১. আপনার পরিচিত কারও সাথে যান এবং তাকে বলুন যেন আপনাকে অন্যদের সাথে তিনি পরিচয় করিয়ে দেয়।
২. কোনো অনুষ্ঠানের এমন জায়গায় দাঁড়াবেন যেখানে আপনাকে দেখা যায়। অনেকে এক কোণায় কিংবা দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে থাকে। এটা মোটেও চলবে না। নিজে থেকে কথা বলবেন না বুঝতে পেরেছি, কিন্তু মানুষ যেন আপনাকে খুঁজে বের করে কথা বলতে পারে, সেই সুযোগটা অন্তত করে রাখুন।
৩. কী বলে কথা বলা শুরু করবো?– চিন্তায় যারা কথা বলতে পারেন না, তাদের জন্য একটা মেন্টাল হ্যাক হচ্ছে, আপনি যেভাবে চান যে কেউ আপনার সাথে কথা বলা শুরু করুক, সেই একই বাক্যগুলো ব্যবহার করে আপনি অন্যদের সাথে কথা বলতে এগিয়ে যান।
৪. নেটওয়ার্কিং নিয়ে একটি বইয়ের নামই হচ্ছে, Your network is your net worth. উক্তিটা অনেক সত্য। আপনার জীবনে আপনি কোন কোন মানুষকে চিনেন এবং তাদের সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন সেটার। উপর আপনার পেশাদার এবং পারিবারিক জীবনের সফলতা অনেকটা নির্ভর করছে। তাই, যখনই মনে হবে যে কথা না বললেও তো চলে! –তখন মনে মনে এই উক্তিটি স্মরণ করবেন।
৫. ফার্স্ট ইম্প্রেশন যেন দারুণ হয়। অর্থাৎ, ঠিকমত ড্রেস-আপ করে যাবেন যেন নিজেকে কেমন দেখাচ্ছে এই বিষয়ে আপনার যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস থাকে। যখন হ্যান্ডশেক করবেন, তখন যেন হ্যান্ডশেকটা জোরালো হয়।
৬. সবসময় মনে রাখবেন। একটা কনভারসেশন চালানোর জন্য আপনাকে যে সবসময় কথা বলতে হবে, এমন কিন্তু না। মানুষ নিজের সম্পর্কে সবসময় কথা বলতে চায়। তাই, আপনি যদি অন্য মানুষটির প্রতি আপনার কৌতূহল প্রকাশ করেন, প্রশ্ন করেন তার আগ্রহের কাজ নিয়ে; তাহলে আপনি প্রথম দুটো কথা বলে চুপ থেকে শুনেন খালি, উনি। নিজে থেকেই পুরো কথাবার্তা চালিয়ে নিয়ে যাবেন!
*
কার সাথে সবচেয়ে বেশি কথা বলেন?
আপনাকে কেউ যদি সারাদিন উৎসাহমূলক কথা বলতো, সবসময় সাহস দিত, আপনার সম্পর্কে ভালো কথা বলতো তাহলে নিশ্চয়ই আপনার মন একটু হলেও ভালো থাকতো, কাজ উদ্যম আসতো। অনেকটা পার্সোনাল ট্রেইনারের মত, যে আপনার সাথে সবসময় থাকবে আপনাকে আরও ভালো পারফর্ম করার জন্য সাহায্য করতে।
আর যদি এমন হত যে কেউ আপনার কানে সারাক্ষণ খারাপ কথা বলেই যাচ্ছে। অনেকের জীবনে এমন মানুষ আসলেও আছে! সারাটা দিন খারাপ কথা, মন খারাপ করা কথা, তুমি পারবে না! এমন কথা শুনতে থাকলে আপনি যতই মোটিভেটেড মানুষ হন না কেন, আপনার উপর এই কথাগুলোর একটা নেতিবাচক প্রভাব আসবে।
এখন প্রশ্ন হল, কার সাথে আপনার সবচেয়ে বেশি কথা হয়?
আপনি হয়তোবা বলবেন, আপনার পরিবারের সাথে, কিংবা কোনো এক বেস্টফ্রেন্ডের সাথে। কিন্তু, আসলে যার সাথে সব থেকে বেশি কথা হয়, সেই মানুষটি হচ্ছেন আপনি নিজে! হা! একটু ব্যাখ্যা করি।
চিন্তা করা মানে কী? খেয়াল করলে দেখবেন, চিন্তা করা অর্থাৎ থিঙ্কিং হচ্ছে। নিজের সাথে নিজের কথোপকথন। চিন্তা করা মানে হচ্ছে সেলফ-টক (Self Talk)। আমরা যত না অন্যদের সাথে কথা বলি, তার চেয়ে বেশি চিন্তা করি। ঘুম থেকে উঠে সারাটা দিন আমাদের হাজারো চিন্তা। মানে নিজের সাথে হাজারো কথা। এখন প্রশ্ন হল, আপনি নিজে সাথে যে এত কথা বলছেন, এগুলোর প্রভাব আপনার উপর কেমন?
কিছু মানুষ মনে মনে বলতে থাকে, আমাকে দিয়ে এটা হবে না, আমি এই কাজটা পারি না, আমি আসলে এই কাজের যোগ্য না, আমি কেন যে এটা করতে গেলাম!, আমার আসলে এই ভুলটা করা উচিত হয়নি ইত্যাদি। এটা ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর চলতে থাকে। চিন্তা করে দেখেন (!), এভাবে নিজেকে মনে মনে ছোট করতে থাকলে একজন মানুষের আত্মবিশ্বাস, সঞ্জীবনী শক্তি কোথায় গিয়ে ঠেকবে? অন্যদিকে, এমন অনেকে আছে যারা একই কথা নিজেদেরকে ভিন্নভাবে বলে। আমি কাজটা শিখে ফেলবো ধীরে ধীরে, এই ভুলটা আর রিপিট হবে না ইনশা আল্লাহ, এই চ্যালেঞ্জটা এবার বেশ জমবে ইত্যাদি। এই মানুষগুলো সারাটা দিন নিজেদের মনে মনে উৎসাহ দিচ্ছে। একটু হলেও তো এর ইতিবাচক প্রভাব তার কাজে এবং জীবনে উঠে আসবে।
আমাদের সবার জীবনেই এমন একটা কণ্ঠ আছে, আমাদের নিজেদের কণ্ঠ যেটা আমাদের সব কাজে আমাদের সাথে কথা বলছে। কণ্ঠটা যদি অনুপ্রেরণার উৎস হয়, তাহলে বাইরের শত কমিউনিকেশনের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটা। তাই, অন্যের সাথে কমিউনিকেশনের আগে, নিজের মনের সাথে কমিউনিকেশনটা উন্নত করেন।
*
অর্ডার দেয়া
আপনি যদি চান যে কেউ একটা কাজ না করুক, তাহলে তাকে সেই কাজটা করতে অর্ডার দিতে পারেন। কারণ, যেই কাজ মানুষ এমনিই করতো, সেই কাজ বাধ্য হয়ে করতে হলে মানুষ সেটা ঘৃণা করে।
একদিন বাসে করে শাহবাগ যাচ্ছি। এক মহিলা এসে সরাসরি আমাকে বললেন, আপনি সরেন। পাশের সিটে যান। আমি এখানে বসবো। আমি মহিলা সিটে বসে ছিলাম না, তবুও তিনি কেন যে অর্ডার দিয়ে বললেন সেটা আমি জানি না। আমার চেয়ে বয়স একটু হয়তোবা বেশি। তর্কে না গিয়ে আমি সরে গেলাম। এখন ব্যাপারটা হচ্ছে, তিনি যদি আমাকে বলতেন, ভাইয়া, আপনি কাইন্ডলি একটু পাশের সিটে বসবেন?–আমি তাহলে খুশি মনে পাশের সিটে চলে যেতাম। অর্ডার করার পরও আমি একই কাজ করেছি, কিন্তু মনে অনেক বিরক্তি নিয়ে।