৯. টপিক নিয়ে গবেষণা : অধিকাংশ অনুষ্ঠানের বক্তব্যেই বক্তার বক্তব্যের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে ধারণা দেওয়া হয় না। যে বিষয়টা নিয়ে কথা বলা হচ্ছে সেটা নিয়ে বিস্তারিত জানতে হলে কোথা থেকে সাহায্য নেওয়া যেতে পারে সেটা জানানো হয় না। বক্তব্য দেবার আগেই বিষয়বস্তু নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করুন। দেখে নিন আগে এই টপিক নিয়ে কে কী বলেছে। চিন্তা করুন ইউটিউব, টেড টক রেখে মানুষের আপনার কথা শুনে কী লাভ। চেষ্টা করুন যাতে অনলাইনে পাওয়া বক্তব্য আর পরামর্শগুলোর চেয়ে আপনার বক্তব্য আর পরামর্শগুলো আলাদা হয়। সহজ বাংলায় লোকের পয়সা উসুল করতে সাহায্য করুন।
১০. ভেন্যু : দর্শক আর টপিক নিয়ে গবেষণার কথা তো আগেই বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি ভেন্যু নিয়েও একটু আধটু ধারণা রাখলে আখেরে আপনারই সুবিধা। ইভেন্ট শুরুর অন্তত কিছুক্ষণ আগে গিয়ে দেখে নিন ভেন্যুর অবস্থা। আয়োজকদের সাথে পরিচিত হয়ে নিন। দেখবেন জায়গাটা আর অপরিচিত লাগছে না।
১১. স্বরের ব্যবহার : শুধুমাত্র আপনার কণ্ঠস্বরের ওঠানামা করেই আপনি আপনার বক্তব্যে একটা আলাদা মাত্রা যোগ করতে পারেন। ৯ কণ্ঠস্বরের অবস্থা কিন্তু আমাদের মধ্যকার আবেগগুলোকে ফুটিয়ে তোলে। তাই আনন্দ, দুঃখ, বিস্ময়ের মতো আবেগগুলো যখন বক্তবে তুলে ধরবেন তখন নিজের কণ্ঠস্বরটাকেও সাবলীলভাবে কাজে লাগান।
১২. স্পিচ ডিলাইটস : ভেন্যু, দর্শক আর টপিক নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে প্রায়ই দেখবেন এর সাথে প্রাসঙ্গিক কোনো না কোনো মজার ঘটনা, তথ্য পেয়ে যাবেন। এগুলো কাজে লাগান। সুযোগ বুঝে এগুলো। আপনার বক্তব্যের সাথে জুড়ে দিন। দর্শক বেশ মজা পাবে। এই ব্যাপারগুলোকেই বলে স্পিচ ডিলাইটস।
১৩. গল্পের শক্তি : নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রের বিবৃতি মনে না থাকলেও নিউটনের মাথায় আপেল পড়ার পর যে মহাকর্ষ সূত্রটা আবিষ্কৃত হয়েছিল এই ব্যাপারটা আমাদের সবার মনে আছে। এই হলো গল্পের শক্তি। কারও মনে কোনো ব্যাপার বা ঘটনা গেঁথে ফেলতে চাইলে গল্প বলুন। গল্পের ছলে যা বোঝাতে চাইছেন বোঝান। অনেক দিন মনে রাখবে। আপনাকে দর্শক।
১৪. সমাপ্তি : শুকনো ধন্যবাদ দিয়ে আর কত বক্তব্যের শেষ করবেন বলুন তো? বক্তব্যের শেষে ব্যতিক্রম কিছু আনতে চাইলে এই শব্দ দুটোকে অতিক্রম করতে হবে! শুরুর মতো সমাপ্তিটাও করুন দর্শককে আরেক দফা চমকে দিয়ে। গল্প, উক্তি, ফ্যাক্ট, মজার কোনো প্রশ্ন কিংবা দরকারে এতক্ষণ যা যা বলেছেন সেটার সারমর্ম বলুন। অন্তত শুকনো ধন্যবাদের চেয়ে বেশি কাজে লাগবে।
নিজের মতামত, মনোভাব আর আইডিয়াকে সবার সামনে দাঁড়িয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে তুলে ধরতে পারাটা একটা অনেক বড় দক্ষতা। একবার অর্জন করে ফেলতে পারলে দেখবেন একুশ শতকের প্রতিযোগিতার দৌড়ে আপনি কতখানি এগিয়ে!
*
নিজে নিজে কীভাবে অনুশীলন করবো?
যুগে যুগে সবাইকে একটা উপদেশ দেয়া হয়েছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্র্যাক্টিস করো! তাহলে অনেক ভালো করতে পারবে। হ্যাঁ, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কিংবা খালি নিজে নিজে কথা বলে প্র্যাক্টিস করলেও অনেক লাভ। কিন্তু, ডিজিটাল যুগে একটা ডিজিটাল সমাধান তো দেওয়াই যায়, তাই না?
নিজেকে ভিডিও করেন। এবং বিশ্বাস করেন, এটা অনেক কাজে দিবে। আমরা দুই ভাই কয়েক বছর ধরে ভিডিও করে যাচ্ছি। এবং একদম শুরুর ভিডিওগুলোর সাথে এখনকার ভিডিওগুলোর তুলনা করলে আকাশ-পাতাল তফাত দেখতে পাই আমরা। এমন না যে আপনাকে ভিডিও করে আপলোড দিতে হবে। আপনি ভিডিও করে খালি দেখেন। শুধু বাচনভঙ্গি নয়, আপনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজেরও অনেক খুঁটিনাটি আপনার চোখে ধরা পড়বে।
প্রথম প্রথম নিজেকে দেখতে এবং বিশেষ করে নিজের কণ্ঠ শুনতে খুবই অস্বস্তি লাগবে, কিন্তু, খুব দ্রুতই আপনি অনেক কিছু শিখে যাবেন।
আর যদি অনলাইনে ভিডিও আপলোড করতে পারেন, তাহলে মানুষের সামনে কথা বলার আত্মবিশ্বাস পাবেন। মানুষ আপনাকে এমন অনেক সাজেশন দিতে পারবে যেটা আপনার চোখের সামনে থাকলেও আপনি দেখতে পারছিলেন না। এবং হেট কমেন্ট আসা শুরু করলে আপনি নিন্দুকদের সামলানোর টেকনিক শিখে ফেলবেন!
*
আবদারের কমিউনিকেশন
কমিউনিকেশনের একটা বেসিক কন্সেপ্ট আমরা সবাই ছোটবেলা থেকে ব্যবহার করে এসেছি। যেমন, আমাদের যদি কোনো খেলনা দরকার হত তাহলে আমরা দেখতাম যে আব্বু কিংবা আম্মু কখন সবচেয়ে খুশি আছেন। মেজাজ খারাপ থাকলে ধারে কাছেও ঘেঁষা যাবে না। কিন্তু যখনই তারা একটু খুশি থাকবেন, তখনই আব্বু আমাকে ওই গাড়িটা কিনে দাও না আ আ আ!
বাচ্চাকালেই আমরা জানতাম যে মানুষের মুড বুঝে কথা বলতে হয়। কিন্তু বড় হয়ে এই বেসিকটাই আমরা অনেক সময় ভুলে যাই।
কেউ হয়তোবা অনেক কাজের মধ্যে আছে। না বুঝে শুনে, অই দোস্ত! আমার এই কাজটা করে দে না প্লিজ! আমার একটা মুভির টিকেট লাগবে…তুই তো সিনেমা হলের মানুষজনকে চিনিসই…। আপনি কথা শেষ করার আগেই অন্য পাশে বিস্ফোরণ হয়ে যেতে পারে।
এবং এটাই কিন্তু হয় অনেক সময়। আপনি কারও সাথে কথা বলতে গেলেন তো বলা নেই কওয়া নেই, আপনাকে তুলে চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করা শুরু করে দিলো। আপনি ভাবছেন আপনি এমন কী করেছেন যে আপনাকে এভাবে কথা শুনাচ্ছে। আপনিও হয়তোবা মনে কষ্ট পেয়ে বলে ফেললেন, সবা৯ আমাকে পাইসেটা কী! আমি এত কিছু করি তবুও আমাকে কেউ দেখতে পারে না…। …মূল্য কেউ বুঝলো না…না থাকলে তোদের কী হইতে জানিস!…আমার সাথেই কেন সব সময় এমন…।