*
পাবলিক স্পিকিং নিয়ে ভয়?
যত যাই বলা হোক না কেন, পাবলিক স্পিকিং আর প্রেজেন্টেশন নিয়ে আমাদের ভয়টা বেশ পুরোনো। দুটো কাজেই অনেক মিল থাকলেও একটুখানি পার্থক্যও আছে। প্রেজেন্টেশন ব্যাপারটা এখনও ক্লাসরুম, মিটিং রুমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে এই প্রেজেন্টেশন জিনিসটাই যখন বড় কোনো কনফারেন্স রুম বা মিলনায়তনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে অনেক মানুষের সামনে দিতে হয় তখন সেটা আবার পাবলিক স্পিকিং হয়ে যায়। পুঁথিগত সংজ্ঞার দিকে না হয় আর না গেলাম। চলুন জেনে নেই কিছু পরামর্শ যেগুলো আপনাকে একজন চমৎকার বক্তা হিসেবে তুলে ধরতে সাহায্য করবে।
১. কীভাবে শুরু করবেন : বক্তব্যের শুরুতে দর্শকের মনোযোগ আর বক্তার ভয় দুটোই থাকে একেবারে চূড়ায়। তাই এই ব্যাপারটা কাজে লাগাতে হবে। এই প্রথম ১০-১৫ সেকেন্ডে দর্শক সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবে যে তারা আপনার পরবর্তী কথাগুলো শুনবে নাকি না। তাই শুরুটা এমনভাবে করতে হবে যাতে করে দর্শকের আগ্রহটা জন্মানোর আগেই নষ্ট না হয়ে যায়। গল্প, ফ্যাক্ট, প্রশ্ন, মজার কোনো প্রাসঙ্গিক তথ্য এর যে কোনো কিছু দিয়ে হতে পারে আপনার বক্তব্যের শুরু।
২. বরফ ভাঙ্গার খেলা : আমরা সাধারণত কোনো ইভেন্টে গেলে পরিচিত মানুষদের মধ্যেই ঘুরপাক খাই। বন্ধু বা কলিগ ছাড়া অন্য কারও পাশে বসিও না। একটা বিষয় মাথায় রাখা জরুরি একটা ইভেন্টে কিন্তু মোটামুটি সমমনা মানুষেরাই যায়। তাই আপনার আশেপাশের মানুষগুলো আপনার অচেনা হলেও তাদের আগ্রহ কিন্তু আপনার আগ্রহের সাথে মেলে। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে এখানে উপস্থাপক কী করবে। উপস্থাপক আসলে এই ব্যাপারটাই সবাইকে মনে করিয়ে দেবে যে ইভেন্টের প্রতিটি মানুষের আগ্রহের বিষয়বস্তুটা আসলে একই। দর্শকদের দিয়ে মজার কোনো এঙ্গেজিং অ্যাক্টিভিটি করাতে পারেন যেটা তাদের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ জড়তার বরফটাকে ভেঙ্গে গলিয়ে ফেলবে।
৩. দর্শক নিয়ে গবেষণা : একজন বক্তা হিসেবে আপনার কাজ হবে আপনি কাদের সামনে কথা বলতে যাচ্ছেন তাদের নিয়ে আগে থেকে ধারণা নিয়ে যাওয়া। তাদের পছন্দ, আগ্রহের বিষয়াদি নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করে নিয়ে এরপর সেটার সাথে মিল রেখে নিজের বক্তব্য তৈরি করে ফেলা। এতে করে একটা সুবিধা হবে, আপনি দর্শকের সামনে কোনো অপ্রাসঙ্গিক কথা, উক্তি বা তথ্য বলে ফেলার ঝুঁকি কম থাকবে।
৪. দর্শকদের অংশগ্রহণ : দর্শকদের মধ্যকার জড়তা ভেঙ্গে ফেলার মানে কিন্তু এই নয় যে এরপর আপনি একাই শুধু কথা বলে যাবেন আর দর্শক সেগুলো শুনে যাবে। আপনার বক্তব্যের সাথে দর্শকদের কানেক্ট করুন। ছোট ছোট কাজ করতে বলুন। একটা উদাহরণ দিলে পরিষ্কার হবে, কিছুদিন আগে TEDx এ একটা ছোট্ট বক্তব্য দেবার সুযোগ হয়। আমার। সেখানে কথা বলেছিলাম কী করে আমাদের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে। রূপ দেওয়া যায়। ধরা যাক আপনিও স্বপ্ন নিয়েই কথা বলছেন। স্বপ্নগুলোকে লিখে ফেললে সেটা লক্ষ্যে পরিণত হয়। একটা কাজ করুন না। আপনার দর্শকদেরকেও বলুন নিজের স্বপ্নটা চট করে তারিখসহ লিখে ফেলতে! ব্যস, দর্শক কানেক্টেড!
৫. চোখাচোখি : কারও চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা কারও কারও কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি। কিন্তু একজন পাবলিক স্পিকার বা উপস্থাপক তো আর মঞ্চের ফ্লোরের দিকে তাকিয়েও কথা বলতে পারবেন না তাই না? তো করা কী যায়? যে। মিলনায়তন বা হল রুমে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন, সেটার সামনের দিকে কয়েকটা পয়েন্ট সেট করে রাখুন। কথা বলার সময় ঘুরে ফিরে ওগুলোর দিকে তাকান, এতে করে ফ্লোরের দিকে কিংবা কারও চোখের দিকে না তাকিয়েও চোখাচোখি তথা আই কন্ট্যাক্ট মেইনটেইন করা যাবে।
৬. মঞ্চভীতি : মঞ্চে দাঁড়িয়ে অনেক মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের বক্তব্য সবার সামনে তুলে ধরাটা মামুলি কোনো কাজ নয়। এতে ভয়। পাওয়াটাই উল্টো অস্বাভাবিক। ভয়টাকে একবারে বিদায় করা না। গেলেও একটুখানি কমানো সম্ভব। আগেভাগে মঞ্চটার সাথে পরিচিত হয়ে নিন। মঞ্চে উঠে হাঁটাহাঁটি করুন। স্পিচটা বলে প্র্যাকটিস করুন ইভেন্ট শুরুর আগে। কোন কোন পয়েন্টগুলোর দিকে তাকিয়ে আই। কন্ট্যাক্ট মেইন্টেইন করবেন সেটা নির্ধারণ করুন। দেখবেন ভয় অনেকটা কেটে গেছে।
৭. বডি ল্যাঙ্গুয়েজ : আমরা মুখে যতখানি কথা বলি তার চেয়ে অনেক বেশি মনের ভাব প্রকাশ করি আমাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে। আমাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজের মোট দুটো অংশ আছে!
ক. Gesture : কথা বলা কিংবা কাউকে বোঝানোর সময় প্রয়োজনে আমরা অনেকেই হাত নেড়ে বোঝাই বা ব্যাখ্যা করি। এটাই হলো Gesture.
খ. Posture : কথা বলার সময় আমাদের দাঁড়ানো কিংবা বসার ধরণটাই হলো প্রকৃতপক্ষে Posture.
কথা বলার সময় এই Gesture আর Posture-এ যেন ভারসাম্য থাকে সে দিকে নজর রাখতে হবে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলতে হবে।
৮. যেভাবে বক্তব্য তুলে ধরবেন : বক্তব্য দেবার ক্ষেত্রে কী বলছেন তার চাইতে কীভাবে বলছেন সেটা অনেক বেশি জরুরি। আপনার দর্শকদের বয়স, মানসিকতার সাথে মিলিয়ে নিজের কথাগুলো তুলে ধরুন। গল্প বলুন। এমন কিছু করুন যাতে দর্শক সেটার সাথে রিলেট করতে পারে। ভুলেও স্ক্রিপ্ট হাতে নিয়ে মঞ্চে উঠবেন না। দেখেই যদি পড়বেন তাহলে পড়ার প্রয়োজন কী? দেখে দেখে পড়া আর বক্তব্য দেওয়া তো আর এক জিনিস নয়!