আ। কেন তাহা জানি না। কিন্তু আপনার কন্যা আমার বাড়ীতে ঐ রূপই বলিয়াছে।
শো। আমার মেয়ে—বালিকা নয়, সে এখন যুবতী। বিশেষ তাহার কোন অপরাধ নাই, কেবল, সাক্ষ্য স্বরূপ তাহাকে এখানে আনা হইয়াছে, সেই জন্য তাহাকে বাহিরে পুলিসের অন্যান্য কর্ম্মচারিদিগের সহিত একত্র রাখিলাম না;–আমার অন্দরেই স্থান দিয়াছি। রূপসী বড় ভাল মেয়ে। তাহার মন বড় সরল।
শোভন সিং আর কোন কথা কহিলেন না। সন্ন্যাসীগণকে তখনই মুক্ত করিয়া দেওয়া হইল। তাঁহারা, বিশেষতঃ ভজন লাল আমায় আশীৰ্বাদ করিতে করিতে প্ৰস্থান করিলেন।
লাল সিং আমার কথায় অত্যন্ত আনন্দিত হইলেন। আপাততঃ রূপসী তাঁহারই বাড়ীতে গেল। শোভন সিং বিবাহে সন্মতি দিয়াছিলেন। সুতরাং রূপসীকে লাল সিংএর সহিত যাইতে নিষেধ করিলেন না।
কামিনী হাজতেই রহিল। কোন লোক তাহার জামিন হইল না। সৌভাগ্য বশতঃ অধিককাল তাহাকে হাজতে থাকিতে হইল না। সৌভাগ্য বশতঃ অধিককাল তাহাকে হাজতে থাকিলে হইল না। শীঘ্রই বিচার হইয়া গেল। বিচারে শোভন সিংহের পাঁচ শত মুদ্রা এবং কামিনীর দুইশত মুদ্রা অর্থদণ্ড হইল। অর্থ দিতে না পারিলে শোভন সিংকে ছয় মাস এবং কামিনীকে একমাস কাল সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করিতে হইবে।
রূপসীকে লাভ করিয়া লাল সিং এত সন্তুষ্ট হইয়াছিলেন, বিশেষ রূপসী তাঁহাকে বিবাহ করিতে অভিলাষিণী শুনিয়া তিনি এত আনন্দিত হইয়াছিলেন যে, শোভন সিংএর মুক্তির সমস্ত টাকা নিজেই প্ৰদান করিলেন। শোভন মুক্ত হইলেন। কামিনীও দুই শত টাকা দিয়া মুক্তি লাভ করিল।
বাড়ী ফিরিয়াই শোভন সিং কন্যার বিবাহের আয়োজন ক্রিতে লাগিলেন। বিনা বাক্যব্যয়ে লাল সিংকে পাঁচ শত মুদ্রা দিতে দেখিয়া তিনি লাল সিংএর পক্ষপাতী হইয়াছিলেন। রূপসীকে নিজ বাড়ীতে আনিয়া মহা সমারোহে বিবাহ দিলেন। নব দম্পতীকে শোভন প্রাণ খুলিয়া আশীর্ব্বাদ করিলেন।
সমাপ্ত।
ঘর-পোড়া লোক – ১ম অংশ
ঘর-পোড়া লোক
(দারোগার দপ্তর ৭৪ম সংখ্যা)
ঘর-পোড়া লোক (অর্থাৎ পুলিসের অসৎ বুদ্ধির চরম দৃষ্টান্ত!)
শ্রী প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায় প্রণীত।
সিকদারবাগান বান্ধব পুস্তকালয় ও সাধারণ পাঠাগার হইতে বাণীনাথ নন্দী কর্তৃক প্রকাশিত। All Rights Reserved.
সপ্তম বর্ষ। সন ১৩০৫ সাল। জ্যৈষ্ঠ।
Printed By Shashi Bhusan Chandra, at the GREAT TOWN PRESS, 68, Nimtola Street, Calcutta.
ঘর-পোড়া লোক।
(প্রথম অংশ)
প্রথম পরিচ্ছেদ।
অদ্য যে বিষয় আমি পাঠকগণকে উপহার দিতে প্রস্তুত হইয়াছি, তাহা অতি ভয়ানক ও লোমহর্ষণ-জনক ঘটনা। কিন্তু এই ঘটনার সহিত আমার নিজের কোনরূপ সংস্রব নাই, অর্থাৎ আমি নিজে এই মোকদ্দমার অনুসন্ধান করি নাই; কিন্তু এই মোকদ্দমার সহিত যে পুলিস কর্ম্মচারীর সংস্রব ছিল, তিনি আমার পরিচিত। এই ঘটনার মধ্যে যেরূপ অস্বাভাবিক দুবুদ্ধির পরিচয় আছে, তাহা পাঠ করিয়া অনেক পাঠকেই মনে করিতে পারেন যে, এরূপ দুঃসাহসিক কাৰ্য মনুষ্য-বুদ্ধির অগোচর। কিন্তু যখন আমি এই ঘটনার আনুপূর্বিক সমস্ত ব্যাপার জানি, এবং অনুসন্ধানকারী পুলিস কর্ম্মচারীও, আমার পরিচিত, তখন এই ঘটনার সত্যাসত্য সম্বন্ধে আমার কিছুমাত্র সন্দেহ নাই। পাঠকগণও ইহা সম্পূর্ণ। রূপ সত্য ঘটনা বলিয়া অনায়াসে বিশ্বাস করিতে পারেন।
এই ঘটনা আমাদিগের এই প্রদেশীয় ঘটনা নহে, পশ্চিম দেশীয় ঘটনা। হিন্দু পাঠকগণের মধ্যে সকলেই অবগত আছেন যে, নৈমিষারণ্য নামে একটা স্থান আছে, উহা আমাদিগের একটা প্রধান তীর্থ স্থান। পশ্চিমদেশবাসীগণ সেই স্থানকে নিমরণ কহিয়া থাকে।
কথিত আছে, ভগবান্ বেদব্যাস এই স্থানে বসিয়া ভগবদবাক্য সৰ্ব্বপ্রথমে মর্ত্যলোকে প্রকাশ করেন। যে বেদীর উপর উপবেশন করিয়া তিনি ভগবাক্য পাঠ করিয়াছিলেন, নিবিড় ও নিস্তব্ধ আয় কাননের ভিতর সেই বেদী এখন পর্যন্ত বর্তমান। সেই বেদীর কিছু দূর অন্তরে চক্রপাণি নামক প্রসিদ্ধ স্থান। প্রসিদ্ধি আছে যে, যে সময় ভগবান্ বেদব্যাস ভগব প্রকাশ করিতেন, সেই সময় দেবতাগণ ও ঋষি গণের আবির্ভাব হইত। সেই স্থানে তখন একটা সামান্য স্রোতস্বতী থাকা স্বত্বেও সেই স্থানে যাহারা আগমন করিতেন, তাঁহাদিগের প্রত্যেককেই অত্যাধিক জল-কষ্ট সহ করিতে হইত। ভগবান্ বিষ্ণু এই ব্যাপার দেখিয়া জল-কষ্ট নিবারণ করিবার মানসে আপনার চক্র দ্বারা পৃথিবী ভেদ করিয়া দেন, সেই স্থান হইতে সতেজে অনবরত জল উখিত হইয়া সকলের জল-কষ্ট নিবারণ করে। সেই সময় পৃথিবী ভেদ করিয়া যে স্থান হইতে জল উঠিয়াছিল, এবং এখন পর্যন্ত যে স্থান হইতে অনবরত জল উখিত হইয়া সন্নিকটবর্তী সেই ক্ষুদ্র স্রোতস্বতীতে গিয়া মিলিতেছে, সেই স্থানকে চক্রপাণি। কহে। নৈমিষারণ্য তীর্থে যাহারা গমন করিয়া থাকেন, তাহাদিগকে চক্রপাণি জলে স্নান করিতে হয়।
দশ বার বৎসর পূর্বে কোন সরকারী কাৰ্য্য উপলক্ষে আমাকে সেই নৈমিষারণ্যে গমন করিতে হইয়াছিল। যে কাৰ্য্যে আমি গমন করিয়াছিলাম, সেই কাৰ্য শেষ হইবার পর, একদিবস আমি সেই চক্রপাণি জলে স্নান করিতে যাই। সেই স্থানে আমি স্নান করিতেছি, এরূপ সময় একজন লোক আসিয়া স্নান করিবার মানসে সেই চক্রপাণি জলে অবতরণ করেন। কথায় কথায় তাহার সহিত আমার পরিচয় হয়। ইহার নাম আমি পূৰ্ব্ব হইতেই জানিতাম। কিন্তু ইহার সহিত আমার কখন চাক্ষুষ আলাপ পরিচয় ছিল না। ইহার নাম শুনিয়াই আমি কহিলাম, আপনি এই প্রদেশীয় পুলিস বিভাগে কর্ম্ম করিতেন না?