*
দৈনন্দিন কমিউনিকেশন কোথায় শিখবো
বিজ্ঞাপন থেকে! হ্যাঁ! বিজ্ঞাপন থেকে কমিউনিকেশন শেখার অনেক কিছ আছে। বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য প্রতি সেকেন্ডে হাজারেরও বেশি গুনতে হয়। তাই কত কম সময়ে মানুষের নজর আকড়ে ধরে সম্পূর্ণ বিজ্ঞাপনের গল্প এবং অফার ফুটিয়ে তোলা যায়, সেটা নিয়ে বিজ্ঞাপন নির্মাতারা এবং অ্যাড এজেন্সিগুলো অনেক পরিশ্রম করে। তাই, বিজ্ঞাপন খুবই ভালো উদাহরণ যে আপনার কথা কত কম সময়ে কত ভালোভাবে মানুষকে বোঝানো যায়। বিজ্ঞাপন থেকে কয়েকটা লেসন এখানে শেয়ার করলাম যেন বিজ্ঞাপন থেকে শিখতে আপনি আরও বেশি আগ্রহী হন।
১. আপনার ইউটিউবে বিজ্ঞাপন দিলে প্রথম কয়েক সেকেন্ড পর মানুষ বিজ্ঞাপনটি স্কিপ করে যেতে পারে। তাই, ৩০ সেকেন্ডের অ্যাড বানালেও, প্রথম কয়েক সেকেন্ডে এমন আকর্ষণীয় জিনিস দেখাতে হয় যেন মানুষ ওই অংশের কারণ পুরোটা বিজ্ঞাপনই দেখে ফেলে।
২. বিজ্ঞাপনে মডেলদের পোশাক খেয়াল করবেন। মডেলদের পোশাকের রঙের সাথে ব্র্যান্ডের রঙ কিন্তু অধিকাংশ সময়ে মেলানো হয়।
৩. বিজ্ঞাপন মানুষ বেশি মনে রাখে যখন সেখানে জিঙ্গেল থাকে। তাই সুর করা ছন্দময় কথা বিজ্ঞাপনে রাখলে বেশি ভালো হয়।
৪. বাচ্চাদের খাবারের বিজ্ঞাপনে মা চরিত্র দেখানো হয়, রডের বিজ্ঞাপনে সেফটি হেলমেট পরা ইঞ্জিনিয়ার দেখানো হয়, এনার্জি ড্রিঙ্কের বিজ্ঞাপনে তারুণ্য দেখানো হয়–এসব চিন্তাভাবনা করে করা হয় যাতে পণ্যগুলো মানুষ আরও সহজে গ্রহণ করে নিতে পারে।
বলতে থাকলে পুরো বই লিখে ফেলা যাবে। আপনি যদি আসলেই এই বিষয়ে আগ্রহী হন তাহলে Ogilvy on Advertising বইটা পড়তে পারেন। মানুষের সাইকোলজি, কীভাবে মেসেজ দিতে হয়, কোন ধরনের বিজ্ঞাপন। বেশি কাজ করে–এসব নিয়ে দারুণ একটা বই। সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে আপনি বিভিন্ন ট্রেইনিং করতে পারেন। বিভিন্ন ক্লাবে জয়েন করতে পারেন।
*
ঠিক বুঝেছি তো?
বিশেষ করা মিটিং-এর পর আপনি একবার পুরো মিটিং-এর সামারি নিজের ভাষায় বলে নিশ্চিত করবেন যে, সবাই একই জিনিস বুঝেছেন কি না।
অর্থাৎ কমিউনিকেশন রিপ্লে করবেন। ক্রিকেট কিংবা ফুটবল দেখার সময় একটা আউট আমরা কত অ্যাঙ্গেল থেকে দেখে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তর্ক করি, এই আম্পায়ারটা ওই দলের নুন খেয়েছে! খেলা দেখার সময় রিপে করার উৎসাহ থাকে। ওই একই উৎসাহ যদি কমিউনিকেশনের মধ্যে থাকতো, তাহলে কত যে ভুল-বোঝাবুঝি শুধরে যেত!
এছাড়া একটি ভুল অধিকাংশ মানুষ করে। এটা হল, মিটিং শেষ করে চলে। যায়। আসলে তখন আপনার উচিত পুরো মিটিং সামারিটা লিখে মেইল করে দিবেন। যাতে, পরে তারা আমি তো ভাবসিলাম আপনি এটা বলেছেন!– অজুহাত দিতে গেলে আপনি সরাসরি মেইল খুলে দেখাতে পারেন যে আসলে তাদের দিক থেকে গাফিলতি ছিল।
সবসময়! অন্তত নিজের জন্য হলেও, সবকিছু লিখিত রাখবেন। পেশাদার জীবনে এটার গুরুত্ব যে কত বেশি, সেটা যতক্ষণ না কেউ কথার উপর পল্টি মারছে, ততক্ষণ বুঝতে পারবেন না।
*
জাজ না করা
ইদানীং দুটো শব্দ কমিউনিকেশনে বেশ প্রচলিত। একটা হচ্ছে, Judgemental আর অন্যটা হচ্ছে, Condescending। এই দুটো যেন আপনার কমিউনিকেশনের মধ্যে না আসে।
জাজমেন্টাল বলতে আসলে কী বোঝানো হচ্ছে? আপনি কথা বলার সময় যদি কেউ আপনার সম্পর্কে না জেনে উল্টাপাল্টা আন্দাজ করতে থাকে, তাহলে সেই ব্যক্তিটি জাজমেন্টাল। আর কেউ যদি এমন ভাব নেয় যে, সে তার মহামূল্যবান সময় ব্যবহার করে আপনার সাথে কথা বলে সে আপনাকে উদ্ধার করছে, তাহলে সে কনডিসেন্ডিং টোনে কথা বলছে।
এমনভাবে কমিউনিকেট করুন যেন কোনোদিন কেউ আপনার বিরুদ্ধে এই দুটি শব্দ ব্যবহার করতে না পারে।
*
ইংলিশে ইংলিশ শেখানো
এই ব্যাপারটা দেখলে আমার মাঝে মাঝে একটু খটকা লাগে। অনেক সময় ইংলিশ টিচারদের পড়াতে দেখেছি, যারা সম্পূর্ণ লেকচারটা ইংলিশে দেন। হ্যাঁ, ইংলিশে কথা বলতে বাধ্য করলে অনেকে হয়তোবা ইংলিশ শিখবে। কিন্তু, আমার মনে একটা প্রশ্ন আসে যে, যারা ইংলিশ শিখতে যায়, তারা ইংলিশ পারে না জন্যই তো ইংলিশ শিখতে যায়। তারা
এখন ক্লাসেও যদি লেকচার দিয়ে শেখানো হয়, তাহলে তারা বুঝবে কীভাবে? এটা অনেকটা এমন যে, আপনি ফ্রেঞ্চ ভাষা জানেন না, কিন্তু ফ্রেঞ্চ টিচার আপনাকে ফ্রেঞ্চ ভাষায় ফ্রেঞ্চের শব্দাবলী শেখাচ্ছে!
তাই, মূলকথা হল যা বুঝাতে চাচ্ছেন, সেটা বুঝার আগে যদি আপনার কথা বুঝতেই সমস্যা হয়, তাহলে সেটা শিক্ষার্থীর নয়, শিক্ষকের সীমাবদ্ধতা।
*
কে বলেছে কার কথা?
যখন কোন গীবতের আসর বসে, তখন মানুষের প্রথম প্রতিক্রিয়া কী হয়?
আমিও একটু শুনি! এখানে একটা বিষয় সব সময় মনে রাখবেন, যে মানুষ অন্যের কথা আপনার কানে ঢালছে, সেই মানুষগুলো আপনার কথাও অন্যের কানে ঢালবে।
তাছাড়া গীবত শুনলে অনেকেই সেখানে তাদের নিজেদের গীবতটাও ঢেলে দেয়, আরে হ্যাঁ! ওর ক্যারেক্টার খারাপ। ওই তো সে দিনই দেখলাম যে রিক্সার হুড উঠায় কাকে নিয়ে জানি কোথায় যাচ্ছিল! এই যে শেয়ার করলেন আপনার মনের কথা, এটা সে শীতকালের গোসল করার গরম পানির পাতিলের মত সাবধানে নিয়ে আরেকজনের কানে এমনভাবে ঢালবে যেন একটা ফোঁটাও তার নিজের গায়ে না পড়ে! গীবত শুনতে যতই ইচ্ছা করুক না কেন, গীবতকারি মানুষের কাছ থেকে একশ হাত দূরে থাকবেন। মনে রাখবেন, গীবত করা এককালীন ইভেন্ট না, গীবত করা অনেকের স্বভাব।