শেখানোর বিষয় আর ইচ্ছা থাকলে সবাই আসলে নিজে থেকেই পণ্ডিত হওয়ার যোগ্যতা রাখে।
*
বিগ বস কমিউনিকেশন
আমরা যতই কমিউনিকেশনের কথা বলি না কেন, সিনিয়র কারও সাথে কথা বলতে গেলে আসলে অনেক ট্রিকই কাজ করে না। সোজা বাংলায় ক্ষমতাশালী মানুষকে অনেক কিছুই ভয়ের চোটে বলা হয়ে উঠে না। এমন অবস্থায় কী করা যায়?
নিজের জীবন থেকে একটা উদাহরণ দেই।
বিভিন্ন সময় ক্লায়েন্ট নিজের পাওয়ার দেখানোর জন্য ছোট-খাটো কাজে আমাকে ব্যবহার করছিল। এখন রেগে গেলে তো ব্যাপারটা খুবই আনপ্রফেশনাল দেখাবে। আবার মুখ বুজে তো নিজের সময়ও নষ্ট করা যাচ্ছে না। তার চেয়েও বড় কথা জিনিসটা আমার জন্য অপমানজনক। হচ্ছিলো। তো কীভাবে বোঝাই যে আমার সময় আর সার্ভিস ফ্রি না?
একদিন ক্লায়েন্ট বললো, তো শুনো, কালকে আমার বিল পেপারটা লাগবে। তুমি সকাল সকাল প্রিন্ট করে নিয়ে আসো।
(আমি জানি যে আমার এখানে কোনো দরকার নেই। কারণ আমি আর ক্লায়েন্ট দুইজনই জানি যে ফাইলটা ইমেইল করে দিলেই প্রিন্ট করে নেয়া যাবে অফিস থেকে। আমাকে কেবল পাওয়ার দেখানোর জন্য এই হুকুম।)।
আমার উত্তর ছিল, ভাইয়া, আমি আজকে ফাইলটা দিতে গেলে আপনার কাজটা করতে পারবো না। তাহলে ডেডলাইন এক দিনের জন্য মিস হবে। আপনার এতে সমস্যা না থাকলে আমি ফাইলটা দিতে চলে আসছি। এটা শুনে তিনি বললেন, না না। থাক। তুমি ফাইলটা মেইল করে দাও। আর কাজটা যত দ্রুত সম্ভব করে দাও।
একটা বাক্যের মাধ্যমে তার কাছে আমার কাজের মূল্য বাড়ালাম, সময় বাঁচালাম আর মনে মনে ছোটখাটো একটা বিশ্বজয়ের আনন্দ পেলাম। হ্যাঁ, সব ক্ষেত্রে উপরের মানুষজনকে কাবু করা যায় না, কিন্তু চেষ্টা না করলে মানুষ আপনাকে পেয়েই বসবে। তাই, এইদিক-ওইদিক করে বুদ্ধি বের করাটা কখনও থামাবেন না!
*
স্টিকি কমিউনিকেশন
হুস্টান বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সার্ভে করতে সাহায্য চেয়ে মানুষের কাছে প্রপোজাল পাঠানো হচ্ছিল। যার কাজ, সেই প্রফেসর সাহেব একটা এক্সপেরিমেন্ট করলেন। তিনভাবে তিনি প্রপোজালগুলো পাঠালেন। ১ম দলের প্রপোজালের উপর স্টিকি নোটে পার্সোনাল একটা চিঠি লিখে পাঠালেন।
২য় দলের প্রপোজালের উপর কিছু না লেখা স্টিকি নোট পাঠালেন।
৩য় দলের প্রপোজালে কোনো স্টিকি নোটই দেওয়া হয়নি।
ফলাফল?
১ম দল : ৭৬% সার্ভে করে দিলেন
২য় দল : ৪৮% সার্ভে করে দিলেন
৩য় দল : ৩৬% সার্ভে করে দিলেন
খালি তাই নয়, ২য় দল ৩য় দলের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুততার সাথে সার্ভে করে ফেরত দিল এবং ১ম দল ২য় দলের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুততার সাথে সার্ভে করে ফেরত দিল!
মোরাল অফ দ্য স্টোরি : আজই স্টিকি নোট ব্যবহার করা শুরু করুন! আর স্টিকি নোটই যে ব্যবহার করতে হবে এমন না। আপনি খামে করে নিজের হাতে লিখা কোনো চিঠি দিলেন কিংবা ছোট একটা চকোলেট; সেটাও কাজ করবে।
(এখানে একটা স্টিকি নোট ব্র্যান্ডের স্পন্সরশিপ নিতে পারলে বেশ ভালো। ইনকামও হত! ইশশ!)
*
ছন্দের কমিউনিকেশন
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে চলা টেলিভিশন সিরিজ হচ্ছে ইত্যাদি। অনুষ্ঠানটির মূল সঞ্জীবনী শক্তি হচ্ছে উপস্থাপক হানিফ সংকেতের অসাধারণ উপস্থাপনা। পুরো দেশের মানুষ তার উপস্থাপনা পছন্দ করেছে। এমন একজন মানুষ যাকে পুরো দেশের মানুষ পছন্দ করে, তার কাছে শেখার নিশ্চয়ই কিছু আছে, তাই না?
আপনি যদি ইত্যাদি দেখে থাকেন (না দেখে থাকলে আজই ইউটিউবে ১/২টা এপিসোড দেখে আসুন!), তাহলে দেখবেন উপস্থাপক হানিফ সংকেত কথা বলার সময় সব কথাই ছন্দে ছন্দে উপস্থাপন করেন। হ্যাঁ! এটাই অনেক বড় একটা শিক্ষা! আমরা ছন্দ পছন্দ করি।
তাই বলে দিনে ২৪ ঘণ্টা ছন্দ করে কথা বললে অনেকেই বিরক্ত হবে। কিন্তু, ব্যবসার প্রচারণা, বিশেষ করে বিজ্ঞাপনে ছন্দের ব্যবহার করলে মানুষের মনে বেশি গভীরভাবে কথাগুলো গেঁথে যায়।
আমরা একদম শৈশবে ছন্দ-কবিতা পড়েছিলাম। বড় হয়ে হয়তো অনেক থিওরি পড়ে দুনিয়াটা অনেক কমপ্লেক্সভাবে চিন্তা করি। কিন্তু, মানুষের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য শৈশবের ছড়া এখনও কাজ করে!
*
আপনার সমস্যাটা কী?
মনে করেন, আপনি পাসপোর্ট অফিসে একটা সংশোধন করতে গেলেন। নিচের কোনটা শুনতে আপনার ভালো লাগবে?
অপশন ১ : আপনার কী সমস্যা?
অপশন ২ : আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?
দুইটা বাক্যই কিন্তু একই কথা বলে কিন্তু কত তফাত। পার্থক্যটা কথায়, অপশন ১-এ আপনার কী সমস্যা বললে মনে হয় সমস্যাটা আমার ব্যক্তিগত একটা ক্রটি। অন্যদিকে আমি কীভাবে সাহায্য করতে পারি বললে নিজের যে দোষ কিংবা সমস্যা আছে সেটা তো আমরা ভুলে যাই-ই, বরং আরও ভালো লাগে যে কেউ সমাধানে এগিয়ে আসছেন।
একই কথা, কিন্তু ডেলিভারিতে কত তফাৎ!
এমনই একটা সুন্দর রূপক আছে। একই জায়গা থেকে ২টি বল জোরে লাথি দিলে হয়তো দেখা যাবে বলগুলো একে অন্যের থেকে ৯০/১০০ ফিট দূরে গিয়ে পড়েছে। কিন্তু আসল বলটা কিক করার সময় মাত্র ৪/৫ মিলিমিটার এইদিক ওইদিক কিক করার কারণে শেষ ফলাফল অনেক বেশি ভিন্ন দেখায়!
*
ক্যালেন্ডার বুক করে রাখেন
যখনই কোনো মিটিং শেষ হবে, সাথে সাথে পরের মিটিং-এর জন্য ক্যালেন্ডার বুক করে ফেলেন এবং অন্য সবাইকে ক্যালেন্ডার বুক করে রাখার রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে রাখুন। কারণ, বেশিরভাগ সময় মুখে মুখে কথা হয় যে, সোমবার বসি আরেকবার চলেন।–এই বলে সবাই উঠে চলে যায়। কেউ হয়তোবা মিটিং-এর কথা ভুলেই যায়। অথবা, যেহেতু এটা কেবল মৌখিক একটা সিদ্ধান্ত, কেউ চাইলেই কল করে বলতে পারে আরেকদিন মিটিং করতে। এভাবে একটা একটা করে আপনার ক্লায়েন্ট মিটিং ছুটে যেতে পারে। তাই, মিটিং-এর সাথে সাথেই ক্যালেন্ডার বুক করে রিকুয়েস্ট পাঠাবেন। একবার ক্যালেন্ডার বুক করা থাকলে সেটা অফিশিয়াল হয়ে যায়। অনেকটা। তখন কেউ হুট করে মিটিং বাদ দিতে চাইলে ব্যাপারটা অনেক অপেশাদার লাগে। তাই, যখনই কোনো মিটিং-এর কথা আসবে, তখনই ক্যালেন্ডার বুক করে রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে রাখবেন।