আড্ডা; অজানা মানুষের সাথেও কিন্তু আড্ডা দেয়া যায়। কিন্তু, খুব কম। মানুষই অচেনা মানুষের সাথে আড্ডা জমাতে পারে। আড্ডা দেয়ার মানে হল, একদম মন খুলে জাজমেন্ট ছাড়া কথা বলতে পারা। যারা এভাবে কথা বলতে পারে এবং অন্যদের নিরাপদ অনুভব করাতে পারে, তাদের কথা মানুষ খুশি মনে শুনে।
এরপর থেকে কোনো জায়গায় কথা বলতে গেলে দেখবেন যে নিচের চারটির কোনটি আপনি ব্যবহার করতে পারবেন।
*
সংখ্যা দিয়ে মিথ্যা বলার কমিউনিকেশন
ভালো মানুষদের শুরুর দিকে একটা দুর্বলতা কী জানেন? তারা নিজেরা মিথ্যা বলতে পারে না, খারাপ কাজ করতে পারে না এবং এজন্য তারা ভাবে যে কেউই মিথ্যা বলবে না এবং খারাপ কাজ করবে না। আস্তে আস্তে ঠেকে ঠেকে তারা বাস্তবতা শিখে। তারা বুঝতে পারে যে তারা যেই সত্যের মানদণ্ডে নিজেদেরকে পরিচালনা করে, সেটা অন্য সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তাই, আমরা সব সময়ই সত্য বলবো, কিন্তু আমাদের এটাই জানতে হবে যে মিথ্যা কীভাবে বলে যেন কেউ আমাদের সহজে ঠকাতে না পারে। একটা বিষয় হচ্ছে, মিথ্যা বলতে সব সময় মিথ্যা বলতে হয় না। সত্য বলেও মানুষকে নিজের মনমতো গল্প বলা যায়। যেমন :
এই পণ্যে ৫% ফ্যাট আছে।
এটা শুনলে পণ্যের একটা ত্রুটির কথা মনে হয়। ওই একই কথা এভাবেও বলা হয়,
এই পণ্যটি ৯৫% ফ্যাট ফ্রি!
একই কথা কিন্তু! কিন্তু, পরের কথাটিতে পণ্যের ত্রুটিটাকেই একটা হাতবাচক বেনেফিট হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং এটাতে আপনার অবচেতন মনে ইতিবাচক একটা ধারণা তৈরি হবে।
৩. কমিউনিকেশন ল্যাঙ্গুয়েজ গ্যাপ
কমিউনিকেশন ল্যাঙ্গুয়েজ গ্যাপ
মনে করেন কেউ আপনাকে বলল, Thank you!
আপনি বললেন, Youre welcome!
এখন একই কথাই বাংলায় বলি,
কেউ আপনাকে বলল, ধন্যবাদ!
এখন আপনি কী বলবেন? শুভেচ্ছা?
আপনাকে যখন কেউ ধন্যবাদ দেয়, আপনি কী উত্তর দেন? খেয়াল করলে দেখবেন যে, আমাদের কিন্তু বাধাধরা কোনো নির্দিষ্ট উত্তর নেই ধন্যবাদের জন্য। তাই, অনেকে আমরা নীরবে ধন্যবাদ নেই আর একটা মুচকি হাসি দেই। আমাদের নিজেদের কথা বললে ধন্যবাদ পেলে আমরা বলি আপনাকেও ধন্যবাদ! কিংবা আপনি চাইলে স্বাগতম ও বলতে পারেন। যাই বলেন না কেন, অন্তত চুপ করে খালি ধন্যবাদ শুনবেন না, এই আরকি!
*
ভোকাবুলারি কেন শিখবো?
পরীক্ষার জন্য ভোকাবুলারি শেখার ব্যাপারটা আমার জন্য সবচেয়ে বেশি। বিরক্তিকর ছিল। তখন পরীক্ষা পাস করার জন্য হলেও কষ্ট করে। শিখেছিলাম। পরে বিভিন্ন ট্রেইনিং সেশনের জন্য রিসার্চ করতে গিয়ে এমন কিছু ব্যাপার জানলাম, যেগুলো আগে জানা থাকলে হয়তোবা আরও আগে থেকে এবং বেশি আগ্রহের সাথে নতুন শব্দ শিখতাম। ব্যাপারগুলো আপনাদের সাথে এখনই শেয়ার করি যেন বাকিটা জীবন ভোকাবুলারি আপনি নিজ আগ্রহেই শিখবেন।
১. আমরা অধিকাংশ চিন্তাভাবনা করি শব্দ দিয়ে। এমন কিছু জিনিস আছে যেগুলো শব্দ ছাড়া আমরা কল্পনা করতে পারি না। যেমন : সমাজ, আদর্শ, হিংসা ইত্যাদি যেগুলো অবস্তুগত চিন্তা। আপনি হয়তোবা অনেক কিছু অনুভব করতে পারেন, কিন্তু শব্দের মাধ্যমে আমরা সবচেয়ে ভালো ভাবে চিন্তা করতে পারি। আমাদের ভোকাবুলারির গভীরতা নির্ধারণ করে আমাদের চিন্তার ব্যাপকতা কতদূর হবে।
২. ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স শেখাতে গিয়ে আমরা একটা জিনিস শিখলাম। যে, আমরা যত স্পষ্টভাবে আমাদের ইমোশনগুলো শব্দ দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারবো, আমাদের জন্য ইমোশনগুলো নিয়ন্ত্রণ করা তত সহজ হয়ে যাবে। পরে দেখা গেল যে, বিভিন্ন জাতির ইমোশনের উপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কেমন। দেখা গেল চাইনিজরা ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে অনেক এগিয়ে আছে। এবং বুঝতেই পারছেন এর পেছনে কারণ কী? ভোক্যাবুলারি! তাদের ভাষায় ৩,৭০,০০০-এরও বেশি শব্দ আছে এবং কম্বিনেশন করে আরও অনেক। তারা আরও নিখুঁতভাবে নিজেদের প্রকাশ করতে পারে বলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা নিজেদের অনুভূতি সম্পর্কে অনেক সহজে জানতে পারে। তাই, নিজেকে জানতে এবং নিজের ইমোশনগুলো বুঝতেও ভোকাবুলারি জানুন।
৩. সব ভাষায় সব শব্দ থাকে না। কিংবা শব্দ থাকলেও একই অর্থ থাকে না। যেমন : ইংরেজিতে Thank You এর উত্তরে Welcome এর যে মানে, welcome এর বঙ্গানুবাদ করে শুভেচ্ছা বললে কিন্তু একই মানে তা না। তাই, বিভিন্ন অনুভূতি এমন আছে যেগুলো কেবল নির্দিষ্ট ভাষা ভাড়া অন্য কোনো ভাষায় নেই। যেমন- বাংলায় আছে কিংকর্তব্যবিমূঢ় কিংবা পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি। তাই নতুন ভাষার নতুন ভোকাবুলারি জানলে আপনার কমিউনিকেশন করার ক্ষমতা অন্যদের সাথে এবং নিজের চিন্তাগুলোর মাঝে অনেক বেড়ে যাবে।
*
আন্তর্জাতিক কমিউনিকেশন
আপনি নিশ্চয়ই টম অ্যান্ড জেরি, মিকি মাউস এসব কার্টুন দেখেছেন। চার্লি চ্যাপলিন কিংবা মিস্টার বিনের এপিসোডও আশা করি দেখেছেন। এগুলো সারা পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত। এর একটা কারণ কী জানেন?
টম অ্যান্ড জেরি, মিকি মাউস, চার্লি চ্যাপলিন কিংবা মিস্টার বিন– সবারই ভাষা আন্তর্জাতিক। না না, ইংলিশের কথা বলছি না!
আরেকটু ঠিকভাবে বললে বলবো এই বিশ্বপ্রিয় সিরিজগুলোর ভাষা বিশ্বজনীন। কারণ, এই সিরিজগুলোতে কোনো কথাই নেই! সব বডি ল্যাংগুয়েজ এবং অ্যাকশন দিয়ে প্রকাশ করা হচ্ছে। কোনো একটা নির্দিষ্ট ভাষায় কন্টেন্ট বানালে সেটা ওই ভাষায় কথা বলা মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে যতক্ষণ না সেটা অনুবাদিত হয়। কিন্তু, যেই কন্টেন্ট পুরোটাই ছবির উপর নির্ভর করে, যেমন ফটোগ্রাফি; সেই কন্টেন্ট তো পুরো পৃথিবীর মানুষ। বুঝতে পারে।