আমি। আপনার সেই বাটীর ভাড়া কত? মালিক। পঞ্চাশ টাকা।
আমি। এখন সেই বাটী ভাড়া দিতে আপনার সবিশেষ কোনরূপ প্রতিবন্ধক আছে কি?
মালিক। না থাকিলে আর আমি আপনাকে বলিব কেন?
আমি। কি প্রতিবন্ধক আছে, তাহা আমি জানিতে পারি কি?
মালিক। অপর কোনরূপ প্রতিবন্ধক নাই। আজ কয়েক দিবস হইল, একটী বাবু, একমাসের অগ্রিম ভাড়া দিয়া একমাসের নিমিত্ত সেই বাটী ভাড়া লন, এবং আমার নিকট হইতে সেই বাটীর চাবি লইয়া যান। যখন তিনি সেই বাটী ভাড়া লন, তখন তিনি বলিয়াছিলেন, পশ্চিমদেশ হইতে একজন রাণী কলি কাতা দেখিবার নিমিত্ত আগমন করিবেন, এবং তিনিই সেই বাড়ীতে দশ বারদিন থাকিবেন মাত্র। সেই বাবুটী আমাকে এই কথা বলিয়া আমার বাড়ী ভাড়া লন, এবং বাড়ীর চাবি লইয়া যান। দুই তিনদিবস পরেই সেই বাড়ীর চাবি তিনি আমাকে ফিরাইয়া দিয়া যান, ও বলিয়া যান যে, রাণীজির বোধ হয়, এখন আসা হইল না। তবে যদি ইহার মধ্যে তিনি আইসেন, তাহা হইলে আমি আসিয়া পুনরায় চাবি লইয়া যাইব। একমাসের মধ্যে যদি তিনি আসেন, তাহা হইলে সেই বাড়ী আপনি অপরকে একমাস পরে অনায়াসেই ভাড়া দিতে পারেন। এখন বলুন দেখি মহাশয়! একমাসের মধ্যে আমি সেই বাড়ী অপরকে কিরূপে ভাড়া দিতে পারি? প্রকৃত প্রস্তাবে বলিতে হইলে, সেই বাড়ী আমার হইলেও একমাসের মধ্যে উহাতে হস্তক্ষেপ করিবার ক্ষমতা আমার নাই।
আমি। একমাস পরে সেই বাড়ী ভাড়া দিতে আপনার বোধ হয়, আর কোনরূপ আপত্তি হইবে না।
মালিক। কিছু না। একমাস কেন, একমাসের প্রায় অর্ধেক গত হইয়া গেল, যে কয়দিবস বাকী আছে, তাহার পরে সেই বাড়ী ভাড়া দিতে আর কোনরূপ আপত্তি নাই।
আমি। এই কয়দিবসের মধ্যে আপনি বাড়ী ভাড়া না দিন। কিন্তু উহা একবার দেখিতে বোধ হয়, আপনার কোনরূপ আপত্তি নাই?
মালিক। তাহাতে আর আপত্তি কি? আপনার যখন ইচ্ছা হয়, তখনই আপনি গিয়া আমার বাড়ী দেখিতে পারেন।
আমি। আপনার যদি কোনরূপ আপত্তি না থাকে, তাহা হইলে এখনই গিয়া আমি আপনার বাড়ী দেখিয়া আসিতে পারি। বাটী দেখিয়া যদি আমার মনমত হয়, তাহা হইলে সেই বাট ভাড়া লইয়া কথাবার্তা শেষও হইয়া যাইতে পারে।
মালিক। আপনাকে বাটী দেখাইতে আমার কিছুমাত্র আপতি নাই; কিন্তু আপনার সহিত গমন করিতে পারে, এরূপ কোন লোক এখন এ স্থানে উপস্থিত নাই। আমারও কোন একটা সবিশেষ প্রয়োজনে এখনই বাহির হইয়া যাইতেছি। সুতরাং আমিও এখন আপনার সহিত গমন করিতে পারিতেছি না। আপনি অনুগ্রহপূর্বক অপর কোন সময়ে আগমন করিবেন, সেই সময় হয় আমি নিজে আপনার সহিত গমন করিব, না হয়, অপর কোন লোককে আপনার সঙ্গে পাঠাইয়া দিব। আমি এখনই সেই বাটীর চাবি আপনার হস্তে প্রদান করিতাম; কিন্তু মহাশয়! মার্জনা করি বেন, আপনি আমার নিকট একবারে অপরিচিত বলিয়া, সেই বাটীর চাবি আপনার হস্তে প্রদান করিতে পারিলাম না। কলি কাতা সহর, অনেক দেখিয়া শুনিয়া চলিতে হয়।
আমি। আচ্ছা মহাশয়! তাহাই হইবে। অপর আর এক সময় আসিয়া আমি আপনার সহিত সাক্ষাৎ করিব, এবং সেই সময় চাবি লইয়া গিয়া আপনার বাটী দেখিয়া লইব।
মালিক। তাহা হইলে আমি এখন আমার কাৰ্য্যে গমন করিতে পারি?
আমি। আর একটা কথা আপনাকে জিজ্ঞাসা করিতে ইচ্ছা করি।
মালিক। আর কি জিজ্ঞাসা করিতে চাহেন?
আমি। যে বাবুটা আপনার নিকট হইতে একমাসের জন্য বাটী ভাড়া লইয়াছিল, তাহাকে আপনি চিনেন কি?
মালিক। তিনি আমার নিকট পরিচিত নহেন।
আমি। তিনি কোথায় থাকেন, তাহা আপনি বলিতে পারেন?
মালিক। না।
আমি। আমি যদি অনুসন্ধান করিয়া তাহাকে আপনার নিকট আনিতে পারি, এবং এখন হইতে আমাকে সেই বাটী ভাড়া দিতে যদি তাঁহার কোনরূপ আপত্তি না থাকে, তাহা হইলে সেই বাটী আপনি আমাকে ভাড়া দিতে পারিবেন কি?
মালিক। তাহা পারিব না কেন, তাহার কোনরূপ আপত্তি না থাকিলেই হইল।
সেই বাটীর মালিকের সহিত এইরূপ কথাবার্তা হইবার পর, অপর আর কোন সময়ে পুনরায় তাহার নিকট আগমন করিব, এই বলিয়া আমি সেই স্থান হইতে প্রস্থান করিলাম; তিনিও আপন কার্যে গমন করিলেন।
প্রথম অংশ সম্পূর্ণ।
রাণী না খুনি? (শেষ অংশ)
রাণী না খুনি? (শেষ অংশ)
(অর্থাৎ অপরিচিত ব্যক্তিকে বিশ্বাস করিবার চূড়ান্ত ফল!)
Detective Stories No, ৪1. দারোগার দপ্তর ৮১ম সংখ্যা
প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায় প্রণীত।
সিকদারবাগান বান্ধব পুস্তকালয় ও সাধারণ পাঠাগার হইতে শ্রীবাণীনাথ নন্দী কর্তৃক প্রকাশিত
All Rights Reserved.
সপ্তম বর্ষ। সন ১৩০৫ সাল। পৌষ
রাণী না খনি?
(শেষ অংশ)
প্রথম পরিচ্ছেদ।
বাড়ীওয়ালার বাড়ী পরিত্যাগ করিয়া আমি প্রথমতঃ আমার খানায় গিয়া উপস্থিত হইলাম। সেই স্থান হইতে পূৰ্ব-কথিত কর্ম্মচারীদ্বয়কে সঙ্গে লইয়া পুনরায় কালীবাবুর বাড়ীতে গিয়া উপস্থিত হইলাম। যে সময় আমরা কালীবাবুর নিকট গিয়া উপ স্থিত হইলাম, সেই সময় কালীবাবু ও ত্রৈলোক্য উভয়েই তাহা দিগের গৃহে বসিয়াছিল। আমাদিগকে দেখিয়া ত্রৈলোক চিনিতে পারিল, এবং সেই স্থানে উপবেশন করিতে কহিল। আমরা তিনজনেই সেই স্থানে উপবেশন করিলাম। আমাদিগকে দেখিয়া কালীবাবু কহিল, কি মহাশয়! পুনরায় কি মনে করিয়া? আসামী ধরা পড়িয়াছে না কি?