দুটোই সত্য। কিন্তু, ব্যাপার হচ্ছে এই যে সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারটা রিস্ক নিবো না কি সেফ খেলবো?– এই সিদ্ধান্ত তো শিক্ষার্থীর নেওয়া উচিত কারণ এটা তার জীবন। আমরা ক্ষণিকের উৎসাহ দিয়ে আসল রিস্কের কথা না বলে হয়তোবা তাদের মন খুশি করছি, কিন্তু আসলে তার সত্যটা জানা উচিত।
আর এখানেই সমস্যাটা হয়। মন খারাপ করবে বলে অনেক সময়ই আমরা মানুষকে সত্যটা না বলে একটা বুলি শুনিয়ে দেই। এটাকে ইংরেজিতে বলে Sugarcoating। অর্থাৎ সত্যি কথা গায়ে লাগবে বলে, মিষ্টি কথা দিয়ে সেটা এড়িয়ে যাওয়া।
কিন্তু, এই সুগারকোটিং করলে কিন্তু আমরা মানুষটাকেই বিপদে ফেলছি। তাহলে আমরা কী করবো?
১. মন খারাপ করে ফেলতে পারে এমন সত্য বলবো?
২. সুগারকোটিং করবো?
পারলে, নিজের কথা রেখে অন্যেরটা চিন্তা করে সত্যটা বলুন। আপনার নিষ্ঠুর সত্যের জন্য আজ হয়তোবা আপনাকে ঘৃণা করবে, কিন্তু কাল যখন দেখবে বাকি সবাই নিজের মুখ বাঁচানোর জন্য সুগারকোটিং করেছিল; তখন আপনাকে বেশি শ্রদ্ধা করবে।
আর মনে রাখবেন, মানুষকে সত্য বলার ব্যাপারটা আপনার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ব্যাপার না। এটা আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
*
মিটিং কমিউনিকেশন
যেই কাজটা একটা এসএমএস, ফোন কল কিংবা ইমেইল দিয়ে শেষ করা যায়, সেই কাজের জন্য যেন কখনও মিটিং না করতে বসি। এবং মিটিং-এ কোনো ভূমিকা নেই, এমন মানুষ না রাখলে মিটিং আরও ফোকাসড হবে। তো চলুন, দেখে নেয়া যাক বাদবাকি মিটিং কমিউনিকেশন হ্যাকস।
মিটিং-এর কমিউনিকেশন কায়দা
গ্রহণযোগ্য
১) কান খোলা রাখুন। কান ঠিকমত খোলা রাখলে কিন্তু সবারই কথা বলার প্রয়োজন কমে যায়।
২) মিটিং রুমে চা-কফি রাখুন। বিশেষ করে লম্বা সময়ের মিটিং-এর জন্য।
৩) আমাদের মেমোরি অতটাও শার্প না যতটা আমরা মনে করি। তাই মিটিংয়ের সময় খাতায় কিংবা ডিজিট্যালি নোট নিন।
৪) মিটিং-এর আগে আপনার রিসার্চ এবং পেপারওয়ার্ক শেষ করে রাখুন।
৫) প্রশ্ন করে নিশ্চিত করুন যে আপনারা দুজন একই জিনিসই বুঝেছেন।
অগ্রহণযোগ্য
১) মানুষের যদি মনে হয় যে শুধু আপনিই কথা বলছেন, তাহলে তারা আপনার কথা শোনা বন্ধ করে দিয়ে নিজেদের কণ্ঠ জোরালো করার প্রতি মনোযোগ দিবে যেটাতে সবারই লস।
২) বেশি কুড়মুড় শব্দ করে এমন টোস্ট কিংবা পুরো রুম গন্ধ করে ফেলে এমন পেঁয়াজ–্রসূন দেওয়া হবার খাবেন না। বিশেষ করে ক্রমের ভেতর তো সিগারেট ধরাবেনই না।
৩) আপনি যতই ভালো স্যুট-টাই পরে ফরফর কথা বলেন না কেন, লেট করে মিটিং-এ গেলে আপনার ইমেজের ক্ষতি পোষানো বেশ কঠিন হয়ে যাবে।
৪) কথা বলার সুযোগের অভাব কখনই হবে না, তাই অন্যের কথার মাঝে তাকে থামিয়ে দেবেন না। সবারই সময়। আসবে।
২. কমিউনিকেশন শেখার সেরা সোর্স
কমিউনিকেশন শেখার সেরা সোর্স
আপনি যদি কোনো জিনিস দ্রুত শিখতে চান, তাহলে প্রথমেই এমন উদাহরণ বের করেন যেটা আপনি অনুসরণ করতে চান। এমন উদাহরণ যেটা আপনার জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। তাই, আপনি যদি একদম এক্সপার্ট লেভেলে কথা বলতে চান, তাহলে আগে আপনাকে দেখতে হবে এক্সপার্টরা কথা বলে কীভাবে। সেজন্য ইউটিউবে গিয়ে Ted Talk চ্যানেলের ভিডিওগুলো দেখুন। নিজেকে পৃথিবীর বিভিন্ন বিষয়ে আপডেটেড রাখতে চায়, এমন মানুষদের উচিত এই চ্যানেলটা সাবস্ক্রাইব করে রাখা।
আরেকটা ভালো সোর্স হচ্ছে Toastmasters International যেখানে পৃথিবীর সেরা বক্তাদের পুরস্কারপ্রাপ্ত ভিডিওগুলো দেয়া আছে। ভিডিওগুলোতে দেখার চেষ্টা করুন কীভাবে অল্প সময়ের মধ্যে তারা গল্পের মাধ্যমে কোনো বিষয় কিংবা জীবনের সুন্দরতম গল্পগুলো অসাধারণভাবে তুলে ধরছেন। বাংলায় শিখতে চাইলে এমন কোনো ইউটিউবার কিংবা উপস্থাপককে ফলো করুন, যার কথাবার্তা আপনার অনেক ভালো লাগে। মূল বিষয় হচ্ছে, আপনার একজন রেফারেন্স দরকার, যার মতো আপনি কথা বলতে চান। একটা পর্যায় পর্যন্ত তাকে কপি করে শিখুন, তারপরে আত্মবিশ্বাস চলে আসলে এক সময় আপনার নিজেরই একটা কথা বলার স্টাইল তৈরি হয়ে যাবে।
কমিউনিকেশন খুবই প্র্যাক্টিকাল একটা জিনিস। তাই, ভিডিও দেখে এবং নিজে অনুশীলন করে শেখাটা অনেক কাজের। তবে, কমিউনিকেশন কিংবা যেকোনো ফিল্ডে এক্সপার্ট লেভেলে যেতে হলে কিছু বই তো পড়তেই হয়। আপনার যদি সেই ইচ্ছাটা থাকে, তাহলে কমিউনিকেশনের জন্য অন্যতম ১০ টি সেরা বইয়ের লিস্ট এখানে আমরা দিয়ে দিলাম। আর যাই হোক, অন্তত How To Win Friends & Influence People বইটা কিন্তু সবারই পড়া আবশ্যক!
*
ভাবিয়া কহিও কথা, কহিয়া ভাবিও না
মাথায় প্রথম যখন কোনো কথা আসে
১) আমার কথাটা কি আরও ভালোভাবে বলা সম্ভব?
২) আমি কি কথাটা অন্য মানুষটিকে আঘাত করার জন্য বলছি?
৩) কথাটা কি না বললেও চলে?
৪) আমি কি অন্য মানুষটির মনের অবস্থা সম্পর্কে জানি?
৫) আমি কি অন্য মানুষটির দৃষ্টিকোণ বুঝতে পারছি?
৬) আমি কি সঠিকভাবে অন্য মানুষটির কথা শুনেছি?
৭) আমার কথা কি অন্য মানুষটিকে বিব্রত করবে?
৮) আমার কথাটা আমাকেই কেউ বললে আমার কেমন লাগতো?
*
দক্ষিণে গিয়ে হাতের বাম দিয়ে সোজা গিয়ে পশ্চিমে!
কোনো অপরিচিত জায়গায় গিয়ে দিক খুঁজছেন। রাস্তায় কাউকে জিজ্ঞেস করলে উনি হাতের ডান-বাম এবং গলির মাথার উত্তর-দক্ষিণ দিয়ে এমন দিকনির্দেশনা দিবেন, যেটা মেনে চলার চেয়ে ভাঙ্গা কম্পাস দিয়ে গুপ্তধন খোঁজা সহজ! এসব ডান-বাম-উত্তর-দক্ষিণ জানা ভালো, কিন্তু ডিজিটাল যুগে ১০০ বার ফোন করে জায়গাটা কই! জিজ্ঞাসা করার চেয়ে একবার গুগল ম্যাপে লোকেশন পিন শেয়ার করাটা হাজার গুনে সহজ। ফেসবুকেও লোকেশন পিন শেয়ার করা যায়।