*
চাওয়া পাওয়ার কমিউনিকেশন
কবি বলে গেছেন, যা চাই, তা ভুল করে চাই; যা পাই তা চাই না। এর মাঝে সত্য থাকলেও শতভাগ সত্য বলা যাবে না। কারণ, কিছু সময়। চাইলেই আসলে পাওয়া যায়, কিন্তু আমরা লজ্জা কিংবা ভয়ে চাই না।
কয়েকটা উদাহরণ দেই। একদিন বন্ধুদের নিয়ে খেতে গিয়েছি। একটা দারুণ অফার চলছিল। কিন্তু, অফারটা সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত প্রযোজ্য ছিল। তো এখন। বুঝতেই পারছেন যে আমরা দেরিতে পৌঁছেছিলাম। সাতটা পঁচিশ বাজে দেখে সবাই অন্য দোকান দেখা শুরু করলো। আমি বললাম, একবার জিজ্ঞেস করে। দেখ না। আমাকে বললো যে সময় শেষ হয়ে গেছে। আমি তারপরও একবার খালি গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসতে বললাম; যা না! খালি একটা প্রশ্নই তো! আর হ্যাঁ, আমার বন্ধুকে অবাক করে দিয়ে তারা রেস্টুরেন্ট ঠিকই আমাদের। জন্য অফারটা কন্সিডার করলো। এমন না যে তারা ঘড়ি ধরে থাকে যে সাতটা বাজলেই তারা তাদের অফার বন্ধ করে দিবে। তারাও মানুষ। তাদেরও এক বিচার-বুদ্ধি আছে। আমরা যদি জিজ্ঞেস না করতাম, তাহলে আমরা বেশি দামে অন্য কোনো খাবারই হয়তোবা খেতাম। খালি একটু সাহস করে জিজ্ঞেস করায় ওইদিন আমরা সবাই খুব মজা করে খেয়েছি। এবং যদি না বলতো? ক্ষতি কী? এমনিও সাতটায় অফার বন্ধ ছিল। প্রশ্ন করলে খালি জেতার সুযোগ। ছিল, হারানোর তো কিছু ছিল না!
এমন আরও অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে, যেখানে কেবলমাত্র একটু জিজ্ঞেস করার কারণে অনেক কিছু পেয়ে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু আমরা সেটা করি না। আরেকটা একদম সত্য ঘটনা বলি। একটা স্টুডিও মাইক্রোফোন কিনতে গিয়েছি। আমার অনেক কষ্টে বাজেট ছিল ১৪ হাজার টাকা। দোকানদার বললো ১৫ হাজার। প্রায় ৭-৮ মিনিট দরদাম করলাম। উনি শেষমেষ উনার প্রোডাক্ট লিস্ট খুলে দেখালেন যে মাইক্রোফোনটার দাম তার নিজের রেজিস্টারেই ১৪ হাজার ৫০০ টাকা লিখা ছিল, তাই তিনি এর কমে দেবেন না। তো এমন অবস্থায়, আমারও আসলে কিছুই বলার নাই, তার উপর মাঝখানে আমি নিজে আমাজনে গিয়ে পণ্যটির দাম দেখে এসেছি, তিনি মিথ্যা বলছিলেন না। তাই আমি চলে যাচ্ছিলাম, কিন্তু যাবার আগে খালি একবার বললাম ভাই, ১৪ হাজারই আছে। পারলে দিয়েন। উনি কী জানি ভেবে বললেন, আচ্ছা নেন।
আমি তো সেই অবাক! মাইক্রোফোন নিয়ে এসে আমি যতটা না খুশি ছিলাম, তার চেয়ে বেশি সন্দিহান ছিলাম যে আমাকে ২ নম্বর মাল গছিয়ে দিয়েছে কি না! কিন্তু, আজ অবধি তিন মাস যাচ্ছে এবং মাইক্রোফোন একদম টপ-নচ পারফরমেন্স দিচ্ছে। ওইদিন যদি আমি শেষে চুপচাপ কিছু না বলে আসতাম, তাহলে হয়তোবা এই সুন্দর সুযোগটা মিস করতাম। আমি আজও জানি না যে অচেনা মানুষটি কেন আমার কথায় হ্যাঁ বলেছিলেন, কিন্তু আমি এটা জানি যে কিছু কিছু সময় খালি একটু চাইলেও অনেক অবাক হওয়ার সুযোগ থাকে!
আসলে বলতে গেলে আমরা না শুনতে খুবই লজ্জাবোধ করি কিংবা ভয় করি। এক্সট্রা সস লাগলে খালি একটু গিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখেন; বেশিরভাগ জায়গাতেই আপনাকে দিয়ে দেবে। না বললে সমস্যা নেই; সসের জন্যও তো তাদের খরচ হয়। কিন্তু, জিজ্ঞেস করতে তো সমস্যা নেই। সসের কথা বলছি কারণ এই ছোটখাটো জিনিসগুলোর জন্য একটু চাওয়া শুরু করেন যেন আসতে আসতে বড় বড় চান্সেও প্রশ্ন করতে কার্পণ্য বোধ না করেন। কোনো একটা জিনিস হয়তোবা খুব পছন্দ হল, কিন্তু দাম জিজ্ঞেস করলে কিনতে বাধ্য করবে এই ভয়ে দাম না জেনেই চলে আসে অনেকে। আরে ভাই একটু জিজ্ঞেস করে দেখেন খালি, হয়তোবা ২০-৩০% ক্ষেত্রে দাম আপনার ধারণার চেয়েও অনেক কম।
চাইতে দোষ নেই, কিন্তু এটা ভাবায় দোষ আছে যে চাইলেই আমি পাতে যোগ্য। এটাকে এক শব্দে এনটাইটেলমেন্ট (Entitlement) বলে এনটাইটেলমেন্ট ছাড়া প্রশ্ন করার অভ্যাস আপনাকে এমন অনেক কিছ৯ এনে দিবে যা হয়তোবা আপনি চিন্তাও করতে পারছেন না। তাই, আজকে থেকে অযৌক্তিক ভয় আর লজ্জা পকেটে রেখে, মানুষের কাছে ছোট-খাটো জিনিস চাওয়ার অভ্যাসটা শুরু করেন।
*
শেয়ার করা মানেই সততা না
অনেকে ভাবে যে, আমি যদি সৎ হই, তাহলে তো আমার লুকানোর কিছু নেই। আমি তো সবাইকে সব বলতে পারবো!
আসলে সৎ হলেই যে সবকিছু বলতে হবে। কিংবা, সবকিছু শেয়ার না। করলে যে অসৎ, এই ধারণাগুলো ভুল।
তোমার পাসওয়ার্ডটা দাও যদি আমাকে বিশ্বাস করো। কারও কাছে বিশ্বাস কিংবা আস্থা প্রমাণ করার জন্য যদি আপনাকে আপনার প্রাইভেট কথা শেয়ার করতে হয়, তাহলে আপনার উপর সেই মানুষটার বিশ্বাস শর্তসাপেক্ষ। আপনি যতক্ষণ গোলাম হয়ে সব তথ্য শেয়ার করবেন, ততক্ষণ আপনাকে সে তার আস্থা দিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে রাখবে। তাই, মানুষের আস্থা পাওয়ার জন্য যে গোপনতম কথাগুলো শেয়ার করে নিজেকে দুর্বল করে ফেলতে হবে, এমন কোনো কথা নেই।
দ্বিতীয়ত, সব কথা সবার সাথে শেয়ার না করার কারণ হচ্ছে সবার মাঝে এমন কয়েকজন আছে যারা আপনার তথ্য আপনার বিরুদ্ধেই কাজে লাগাবে। সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে যখন মানুষ পরের বেলা ভাত কী দিয়ে খাবে– এটাও বলে বেড়াচ্ছে; সেখানে তাদের প্রতিযোগীরা ফেসবুকের কয়েকটা পোস্ট দেখলেও অনেক বড় বড় তথ্য পেয়ে যাবে। তাই, কিছু কথা নিজের কাছে রাখলেই ভালো এবং আপনার দলের অন্য মানুষজনেরও যেন বিষয়টা খেয়াল থাকে। অনেক কোম্পানির মানুষজনকে দেখেছি যে, কোনো কোম্পানির মিটিং করতে গিয়েছি সেটার মিটিং-এর ছবি ফেসবুকে দিয়ে রেখেছে। সব প্রতিযোগী তখন খুব সহজেই বুঝে যায় কার নেক্সট মুভ কী!