সিনিয়র হোক আর জুনিয়র, সবাইকে সমান গুরুত্ব দিয়ে মিটিং করতেন বলেই হয়তোবা তিনি বড় কোম্পানির ম্যানেজার ছিলেন। দিনশেষে আপনি কী পোশাক পরবেন সেটা আপনার ব্যাপার, কিন্তু আপনার পোশাক আপনার সম্পর্কে অনেক কিছুই কমিউনিকেট করবে অন্যদের কাছে–সেটা আপনাকে মেনে নিতেই হবে।
ড্রেস নিয়ে আরেকটা কমন প্রশ্ন পাওয়া যায়।
ভাই! মার্ক জাকারবার্গ আর স্টিভ জবসকে চিনেন? তাদের প্রেজেন্টেশন তো কোটি কোটি মানুষ দেখে। কিন্তু, ওরা তো গেঞ্জি পরে প্রেজেন্টেশন দেয়!
তারা ভাই নিজেদের কোম্পানির বস! তার উপর তারা মাল্টি বিলিয়নিয়ার। তাদের আর কাউকেই ইম্প্রেস না করলেও চলবে এবং দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষ তাঁদেরকে চিনে। আপনিও যদি ওই লেভেলের বস হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি চপ্পল পরে প্রেজেন্টেশন দিলেও মানুষ দেখবে!
*
ফিডব্যাকের কমিউনিকেশন
আমাদের চোখের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে যে আমরা পুরো দুনিয়াটাকে দেখতে পারলেও, নিজেদের দেখতে পারি না সরাসরি। আমরা মানুষের বহুত ভুল ধরতে পারলেও নিজেদের ভুলগুলোর ব্যাপারে আমরা অন্ধ। তাই নিজেদের ভুলগুলো শুধরে নিতে অন্যদের সাহায্য দরকার। কিন্তু এখানেই সমস্যা। খুব কম মানুষের পক্ষেই সম্ভব একদম নিরপেক্ষভাবে নিজের সমালোচনাটা নেওয়া।
যখনই কেউ আমাদের সমালোচনা করে তখন আমরা কী করি?
–রেগে যাই
-–পাল্টা আক্রমণ করি
–সমালোচনাকারীর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলি
–মন খারাপ করে বসি
এত কিছু করি, কিন্তু কয়জন আছি যারা সমালোচনা শুনে সেটা দিয়ে নিজেকে শোধরানোর চেষ্টা করি? খুবই কম। কারণ, আমরা নিজের ব্যাপারে অনেক বেশি ডিফেন্সিভ। এবং এজন্যই একবার বিজনেস কমিউনিকেশন ক্লাসে স্যার আমাদের একটা এক্সপেরিমেন্ট করালেন। তিনি ক্লাসে বললেন যে, কে আছো, যে আরও সুন্দরভাবে সমালোচনা নিতে চাও? শুরুর দিকে সুযোগ পেলেই আমি ক্লাসের সামনে যাওয়ার চেষ্টা করতাম যাতে আমার কথা বলার দক্ষতা বাড়াতে পারি। তাই, আমি হাত তুললাম। স্যার আমাকে ক্লাসের সামনে এসে দাঁড়াতে বললেন। তারপর স্যার ক্লাসের উদ্দেশ্যে। বললেন, এখন তোমরা সাদমানের সম্পর্কে যা যা সমালোচনা আছে, তা করবা। এরপর স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, খালি একটাই কন্ডিশন, তুমি সমালোচনার কোনো জবাব কিংবা ব্যাখ্যা দিতে পারবে না। আমি ভাবলাম কিসের কী, এটা তো অনেক সহজ। কিন্তু, আমি তো জানতাম না যে আমি ডিফেন্স করতে না পারলে আমার নামে কত সমালোচনা উঠে আসবে। এক এক করে শুরু হলো, তুই বেশি দ্রুত কথা বলিস!, তুই কথা বলার সময় বেশি হাত নাড়াস!, আমাদের না বলে তই বলিস আমদের! আমি সাথে সাথেই বলতে গেলাম, আরে আমি তো সময়ের জন্য বলতে পারি না…; সাথে সাথে স্যার আমাকে থামিয়ে দিলেন। শর্ত একটাই যে, আমাকে চুপ থাকতে হবে। তারপর আরও অনেক সমালোচনা আসলো যেটা আসলেই আমাকে উন্নতি করতে সাহায্য করেছে। এক্সপেরিমেন্টটার উদ্দেশ্য ছিল এটা বোঝানো যে, আমরা যদি চুপচাপ সমালোচনা নিতে পারি, তাহলে আমরা নিজেদের সম্পর্কে আসলেই অনেক কিছু জানতে পারি। সমালোচনা শুনলেই যদি আমরা রেগে যাই, দুই-একটা কথার মোচড়ে অন্য মানুষটিকে কুপোকাত করে ফেলি; তাহলে আমরা কখনই অন্য মানুষদের কাছ থেকে গঠনমূলক সমালোচনা পাবো না। কারণ, তারা সব সময় ভয়ে থাকবে এবং জরুরি অনেক কথাও নিজের মধ্যে পুষে রাখবে।
*
চুপ কেন থাকবো
আমাদের পৃথিবীটা অনেক সহজ হত যদি ভুল করার সময় সাথে সাথে আমরা সঠিক গঠনমূলক সমালোচনা পেতাম।
আমরা বেশিরভাগ সময় কাজের ফিডব্যাক সময়মত পাই না। ইউটিউবে আমরা ভিডিও বানানোর সাথে সাথে কমেন্ট পাই, কোনটা ঠিক কোনটা ভুল। কিন্তু এই কমেন্টগুলোই যদি আমরা ১ বছর পরে পাই, তাহলে তো আমরা ভুলেই যাবো যে কী ইপ্রুভ করা যেত। তাছাড়া ১ বছর পরে। ফিডব্যাক পেলে এই যে মাঝের ১টা বছর গেল, সবগুলোতে ভালো করার চান্স মিস গেল। তাই, ফিডব্যাক থাকলে যেন আমরা সাথে সাথেই দেই।
আরেকটা উদাহরণ দেই। কোনো কারণে ঘুম না হওয়ার কারণে হয়তোবা আপনার কয়দিন ধরে খিটখিটে মেজাজ হয়ে আছে। সবাই বিরক্ত হচ্ছে কিন্তু কেউ ভয়ে কিছুই বলছে না। জানবেন হুট করে এমন কোনো একজনের কাছে। যে আর ব্যাপারটা নিতে পারছে না।
আপনি সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করছেন! পেয়েছেটা কী!
আপনি অবাক হয়ে খেয়াল করলেন আসলেই তো। কারণ ছাড়াও অনেকের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়ে যাচ্ছে। এটাই এত দেরিতে না বলে প্রথমে বুঝিয়ে বললে কিন্তু পুরো সপ্তাহজুড়ে নিজের ব্যবহারে আরও বেশি সচেতন হতেন।
একটা জিনিস খেয়াল করলে দেখবেন, আমরা পড়াশোনা ঠিক করছি না ভুল করছি, সেটা ছয় মাস কি বারো মাস পর আমরা রিপোর্ট কার্ডে জানতে পারি। যখন রিপোর্ট কার্ডে জানতে পারি কোথায় ভুল ছিল, তখন আর পড়াশোনার ভুলগুলো শুধরানোর সময় থাকে না। তাই, আমাদের উচিত যখন শিখছি, তখন একটা মিনি প্র্যাক্টিকাল করে যাচাই করে নেয়া যে আমরা আসলেই বুঝতে পেরেছি কি না।
কর্পোরেট দুনিয়ায় রিপোর্টকে বলে অ্যাপ্রেইল (Appraisal)। বছর শেষে বস যদি ঝাড়ি দেয় যে, আপনার কাজ ঠিক হয়নি; তাহলে লাভ কী? বরং কাজ যখন করছিলেন তখন একটু একটু করে ফিডব্যাক দিলে পুরো কাজটাই বছর শেষে ঠিকঠাক এগোতো। খালি চিন্তা করে দেখুন, ৩ মাস পর পর একটা করে ঝাড়ি খাওয়ার চেয়ে যদি প্রতিদিন আপনি যখন যেই ভুলটা করেন তখন যদি সেটা শুধরে দেয়া হত তাহলে আপনি কত দ্রুত উন্নতি করতে পারতেন!