দৈনিক পত্রিকাগুলোর উদাহরণ দেই। তাহলে আরও সহজ হবে। প্রায় সব দৈনিক পত্রিকাগুলোর সাথেই সপ্তাহে ৭ দিন অতিরিক্ত একটা ছোট ট্যাবলয়েড দেওয়া হয়।
প্রথম আলোর কথাই ধরুন। সপ্তাহে ৭ দিন ৭টা আলাদা আলাদা ট্যাবলয়েড দেওয়া হয়।
এই একেকটা ট্যাবলয়েডে একেক রকমের বিজ্ঞাপন স্থান পায়। মূল পত্রিকারও একেক পৃষ্ঠায় একেক রকমের বিজ্ঞাপন স্থান পায়। কেন এটা ভেবেছেন?
এই একেকটা ট্যাবলয়েড আর পৃষ্ঠার টার্গেট অডিয়েন্স ভিন্ন। তাদের চাহিদাও ভিন্ন। এটাই আসল কারণ। আর এ কারণেই পড়াশোনা পাতা কিংবা শিক্ষার্থীদের জন্যে আসা ট্যাবলয়েডে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্টুডেন্ট স্কলারশিপের, স্টুডেন্ট ব্যাংকিং আর স্টুডেন্ট লোনের মতো বিজ্ঞাপন থাকে। অন্যদিকে যেই ট্যাবলয়েড বা পৃষ্ঠার টার্গেট অডিয়েন্স নারী তাদের জন্যে সেখানে শ্যাম্পু, ডিটারজেন্ট, মশলার বিজ্ঞাপনই থাকে।
তাই আপনি যে কাজটা করছেন বা যেই পণ্যটা বানিয়েছেন সেটা কাদের জন্যে সেটা খুঁজে বের করুন। আর তারপর সেটা জায়গামতো পৌঁছানোর জন্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন। একটা নির্দিষ্ট পণ্যের চাহিদা সবার থাকবে এমনটা কখনই হবে না। তাই, প্রচারণা চালান বুঝেশুনে।
*
উপস্থাপক হতে চান?
বর্তমান সময়ে পেশা হিসেবে উপস্থাপনা অর্থাৎ অনুষ্ঠান সঞ্চালনার জনপ্রিয়তা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। আর এই উপস্থাপনা আর সঞ্চালনা আমারও প্রিয় কাজগুলোর একটা। তা কীভাবে একজন আত্মবিশ্বাসী উপস্থাপক হয়ে ওঠা যায়? আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আপনাদের জন্যে রইলো কিছু পরামর্শ!
১. কিউ কার্ড এডিট করে নিন : বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইভেন্টের কিউ কার্ডের লেখক আর বক্তা ভিন্ন হয়ে থাকেন। লেখকের লেখার ধরণ আর বক্তার বলার ধরণে অমিল থাকাটাও তাই অস্বাভাবিক নয়। কিউ কার্ডের স্ক্রিপ্ট প্রয়োজনমতো এডিট করে নিন। স্ক্রিপ্টে লেখা কথা বলুন নিজের মতো করে। এতে করে আপনাকে আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী মনে হবে।
২. মাইক্রোফোন টেস্টিং : একেক একমের ইভেন্টে একেক ধরণের মাইক্রোফোন থাকে। একেকটার কাজ আবার একেক রকমের। মাইকগুলোকে নিজের সাথে অ্যাডজাস্ট করে নিন যাতে কথা ঠিকমতো শোনা যায়। মঞ্চে ওঠার আগেই মাইক্রোফোন টেস্টিং সেরে ফেলুন। কথা বলার সময় মাইক্রোফোনটা যেন সঠিক অবস্থানে স্থির রাখা হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে!
৩. অলসতা দূরীকরণ : লাঞ্চ বা যেকোনো স্ন্যাকস ব্রেকের পরপর দর্শকদের মধ্যে ঝিমুনি চলে আসে। তাই, খাওয়াদাওয়া আর ব্রেকের পর দর্শকদের আলস্য দূর করতে একটু আধটু মজার অ্যাক্টিভিটি করাতে পারেন।
৪. স্ক্রিপ্ট হুবহু না পড়াই ভালো : স্ক্রিপ্ট কিন্তু বেদবাক্য নয় যে পরিবর্তন, পরিমার্জন কিংবা সংশোধন করা যাবে না। গত্বাঁধা স্ক্রিপ্টই হুবহু পড়ে গেলে ব্যাপারটা বেশ একঘেয়ে হয়ে যাবে। তাই মাঝে মাঝে স্ক্রিপ্টের বাইরেও কথা বলুন।
৫. দর্শকদের নিয়েও ধারণা রাখুন : দর্শকদের নিয়ে একটুখানি গবেষণা মঞ্চে ওঠার আগেই করে নিন। মিলিয়ে নিন যেই কথা, তথ্য, গল্প কিংবা হিউমার আপনি দিতে যাচ্ছেন সেগুলো তাদের জন্যে প্রাসঙ্গিক কি না। পরে দেখা যাবে ঐ অঞ্চলের মানুষদের সামনে তাদের নিজস্ব কোনো সংস্কৃতি নিয়েই এমন কোনো মজা আপনি করে বসেছেন সে তাদের জন্যে একটু অপমানজনক ছিলো।
৬. মঞ্চে উঠে চর্চা করুন : মঞ্চে দাঁড়িয়ে অনেক মানুষের সাথে কথা বলা কখনই কোনো মামুলি ব্যাপার নয়। এটা নিয়ে ভয়ভীতি থাকতেই পারে। ফাইনাল ইভেন্টে মঞ্চে দাঁড়িয়ে কাঁপাকাপি করার চেয়ে বরং মঞ্চভীতি কাটাতে আগেভাগেই মঞ্চের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিন। অনুষ্ঠান শুরুর আগেই কয়েকবার মঞ্চে উঠে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। ভীতি কেটে যাবে।
৭. শুরুটা করুন চমকে দিয়ে : শুরুর বক্তব্যটা হতে হবে প্রাণবন্ত। গল্প, উক্তি, গান, কোনো আঞ্চলিক ঐতিহ্য যেকোনো কিছু দিয়ে শুরু করতে পারেন। দর্শক চমকে যাবে। শুরুতে দেওয়া চমক পুরো অনুষ্ঠানজুড়েও বজায় থাকবে।
৮. ঝিমিয়ে পড়া দর্শকদের জাগাতে কৌতুক বলতে পারেন : মজার মজার কিছু জোক বা স্টোরি আগেভাগেই রেডি রাখুন। ঝিমিয়ে পড়া দর্শকদের জাগাতে কাজে লাগবে।
৯. পোশাক নির্বাচনে সতর্ক থাকুন : ইভেন্টের ধরণ অনুযায়ী ড্রেসকোড মেইনটেইন করেন। কর্পোরেট ইভেন্টে ফরমাল পোশাক আর ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশীয় পোশাক পরতে পারেন।
১০. আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার আনবে বৈচিত্র্য : ইভেন্টে অঞ্চল অনুযায়ী আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করতে পারেন। তুলে ধরতে পারেন প্রাসঙ্গিক কোনো আঞ্চলিক ঐতিহ্য। দর্শক মজা পাবেন।
১১. সমাপ্তি হোক বিশেষ : কোনো ইভেন্টের শুরুটা যতখানি গুরুত্বপূর্ণ তেমনি শেষটাও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। তাই কেবল শুকনো ধন্যবাদ দিয়ে ইভেন্ট শেষ না করে চেষ্টা করুন কিছু কল টু অ্যাকশন অর্থাৎ ইভেন্টের পর দর্শকদের করণীয় কী সেটা নিয়ে একটু ধারণা দিতে। ওপরে উল্লেখ করা পরামর্শগুলো পুরোপুরি আমার নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তুলে ধরা। আমি নিজে উপস্থাপনা করার সময় এই কাজগুলো করার চেষ্টা করি। আশা করি আপনাদেরও কাজে লাগবে। ভবিষ্যৎ উপস্থাপকদের জন্যে শুভকামনা!