আপনি মানুষকে অর্ডার দিয়ে যতটুকু কাজ করাতে পারবেন, তার চেয়ে অনেক বেশি হয়তো আপনি পারবেন যদি এমন ব্যবস্থা করতে পারেন যেন তারা একই কাজটা খুশি মনে করে। এখন সব জায়গায় অবশ্যই অর্ডার কাজ করে। যেমন : মিলিটারিতে অর্ডার ফলো না করলে পুরো টিমের মহাবিপদ হতে পারে। কিন্তু, সামাজিক জীবনে যতটা কম সম্ভব অর্ডার করার অভ্যাসটা করতে পারেন।
যিনি আই ডোন্ট কেয়ার বলেছেন, তিনি কেয়ার না করলে কি কখনও আই ডোন্ট কেয়ার বলতেন?
*
মেসেজ দিয়ে রাখসি তো!
এক ক্লায়েন্ট একবার তার বসের কাছে বললো যে, সে বলে আমাকে (লেখককে) মেসেজ পাঠিয়েছে। বস এসে আমাকে ধরলো যে, মেসেজ পাঠানোর পরও কেন আমি কিছু করিনি। আমি বুঝলাম যে আমি মেসেজ পাইনি। কিন্তু, সেই এমপ্লোয়ি বলেই যাচ্ছে যে সে মেসেজ পাঠিয়েছে। এভাবে চলতে চলতে এক সময় প্রমাণ দেখানোর পালা আসলো। আমি বলাম, এসএমএস চেক করলে এবার আসলে বোঝা যাবে কে মিথ্যা বলছে। অবাক হয়ে দেখলাম যে লোকটা হোয়াটস অ্যাপ (Whats App) ওপেন করে দেখাচ্ছে যে সে মেসেজ পাঠিয়েছে।
প্রথম কথা, অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ করলে আমি কীভাবে বুঝবো যে উনি কে? দ্বিতীয়ত, হোয়াটস অ্যাপ কিংবা মেসেঞ্জারে মেসেজ পাঠিয়ে রাখলে। সেটা অনেক সময় ফিল্টার সেকশনে চলে যায়। তাই, কেউ যদি মনে করে যে, অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ পাঠিয়ে রাখলেই কর্পোরেট কমিউনিকেশন হয়ে গেল, তাহলে সে বোকার স্বর্গে বাস করছে।
আর প্রসঙ্গত বলে রাখি, অনেক সময় কাজ কেন হয়নি জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসে, আমি তো মেসেজ দিয়ে রাখসি। মেসেজ দিয়েছেন না কি দেননি, এটাতো বিষয় না, কাজটা ম্যানেজ করতে পারেননি–এটাই মূল বিষয়। মেসেজ পাঠিয়েই অনেকের কাজ যেন একদম শেষ। আরে ভাই দেখেন, মেসেজ দেখেছে না কি। কাজ শুরু করেছে না কি। কাজ কবে শেষ করে আপনাকে দিবে। তাই, মেসেজ পাঠানোটাই শেষ কাজ না। কাজটা আদায় করলেই কেবল কমিউনিকেশন সফল হবে।
*
সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট
কমিউনিকেশনের একটা বড় অংশ হচ্ছে আমাদের বডি ল্যাংগুয়েজ এবং সিচুয়েশন। এমনকি, আমাদের বসার জায়গাও অনেক কিছু কমিউনিকেট করে। আপনি হয়তো বিভিন্ন সরকারি অফিসের চেয়ারে টাওয়াল দেখেছেন, সেটাও একটা পদমর্যাদার ইঙ্গিত হিসেবে অর্থবহন করে। আপনি কোন জায়গায় বসছেন সেটাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। মিটিং রুমের এক সাইডের সিঙ্গেল চেয়ার, যেটা বসের জন্য বরাদ্দ, সেখানে গিয়ে ফট করে বসলে বিপদ হতে পারে। একটা বসার জায়গাও যে একটা অফিসে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা এখন বিভিন্ন কোম্পানি অনুধাবন করছে। জুনিয়র এমপ্লোয়িরা যাতে সিনিয়রদের সাথে সহজে কথা বলতে পারে, সেজন্য সবাই একই ফ্লোরে, একই ধরণের ডেস্কে বসছে ইদানীং বিভিন্ন কোম্পানিতে। বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম সেরা টেক সিইও ইলন মাস্ক বসেন অফিসের এমন জায়গায়, যেখানে তাকে সবথেকে সহজে দেখা যায়। সবাই যখন দেখে বস এত পরিশ্রম করছেন এবং চাইলেই তার সাথে কথা বলা যায়, তখন সবাই আরও বেশি অনুপ্রাণিত হয়। বিচিত্র এই দুনিয়ায় তাই আপনার বসার ধরণও অনেক কথা বলে!
বড় মিটিং টেবিলের দুই পাশে দুই সারি চেয়ারে দুই পক্ষ বসরে এবং টেবিলের এক সাইডে একটি মাত্র চেয়ারে উচ্চপদস্থ কিংবা সিনিয়ারদ্রোস্ট ব্যক্তি বসবেন। দুই সারির এক সারিতে না বসে আপনি যদি সরাসরি বসের চেয়ারে বসেন, তাহলে মানুষ ভাবতে পারে যে আপনি আপনার পাওয়ার মুভ দেখাচ্ছেন!
ইন্টেরোগেশন (Interrogation) এর দৃশ্যে সব সময়। দেখবেন যে, দুই পক্ষ একদম একে অরের মুখোমুখি বসেছে। মুখোমুখি বসাটা অবচেতনভাবে একটা সাংঘর্ষিক আবহ তৈরি করে। পুলিশ যখন ক্রিমিনালের মুখ থেকে কোনো তথ্য বের করার চেষ্টা করছে, তখন সরকম সেটআপ কাজে দিতে পারে।
আপনি যদি কারও সাথে আলাপ-আলোচনা করতে চান, একসাথে কাজ করতে চান, তাহলে সারলে মুখোমুখি না বসে পাশাপাশি কিংবা কোকোণি বসুন, তাহলে একটা সহযোগিতামূলক পরিবেশ অবচেতন মনে তৈরি হবে।
*
হেটারদের সাথে কমিউনিকেশন
ইউনিভার্সিটিতে একদিন ক্লাসে স্যার বোঝাচ্ছিলেন যে, কাস্টমার তিন ধরণের হয়। প্রথম শ্রেণির কাস্টমার হচ্ছে ফ্যানরা। তারা আপনার পণ্য খুবই পছন্দ করে। আপনার পণ্যের কথা অন্যদের সাথে শেয়ার করে এবং তারা আপনার নিয়মিত গ্রাহক। আপনি ১০ টাকা ডিসকাউন্ট দিলে তারা। আরও ১০০০ টাকার পণ্য কিনবে আপনার কাছ থেকে।
দ্বিতীয় শ্রেণির কাস্টমার হল তারা, যারা নিরপেক্ষ। আপনার পণ্য কিনেছে সে, কিন্তু ভালো-মন্দ কোনো অনুভূতি নেই। তাদেরকে ১০ টাকা ডিসকাউন্ট দিলে কোনো কিছু না হলেও, ৫০ টাকা ডিসকাউন্ট দিলে হয়তে আপনার কাছ থেকে ৫০০ টাকার পণ্য কিনবে।
তৃতীয় শ্রেণির কাস্টমার হল তারা, যারা আপনার পণ্য তো পছন্দ করেই না, বেত অন্যদেরকেও বলে বেড়ায় যাতে আপনার দোকানে কেউ না যায়। এসব কাস্টমারকে ১০০০ টাকা ডিসকাউন্ট দিলেও হয়তোবা পণ্য কিনবে না।
এখন মনে করেন আপনার বাজেট ১০০০ টাকা। এই ১০০০ টাকা দিয়ে আপনি ১০০ জন ফ্যানকে গিফট দিয়ে সুপার-ডুপার ফ্যান করে ফেলতে পারেন খুশি করে। অথবা ২০০ জন নিরপেক্ষ কাস্টমারকে আপনি আপনার ফ্যান বানাতে পারেন। নাহলে ১ জন হেটারকে আপনার কাস্টমার বানানোর চান্স তৈরি করতে পারেন। এখন বুদ্ধি থাকলে যে কেউ পুরো বাজেট ফ্যানদের জন্য বরাদ্দ রাখবে।