*
কমিউনিকেশন ক্রেডিট
যারা অন্যের কথা নিজের বলে চালিয়ে দেয়, তাদের কেউ পছন্দ করে না। এর চেয়েও বড় ব্যাপার হচ্ছে, কারও যদি আইডিয়া চুরির অভ্যাস থাকে, তাহলে কেউ তাদের সাথে আইডিয়া নিয়ে কথাও বলবে না।
এখন আপনি হয়তোবা ক্রেডিট হয়তোবা ক্রেডিট চুরি করছেন না ইচ্ছা করে। কিন্তু, মানুষ হয়তোবাদ আপনাকে ক্রেডিট চোর ভাবতে পারে। কারণ, কোনো একটা কথা হয়তোবা আপনার অন্য কারও সাথে মিলে গেছে। এবং এই বিষয়ে মার্ক টোয়েনের অসাধারণ একটা উক্তি আছে,
একদম প্রথম প্রজন্মের মানুষ হওয়ার একটা সুবিধা ছিল। নতুন চিন্তা করার সময় তারা নিশ্চিতভাবে জানতো যে তাদের আগে কোনো মানুষ কখনও এই বিষয়ে চিন্তা করে দেখেনি। তাই ক্রেডিট দেওয়ার চিন্তা নেই।
কিন্তু ডিজিটাল যুগে আপনি নিজে থেকে একটা আইডিয়া বের করলেও, ইন্টারনেটে সার্চ করে দেখবেন আপনার কথাই কেউ অনেক আগে বলে ফেলেছে। আর আপনার অজান্তে আসলেই যদি এমন কিছু বলে ফেলা হয়ে যায়, তাহলে মানুষ আপনাকে আইডিয়া চোর বলবে।
এখন এর সমাধান কী? নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলি। আমরা প্রচুর ভিডিও বানাই। আর একটা কথা বললে এক-দুটো ভিডিওর কথা তো মিলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। ভিডিও মনে করেন বাদ দিলাম, এই যে বই লিখছি, এই কথাগুলোই অনেকের সাথে মিলে যেতে পারে। তাই, আমরা সম্পূর্ণ দুই পৃষ্ঠাজুড়ে খালি আমাদের রেফারেন্স বইগুলোর কথাই বলেছি যাতে কেউ আমাদের কপিক্যাট বললে আমাদের ডিফেন্স হিসেবে রেফারেন্স থাকে!
আত্মরক্ষার জন্য তাই রেফারেন্স দিয়ে কথা বলবেন। কিন্তু এর চেয়েও বড় একটা হ্যাক আছে। মানুষ আপনাকে অনেক বেশি পছন্দ করবে যখন আপনি তাদেরকে ক্রেডিট দিবেন। এমনকি একটা কৌতুকও কারও কাছ থেকে শুনে থাকলে তার নামটা বলুন। মানুষটি সামনে থাকলে কৌতুকটা শুরু করে আসল হাসির অংশটা ওই মানুষটিকে শেষ করে সবাইকে হাসাতে দিন।
আপনি যদি মানুষকে ক্রেডিট ঠিকমত দিতে পারেন, তাহলে মানুষ আরও বেশি করে আপনার সাথে আইডিয়া শেয়ার করবে। তাই, আজই নিজের জীবনে খেয়াল করে দেখুন, আপনি গত ৩০ দিনে কয়জন মানুষকে সঠিকভাবে ক্রেডিট দিতে পেরেছেন?
বিস্ময়করভাবে কত কিছুই অর্জন করে ফেলা সম্ভব যদি কাজের ক্রেডিট কে পাবে–এই চিন্তা মাথায় না থাকে।
–হ্যারি ট্রম্যান
*
চিন্তাভাবনার কমিউনিকেশন
শব্দ এবং বাক্য আমাদের খালি অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে সাহায্য করে না। নিজের চিন্তাগুলোকেও ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে দেখতে সাহায্য করে। কয়েকটা উদাহরণ দেই।
এই জিনিসগুলো আমরা সাধারণভাবে সবাই জানি। কিন্তু, একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করলে বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনার ধারণা অনেক পাল্টে যেতে পারে। যেমন :
এটা বলা যেই কথা | এটা মানেও একই কথা |
শুভ নববর্ষ! | তো… আজকে সূর্যের চারদিক পৃথিবী আরেকবার চক্কর দেয়া শেষ করেছে। |
ট্যাক্স দেন! | এই দেশে থাকার জন্য বার্ষিক সাবস্ক্রিপশন ফি দেন! |
আমার প্রিয় উদাহরণ দিয়ে শেষ করি।
আপনি কি একদম ঘুটঘুঁটে অন্ধকার দেখেছেন?
–হ্যাঁ, দেখেছি।
ঘুটঘুঁটে অন্ধকারে কী দেখেছেন?
–কিছু দেখিনি তো ভাই! ঘুটঘুঁটে অন্ধকার ছিল বললাম না?
তাহলে কেন বলছেন যে ঘুটঘুটে অন্ধকার দেখেছেন?
এখন আপনার কাছে প্রশ্ন, ঘুটঘুটে অন্ধকারে কিছুই যদি দেখা না যায়, আপনি কি জীবনেও ঘুটঘুঁটে অন্ধকার দেখেছেন আসলেও? কিংবা আপনি ঘুটঘুঁটে অন্ধকারে বলতে যেই কালো দৃশ্য আপনি মনে মনে কল্পনা করেন, সেটা কি আদৌ ঘুটঘুঁটে অন্ধকার নাকি কেবলমাত্র আলোর অনুপস্থিতি?
চিন্তা করে দেখেন তো কিছুক্ষণ তাহলে, আপনি এতদিন ঘুটঘুঁটে অন্ধকার বলতে যা জানতেন, তা আসলেও নিজে পুরোটা বুঝেছেন কি?
এমনই আরও অনেক জিনিস, প্রতিটা শব্দ খেয়াল করে ভাবলে আমাদের অনেক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যাবে। তাই, শব্দ এবং বাক্য ব্যবহার করে এতদিন খালি আমরা কমিউনিকেট করেছি। আজ, সেই একই শব্দ এবং বাক্য খেয়াল করে আমরা আমাদের চিন্তার জগৎকে নতুন করে আবিষ্কার করি!
*
যখন আইডিয়া নিয়ে চিন্তা করবেন
যখন আইডিয়া নিয়ে চিন্তা করবেন তখন সমালোচনা বন্ধ রাখবেন।
আইডিয়া যতই বাজে হোক না কেন, আইডিয়া শেয়ার করার সময় সবাই যেন চুপ থাকে। একই সাথে পেন্সিল এবং রাবার যেন আমরা কখনই না চালাই।
আইডিয়া শেয়ার করার সময় আইডিয়ার ব্যবহারিক দিক নিয়ে কথা বললে:
১) অনেকে সমালোচনার ভয়েই আইডিয়া দেওয়া বন্ধ করে দেবেন; হয়তোবা তাদের মাথায় ভালো কোনো আইডিয়া ছিল!
২) আইডিয়া দেয়ার সাথে সাথে সমালোচনা করলে অনেকে সেটাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবে নেয়। কোনটা ব্যক্তিগত সমালোচনা এবং কোনটা আইডিয়ার সমালোচনা সেটা অনেকে তফাতটা বুঝতে পারে না। তাই, আইডিয়াটা মন দিয়ে শুনেন। কিন্তু, তাৎক্ষণিক সমালোচনা থাকলেও, পারলে তা ৫ মিনিট পর দিন কারণ সাথে সাথে আইডিয়ার সমালোচনা অনেকে সহজে নিতে পারে না।
৩. আইডিয়া ভালো হোক আর খারাপ হোক, শেয়ার করার সুযোগ দিন। এমনকি এক কোম্পানি ভালো আইডিয়া দেওয়ার জন্য যেমন পুরস্কার দিত, তেমনই একদম বাজে আইডিয়াকেও সাহসিকতার জন্য স্বীকৃতি দিত। এটা এজন্য করতো যেন অন্যরা যত বাজে আইডিয়াই হোক না কেন, প্রকাশ যেন অন্তত করে। এমন পরিবেশ তৈরি করতে।