আমাদের পয়েন্ট হচ্ছে, যেই কথাগুলো একবার ব্যবস্থা করলেই আমরা অন্য কাজে মনোযোগ দিতে পারি, সেই কথাগুলো আমরা সিস্টেম করি না কেন? বিভিন্ন ব্যাংকে কিংবা অফিসে একই প্রশ্ন হাজারবার কর্মকর্তা, কর্মচারীরা উত্তর করছেন। প্রশ্ন-উত্তর (FAQ– Frequently Asked Question) করে দেয়ালে টাঙিয়ে রাখলেই কিন্তু কর্মকর্তা, কর্মচারীদের অনেক কর্মঘণ্টা বেঁচে যায়।
কিন্তু, তবুও কেন জানি আমরা বারবার উত্তর করেই যাই। হয়তোবা আমরা মানুষকে সাহায্য করতে অনেক আনন্দ পাই। তাই, মানুষ প্রশ্ন করলেই হয়তোবা বেশি খুশি হই!
*
সেলেবদের সাথে কমিউনিকেশন
মনে করেন, বিখ্যাত কোনো গায়কের সাথে আপনার দেখা হয়ে গেল এবং স্বভাবতই অনেকেই বলবে, আপনার গান আমার অনেক ভালো লাগে! আর নাহলে, একটা সেলফি তুলি?
এখন একটু সেলেব্রিটি মানুষটার কথা চিন্তা করেন। তিনি মাসে ৩০ টা দিন মানুষের কাছ থেকে তার গানের প্রশংসা শুনেন এবং সেলফির আবদার পান।
আপনি যদি একই কথা বলেন তাহলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন যে তার জন্য কথাটা কতটা বোরিং!
তাহলে কী করবেন? সেলফি নিতে চাইলে তাকিয়ে না থেকে সেলফি তোলার আবদার করতেই পারেন। কিন্তু যদি প্রশংসা করেন, তাহলে এমন কিছু নিয়ে প্রশংসা করেন যেটা নিয়ে হয়তোবা তিনি অনেক চেষ্টা করছেন কিন্তু হয়তোবা কেউ প্রশংসা করছে না। হয়তোবা তার বাচ্চার ভালো ফলাফল নিয়ে কিংবা তার কোনো চ্যারিটির কাজের কথা তাকে বলুন। তিনিও খুশি হবেন যে তার এসব কাজ মানুষ জানছে এবং সেই কথা আরও ছড়িয়ে দিতে হয়তোবা আপনার সাথে কিছুক্ষণ ওই বিষয়ে আলাপও করে বসবেন!
*
ফাঁপা ধন্যবাদ
আমাদের মধ্যে ধন্যবাদ দেওয়ার প্রবণতা তেমন নেই। কিন্তু, আমরা এই বইতে খুবই চেষ্টা করছি এই ধনবাদ দেয়ার ব্যাপারটাকে প্রমোট করার জন্য। আপনার যদি ধন্যবাদ দেয়ার অভ্যাস থাকে তাহলে তো খুবই ভালো। আপনি যদি আরেকটু ভালোভাবে ধন্যবাদ দিতে চান তাহলে, কোন নির্দিষ্ট কাজের জন্য ধন্যবাদ দিচ্ছেন, সেটা মেনশন করে ধন্যবাদ দেয়ার চেষ্টা করবেন।
অপশন ১ : আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ!
অপশন ২ : দ্রুত কল করে ব্লাড ডোনার খুঁজে দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ!
দ্বিতীয় অপশনের মতো একজন কাজের কথা মেনশন করে ধন্যবাদ দিলে মানুষ অনেক বেশি খুশি হয়। আপনার পণ্য ব্যবহার করে একজন বলল, পণ্যটির জন্য ধনবাদ। এবং অন্যজন বলল, পণ্যটি ব্যবহার করে আমার ফিটনেস লেভেল অনেক ভালো হয়েছে। পণ্যটির কথা আমাকে জানানোর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ!
তাছাড়া, অনেক সময় মানুষ যদি না বুঝে যে সে ধন্যবাদ কেন পাচ্ছে, তাহলে সে হয়তোবা একটু কনফিউশনে থাকবে যে, হলোটা কী!
আরেকটা উদাহরণ দেই। মনে করেন ভিডিওর নিচে কমেন্ট করলাম, ভালো লেগেছে। যিনি ভিডিও বানিয়েছেন তার অবশ্যই কমেন্টটা পড়ে ভালো লাগবে। কিন্তু, তিনি সেখান থেকে কী বুঝছেন?
এর চেয়ে যদি আমি কমেন্ট করতাম, আপনার কন্টেন্টের রিসার্চের পেছনে শ্রম দেয়ার ব্যাপারটা আমার অনেক ভালো লেগেছে। এক্ষেত্রে ভিডিও নির্মাতা প্রশংসা শুনে খুশিও হচ্ছেন আবার এটাও বুঝে যাচ্ছেন যে তার কোন বিষয়ে আরও বেশি উন্নতি করা দরকার।
*
ভাবিকে সালাম
মানুষের স্বভাব হচ্ছে তেলা মাথায় তেল দেয়া। কোনো সিনিয়র মানুষ আসলে তাকে মাখন দিতে দিতে সবার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু, তারই কাছে। গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হয়তোবা তার পাশেই আছেন। হয়তোবা স্যারের আশপাশে সবাই ভিড় করেছে। আপনি গিয়ে ম্যাডামকে আপ্যায়ন করেন। সবাই যেখানে স্যারের কাছে ভিড় করেছে, সেখানে ম্যাডাম মনে রাখবেন যে আতিথেয়তা কে বেশি করেছে। হ্যাঁ, ভদ্রতা হিসেবে এটা অনেক ভালো। কিন্তু, নিজের কথা চিন্তা করলে দেখবেন, ম্যাডাম হয়তোবা আপনার কথা গিয়েই স্যারকে বলছেন যে আপনি কতটা অমায়িক ছিলেন! তখন আবার আপনি স্যারের সুনজরে পড়ে গেলেন। কিন্তু, এসব অফিস পলিটিক্স বাদ দেই!
অনেক সময় গ্রুপে একজন অনেক বেশি মেধাবী মানুষ থাকেন। তার সাথে কথা বলতে গিয়ে অন্যদের আমরা ইগনোর করে বসি। কিন্তু হয়তোবা ওই মানুষগুলোর মধ্যেও বেশ কাজের এবং মেধাবী কেউ আছেন। তাই, যেকোনো জায়গায় সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তির পিছে না ছুটে মাঝে মাঝে কিছু নীরব মেধাবীদের সাথেও আড্ডা দিয়েন।
*
মানুষ কখন আপনার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে?
একদম সহজ করে বললে চারটি অবস্থায় মানুষ আপনার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে :
১. উচ্চপদ : বেশিরভাগ মানুষ পদবিটাকে সালাম করে, মানুষটাকে নয়।
২. ইমোশন : আপনি ব্র্যান্ড ম্যানেজার হলে কোনটি বিজ্ঞাপনে দিতেন?
অপশন ১ : বাচ্চাদের জন্য দারুণ জুতো পাওয়া যাচ্ছে।
অপশন ২ : আপনার আদরের লিটল চ্যাম্পকে দিন খেলাধুলার সেরা উপহার– অমুক ব্র্যান্ডের কেডস!
প্রথমটি বিজ্ঞাপন, দ্বিতীয়টা আবেগে টোকা দেওয়া। আপনি নিজেই খেয়াল করে দেখেন। আপনার প্রিয় ৫টি বিজ্ঞাপনের কথা চিন্তা করলে দেখবেন বেশিরভাগের অফারের চেয়ে ইমোশনাল গল্পটাই বেশি আপনার মনে আছে।
দক্ষতা : নেতা না হলেও, মানুষ যদি জানে যে আপনি আপনার ফিল্ডের এক্সপার্ট; তাহলে আপনাকে সম্মানের জায়গা থেকে হলেও মনোযোগ দিয়ে আপনার কথা শুনবে।