ধরা যাক, কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে তার গ্রামের বাড়ি কোথায়? ই মানবের এর উত্তর হবে ইয়ে- তে। আরে বাপু আপনি যার সাথে কত বলছেন সে কি খাতা কলম নিয়ে অংক করতে বসেছে নাকি যে লাইনের পর লাইন ধরে ভেবে চিন্তে আপনার ইয়ে এর মান বের করবে।
২. উড়ে এসে জুড়ে বসা মানব : ধরা যাক, কথা বলছিলেন ক্রিকেট নিয়ে। উড়ে এসে জুড়ে বসা মানব নিজের সাথে কাঁধে করে উইম্বলডনের গল্প নিয়ে উড়ে এসে জুড়ে বসবে।
কথা হলো, টেনিস বল টেপে মুড়িয়ে ক্রিকেট খেলা পর্যন্ত হজম করা গেলেও ক্রিকেটের আড্ডায় কেউ টেনিস ঢুকিয়ে দিলে ব্যাপারটা হজম করতে একটু সমস্যা হয়ই।
৩. বাচাল : এদের কথা যদি একবার শুরু হয় তাহলে আপনার জন্যে শুভকামনা। উনি শুধু বলেই যাবেন, আপনার শোনা বা না শোনায় তার কিছু আসে যায় না।
৪. আজীবন সম্মান করে যাওয়া মাটির মানুষ : এই মানুষগুলো জীবনেও কারও চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলবে না। কোনো এককালে কোনো এক গুনীজন তাদের মস্তিষ্কে সম্মান প্রদর্শনের আরেক নাম চোখের দিকে না তাকানো।- এমন একখানা অদ্ভুত ধারণা প্রবেশ করিয়েছিলেন। এবং তারাও অনুগত চিত্তে উহা বেদবাক্যের মতো মেনে চলছেন।
৫. আমি মানব : এই আমি মানব এর জীবনে কেবল একজনই আছেন। সেটা হলো আমি! ওনার জীবনে উনি নিজে বাদে আর কিছু নাই। সবার সব কথা আর কাজের মধ্যে নিজের ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছাকৃত প্রবেশের মাধ্যমে তারা নিজেদের জীবনের সার্থকতা খুঁজে পান।
৬. মোবাইল আসক্ত : আমি মানব এর মতো এই মহামানবের জীবনেও সম্বল একটাই। সেটা হলো ফোন। সারাক্ষণ ফোনের মধ্যে সাঁতরে বেড়ায় এরা।
৭. নো প্রাইভেসি : এরা কারণে অকারণে মানুষজনকে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে বেড়ায়। নিজের চরকা বাদে অন্য সকলের চরকা নিয়ে তাদের বেজায় কৌতূহল। বেতন, পরিবার, রিলেশনশিপের মতো সংবেদনশীল ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলোতে এদের অনেক আগ্রহ।
৮. চুলকানি রোগী : কথা বলুক কিংবা শুনুক এদের হাত হয় মাথায় নয় ঘাড়ে নয় কান চুলকাতে ব্যস্ত থাকে।
৯. খেই হারানো- মানব : এই বান্দারা কথার মাঝখানে হারিয়ে যায়। মনোযোগ দিয়ে কখনও কথা শোনে না। এদের মনোযোগ বক্তা ছাড়া অন্য সবখানেই থাকে।
পাঠক এবার আপনার জন্যে প্রশ্ন, আপনি কি এদের কারও মতো? তাহলে আপনাকে বলছি, সময় থাকতে বদলে ফেলুন বদভ্যাস। নয়তো আপনার সাথে কথা বলার আগ্রহ সবারই কমে যাবে।
*
সবার প্রিয় হতে চান?
সবার প্রিয় হয়ে উঠতে কে না চায়? আমাদের আচরণ, অভ্যাস আমাদের ব্যক্তিত্বের প্রকাশক। আপনার কিছু ছোট অথচ সাধারণ বৈশিষ্ট্য আপনার গ্রহণযোগ্যতা সবার কাছে অনেকটা বাড়িয়ে দিতে সক্ষম। চলুন জেনে নেওয়া যাক, সবার প্রিয় হয়ে ওঠার ৫টি কার্যকর কৌশল
১. আগে দর্শনধারী এরপর গুনবিচারী।
নিজের পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-আচরণ, কথাবার্তা এই ব্যক্তিত্ব নির্দেশক কাজগুলো আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলতে পারে যদি এ বিষয়গুলোতে আপনি সঠিকভাবে সময় দেন। সবখানে আরাম খুঁজতে যাওয়াটা অযৌক্তিক। এমন কোনো কাজ বা আচরণ করবেন না যেটা আপনার সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে। সোজা হয়ে দাঁড়ান, মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। কথা বলুন সামনের দিকে ঘুরে শ্রোতার চোখের দিকে তাকিয়ে।
যতই বলি না কেন, Dont Judge a book by its cover. এর মতো আগে দর্শনধারী এরপর গুনবিচারী। ও সত্যবচনই বটে।
তাই নিজের পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-আচরণ, অঙ্গভঙ্গি, পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সতর্ক হোন। আত্মবিশ্বাসী, গোছানো, পরিপাটি ও সুন্দর থাকুন।
২. আশপাশের পরিবেশের ব্যাপারে সজাগ হোন।
চারপাশের পরিবেশ ও মানুষজনের প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন হোন। তারা ৯ ধরণের মানসিকতার, তাদের আগ্রহের জায়গা কোনটি, তাদের বলেন, ব্যাপারগুলো নিয়ে ধারণা থাকলে অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা ও কাজকর্ম কম হবে। একুশ শতকের অন্যতম প্রয়োজনীয় স্কিল Emotional intelle এর একটি প্রধান দিক হলো এই Self awareness. কখন কোন জায়গy কোন মানুষকে কোন কথাটা কীভাবে বলতে হবে সেটা নিয়েও যাতে আপনার একটা ধারণা থাকে।
তাই নিজের চারপাশ, পারিপার্শ্বিক মানুষ সম্পর্কে ধারণা রাখুন। সে অনুযায়ী কথায় ও কাজে প্রাসঙ্গিক হোন।
৩. শুনুন বোঝার জন্যে।
আমরা অধিকাংশ যতটা না শ্রোতা তার চাইতে বেশি তর্কপ্রিয়। আমরা উত্তর দিতে ভালোবাসি। কথার পিঠে কথা বলতে ভালোবাসি। তর্ক করতে ভালোবাসি। অথচ সবার প্রিয় হওয়ার জন্য অন্যতম কার্যকর দিক হলো একজন আদর্শ শ্রোতা হতে পারা। তাই কথার পিঠে কথা যুক্ত করে নিজেকে সবার কাছে তর্কপ্রিয় হিসেবে তুলে ধরার চাইতে বক্তা কী বলতে বা বোঝাতে চাইছেন সেটা ঠান্ডা মাথায় মনোযোগ সহকারে শুনে বোঝার চেষ্টা করুন।
আর সব কথারই উত্তর দিতে হবে অমনও তো কোথাও বলা বা লেখা নেই। তাই তর্ক করা বা উত্তর দেবার জন্যে নয় কথা শুনুন বোঝার জন্যে। তাহলেও সবার প্রিয় হয়ে উঠতে পারবেন।
কথায় বলে, Just because you are right that does not mean I am wrong. আর ইংরেজি ৯ কে উল্টো দিক থেকে দেখতে ইংরেজি ৬ এর মতোই লাগে। তাই কে কোন ব্যাপারটা কোন দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করছে। সেটাও দেখা জরুরি। আমরা প্রতিটা মানুষ আলাদা, আমাদের চিন্তাভাবনা আলাদা, দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। তাই মতভেদ হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। মতভেদ হলেই তর্কে জড়ানোটা খুব একটা ভালো সিদ্ধান্ত কখনই নয়।