আমি। কালীবাবু যে সকল কথা বলেন, তাহাদের পোষকতায় আর কোন প্রমাণ পাইয়াছিলেন কি?
কর্ম্মচারী। পাইয়াছিলাম।
আমি। কি?
কর্ম্মচারী। যাহার গৃহে বসিয়া সেই সকল জহরত গ্রহণ করা হয়, এবং তাহার মূল্য প্রদান করা হয়, সেই স্ত্রীলোকটীও ঠিক সেই কথাই বলে।
আমি। সেই স্ত্রীলোকটী কে?
কর্ম্মচারী। কালীবাবু যে গৃহে থাকেন, সেই স্ত্রীলোকটীও সেই গৃহে থাকে।
আমি। তাহা হইলে কালীবাবু যে স্ত্রীলোকটীর গৃহে থাকেন, সেই স্ত্রীলোকটীই কালীবাবুর কথার পোষকতা করিতেছে?
কর্ম্মচারী।
আমি। রাণীজিও বোধ হয়, তিনিই হইয়াছিলেন?
কর্ম্মচারী। হাঁ।
আমি। সেই স্ত্রীলোকটীর নাম কি?
কর্ম্মচারী। তাহার নাম ত্রৈলোক্য।
আমি। বাড়ীর অপরাপর ভাড়াটিয়াগণ কি বলে?
কর্ম্মচারী। তাঁহারা সবিশেষ কিছুই বলিতে পারে না। তাঁহারা কেবল এইমাত্র বলে যে, কাহার গৃহে কে আসিতেছে, কে যাইতেছে, তাহার খবর কে রাখে? বিশেষতঃ এরূপ সংবাদ রাখা তাহাদিগের নীতি-বিরুদ্ধ।
আমি। পশ্চিমদেশীয় একটী লোক যে সেই বাড়ীতে কতক গুলি জহরত লইয়া গমন করিয়াছিল, তাহা কেহ বলে?
কর্ম্মচারী। সবিশেষ কিছু বলিতে পারে না, তবে এইমাত্র বলে যে, কালীবাবুর সহিত সময় সময় বঙ্গদেশীয়, পশ্চিমদেশীয় প্রভৃতি অনেক লোক প্রায়ই তাঁহার গৃহে আসিয়া থাকে, এরূপ তাঁহারা দেখিতে পায়।
আমি। কত টাকার জহরত খরিদ করা হয়?
কর্ম্মচারী। কালীবাবু কহেন, দশ হাজার টাকায় সেই সকল জহরত খরিদ করা হইয়াছিল।
আমি। টাকাগুলি কিরূপ অবস্থায় রামজীলালকে প্রদান করা হয়,নগদ টাকা দেওয়া হয়, না নোট দেওয়া হয়?
কর্ম্মচারী। সমস্তই নোট, নয়খানি হাজার টাকার হিসাবে নয় হাজার, এবং একশতখানি দশ টাকা হিসাবে এক হাজার টাকা।
আমি। সেই হাজার টাকা হিসাবের নোটগুলির নম্বর পাই বার কোনরূপ উপায় আছে কি?
কর্ম্মচারী। সমস্ত নম্বরই আমি পাইয়াছি।
আমি। কিরূপে সেই সকল নোটের নম্বর পাইলেন?
কর্ম্মচারী। কালীবাবুর নিকট হইতে। যে সময় নোটগুলি রামজীলালকে দেওয়া হয়, সেই সময় কালীবাবু সেই সকল নোটের নম্বর টুকিয়া রাখিয়াছিলেন। তিনি আমাকে সেই সকল নম্বর
প্রদান করিয়াছেন।
আমি। সেই নোটগুলি সম্বন্ধে করেনসি আফিসে একবার অনুসন্ধান করা উচিত।
কৰ্ম্মচারী। সে অনুসন্ধানও আমি করিয়াছি। সেই সকল নোটের টাকা দেওয়া স্থগিত (Stop) করিবার মানসে করেসি আফিসের বড় সাহেবের নামে একখানি পত্র লেখা হয়। সেই পত্রের জবাবে তিনি যাহা বলিয়াছেন, তাহাতেই রামজীলালের উপর আরও সবিশেষরূপ সন্দেহ আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে।
আমি। পত্রের উত্তরে তিনি কি লিখিয়াছেন?
কর্ম্মচারী। তিনি লিখিয়াছেন যে, সমস্ত নোটগুলিই রামজী লাল নামক এক ব্যক্তি সেই স্থানে প্রদান করিয়া তাহার পরিবর্তে দশ টাকার হিসাবে নোট বাহির করিয়া লইয়া গিয়াছে।
আমি। এটী সবিশেষ সন্দেহের কথা?
কর্ম্মচারী। এই সন্দেহের উপর নির্ভর করিয়া তাহার নামে ওয়ারেন্ট বাহির করিয়াছি।
আমি। সেই জমিদার-পুত্ৰটী কে, তাহার কিছু অবগত হইতে পারিয়াছেন কি?
কর্ম্মচারী। তাহা আমি এ পর্যন্ত কিছুই জানিতে পারি নাই। কালীবাবু কোনরূপেই তাহার নাম বলিতে সম্মত নহেন, বা তাঁহার বাড়ী দেখাইয়া দিতে বলায়, তিনি বলেন যে, কোথায় যে তাহার বাড়ী, তাহা তিনি অবগত নহেন। বাড়ীর ঠিকানা তিনি কখনও কাহারও নিকট প্রকাশ করেন নাই, নামও বলেন নাই; রাজাসাহেব বলিয়াই সকলে তাহাকে ডাকিয়া থাকেন।
আমি। জহরত খরিদ করিবার পর, রাজাসাহেব ত্রৈলোক্যের গৃহে আর আগমন করিয়াছিলেন কি?
কর্ম্মচারী। তাহার পর দুই একদিবস আসিয়াছিলেন মাত্র; কিন্তু আজ কয়েকদিবস পর্যন্ত আর তিনি সেই স্থানে আগমন করেন নাই।
আমি। কেন আসেন নাই, সেই সম্বন্ধে কেহ কোন কথা বলিতে পারে না কি?
কর্ম্মচারী। ত্রৈলোক্য ও কালীবাবু ইহাই বলেন যে, রাজা সাহেব শেষদিবস যখন সেই স্থানে আগমন করিয়াছিলেন, সেই সময় তিনি বলিয়া যান যে, কোন সবিশেষ কাৰ্য্য উপলক্ষে তাহাকে তাহার দেশে গমন করিতে হইতেছে। বোধ হয়, সেই স্থানে তাহাকে মাসাবধি অবস্থান করিতে হইবে। সুতরাং এক মাসের মধ্যে তিনি আর এখানে আগমন করিবেন না।
আমি। রামজীলাল সম্বন্ধে আপনি কি অনুসন্ধান করিয়াছেন?
কৰ্ম্মচারী। সবিশেষ কোনরূপ অনুসন্ধান করিয়া উঠিতে পারি নাই। কেবল কলিকাতার ভিতর যে যে স্থানে তাহার দেশের লোক বা আত্মীয়-স্বজন আছে, কেবল তাহারই কোন কোন স্থানে রামজীলালের অনুসন্ধান করিয়াছি মাত্র; কিন্তু এখন পর্যন্ত সকল স্থানে গমন করিতে পারি নাই। আমার বোধ হয়, রামজীলাল কলিকাতায় নাই। কারণ, কোন দিক হইতে তাহার কোনরূপ সন্ধান পাওয়া যাইতেছে না। আমার বোধ হয়, সে কলিকাতা পরিত্যাগ করিয়া স্থানান্তরে প্রস্থান করিয়াছে।
আমি। নিতান্ত অসম্ভব নহে; কিন্তু রামজীলাল তাহার মনিবের এতদুর বিশ্বাসপাত্র হইয়া এরূপ অবিশ্বাসের কাৰ্য্য করিবে? যাহা হউক, এ বিষয় একবার উত্তমরূপে দেখা আবশ্যক। অর্থের লোভে সময় সময় মনুষ্যগণ যে কি না করিতে পারে, তাহা বলা সহজ নহে। অর্থই যে অনর্থের মূল তাহার আর কিছুমাত্র সন্দেহ নাই।
কর্ম্মচারী। এখন এ সম্বন্ধে আমাকে আর কিছু করিতে হইবে কি?
আমি। হইবে বৈকি?