প্লিজ! আমার একটা মুভির টিকেট লাগবে…তুই তো সিনেমা হলের মানুষজনকে চিনিসই…। আপনি কথা শেষ করার আগেই অন্য পাশে বিস্ফোরণ হয়ে যেতে পারে।

এবং এটাই কিন্তু হয় অনেক সময়। আপনি কারও সাথে কথা বলতে গেলেন তো বলা নেই কওয়া নেই, আপনাকে তুলে চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করা শুরু করে দিলো। আপনি ভাবছেন আপনি এমন কী করেছেন যে আপনাকে এভাবে কথা শুনাচ্ছে। আপনিও হয়তোবা মনে কষ্ট পেয়ে বলে ফেললেন, সবা৯ আমাকে পাইসেটা কী! আমি এত কিছু করি তবুও আমাকে কেউ দেখতে পারে না…। …মূল্য কেউ বুঝলো না…না থাকলে তোদের কী হইতে জানিস!…আমার সাথেই কেন সব সময় এমন…।

আসলে আপনি হয়তোবা কিছু করেননি। খালি টাইমবোমা ফাটার সময় পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন আরকি। ওই মানুষটি হয়তোবা সবার কাছ থেকে চাপ নিয়েই যাচ্ছিল। কোনো এক উছিলা, উপায় খুঁজছিলো রাগটা ঝাড়ার জন্য। এবং তাই হয়তোবা আপনার উপর চড়াও হয়েছে। হয়তোবা ভেবেছিল, আপনি কাছের মানুষ বলে রাগ ঝাড়ার ব্যাপারটি বুঝতে পারবেন। কিন্তু, আপনিও যদি দুই-একটা কথা শুনিয়ে দেন, তাহলে তো আগুনে আরও তেল। ঢাললেন শুধু।

মানুষ খারাপ ব্যবহার করলে মাথা পেতে নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। কিন্তু, সব সময় সব জিনিস ব্যক্তিগতভাবে নিয়ে আঘাত পাবেন না। মানুষ আপনার সাথে কীভাবে আচরণ করছে, সেটা আপনার চেয়ে ওই মানুষটির পারসোনালিটির উপর বেশি নির্ভর করে।

*

আপনি কাদের সাথে কথা বলছেন?

আমরা যখন অনলাইনে ভিডিও বানাই, আমাদের একটা ধারণা থেকে যে আমরা কাদের সাথে কথা বলছি। ইউটিউবে আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য পাই যে কারা আমাদের ভিডিও দেখছেন। ইউটিউব ভিডিওর অ্যানালিটিক্স অনুযায়ী আমরা বুঝতে পারি যে আমরা মূলত তরুণদের জন্য কথা বলছি। তাই, আমাদের ভিডিওর টপিকগুলোও আমরা তেমনিভাবে সিলেক্ট করি।

এখন আপনি বলবেন, ভাই! সব জায়গায় তো আর আপনার ইউটিউব নাই। তখন কী করবো?

এই প্রশ্নটা আসলে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে সব বিজনেস স্টুডেন্টকে এটা শেখানো হয়। বিষয়টা হচ্ছে টার্গেট গ্রুপ সেট করা। অর্থাৎ, কারা আপনার কথা শুনবে তাদের বর্ণনা তৈরি করা।

উদাহরণ মনে করেন এই বইটা। ইউটিউবে কারা ভিডিও দেখবে, এটা আন্দাজ করতে পারলেও, এই বইটা কারা পড়বে তা সম্পর্কে তো আমাদের ১০০% ধারণা নাই। তাই, প্রথমে নিজেদের প্রশ্ন করলাম যে বইটা কাদের জন্য। উত্তর পেলাম; তরুণদের জন্য, স্টুডেন্টদের জন্য, কর্পোরেট মানুষের জন্য। এখন প্রশ্ন করলাম যে, বইতে কী বলে সম্বোধন করবো? তুমি না আপনি? তুমি বললে যেই কর্পোরেট মানুষজন আমাদের চেয়ে বয়সে বড়, তারা রেগে যেতে পারেন। তাহলে বাকি থাকলো আপনি। আপনি করে। তো একটা ছোট বাচ্চার সাথেও কথা বলা যায়। তাই, এই বইতে আপনি। আপনি করেই আমরা আপনাকে সম্বোধন করেছি।

এখন মনে করেন আমরা কোনো ভার্সিটিতে কথা বলতে যাচ্ছি। মনে করেন ৩য় বর্ষের ক্লাস নিচ্ছি। আমরা সহজেই তুমি করে বলতে পারি। কিন্তু তবুও আমরা আগে পারমিশন চেয়ে নেই যে, তুমি বলে সম্বোধন করতে পারবো কি না। কারণ, একবার তুমি করে বলতে গিয়ে শিক্ষা হয়েছিল।

গল্পটা বলি। আমি তখন এক বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং-এর ক্লাস নিচ্ছি। তো একদিন ক্লাসে আমরা কথা বলছি এমন পণ্য নিয়ে যেটা দরকার, কিন্তু কিনতে একদম আনন্দ লাগে না। মনে করেন চকোলেট, কিনতে টাকা লাগলেও আনন্দ হয় যে আপনি মজার একটা চকোলেট খাচ্ছেন। তো, আমি যখন উদাহরণ চাইলাম এমন পণ্যের; যেটা দরকার, কিন্তু কিনতে একদম আনন্দ লাগে না, তখন একজন বলে উঠলো, স্যার! ডায়পার!

আমি ভেবেছিলাম উত্তর আসবে টেক্সট বই, পরীক্ষার খাতা এসব। তাই, প্রশ্ন করলাম, এত কিছু থাকতে তোমার মাথায় ডায়পারই কেন আসলো? তখন সে উত্তরে বলল, স্যার, আমার ২ বছরের বাচ্চার জন্য প্রতি মাসেই কিনতে হয়তো, তাই। আমার তো আক্কেলগুড়ুম। আরও প্রশ্ন করতে গিয়ে বের হয়ে আসলো যে সে ৫ বছর ধরে ম্যারিড। সে কলেজের পর একটু গ্যাপ দিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। আমি হিসেব করে দেখলাম যে সে কম করে হলেও আমার চেয়ে ২ বছরের সিনিয়র। আর আমি তাকে তুমি করে এতদিন ডেকেছি। তাও আবার মাঝেমাঝে নাম ধরে!

সমাধান কী? আমি এরপরের দিন থেকে তার সাথে কথা বললে ইংলিশে বলতাম। কারণ সিনিয়র হোক জুনিয়র হোক, ইংলিশে তো সবাই You!

*

অর্থহীন কমিউনিকেশন

অনেককেই হয়তোবা বলতে শুনেছেন যে, কী সব আড্ডা-ফাউড়া দিস! এভাবে সময় নষ্ট করলে কি হবে! অনেকেই হয়তোবা এগুলোকে অর্থহনি আড্ডা হিসেবে দেখেন। কিন্তু, আমাদের কাছে অর্থহীন কমিউনিকেশন মানে কিন্তু আড্ডা নয়। বরং সীমিত পরিসরে হলেও, এগুলো অনেক দরকার। এই আড্ডার মধ্য দিয়েই অনেক গভীর বন্ধুত্ব তৈরি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হলে শত শত হোমওয়ার্ক, অ্যাসাইনমেন্ট মনে না থাকলেও; মনে। থাকবে প্রাণখোলা আড্ডাগুলো। এবং সারাদিন বইয়ের মধ্যে মুখ বুজে রাখার চেয়ে একটু গিয়ে মানুষের সাথে কথা বললে জীবনে বাঁচার মত বাঁচা হয়।

*

২৪/৭ কমিউনিকেশন

কেবল মুখের কথাতেই কমিউনিকেশন হবে এমন কোনো কথা নেই। আমাদের কমিউনিকেশনের সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে আমাদের নিজেদের জীবন। আমাদের চরিত্র, আমাদের চলাচল, আমাদের আচরণ–আমাদের মুখের কথার চেয়ে বেশি প্রকাশ করে। তাই, কমিউনিকেশন কেবল কথা বলার সময় হয় না, কমিউনিকেশন আমাদের লাইফস্টাইল।

[যেই ডিজিটাল যুগে ২ মিনিটের ভিডিও দেখতে মানুষ ক্লান্ত হয়ে যায়, সেই যুগে আপনি ১৫০+ পৃষ্ঠার একটি বই। ম কারাছন। আগনার যথেষ্ট ধৈর্য আছে বলতেই হবে। এখন শুধু দরকার এই বইয়ের হ্যাকগুলো একটা একটা করে আপনার জীবনে প্রয়োগ করা। আমাদের বিশ্বাস, আপনি পারবেন!

যাওয়ার আগে দুটো জিনিস। প্রথমত, বইটি পড়া শেষ হয়ে গেলে পারলে ডোনেট করে দিবেন। আমরা চাই যত সব অঙ্গর নানক কমিউনিকেশনের মত গুরুত্বপূর্ণ স্কিলটি শেখাতে। আশা করি, সেই কাজে আপনি আমাদের সাহায্য করবেন।

দ্বিতীয়ত, একটা বইয়ে কমিউনিকেশনের মত মস্ত বড় একটা সাবজেক্ট কোনভাবেই শতভাগ উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। কারণ, প্রতিনিয়ত কমিউনিকেশনে অনেক নতুন কৌশল যোগ হচ্ছে। তাই, কমিউনিকেশন সংক্রান্ত নতুন সব আগডট পেতে নিচে একটি QR Code দিয়ে রাখা হল। এখানে আমরা কমিউনিকেশন হ্যাকস বই স্থানসংকুলান করতে না পারায় যেই টপিকগুলো বাদ দিতে হয়েছে, সেগুলো রাখা হবে। পাশাপাশি আরও কিছু সারগ্রাইজ থাকবে। সেটা QR Code দিয়ে গেলেই পাবেন!

বই এখানেই শেষ!

এখন কমিউনিকেশন হ্যাকগুলো জীবনে প্রয়োগ করার সময় হোক শুরু!]

Exit mobile version