আমি। কালীবাবু কি কাৰ্য্য করিয়া থাকেন?
কর্ম্মচারী। তাহা আমি জানি না, জিজ্ঞাসা করায় তিনি বলিয়াছিলেন যে, তিনি দালালী কাৰ্য্য করিয়া থাকেন।
আমি। কালীবাবু প্রকৃতই দালালী কাৰ্য্য করেন কি না, সে সম্বন্ধে আপনি কোনরূপ অনুসন্ধান করিয়াছেন কি?
কর্ম্মচারী। না।
আমি। তিনি থাকেন কোথায়?
কর্ম্মচারী। তিনি যেখানে থাকেন, তাহা আমি জানি; আমি নিজে গিয়া তাঁহার বাড়ী দেখিয়া আসিয়াছি।
আমি। কিরূপ বাড়ীতে তিনি থাকেন?
কর্ম্মচারী। দোতালা পাকা বাড়ী।
আমি। তিনি সেই বাড়ীতে একাকী বাস করিয়া থাকেন কি?
কর্ম্মচারী। না, সেই বাড়ীতে অনেকগুলি স্ত্রীলোক থাকে, তাহাদিগের মধ্যে একখানি ঘরে তিনিও বাস করেন।
আমি। সেই স্ত্রীলোক কি প্রকারের, গৃহস্থ, না বেশ্যা?
কৰ্ম্মচারী। বেশ্যা।
আমি। তাহা হইলে যে গৃহে কালীবাবু থাকেন, সেই গৃহেও বোধ হয়, একজন বেশ্যা বাস করিয়া থাকে?
কর্ম্মচারী। হাঁ, একটী বেশ্যাকে লইয়া কালীবাবু সেই বার্সীতেই থাকেন।
আমি। কালীবাবুর সহিত আপনার সাক্ষাৎ হইলে তিনি আপনাকে কি বলিলেন?
কর্ম্মচারী। আমি তাঁহাকে দেখিয়াই তাহাকে একবারে জিজ্ঞাসা করিলাম, আপনি রামজীলাল নামক এক ব্যক্তির মারফত যে সকল জহরত আনিয়াছিলেন, তাহা এখন আপনার নিকট আছে, কি বিক্রয় করিয়া ফেলিয়াছেন? উত্তরে তিনি কহিলেন, যাহার নিমিত্ত সেই সকল জহরত আনা হইয়াছিল, তিনি তৎক্ষণাৎ সেই সকল জহরত গ্রহণ করিয়াছেন, এবং সেই প্রেরিত লোক মারফত সমস্ত টাকাও প্রদান করিয়াছেন। টাকা লইয়া রামজীলাল তৎক্ষণাৎ সেই স্থান হইতে প্রস্থান করিয়াছেন। সেই সকল জহরত বিক্রয় করিয়া আমার ন্যায্য যে কিছু দালালী প্রাপ্য হয়, তাহার কিয়দংশ তিনি আমাকে প্রদান করিয়া গিয়াছেন, এবং বলিয়া গিয়াছেন, দুই একদিবসের মধ্যে আরও কতকগুলি জহরত লইয়া তিনি আসিবেন, সেই সময় আমার দালালীর অবশিষ্ট যাহা প্রাপ্য আছে, তাহা প্রদান করিয়া যাইবেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তিনি আর প্রত্যাবর্তন করিলেন না, বা আমার ন্যায্য পাওনাগুলিও পাঠাইয়া দিলেন না; আমিও নানা ঝঞ্চাটে আর সেই দোকানে গমন করিতে পারি নাই।
আমি। আপনি কালীবাবুকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন কি যে, সেই সকল জহরত কালীবাবু নিজে খরিদ করিয়াছিলেন, কি অপর কোন লোক খরিদ করিয়াছিল?
কর্ম্মচারী। জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম। উত্তরে কালীবাবু আমাকে এই বলিয়াছিলেন যে, রাজার মত কোন একজন জমিদার সেই জহরত খরিদ করিয়াছেন।
আমি। সেই রাজা বা জমিদার কে?
কর্ম্মচারী। কালীবাবু তাহা আমাকে বলেন নাই।
আমি। তিনি যে বাড়ীতে থাকেন, সেই বাড়ী আপনাকে দেখাইয়া দিয়াছিলেন কি?
কর্ম্মচারী। না, তাঁহার বাড়ীও আমাকে দেখাইয়া দেন নাই।
আমি। তাহা হইলে জহরতগুলি কোন্ স্থানে তিনি গ্রহণ করেন, এবং উহার মূল্যই বা কোন্ স্থানে তিনি প্রদান করেন?
কর্ম্মচারী। কালীবাবু আমাকে কেবল ইহাই বলেন যে, যে বাড়ীতে কালীবাবু থাকেন, সেই বাড়ীর কোন একটী স্ত্রীলোকের গৃহে সেই জমিদার মহাশয় আগমন করিতেন। সেই স্থানে কালী বাবুর সহিত তাহার পরিচ হয়, এবং কতকগুলি জহরত আনিবার নিমিত্ত সেই স্থানে বসিয়াই কালীবাবুকে আদেশ করেন। তাঁহারই আদেশ মত কতকগুলি জহরত আনা হয়। সেই সকল জহরতের সঙ্গে রামজীলাল আগমন করেন, এবং সেই স্ত্রীলোকের গৃহে বসিয়াই তিনি সেই সকল জহরত খরিদ করেন, ও রামজীলালের হস্তে উহার মূল্য প্রদান করেন।
আমি। একজন রাণী যে জহরত খরিদ করিতে গিয়াছিলেন, তাহা হইলে সেই রাণী কে?
কর্ম্মচারী। রাণী যে কে, তাহা কালীবাবু আমাকে স্পষ্ট করিয়া বলেন নাই। কেবল তিনি আমাকে এইমাত্র বলিয়াছিলেন, যে স্ত্রীলোকটার গৃহে তিনি আগমন করিতেন, সেই স্ত্রীলোকটীকে সঙ্গে লইয়া তিনি জহরত খরিদ করিতে বাজারে গমন করেন। তিনি যে জুড়িতে ছিলেন, সেই স্ত্রীলোকটীও সেই জুড়িতে ছিলেন বলিয়া, লাক-লজ্জার ভয়ে তিনি গাড়ির ঘেরাটোপ ফেলিয়া সেই স্ত্রী লোকটীর সহিত বাজারে আগমন করেন। তাঁহার ইচ্ছা ছিল, তিনি নিজে দোকানে বসিয়া জহরতগুলি দেখিয়া শুনিয়া পসন্দ করিয়া লইবেন; কিন্তু দোকানে গমন করিয়া, গাড়ি হইতে বাহির হইবার সময় দেখিতে পান, সেই দোকানে একটী লোক বসিয়া আছেন। বোজ হয়, সেই লোকটীই সেই দোকানের মালিক। সেই লোকটীকে তিনি পূর্ব হইতে চিনিতেন। কারণ, সেই ব্যক্তির সহিত তাঁহার পিতার সবিশেষরূপ পরিচয় আছে। তিনি পাছে তাহার চরিত্রের কথা তাঁহার পিতার নিকট বলিয়া দেন, এই ভয়ে তিনি আর গাড়ি হইতে নামিতে সাহসী হন নাই, এবং সেই স্থানে আত্মপ্রকাশ হইয়া পড়িবে, এই ভয়ে সেই স্ত্রীলোকটীকে রাণী বলিয়া পরিচয় প্রদান করিতে কালীবাবুকে বলিয়া দেন, ও তাহাকেই জহরতগুলি দেখা ইয়া খরিদ করিতে বলেন। কালীবাবু, নামে জহরতগুলি রাণীজিকে দেখান; কিন্তু প্রকৃত পক্ষে সেই জমিদার-পুত্রই সেই গাড়ির ভিতর হইতে জহরতগুলি দেখিয়া পসন্দ করেন, এবং পুনরায় ভাল করিয়া দেখিয়া উহার মূল্য প্রদান করিবেন, বিবেচনা করিয়া, জহরতগুলি কালীবাবুর বাসায় লইয়া যাইবার নিমিত্ত কালীবাবুকে সেই স্থানে রাখিয়া তাঁহারা প্রস্থান করেন। কালীবাবু সেই সকল জহরত রামজীলালের মারফত তাহার বাড়ীতে লইয়া যান। সেই স্থানে জমিদার-পুত্র পুনরায় জহরতগুলি ভাল করিয়া দেখেন, এবং পরিশেষে রামজীলালের হস্তে উহার মূল্য প্রদান করিয়া জহরতগুলি গ্রহণ করেন।