এগুলো কেন লেখা থাকে? নিশ্চয়ই ব্যবসায়িক কারণে। তবে, এখানে শেখার অনেক কিছু আছে। আসল ব্যাপার হচ্ছে, আপনি যদি আপনার শর্তগুলোর মধ্যে ফাঁকফোকর রাখেন এবং কেউ যদি সেটা ব্যবহার করতে পারে, তাহলে আপনার করার কিছুই থাকবে না। তাই, একশ লাইন হলেও লিগ্যাল পেপারস এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন মানুষ সহজে এর ফাঁকফোকর ধরতে না পারে। এমন দুটো প্র্যাক্টিকাল উদাহরণ দিচ্ছি।
বাংলাদেশেরই বড় একটা সংস্থাকে একটা টেলিকম কোম্পানি অফার দিলো যে, আন্তর্জাতিক কল করার সময় প্রথম এক মিনিট ফ্রি এবং তারপরে প্রতি মিনিট টাকা কাটা হবে। আপনি চাইলে এখনই একটু চিন্তা করে দেখুন তো, অফারটার মধ্যে সমস্যাটা কোথায়?
কারণ, পরের মাসে টেলিকম কোম্পানি হুট করে দেখে তাদের কয়েক হাজার ডলার মূল্যের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু বিল এসেছে মাত্র কয়েক ডলার। কাহিনী অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেল যে, মানুষজন ৫৯ সেকেন্ড কথা বলে কেটে দিত। তারপর আবার কল দিয়ে ৫৯ সেকেন্ড কথা বলতো। এভাবে ৫৯ সেকেন্ড পর পর কেটে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলে যেত কিন্তু বিল আসতো না কারণ অফার অনুযায়ী প্রথম এক মিনিট ফ্রি! এই নিয়ে প্রচুর বাকবিতণ্ডা হয়ে গিয়েছিল!
তারা যদি প্রথম এক মিনিট ফ্রি না বলে যদি এককালীন এক মিনিটের টকটাইম ফ্রি বলতো, তাহলেও টেলিকম কোম্পানি হয়তোবা বেঁচে যেত!
এই গেল একটা অফারের ভুলের উদাহরণ। এমন সমস্যা যেকোনো প্রক্রিয়াতেই হতে পারে। আরেকটা উদাহরণ দেই। তখন মানুষ প্রথম প্রথম অনলাইনে টাকা পাঠানো শুরু করেছে। টাকা পাঠাতে হলে তারা টাকার অংক লিখে সেন্ড দিত এবং টাকা চলে যেত। কিন্তু, একজন পোদ্দার একদিন সংখ্যার সামনে একটা নেগেটিভ চিহ্ন বসিয়ে সেন্ড ক্লিক করলো। মানে সে, ১০০ টাকা না লিখে ধরেন–১০০ টাকা লিখলো। এবং অবাক হয়ে সে দেখলো যে অন্যের অ্যাকাউন্ট থেকে তার অ্যাকাউন্টে টাকা চলে এসেছে। এটা ছিল নেহাত প্রোগ্রামিং-এর সীমাবদ্ধতা। কেউ চিন্তাও করেনি যে খালি একটা নেগেটিভ চিহ্ন দিয়ে ব্যাংকের টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়াটাকেই পাল্টে ফেলা যাবে! পরে অবশ্য সেটা ঠিক করা হয়েছে। এখন আপনি চাইলেও ব্যাংকের এটিএমে গিয়ে এই কাজটি করতে পারবেন না।
শিক্ষার বিষয় হলো, ব্যবসার ক্ষেত্রে একটা সামান্য অক্ষর কিংবা চিহ্নও পুরো লাল বাতি জ্বালিয়ে দিতে পারে। তাই শর্ত প্রযোজ্য যত ছোট করেই লেখা থাকুক না কেন, ঠিকমত পড়ে যেন কাজে আগান।
*
কমিউনিকেশনের মায়া
নিচের ২টি কেস অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়। ব্যাপারগুলো খুবই স্পর্শকাতর, কিন্তু অনেকেই একদম অমানবিক একটা রিয়্যাকশন কিংবা কমেন্ট দিয়ে বসেন। একটার উত্তর আমরা দিয়ে দিলাম, অন্যটির উত্তর আপনি আপনার আশপাশের মানুষের সাথে কথা বলে বের করেন। এটা কাল্পনিক মনে হলেও অনেকে যদি একটু ইতিবাচক কথা বলতো, তাহলে হয়তোবা অনেক জীবন বদলে যেত। এমন অনেক ঘটনা আছে যেখানে সুইসাইড করার আগে অনেকেই ইশারা ইঙ্গিত দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেন একজন হলেও বন্ধু এগিয়ে আসে। আমার দুই ক্লাসমেট এভাবেই সুইসাইড করেছে। তাদের পোস্টের নিচে যদি একজন সহমর্মিতা নিয়ে কিছু লিখতো, তারা হয়তোবা আজ বেঁচে থাকতো। একটা অনুপ্রেরণামূলক কমেন্টও কিন্তু কখনই কম নয়। তাই, আমাদের দরকার কথার ভেতরের মানুষটিকে বোঝার।
*
কীভাবে মানুষকে আরও সহজে বুঝতে পারবেন?
চোখে চোখে কথা বলুন
কথা বলার সময় মানুষের মুখ, বিশেষ করে চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন যাতে তার অভিব্যক্তি এবং আবেগ বুঝতে পারেন।
বুঝলে বুঝতে দিন
মাথা নেড়ে, কিংবা আলতো হাসিমুখ দিয়ে প্রকাশ করুন যে আপনি বুঝতে পারছেন। আপনি বুঝতে পারছেন জানলে তিনি আত্মবিশ্বাস পাবেন এবং কথা রিপিট করবেন না।
মনে রেখেছি
এমন কোনো কথা যদি থাকে যেটা বললে মনে হবে যে আপনার আগের কথাগুলো বিস্তারিত মনে আছে, তাহলে সেগুলো শেয়ার করুন। কোনো বিষয়ে একমত থাকলে সেটাও শেয়ার করুন।
হুম যেন না বলতে পারে
আপনার প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ/না দিয়ে করা গেলে, অপর মানুষটির কাছ থেকে নতুন কিছু কিন্তু জানতে পারছেন না। তাই, এমন প্রশ্ন করুন যেগুলোর উত্তর করতে গিয়ে তারা আপনাকে কোনো তথ্য দিয়ে বসেন।
আয়নাবাজি
এটাকে বলে মিররিং। অন্য মানুষটি যেই বডি ল্যাংগুয়েজ দেখাচ্ছে, আপনি সেটা অনুকরণ করুন। মানুষ আপনার মাঝে তাদের নিজেদের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলে আপনার সাথে আরও সহজভাবে কথা বলতে পারবে।
বুদ্ধিমান তোতাপাখি
মানুষ যা বলছে, তাই নিজের মতো করে গুছিয়ে আবার তাকে বলুন। এটাতে দুজনের মধ্যে বোঝাঁপড়ার তফাতটা অনেক কমে যাবে।
*
বলে ফেলা ভালো, নাকি চুপ থাকা ভালো
একটা সিচুয়েশন দেই আপনাকে। মনে করেন আপনি একজন স্টুডেন্টকে পড়াচ্ছেন। এখন তার অবস্থা দেখে আপনি বুঝে গেছেন যে তার অ্যাডমিশনে ভালো জায়গায় চান্স পাওয়ার সুযোগ খুবই কম। এমন অবস্থায় আপনি দুটো জিনিস বলতে পারেন :
১. এখন অবস্থা যাই হোক না কেন! তুমি পারবে! মানুষ পারে না এমন জিনিস নেই! লেগে থাকলে অনেক কিছুই হতে পারে!
২. এখন অবস্থা অনুযায়ী তোমার স্বপ্নের ইন্সটিটিউটে চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এর চেয়ে তুমি তোমার দ্বিতীয় সারির পছন্দগুলো টার্গেট করে পড়লে রিস্ক অনেক কম।