*
গত দশবার কথা কী দিয়ে শুরু হয়েছে?
কোনো মানুষের সাথে যদি আপনার সম্পর্ক খারাপ হয়, তাহলে একটা জিনিস খেয়াল করে দেখেন। গত ৫ কিংবা ১০ বার যখন ওই মানুষটির সাথে আপনার কথা হয়েছে, শুরুটা কেমন ছিল? সালাম দিয়ে শুরু হয়েছে।
নাকি টিটকারি দিয়ে শুরু হয়েছে নাকি কাজ দিয়ে শুরু হয়েছে? সম্পর্ক নিয়ে আমাদের বলার অভিজ্ঞতা এখনও হয়নি যদিও তবুও একটা পর্যবেক্ষণ আমাদের আছে। একটা সময়ের পর স্বামী-স্ত্রীর শেষ ১০টি আলোচনা যদি আমরা খেয়াল করি, তাহলে দেখবো যে শুরু হয়েছে; পটল লাগবে, বাজার শেষ, খাবার ভালো হয়নি, এত দেরি কেন হল, বিরক্ত করো না তো এসব দিয়ে। একটা মানুষের সাথে যদি দেখা হওয়ার আগেই আপনি জানেন যে কোনো একটা নেগেটিভ কথা আসবে, তাহলে তো আপনি আরও পাশ কাটিয়ে যাবার চেষ্টা করবেন। পাশ কাটিয়ে কেন যাচ্ছেন, এটা নিয়ে তখন আবার শুরু হবে। দেখা হলেই যদি আপনি মানুষের কাছে আপনার দুঃখের কথা বলেন, কিংবা দেখা হলেই যদি টাকা চান, মানুষ তো আপনার সামনেই আসবে না।
তাই, যদি মনে হয় যে মানুষ আপনাকে এড়িয়ে চলছে, কিংবা আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে না; তাহলে একটু খেয়াল করে দেখুন গত ১০টা কনভারসেশনের কয়টিতে অন্য মানুষটির জন্য আনন্দদায়ক কিছু ছিল?
*
কল কাটার জন্য ব্যতিব্যস্ত
টাকা বেশি খরচ হবে চিন্তা করে যদি কেউ তাড়াহুড়ো করে ফোন কাটে তাহলে সেটা খারাপ চোখে দেখার মতো বড় কোনো ব্যাপার না। ব্যালেন্সের সামর্থ্যজনিত সমস্যা কারও থাকতেই পারে। এটা নিয়ে রেগে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। কিন্তু বিরক্তিকর এবং বেয়াদবিটা তখন হয় যখন কল দিলে আপনি, আর তাড়াহুড়ো করে কাটছে অন্যপ্রান্তের মানুষটি। আরেহ ভাই, টাকা কাটলে তো আমার কাটছে, আপনার এত কিসের তাড়া।
অনেকের এটা অভ্যাসের মতো হয়ে যায়, যে দ্রুত কল কাটতে হবে। সেটা নিজের খরচে করা ফোন হোক কিংবা অন্যের। সমস্যা হচ্ছে, এটা অনেকের কাছেই ব্যাপক বেয়াদবি মনে হতে পারে। কথা বলার মাঝখানে হুট করে উঠে যাওয়াটা যে কত বাজে সেটা আমরা বুঝি। কিন্তু, হুট করে ফোন কাটার বেয়াদবিটা অনেকে বুঝে উঠতে পারে না কারণ হুট করে ফোন কাটার পর, অপর প্রান্তের মানুষটির বিরক্তি তো আর সরাসরি তারা দেখতে পায় না।
তাই, ৭০ পয়সা বাঁচাতে যদি কেউ একটা সম্পর্কে ঝুঁকিতে রাখতে পারে, তাহলে তার জীবনে কালো মেঘই আছে। এবং এটা খালি ৭০ পয়সা বাঁচানোর ব্যাপার না, এটা বেসিক ভদ্রতা। ভবিষ্যতে একটা নিয়ম মেনে চলতে পারেন; বিশেষ করে সিনিয়রদের সাথে ফোনে কথা বলার সময়ে কথা শেষ করার পর আপনি ফোন না কেটে অপর প্রান্তের ফোন কাটার জন্যে অপেক্ষা করুন। ২ সেকেন্ডের বেশি হয়ে গেলে এরপর ফোন কাটতে পারেন। তাহলে আর মাঝপথে কোনো কথা মিস করে যাবার ঝুঁকি থাকবে না।
*
সত্যিকারের সমালোচনা
ব্যক্তিগত সমালোচনা হলে সেটা আপনি বাদে তো আর কারও শোনার দরকার নেই, তাই না? এজন্যই সমালোচনা যাকে করবেন, তাকে একদম আলাদা করে তারপর ফিডব্যাক দিন যাতে করে তিনি অন্যদের সামনে বিব্রত না হন। অনেকে অন্যদের সামনে বিব্রত যেন না হতে হয়, সেজন্য অনেক গঠনমূলক সমালোচনারও বিরোধিতা করে বসেন নিজেকে বাঁচানোর জন্য। তাই, সত্যিকার সমালোচনা করতে হলে :
- পাবলিক পোস্টে কমেন্ট না করে ইনবক্সে জানান।
- মিটিং রুমে সবার সামনে না বলে, একটা রুমে ডেকে একান্তভাবে জানান।
*
আমি, আমি, আমি
সেলেব্রেটিদের ইন্টারভিউ বাদে কোনো মানুষ যদি নিজের সম্পর্কে টানা ১০ মান ধরে কথা বলে, বিশেষ করে প্রথম সাক্ষাতেই; তাহলে কেমনটা লাগবে?
যিনি শুনছেন তিনি মনে মনে ভাববেন,
এ কি নিজেকে সেলেব্রিটি ভাবে?
তোর কাহিনী শুনে আমি কী করবো?
ভাই! আমি তো আপনার অটোবায়োগ্রাফি চাই নাই!
বিরক্তিকর না? আমি নিশ্চিত আপনার এমন হয়েছে যে আপনি খেলতে যাচ্ছেন কিংবা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাচ্ছেন। এমন সময় কোনো এক আঙ্কেল এসে শুরু করলো, আরে বাবা, কেমন আছো! আচ্ছা তোমরা কখনও ফ্রেশ লাউ খাইসো? আমার গ্রামের বাড়িতে…।
আমরা কেউ ওই মানুষটি হতে চাই না যাকে দূর থেকে দেখলে মানুষ রাস্তা। পার হয়ে অন্য পাশে চলে যায়। তাই, নিজেকে সব সময় যেন একটা প্রশ্ন। করি, গত পাঁচ মিনিটে কয়বার আমি এবং আমার শব্দ দুটো বলেছি?
*
স্বার্থপর কমিউনিকেশন
একটা কথা আছে না? কাজ শেষ, খোদা হাফেজ! এমনই একটা অবস্থা প্রায়ই দেখি। হঠাৎ করে ফোন দিয়ে তুলকালাম! কী না কী প্রজেক্ট হবে। দুই-তিনদিন ধরে অনেক পরিকল্পনা, স্ট্রাটেজি ইত্যাদি। এত কিছু পেরিয়ে যেই মাত্র কাজটা জমা দিবেন, সাথে সাথে কথা শেষ।
ফাইলটা পেয়েছে নাকি পায় নাই, কোনো খবর নাই। ধন্যবাদ তো আরও দূরের ব্যাপার। আর টাকা দেওয়ার ব্যাপারে তো বললামই না। প্রজেক্টের সবকিছু নিয়ে কথা বলবে, বউ-বাচ্চার কথা বলবে, দূরসম্পর্কের চাচাতো ভাইয়ের ভাতিজার খনার কথা বলবে; কিন্তু আপনার পেমেন্ট নিয়ে কোনো কথা বলবে না! কাজ শেষ হলে সব অফ! কাজ করার পরও যে হাই-হ্যালো। করতে হয়, এই সৌজন্যটুকুও অনেক সময়ই খুঁজে পাই না। এবং এটা খালি সৌজন্যবোধের ব্যাপারও নয়।