অনেকেই এমন দেখেছি যারা একবার কারও সাথে ব্যবসা করে, কিংবা কোনো জিনিস বিক্রি করে আর কথা বলে না। লেনদেন শেষ, তো অচেনা মানুষ একদম! আরে ভাই! যেই মানুষগুলো আপনার কাছ থেকে কোনো জিনিস কিনেছে, তারা তো আপনার সবচেয়ে বড় ভক্ত। আসল ভক্ত তারাই যারা আপনার কাজের জন্য খালি প্রশংসা নয়, সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থও দিয়েছে। তাদের ধন্যবাদ দিলে, এক মাস পর খোঁজ নিলে তারা আপনার আরও পণ্য কিনতে ফেরত আসতে পারে। এবং ব্যাপারটা খালি ব্যবসায়িকই না। আমাদের জীবনে আমাদের সম্পর্কগুলোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সম্পর্কের চেয়ে যারা কাজের চেককে বেশি গুরুত্ব দেয়, তাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে একটা কোয়েশ্চেন মার্ক রয়েই যায়।
*
শব্দ করে ব্যাগ গোছানো
এটা একটা ছোটবেলার স্মৃতি চিন্তা করে দেখলাম যে বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেও এই কাজ করতাম! কাজটা হলো, ঘণ্টা দেয়ার পরও যখন টিচার ক্লাস চালিয়ে যেতেন তখন আমরা আমাদের ব্যাগ গুছানো শুরু করতাম। খালি চাতাম না, শব্দ করে ব্যাগ ঝাড়তাম, শব্দ করে খাতা-বই বন্ধ করতাম। মানে হলো, ক্লাসের টাইম শেষ!
কেন করতাম এমন? কারণ সরাসরি তো অনেকে বলতে ভয় পেতাম যে। ক্লাসের সময় শেষ। তাই, অন্যভাবে ইঙ্গিত দিতাম। ছাত্রজীবনে এর মজাটাই আলাদা ছিল!
কিন্তু, বাস্তব জীবনে এমন অনেক পরিস্থিতি আছে যেখান থেকে আপনি বের হতে চাচ্ছেন কিন্তু শব্দ করে ব্যাগ গোছানোর ট্রিকটা কাজে দিবে না। কীভাবে বলবেন যে আপনি এই আলোচনায় থাকতে চাচ্ছেন না?
ভাইয়া! খুবই দুঃখিত, আপনার কথার মাঝখানে কথা বলছি। কিন্তু আমার এখন একটা মিটিং-এ যেতে হবে। এখন রওনা না দিলে দেরি হয়ে যাবে। কিন্তু, পরের দিন কিন্তু আপনাকে গল্পটা শেষ করতে হবে! আসি তাহলে! 😀
এভাবে বলতে পারেন অথবা নিজের মত করে একটা সমাপ্তি সংলাপ (Exit Dialogue) বানিয়ে নিন। এসব বলতে লজ্জা লাগলে একটা মানসিক হাতিয়ার আপনাকে দিয়ে দেই।
যেই মানুষটা আপনার সময়ের ও প্রাধান্যের তোয়াক্কা না করে নিজের গল্প বলে। যায়, সেই স্বার্থপর মানুষের জন্য কেন আপনি নিজের সময় নষ্ট করবেন?
–ভাই! অনেক সময় সিনিয়রদের বলা যায় না!
হ্যাঁ, ঠিক। কিন্তু, আপনি যদি কোনো সমাপ্তি সংলাপ (Exit Dialogue) না। বের করেন, তাহলে তারা ধরে নেবে যে আপনি তাদের কথা শোনার জন্য নিয়মিত সাবস্ক্রাইবার। হয় উপায় বের করেন, নাহলে আপনার সাথে এসব চলতেই থাকবে।
*
কষ্টের প্রতিযোগিতা
দোস্ত, আর বলিস না। ফুটবল খেলতে গিয়ে পা ফ্র্যাকচার করে ফেলসি
–আরেহ! এটা তো কিছুই না! আমি ফুটবল খেলতে যেয়ে ফ্র্যাকচার তো করসিই, তার উপর হাঁটুর বাটিও নড়ায় ফেলসি!
কিংবা,
রাস্তায় জ্যামে আটকেই দিনে ৩ ঘণ্টা চলে যায়।
-–আমাদের সময় আমরা ২৫ মাইল হেঁটে স্কুল যেতাম। যাওয়ার পথে পদ্মা নদী সাঁতরে পার হয়ে কেওক্রাডং-এর উপর দিয়ে পার হয়ে….
যখন কেউ কষ্টের কথা বলে, তখন আপনার কষ্ট কীভাবে বেশি সেটা বললে অন্য মানুষটির কষ্ট কমে যায় না বরং সে আরও বিরক্ত হয়ে যায়। তাই, কার কষ্ট বেশি এই প্রতিযোগিতাটা না করাটা বুদ্ধিমানের কাজ।
আরও বুদ্ধিমানের কাজ হল এই ব্যাপারটা বোঝা যে, মানুষ অধিকাংশ সময় যখন কষ্টের কথা বলে, তখন তারা কেবল শেয়ার করতে চায়। তারা কোনো বিশেষজ্ঞের মতামত কিংবা আপনার জীবন ব্রেকআপের পর কেন দুর্বিষহ– এসব মোটেও জানতে চায় না। তাই, মানুষ কষ্টের কথা বললে প্রতিযোগিতা আর দুঃখবিলাসের সুইচটা বন্ধ রাখাই সেরা পন্থা।
*
মন দিয়ে শোনার ট্রিক
এটা আমাদের আম্মুর কাছ থেকে শেখা। একদিন আম্মুকে দেখি বেশ ক্লান্ত। কথা বলে বুঝতে পারলাম যে মেহমান আপ্যায়ন করতে করতে আম্মুর দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাও আবার কাছের আত্মীয় না, একবার দুবার কথা হলেই মানুষ আসা শুরু করছে, ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলেই যাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কাহিনী কী? তখন আম্মু বললো, আমি তো কিছুই বলি না। একদম চুপ করে থাকি। তবুও মানুষ কথা বলেই যায়!
তখন আমি বুঝিনি কিন্তু এখন জিনিসটা আন্দাজ করতে পারি। আম্মু কিছু বলতো না, তার মানে এই যে আম্মু সব কথা চুপ করে শুনতো। অনেক সময় এই আশায় যে, চুপ করে থাকলে মানুষ কথাবার্তা বেশি আগাবে না। কিন্তু মজার জিনিস হচ্ছে ঠিক এই কারণেই আন্টিরা আম্মুর সাথে বেশি কথা বলতো। কারণ, ঘণ্টার পর মনোযোগ দিয়ে চুপ করে কথা শুনবে, এমন মানুষই তো বাঁচালরা খুঁজছে!
এখান থেকে শিক্ষাটা কী?
আপনি যদি মানুষকে বোঝাতে চান যে আপনি সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে কথা শুনছেন, তাহলে মিনিটে ১/২ বার হুম বলে বাকিটা সময় অফ থাকেন!
*
সবচেয়ে কম জানা মানুষ হলে
কোনো একটা রুমে যদি সবাই আপনার চেয়ে বেশি জ্ঞানী হয় তাহলে আপনি কী করবেন?
অনেকেই এমন পরিস্থিতিতে হীনম্মন্যতার কারণে বেশি কথা বলে নিজেকে জ্ঞানী প্রমাণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু, যারা আসলেই জানে, তারা সরাসরি কথার অসারতা বুঝে ফেলে। যত বেশি কথা বলবেন তখন, তত বেশি তারা আপনার জ্ঞানের অগভীরতা বুঝে ফেলবে। কিন্তু, একটু অন্যদিক থেকে যদি আমরা চিন্তা করি যে একটা রুমে সবাই আমার চেয়ে বেশি জ্ঞানী হলে, আমি কেবল চুপচাপ কথা শুনলেই অনেক নতুন কিছু জানতে পারবো। কিন্তু এই জিনিসটাই অনেক ইয়াং মানুষজন ভুল করে। আমরাও করেছি। যারা অভিজ্ঞ, তাদেরকে আপনার বোঝানোর দরকার নেই। বরং যত বোঝাতে যাবেন তত বেশি নিজেকে হঁচড়ে পাকা সাব্যস্ত করে বসবেন।