এই কনসেপ্টটা আমরা আমাদের জীবনে প্রয়োগ করি না কেন? যখন কেউ আমাদের নিয়ে খারাপ কিছু বলে তখন আমরা সমস্ত এনার্জি, সময় আর ইমোশন দিয়ে তাদের সাথ ঝগড়া করি। কিছু কি বদলায়, নাকি তর্ক আরও বেশি দূর গড়ায়? চিন্তা করেন খালি, আমরা যদি সেই একই এনার্জি, সময়। আর ইমোশন আমাদের যারা ভালোবাসে, স্নেহ করে–তাদেরকে দিতাম? তারা বহুগুণে সেই ভালোবাসা, স্নেহ আমাদের ফিরিয়ে দিতেন।
তাই, আজ থেকে যতই নিন্দুকের সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করুক না কেন, আগে দেখবেন আপনার শুভাকাঙ্ক্ষীদের যথেষ্ট সময় দিতে পেরেছেন কি না। তাছাড়া, ইগ্নোর করার চেয়ে বড় কোনো অপমান হতে পারে না।
*
পিপল স্কিল : কী এবং কেন?
অনেক যোগ্য মানুষের ভিড়ে আমরা কিন্তু আলাদা করে মনে রাখি সেই মানুষটিকে যিনি সুন্দর করে কথা বলতে জানেন। সুন্দর করে কথা বলতে পারার গুনটি শুধু জনপ্রিয় হবারই নয়, বরং কখনো কখনো সফল হওয়ারও একটি চাবিকাঠি। তবে, সবার সাথে সঠিকভাবে কথা বলার পাশাপাশি সঠিকভাবে শোনাটাও কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ স্কিল। কিন্তু Stephen R Covey এর মতে, Most people do not listen with the intent to understand. Most people listen with the intent to reply.
তো চলুন আজ শেখা যাক গুছিয়ে কথা বলা ও মনোযোগ দিয়ে কথা শোনার আদবকেতাগুলো!
১. কথা শোনা : মনোযোগ সহকারে কথা শোনা এক প্রকার শিল্প। যেটা সকলের পক্ষে রপ্ত করা সম্ভব নয়। অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন, কথা শোনার আবার কিসের মাহাত্ম? মনে রাখবেন, সৃষ্টিকর্তা আমাদের কান দিয়েছেন দুটো, মুখ দিয়েছেন একটা। অতএব, বলা আর শোনার অনুপাতটা কেমন হওয়া উচিত বুঝতেই পারছেন। তা আপনাদের এই শোনার ক্ষমতা অর্জনের। জন্যে আজ আপনাদের তিনটা ফর্মুলা দিচ্ছি। এই ফর্মুলাটা 3A পরিচিত! এই 3A এর মর্মার্থ হলো–
Acceptance–
আমরা যখন কথা বলি তখন অনেকক্ষেত্রেই আমাদের শ্রোতা যিনি বা যারা থাকেন তাদের ভাব-ভঙ্গি দেখে মনে হয় তিনি বা তারা আমাদের কথায় আগ্রহ পাচ্ছেন না। অনেক সময় তাদের দেখে মনে হয় তারা বেশ বিরক্ত। যখন আমরা শ্রোতা হই তখন আমরাও এরকম করে থাকি প্রায়শই। যেটা অনচিত। আমাদের সাথে যখনই কেউ কোনো ব্যাপারে কথা বলতে এইবেন, শ্রোতা হিসেবে আমাদের উচিত হবে তাকে সুন্দর করে স্বাগত জানানো, যাতে সে কথা বলায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। হতে পারে সেটা একটা উষ্ণ কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে!
Appreciation—
আমরা বাঙ্গালিরা উৎসাহ দেবার বেলায় বরাবরই বেশ কৃপণ। আমাদের কারও ভালো কাজে অনুপ্রেরণা দিতে বড় সংকোচ হয়। অথচ এই একটুখানি প্রশংসা, উৎসাহ, অনুপ্রেরণামূলক ভালো কথা মানুষের মধ্যকার সম্পর্কটাকে নিমেষে বদলে দেয়। যখন কেউ আপনার সাথে কোনো আইডিয়া বা প্ল্যান শেয়ার করবে আপনার উচিত সেটা শোনামাত্রই সেটার প্রশংসা করা, তাকে বাহবা দেওয়া। তাহলে দেখবেন মানুষটা আপনার সাথে কথা বলতে অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে।
Approval—
মানুষ সবখানে তার নিজের আইডিয়া বা প্ল্যানের গ্রহণযোগ্যতা খোঁজে। কারও কাছ থেকে কোনো আইডিয়া, বা প্ল্যান শোনার পর আপনি যদি কোনো কথা না বলেন তাহলে ওই মানুষটা দ্বিধায় ভুগবে। তার আপনি যদি তাকে জানান তার আইডিয়াটা কেমন ছিলো? কীভাবে করলে আরো চমৎকার হবে তাহলে ব্যাপারটা চমৎকার হবে। মানুষটাও আর সংশয়ে ভুগবে না।
আর এই 3A তথা Acceptance, Appreciation, Approval দিতে গিয়ে পুরোটা সময় আপনাকে যেটা দিতে হয় সেটা হলো Attention অর্থাৎ মনোযোগ। অথচ আমরা এই মনোযোগটাই দেই না কথা শোনার সময়। কেউ একজন কথা বলার সময় দেখা যায় আমরা অন্যমনস্ক হয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকি। কখনও দেখা যায় নিজের মুঠোফোনে ডুবে আছি, আবার কখনও দেখা যায় ঘড়িতে সময় দেখছি। অথচ এই ব্যাপারগুলো যিনি কথা। বলছেন তার জন্যে কতটা অস্বস্তিকর সেটা কখনও ভেবে দেখেছেন? কেউ কথা বলার সময় আপনি ঘড়ি দেখছেন এর মানে দাঁড়ায় আপনি অপেক্ষায় আছেন কতক্ষণে সবটা শেষ হবে। কারও কথা বলার সময় আপনি মুঠোফোনে মনোযোগ দিচ্ছেন কিংবা অন্যদিকে তাকিয়ে আছেন এর মানে হলো আপনি ওই মানুষটাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। অথচ কথা শোনা নামের যে দক্ষতাটা আপনি রপ্ত করতে চাইছেন সেটার প্রথম ও প্রধান কাজ হলো। মনোযোগ দেওয়া। আর একটা ব্যাপার হলো আমরা বাঙ্গালিরা কথা শুনি কেবল তর্ক করার জন্যে। জানা বা বোঝা আমাদের কথা শোনার উদ্দেশ্য না। কথা শুনতে হবে বোঝার জন্যে, জানার জন্যে। আর একটুখানি মনোযোগ ও গুরুত্ব দিয়ে কারও কথা শুনলে দেখবেন যে কারও মন গলিয়ে ফেলা সম্ভব কেবল তার কথা শুনেই!
এবার আসা যাক,
২. কথা বলা : কথা বলার সময়ও কয়েকটা ব্যাপারে খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে কী কী করতে হবে সেগুলো জেনে নেই!
কথা বলবেন হাসিমুখে : যখন যেখানে যার সাথেই কথা বলবেন না কেন, কথা বলার সময় মুখে একটা হাসি রাখবেন। যাতে কথা বলামাত্রই মানুষ আপনাকে বন্ধুসুলভ হিসেবে ধরে নেয়। কথা শোনার সময়ও হাসি মুখে শুনবেন।
মাথা নেড়ে সম্মতি জানাবেন : মাঝে মাঝে মাথা নেড়ে সম্মতি কিংবা নিজের মতামত প্রকাশ করবেন। কেননা আপনি যখন কথা বলেন তখন কেবল মুখেই কথা বলেন না, আপনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়েও কথা বলেন। তাই, মাথা নাড়ানোর ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন।