একটা দুর্গম জায়গায় এক হাজার জন মানুষ আসলে তাদের প্রত্যেককে ইভেন্টের দিন একজন একজন করে দিকনির্দেশনা দেওয়ার চেয়ে লোকেশন পাঠানো অনেক সহজ। কেউ ম্যাপ ব্যবহার করতে না পারলে সেটা তার অজ্ঞতার জন্য আপনাকে সময় নিয়ে দিক-নির্দেশনা দিতে হবে। কিন্তু, ম্যাপ ব্যবহার করার অভ্যাসটা সবার করা উচিত।
*
অফেন্সিভ কমিউনিকেশন
এখন যুগটাই এমন যে, আপনি যা কিছুই বলেন না কেন, কেউ না কেউ কোনো না কোনো বাহানায় মাইন্ড করে বসবে, মানে অফেন্ডেড হয়ে বসবে। এখন এটা তো একদম কমন সেন্স যে, মানুষকে আঘাত করে উস্কানিমূলক কিছু আমরা বলবো না। কিন্তু, সমস্যা হয় তখন, যখন মানুষ মাইন্ড করতে পারে ভেবে আমরা একদম চুপ করে যাই।
এক্ষেত্রে দ্বি-স্তর সূত্র দিয়ে রাখি। আশা করি এটা ব্যবহার করলে অনেকে নিজেকে দোষী না ভেবে কথা বলতে পারবেন।
সূত্র ১ : সমস্যাওয়ালা কথা বলে মানুষ রাগালে আমার দোষ।
সূত্র ২ : সঠিক কথা বলে মানুষ রাগালে সেটা মানুষের পরমতসহিষ্ণুতার অভাব। আমার দোষ না।
মানুষের অফেন্ডেড হওয়ারও অধিকার আছে, আবার এইদিকে আপনার মতামত প্রকাশের অধিকারও আছে। সব সময় অন্যের কথা চিন্তা করে নিজেকে সেন্সর করতে গেলে এক সময় নিজের আওয়াজই হারিয়ে। ফেলবেন।
এবং পৃথিবীতে যত বিপ্লবী মানুষ আছেন, প্রথম যখন তারা মুখ খুলেছিলেন, অনেকেই অফেন্ডেড হয়েছিল। একবার খালি চিন্তা করে দেখেন, মানুষ অফেন্ডেড হবে– এই কথা চিন্তা করে যদি মানুষগুলো চুপ থাকতেন, তাহলে। পৃথিবীর আজ কী হত?
সব শেষে এমন কিছু জিনিস, যেগুলো নিয়ে কথা বলাটাই অফেন্সিভ :
১. ভাই, শুনলাম আপনার ডিভোর্স হইসে।
২. শুনলাম, আপনি নাকি বিদেশ থেকে ফেরত এসেছেন?
৩. আপনার চাকরি চলে গেসে কবে?
৪. এবার কোথাও চান্স পাইলা না কেন জানো?
৫. আপনি কিছু করেন না যে?
*
WIIFY কমিউনিকেশন
আমাদের বিজনেস ক্লাসে একদিন নেগোশিয়েশন শেখানো হচ্ছিল। কীভাবে মানুষের সাথে দরদাম করবেন। বিশেষ করে কর্পোরেট জগতে। কারণ, মিটিং রুমে গিয়ে তো, একদাম ১শ, বাইচ্চা লন ১শ! এসব বলা যাবে না। মিটিং-এ তো সবাই অনেক যৌক্তিকও বটে। এই আইডিয়া ভাই খালি আপনার জন্যই বানানো হয়েছিলো! বললেই যে ক্লায়েন্ট গলে যাবে, এমন ব্যাপারও কিন্তু আসলে না। তাহলে কী করতে হবে? WIFY দেখতে হবে।
WIIFY কী?
Whats in it for you?
অর্থাৎ, আমার কথার মাধ্যমে আপনার লাভটা কোথায়, সেটা আমাকে আগে থেকেই জানতে হবে। কোনো একটা ব্যবসায়িক চুক্তি হলে আপনার যে লাভ তবে সেটা আপনি, আমি, ক্লায়েন্ট সবাই জানি। কিন্তু, এখানে ক্লায়েন্টের লাভটা কী, সেটা বুঝে আপনাকে কথা বলতে হবে। কোনো ক্লায়েন্ট হয়তোবা নতুন আইডিয়া চাচ্ছে, তাকে আইডিয়া দেন। কোনো ক্লায়েন্ট হয়তোবা কম দামে কাজটা চাচ্ছে, তাকে লো-বাজেটের আইডিয়া দেন।
স্যার! এই প্রজেক্টটা না হলে আমার এই বছরের বোনাসটা পাবো না। 🙁 এটা না বলে, স্যার! এই প্রজেক্টটা হলে এই বছরে আপনি এই কোম্পানির বেস্ট এমপ্লয়ি হয়ে যাচ্ছেন, তাই না?
আপনি নিজেরটা বাদ দিয়ে অন্যের কথা আগে চিন্তা করতে পারলে কমিউনিকেশনে বহুদূর এগিয়ে যাবেন।
মনে রাখবেন, পৃথিবীতে দুই দলের মানুষ আছে। এক দলের লোক যখন কোনো রুমে ঢুকে, তখন সে বলে, আমি এসেছি! আরেক দল লোক রুমে ঢুকে বলে, আমি আরেহ! তুমিও এসেছো! –লেইল লোওনডেস।
*
কোন কথাটা ভাইরাল হবে?
এখন একটা কথা সব জায়গাতেই চলে, ভাই! ভাইরাল কন্টেন্ট লাগবে!। টাকা ঢেলে বুস্ট করলে সব কন্টেন্টেই ভিউস আনা যায়। কিন্তু, মানুষের শেয়ারের মাধ্যমে ভাইরাল হতে হলে কন্টেন্টে বিস্ময়কর, নতুন এবং জেনুইন (Genuine) একটা ব্যাপার থাকে। এসবের পরও ভাইরাল হবে কি না, সেটা স্থান, কাল, পাত্রবিশেষে ভিন্ন হয়। আমাদের নিজেদের ক্ষেত্রে দেখেছি যে, একই ভিডিও ফেসবুকে হিট হয়েছে কিন্তু ইউটিউবে নর্মাল। এর বিপরীতে এমনও ভিডিও আছে যেটা ইউটিউবে অনেক ভিউস কুড়িয়েছে কিন্তু ফেসবুকে হিট খায়নি। একই ভিডিও! কিন্তু, দুটো প্লাটফর্মে সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটো রিয়্যাকশন। এমন অনেকবারই হয়েছে এবং এখনও হয়। এর পেছনে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যালগোরিদমের হাত আছেই। তবে এখান থেকে আমাদের আরেকটা শিক্ষা হল, আপনার কথা অসাধারণ হলেও, সেটার সাফল্য নির্ভর করছে আপনি কখন, কোথায়, কার সামনে, কী উপলক্ষে সেটা বলছেন।
আপনি আর আপনার বন্ধু একই গান অনেকদিন ধরে শুনছেন। হঠাৎ ব্রেক আপ হওয়ার পর সেই চিরচেনা ভালোবাসার গান শুনতে গিয়ে দেখেন। আপনার বন্ধু কেঁদে ভাসিয়ে দিচ্ছে। গানের কথা একই আছে, কিন্তু গানের কথা শোনার প্রসঙ্গ (Context) বদলে গেছে। গানের কথাতেই যদি ম্যাজিক থাকতো, তাহলে সে আগে কেন কাঁদেনি?
একটা উক্তি হয়তোবা হাজারোবার শুনেছি। কিন্তু, প্রাণপ্রিয় সিনিয়র ভাইয়ের কোনো ভিডিও কিংবা লেকচারে শুনলে কেন জানি একদম কলিজায় গিয়ে লাগে। উক্তিতে যদি ম্যাজিক থাকতো, তাহলে লেকচারের শোনার আগে কেন অনুপ্রেরণা পাইনি?
আপনার কবের কোন কথা কার মনে যে দাগ কাটে, সেটা আমি আপনি কেউই বোধ হয় নিশ্চয়তার সাথে বলতে পারি না। তাই, আমাদের উচিত সব সময় আমাদের সেরাটা দেওয়া। আপনি একদম ক্যাজুয়ালি হয়তোবা কথা বলছেন, কিন্তু ওই সময়ে যদি কেউ শতভাগ আবেগ দিয়ে আপনার কথা শুনে, তাহলেও আপনি কি একই কথাগুলোই চালিয়ে যাবেন?