তাই, বিশ্ববাসীর জন্য কিছু বলতে চাইলে ইংলিশের চেয়েও একটা বড় একটা ভাষা আছে কিন্তু!
*
সবাই তো এটা জানেই!
আপনি যা জানেন, তা নিশ্চয়ই সবাই জানে না। কিন্তু, অনেকে ভাবে যে, আরেহ! এটা তো সবাই জানে! এটা আবার বলার কী হলো?
একটা উদাহরণ দেই আমাদের জীবন থেকে। বাংলাদেশে এখনও কোটি কোটি মানুষ আছেন যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন না। শহরেই এমন অনেক সিনিয়র সিটিজেন আছেন, যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করা শিখতে চান, কিন্তু হয়তোবা শেখানোর মতো সময় তাদের আশপাশের কারও নেই। এমন অবস্থায় আমরা কয়েকটা উন্মুক্ত ভিডিও কোর্স বানাই যে। কীভাবে গুগল ব্যবহার করতে হয়?, কীভাবে ইন্টারনেটে ব্রাউজ করতে হয়? ইত্যাদি।
আমাদের লক্ষ্য ছিল, যাদের ইন্টারনেট শেখানোর কেউ নেই, তাদের কাছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের মাধ্যমে এই ভিডিওগুলো পৌঁছে দেওয়া।
কিন্তু, অনলাইনে দেওয়ার পর মানুষ প্রচুর ঠাট্টা-বিদ্রূপ করলো কমেন্টে।
এইটা কি কোনো শেখানোর কিছু হলো নাকি?
কন্টেন্টের কি অভাব হয়েছে নাকি? ইত্যাদি।
অনেকেরই এই ধারণা ছিল যে, তারা দৈনন্দিন ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন বলে সবাই বোধ হয় গুগল, নেট ব্যবহার করতে পারে। এবং এই চিন্তাটার জন্য, আমি যা জানি ওটাতো অন্যরাও জানে!; অনেক প্রয়োজনীয়। তথ্য আমরা অন্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি না।
আরেহ! মানুষকে কি হাত ধোয়া শেখানো লাগে?
বিশ্বাস করেন আর নাই করেন, পৃথিবীতে লাখ লাখ স্বেচ্ছাসেবক মানুষকে বিভিন্ন দেশে হাত ধোয়া শেখাচ্ছে কারণ এই একটা কাজের মাধ্যমে লাখ লাখ প্রাণ অকালমৃত্যু থেকে বেঁচে যাবে।
আমি তো কেবল কলেজে, আমার কথা কার কাজে লাগবে?
–যারা স্কুল থেকে কলেজে ভর্তি হচ্ছে তাদের কাজে লাগবে!
আমি তো কেবল চাকরিতে জয়েন করেছি। আমি আবার কীভাবে হেল্প করবো?
–আপনি যেভাবে সিভি বানিয়ে ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরিটা পেয়েছেন, সেই প্রক্রিয়াটা শেয়ার করলে চাকরিপ্রার্থীদের অনেক কাজে লাগবে!
মোটকথা, আপনি নিজে যা জানেন, সেটা সব সময় যে অন্যরাও জানবে এমনটা কিন্তু নয়।
*
অন্যের সমস্যা বনাম নিজের সমস্যা
মানুষের একটা সহজাত প্রবৃত্তি : দুনিয়ার কোটি কোটি সমস্যা থাকলে। থাকুক, কিন্তু নিজের সমস্যাটা তার কাছে সব থেকে বড় সমস্যা।
এখন এই বেসিক সাইকোলজিটা আমরা আমাদের জীবনে কীভাবে কাজে লাগাতে হয় সেটা শিখবো। নিজের সমস্যার কথা অন্যের কাছে বললে খুব একটা লাভ নেই যদি না সে আপনার খুব কাছের কেউ হয়। আপনার সমস্যা অন্য কারো ব্যক্তিগত সমস্যা নয়। কিন্তু, সেটা অন্য কারও সমাধান কিংবা সাজেশন হতে পারে এবং সেভাবেই জিনিসটা উপস্থাপন করলে আপনারঙ্কাজ হাসিল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কয়েকটা উদাহরণ দেই।
আপনি যা বলতে পারেন—
স্যার, প্লিজ! একটা ইস্যুরেন্স করান। ইস্যুরেন্স না করাতে পারলে বস রেগে যাবেন!
স্যার এই ইন্স্যুরেন্সটা আমার আপনার কারও জন্যই না, এটা আপনার সন্তানের নিরাপত্তার জন্য করুন।
আপনার কথা। শুনে ক্লায়েন্ট যা ভাবতে পারে-
তাতে আমার কী!
আচ্ছা, হ্যাঁ! তাই তো। আমি না থাকলে আমার বাচ্চার কী হবে? এই কয়টা টাকার জন্য বাচ্চার ভবিষ্যত নিয়ে ঝুঁকি নেওয়া উচিত হবে না।
আরেকটা উদাহরণ দেই ইউনিভার্সিটি লাইফের জন্য। মনে করেন আপনার কোনো টিম মেম্বারের কাছ থেকে তার পার্টটা দ্রুত করিয়ে নিতে হবে, এমন। অবস্থায় কী করা যায়?
আপনি যা বলতে পারেন | দোস্ত! তোর প্রেজেন্টেশনের পার্টটা একটু জলদি করে দে না! | দোস্ত আজকে রাত ১১টার মধ্যে তোর পার্টটা করে দে। নাহলে কালকে তোর ফুটবল ম্যাচ বাদ দিয়ে কাজটা করতে হবে। |
আপনার বন্ধু যা ভাবতে পারে | আমি আর করসি! | ও জানে যে কালকে আমার প্ল্যান কী। আজকে না পাঠালে কালকে টাইম আর জায়গামত আমাকে ধরে ফেলে খেলার বারোটা বাজায় দিবে। আজকের মধ্যেই করে ফেলি তাহলে! |
একদম বেসিক একটা পানির বোতলের ছোট্ট উদাহরণ দিয়ে শেষ বলে ব্যাখ্যাটা করি। মনে করেন একটা টেবিলে আপনি আরেকজনের সাথে বসে আছেন এবং মাঝখানে একটা পানির বোতল। বোতলটির মুখ খোলা এবং যে কোনো সময় পানি পড়ে আপনাদের কাগজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এখন বোতলটি সাবধানে রাখতে বলবেন কীভাবে?
ভাই, আপনার বোতলটা একটু বন্ধ করে সাবধানে নিচে রাখেন নাহলে যেকোনো সময় বোতল উল্টে আমার কাগজ ভিজে যেতে পারে।
ভাই, আপনার বোতলটা একট বন্ধ করে সাবধানে নিচে রাখেন নাহলে যেকোনো সময় বোতল উল্টে আপনার কাগজ ভিজে যেতে পারে।
দেখলেন তো এক শব্দের কী কারিশমা! এখন নিশ্চয়ই আপনি একদম ক্লিয়ারলি বুঝতে পারছেন যে কেন আপনি ডানপাশের অপশনে কথা বলবেন!
একদম বেসিক হলেও এটার মাধ্যমে আসলে কী হচ্ছে? অন্য মানুষটি আপনার স্বার্থের কথা শুনলে আপনার উপর বিরক্ত হবে। কিন্তু, নিজের স্বার্থে রক্ষার কথা আপনার মুখ থেকে শুনলে আপনার উপর অনেক খুশি হবে। দিন শেষে একই কাজই কিন্তু হচ্ছে, একটা বোতল সরানো হচ্ছে; কিন্তু বলার শব্দের উপর নির্ভর করছে কাজটা কতটা বিনয় আর স্ব-ইচ্ছার সাথে হচ্ছে।
*
পোশাকে কমিউনিকেশন
একজন ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট একটা বড় কোম্পানির ম্যানেজারের সাথে ৫ মিনিটের একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেল। দুজন মিলে কোম্পানির পাশের রেস্তোরাঁয় বসলো। খাবার অর্ডারের পরে ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট কৌতূহলবশত ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করলো, স্যার! আপনি তো আমার চেয়ে অনেক বেশি সিনিয়র। তবুও এই ছোট্ট মিটিং করতে আপনি কোট টাই পরে এসেছেন। কেন? ম্যানেজার মুচকি হেসে বললেন, তুমি জুনিয়র বলে কি স্যান্ডো গেঞ্জি পরে মিটিং করতে আসবো!