এখন থেকে কেবল নিজে বলার অভ্যাসটাকে একটুখানি ছুটি দিন। অভ্যাস করুন শোনার। দেখবেন, মানুষের প্রিয় হয়ে ওঠা খুব একটা কঠিন কাজ নয়!
*
সতর্কতা : কথা বলা ও শোনার সময় যে কাজগুলো করা যাবে না!
কথা বলা বা শোনার সময় আমরা প্রায়ই এমন কিছু প্রতিক্রিয়া দেখাই যা অপরপ্রান্তের মানুষটির কথা বলা বা শোনার আগ্রহ আর উদ্যম নষ্ট করে দেয়। যেমন, আমি এইটা আগেই জানতাম।, এই সমস্যায় আমি কত পড়শি।, আমি এভাবেই কথা বলি।, গোত্রের উত্তর কিংবা অন্যদিকে তাকিয়ে থাকা, নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া দেখানো, মনোযোগ না দেওয়ার মতো প্রতিক্রিয়া। এই কথা বা কাজগুলো মানুষের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা অনেক কমিয়ে দেয়। আমাদের ব্যক্তিত্বকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরে।
শুধুমাত্র কথা বলা ও শোনার মাধ্যমেও মানুষের মন জয় করে নেওয়া সম্ভব। চলুন জেনে নিই সেরকম কয়েকটি কার্যকর কনভারসেশন হ্যাকস!
১. মানুষের উদ্যম নষ্ট করে দেবেন না।
আমি এটা আগেই জানতাম–আমাদের কাছে মাঝে মাঝেই আমাদের ছোট ভাইবোন বা বন্ধুরা সুন্দর কোনো আইডিয়া বা কথা শেয়ার করে। আর আমরা অনেকেই সেটার প্রত্যুত্তরে আমি এটা আগেই জানতাম- বলে থাকি। এই কথাটা অপর প্রান্তের মানুষটার উদ্যমটাকে একেবারে নষ্ট করে দেয়। এবং ফলাফলস্বরূপ ওই মানুষটা আর কোনোদিনও আপনার সাথে কোনো কথা শেয়ার করার আগ্রহ দেখাবে না। আর তাই আমি এটা আগেই জানতাম মানুষের উদ্যম নষ্ট করে দিয়েন না।
২. নিজেকে শোধরানোর চেষ্টা করুন।
আমি এভাবেই কথা বলি–এই কথাটা আমাদের সবার বেশ পরিচিত। আমাদের জেদি আর একগুয়ে স্বভাবের পরিচায়ক হলো এই উক্তিটা। আমড়া একবার ভাবুন তো, সবাইকে বদলানোর চাইতে নিজেকে বদলে ফেলাটা সহজ না? কী দরকার শুধু শুধু নিজেকে সবার কাছে জেদি আর একগুঁয়ে হিসেবে তুলে ধরার?
তার চেয়ে বরং আমি এভাবেই কথা বলি- না বলে নিজেকে শোধরানোর চেষ্টা করুন। সেটা সবার জন্যেই ভালো।
৩. সহানুভূতিশীল হতে শিখুন।
আমরা একেকজন মানুষ একেকরকম। আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ। পরিস্থিতিও আলাদা। আমাদের সমস্যা আলাদা, সমস্যা সমাধানের ধরণও আলাদা। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও আলাদা। আমাদের কাছে যখন কেউ কোনো। সমস্যা নিয়ে আসে তখন এই ঝামেলায় আমিও কতবার পড়েছি বলে ওই মানুষটার সমস্যাটাকে উড়িয়ে দেওয়াটা অনুচিত।
সাহায্য নাই করতে পারেন, অন্তত শুনতে তো পারেন। এতে অন্তত ঐ মানুষটা হালকা বোধ করবেন। সহানুভূতিশীল হতে শিখুন। কেউ কোনো সমস্যার কথা শেয়ার করলে এই ঝামেলায় আমিও কতবার পড়েছি বলে তাকে আর তার সমস্যাকে উড়িয়ে দেবেন না।
৪. তর্ক করার জন্যে নয়, বোঝার জন্যে শুনুন।
আমরা আসলে কথা শুনি মূলত জবাব দেওয়ার বা তর্ক করার জন্যে। কথার মধ্যে লুকোনো মেসেজটা বোঝার চেষ্টা না করেই আমরা উত্তর দেই, তর্ক শুরু করে দেই। এই অভ্যাসটা মানুষের কাছে আপনার ইম্প্রেশন নষ্ট করে। তাই চেষ্টা করুন বক্তার কথা বুঝতে। বুঝে উত্তর দিন। খামাখা তর্কে জড়াবেন না।
৫. কথা বলা বা শোনার সময় অন্যদিকে মনোযোগ দেবেন না।
আমরা অনেক সময় কথা বলতে গিয়ে শ্রোতার দিকে তাকাই পর্যন্ত না। মোবাইল অঁতোই কিংবা মাথা নিচু করে থাকি। এটা মানুষের আগ্রহ নষ্ট করে। তাই, কথা বলার সময় যাকে বলছেন তার দিকে তাকিয়ে কথা বলুন। আর যারা শুনছেন তারাও বক্তার দিকে তাকিয়ে তার কথায় মনোযোগ দিন।
৬. নেগেটিভ বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখাবেন না।
কারও সাথে কথা বলা কিংবা কারও কথা শোনার সময় কখনও এমন কোনো কারও আচরণ করবেন যাতে বক্তা বা শ্রোতা বুঝতে পারেন যে আপনার তার সাথে সতা বলা কথা শোনার বেলায় আগ্রহ নেই। এরূপ আচরণের মধ্যে হাই তোলা, অন্যদিকে তাকিয়ে থাকা, নিশ্চুপ থাকা অন্যতম। এই আচরণগুলো করা যাবে না। হাসিমুখে এবং মনোযোগ দিয়ে কথা বলুন, শুনুন, জবাব দিন।
৭. মাঝে মাঝে অবাক হওয়ার ভান করলেও মন্দ হয় না।
কেউ কোনো কথা বা আইডিয়া শেয়ার করতে চাইলে মনোযোগ দিয়ে শুনুন। কথা শোনাটাও অনেক বড় একটা স্কিল। আপনার জানা কোনো তথ্য বা আইডিয়া পুনরায় শেয়ার করা হলেও মাঝে মাঝে অবাক হবার ভান করে দেখতে পারেন। আপনার একটুখানি ভান যদি কাউকে খুশি করে দেয় তাহলে এইটুকুন ভান তো করাই যায়।
৮. কখন থামা উচিত বুঝবার চেষ্টা করুন।
কখন কথোপকথন শেষ করা উচিত সেটা বোঝার কিছু উপায় আছে। নেক্সট কবে দেখা হচ্ছে?, কিংবা কার্ড বিনিময়, হ্যান্ডশেক করা এই কাজগুলো সাধারণত কথোপকথনের সমাপ্তির লক্ষণ। এই ব্যাপারগুলোতে নজর রাখা উচিত।
এই কথাগুলো বা কাজগুলো হয়ে গেলে বুঝতে হবে এরপরে আর কোনো কথা বলা অনুচিত।
এখন থেকে কথা বলা ও শোনার সময় এই ট্রিকগুলো কাজে লাগাতে পারলে আপনি ধীরে ধীরে একজন আদর্শ বক্তা এবং শ্রোতা হয়ে উঠবেন।
*
সাবধান : আপনি কি একজন Conversation Monster?
আপনার আমার আমাদের সবার আশেপাশেই এমন কিছু মানুষ আছেন যাদের কথাবার্তা আর আচার-আচরণে কিছু সাধারণ অসঙ্গতি আছে যেটা ওই মানুষগুলোর সাথে আমাদের কথোপকথনে আগ্রহ কমিয়ে দেয়। কিছু নমুনা দেখানো যাক :
১. ইয়ে মানব : এরা সব বাক্যে একটা করে ইয়ে জুড়ে দেয়। এবং বেশ অদ্ভুতভাবে ওই ইয়ে টা ঘুরেফিরে সেই আসল কথার প্রতিস্থাপক।