কথা বলবেন চোখের দিকে তাকিয়ে : এবার আসা যাক আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে। আমরা অনেকে কথা বলার সময় মাথা নিচু করে থাকি। কিংবা ডানে বামে বা অন্যদিকে তাকিয়ে থাকি। শ্রোতার চোখের দিকে তাকাতে ইতস্তত বোধ করি। এটা এক ধরণের অভদ্রতা। আর এটা না করলে শ্রোতার সঙ্গে সম্পর্কটাও ঠিকমতো গঠিত হয় না।
তাই, সবসময় মনে রাখবেন কথা বলার সময় শ্রোতার চোখের দিকে। তাকিয়ে হাসিমুখে কথা বলবেন। প্রয়োজনে মাথা নাড়বেন।
*
যেভাবে কখনও কারও সাথে কথা বলা উচিত নয়!
প্রথমে দুজন বন্ধুর কিছু কাল্পনিক কথোপকথন দেখে নেওয়া যাক!
কথোপকথন-০১
প্রথম বন্ধু- দোস্ত, জানিস? ফেইসবুকে কোনো ভিডিও মাত্র ৩ সেকেন্ড দেখা হলেই একটা ভিউ গণনা করা হয়। অন্যদিকে ইউটিউবে, ৩০ সেকেন্ড দেখলে তারপর একটা ভিউ গণনা করা হয়।
দ্বিতীয় বন্ধু– এইটা আর এমন কী? এ তো আমি সেই কত আগে থেকেই জানি। আসছে আমাকে ফেইসবুক আর ইউটিউব শেখাতে। আমাকে এসব শেখাতে এসো না। লাভ নেই!
কথোপকথন-০২
ধরা যাক, একজনের মন খারাপ। মুখ গোমড়া করে বসে আছে। তার বন্ধুর আগমন।
প্রথম বন্ধু–কী রে! কী খবর?
বন্ধু- দোস্ত, ভালো লাগছে না। কয়েকদিন ধরে একেবারেই মন মেজাজ ঠিক নেই। কোনো কাজে মনোযোগ দিতে পারছি না। বেশ অস্বস্তিকর মনে হচ্ছে সব কিছু। রাতে ঘুম হচ্ছে না ঠিকঠাক। আমি জানি না, ঠিক কী হচ্ছে আমার সাথে। বেশ হতাশ লাগছে।
প্রথম বন্ধু– আরে কী অদ্ভুত ব্যাপার! তোর জীবনের সব কিছুই ঠিকঠাক তাও তোর শুধু হতাশ লাগে। তাজ্জব ব্যাপার। এটা কোনো সমস্যা হলো। আমার জীবনে কি এগুলো হয় নাই? আমার জীবনে আমি লড়াই করি নাই? ফাজলামি করো নাকি? আজকাল ছেলেপেলের এই হলো গিয়ে এক সমস্যা। কিছু হলেই তাদের হতাশ লাগে, কিছু ভাল্লাগে না, রাতে ঘুম হয় না। আরে ভাই। সারারাত তো ফেইসবুক নিয়ে পড়ে থাকো, সিনেমা দেখো। ঘুমটা আসবে কোত্থেকে শুনি, হ্যাঁ?
পুরো ফ্যাশন হয়ে গেসে এই প্রজন্মের জন্যে এইসব ডিপ্রেশন, ফ্রাস্টেশন। অসহ্য ব্যাপারস্যাপার।
কথোপকথন ০৩
ধরা যাক, একজন কোনো প্রতিযোগীতায় বেশ কিছু অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। সে এটা নিয়ে বেশ খুশি। এমন সময় তার বন্ধুর আগমন।
প্রথম বন্ধু– এগুলো কী, দোস্ত?
দ্বিতীয় বন্ধু– দোস্ত, টেন মিনিট স্কুল ডিজিটাল মার্কেটিং অ্যাওয়ার্ডে- এ তিন তিনটা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। কী চমৎকার! তাই না?
প্রথম বন্ধু– এ কী! মোটে তিনটা অ্যাওয়ার্ড নিয়েই এভাবে লাফাচ্ছিস? কত কত এজেন্সি তো আঠারো-উনিশটা অ্যাওয়ার্ড পেয়েও তোর চেয়ে কম লাফাচ্ছে।
দ্বিতীয় বন্ধু– আমাদের স্টুডেন্ট নোটস- সেকশনটা গ্র্যান্ড প্রি অ্যাওয়ার পেয়েছে, দোস্ত! খুশি হবো না?
প্রথম বন্ধু- আরেহ এইগুলো কোনো ব্যাপারই না। অনেক এজেন্সি আছে ১২ ২০ টা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। আমি নিজেই তো গত বছর ৭ টা পেয়েছিলাম। টা পাওয়া কোনো ব্যাপার না। আগে ৮-১০ টা পাওয়ার অভ্যাস কর, এরপরে লাফাইস। এসব ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে এত উচ্ছ্বাস করার কোনো মানে নাই। আমার মনে হয় একটু বেশিই লাফাচ্ছিস এটা নিয়ে!
কথোপকথন ০৪
ধরা যাক, কেউ সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে চমৎকার একটা ছুটি কাটিয়ে ফিরেছে। এরপর তার বন্ধুর সাথে দেখা। চমৎকার সেই ট্রিপের গল্পটা বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে বলা শুরু করলো সে!
প্রথম বন্ধু- দোস্ত, এত সুন্দর একটা ছুটি গেল। সেন্টমার্টিন দ্বীপটা এত অসাধারণ। সাগরের পানি কী সুন্দর নীল! কী চমৎকার একটা জায়গা!
দ্বিতীয় বন্ধু–আরেহ, সেন্টমার্টিনের আলাপ বাদ দে তো তুই? তোর গল্প রাখ। আমারটা শোন। থাইল্যান্ড গিয়েছিস কখনও? আমি থাইল্যান্ড গিয়েছিলাম। থাইল্যান্ড এত সুন্দর। সেন্টমার্টিন একটা জায়গা হলো নাকি? সেন্টমার্টিনের গল্প কাউকে বলিস না, দোস্ত! বাদ দে। তোর সারা দুনিয়া দেখাই বাকি এখনও!
আমাদের প্রত্যেকের বন্ধুমহলেই এই ত্যাড়া বন্ধুর মতো মহা নেতিবাচক কিছু বন্ধু থাকে। যারা কি না আমাদের সবার কথা, অভিজ্ঞতা, সফলতা, ধারণা, অনুভূতি, বিশ্বাস আর অর্জনকে তাদের নেতিবাচক কথা দিয়ে একেবারে এক তুড়িতে নস্যাৎ করে ছাড়ে। আমাদের কোনো কোনো পরিবারের সদস্যও এরকম মানসিকতাসম্পন্ন!
আচ্ছা, একটা কথা বলুন তো? শুধু যদি বলেই বেড়ান, শুনবেন কখন? শুনি? একটা কথা মাথায় রাখবেন, প্রতিটা অর্জনই মূল্যবান। প্রতিটা অভিজ্ঞতাই দারুণ! আমাদের বন্ধু-বান্ধব, ভাই-বোন, বাবা-মা যখন অনেক আগ্রহ নিয়ে তাদের কোনো অভিজ্ঞতা, সফলতা, ধারণা, অনুভূতি কিংবা অর্জনের কথা আমাদের সাথে শেয়ার করতে আসেন তখন তাঁদের কাছের মানুষ হিসেবে। আমাদের উচিত সেটা গুরুত্ব সহকারে শোনা এবং মূল্যায়ন করা।
হতে পারে আপনি তাদের চেয়ে অনেক বেশি অভিজ্ঞ, অনেক বেশি জানেন, অনেক বেশি অর্জন করে ফেলেছেন, কিন্তু সেটার মানে কিন্তু এই না যে আপনি অন্যদের অর্জন আর অভিজ্ঞতাকে অবমূল্যায়ন কিংবা অবজ্ঞা করবেন। এ হতেই পারে আপনি অনেক অনেক পুরস্কার জিতেছেন, তার মানে এই না যে অন্য কারও পাওয়া কোনো পুরস্কারকে আপনি চোট দেখবেন। হয়তোবা হতাশা নামের নেতিবাচক অনুভূতির কোনো জায়গা আমার জীবনে কিন্তু তার মানে এই না যে আপনি অসম্মান করবেন অন্য কারও অনুভূতিগুলোকে।