ছাতে উর্বশীর খোঁজে গিয়েছিলি মানে?
বোস, তোকে তাহলে সব বলি।
সাগ্রহে শয্যাটার উপর আবার বসলাম।
.
কিরীটী বলতে লাগল, ছাতে গেলেই তোর চোখে পড়বে এই বাড়ির পিছনে একটা গ্যারাজ ও মোটর রিপেয়ারিংয়ের কারখানা আছে। খোঁজ নিয়ে জেনেছি ওটার নাম হচ্ছে। লাটুবাবুর গ্যারাজ ও মোটর রিপেয়ারিং শপ। অবিশ্যি খোঁজটা দিয়েছিল নির্মলশিবের লোকই।
নির্মলশিবের লোক! মানে তুই তাহলে তাকে খোঁজ নিতে বলেছিলি?
অবশ্যই। যাক শোন, কিছু দূরপাল্লার মালবাহী লরির গ্যারাজও ঐ লাটুবাবুর গ্যারাজটা। কলকাতা টু পুরুলিয়া, কলকাতা টু হাজারীবাগ ইত্যাদি প্লাই করে। নির্মলশিবের সেই নিযুক্ত লোকটি বেশ বুদ্ধিমান। চোখ খুলেই সে সব দেখেছিল। এবং সে-ই আমাকে খবর দেয় উর্বশী সিগারেটের একটা ভ্যানও নাকি ঐ গ্যারাজেই থাকে।
উর্বশী সিগারেটের ভ্যানটার কথা তাহলে তুই আগে থাকতেই জানতিস?
না।
তবে?
তুই আসার ঘণ্টাখানেক আগে এখানে এসে সে আমাকে ঐ খবরটা দিয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, আরও একটা খবর সে দিয়ে গিয়েছে।
কি?
ঐ ভ্যানটি ছাড়া উর্বশী সিগারেটের অন্য কোন ভ্যানের নাকি অস্তিত্বই নেই। যাই হোক, তাই দেখতে গিয়েছিলাম ছাত থেকে উর্বশী সিগারেটের ভ্যানটা গ্যারাজে ফিরে এসেছে কিনা।
দেখতে পেলি?
পেয়েছি। কিন্তু আজ রাত অনেক হল, আর না। এবারে একটু ঘুমোবার চেষ্টা করা যাক।
সে রাত্রের মত আবার কিরীটী মুখ বন্ধ করল।
১৬-২০. তারপরের দিন ও রাত
তারপরের দিন ও রাত কিরীটী ঐ ঘরের মধ্যে স্রেফ চেয়ারে বসে পেসেন্স খেলেই কাটিয়ে দিল।
নির্বিকার নিশ্চিন্ত।
ভাবটা যেন—বিশেষ বিশ্রামের প্রয়োজন ছিল তাই বিশ্রাম নিচ্ছে।
সঙ্গে গোটাকয়েক নভেল এনেছিলাম, আমারও সেগুলো পড়ে সময় কাটতে লাগল।
তার পরের দিনটাও ঐ ভাবেই অতিবাহিত হল।
ক্রমে রাত্রি হল।
কোথায় কিরীটী খাবারের ব্যবস্থা করেছিল জানি না, একটা লোক নিয়মিত চা ও আহার্য সরবরাহ করে যাচ্ছিল।
সে রাতটাও ঐ ভাবেই কাটাতে হবে তখনও তাই মনে করেই শয্যায় আশ্রয় নিয়েছিলাম।
এবং বোধ করি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম একসময়।
হঠাৎ কিরীটীর হাতের স্পর্শে ঘুমটা ভেঙে গেল।
কি রে! ধড়ফড় করে উঠে বসি।
আয় আমার সঙ্গে। চাপা সতর্ক কণ্ঠে কিরীটী বলে।
কোথায়?
ওদিককার ঘরে।
কৌতূহলে কিরীটীর সঙ্গে গিয়ে সর্বশেষ ঘরটার মধ্যে প্রবেশ করলাম। ঘরটা অন্ধকার।
দেওয়ালে, দক্ষিণের দেওয়ালে কান পেতে শোন ত কিছু শুনতে পাস কিনা?
কান পাততেই স্পষ্ট নারীকণ্ঠ কানে এল দেওয়ালের ওপাশের ঘর থেকে।
পারব না, পারব না—আমি কিছুতেই পারব না।
পুরুষকণ্ঠে জবাব এল, পারতে হবেই তোমাকে।
না।
পারতে হবেই।
না, না–কি তোমার সে করেছে যে তাকে এইভাবে শেষ করতে চাও তুমি?
শেষ আমি করতাম না সীতা—
চমকে উঠলাম সীতা নামটা শুনে।
পুরুষকণ্ঠ তখনও বলছে, কিন্তু ঐ ইডিয়টটা যখন সব জেনে ফেলেছে একবার তখন ওকে সরে যেতেই হবে। পরশু এই সময় সে আসবে, তুমি তাকে শুধু গাড়িতে তুলে দেবে। তারপর যা করবার আমিই করব।
সত্যিই তাহলে তাকে তুমি প্রাণেই মারা স্থির করেছ?
একটু আগেই তো যা বলবার আমি বলেছি।
কিন্তু আমি সত্যিই বলছি, ওর দ্বারা তোমার কোন অনিষ্টই হবে না।
কিন্তু তোমারই বা তার জন্য এত মাথাব্যথা কেন?
মাথাব্যথা! না, না—
তাই তো দেখছি। না পুরনো প্রেমের ঘা-টা বুক থেকে তোমার এখনও শুকোয় নি?
পুরোনো প্রেম?
তাই তো মনে হচ্ছে, সম্পর্কচ্ছেদ করেও যেন তাকে ভুলতে পারনি আজও!
নারীকণ্ঠের কোনরূপ প্রতিবাদ আর শোনা গেল না।
যাক, আমি চললাম। যা বলে গেলাম ঠিক সেইভাবে যেন পরশু রাত্রে তুমি প্রস্তুত থাক।
.
একটু পরেই বারান্দায় পদশব্দ শোনা গেল। ঘরের বাইরের ঠিক সামনের বারান্দা দিয়ে কে যেন চলে গেল। আমরা দুজনে তখনও অন্ধকারে ঘরের মধ্যে দাঁড়িয়ে।
নারীকণ্ঠস্বরটি চিনতে না পারলেও নাম শুনেছি-সে সীতা মৈত্র! ওভারসিজ লিঙ্কের সেক্রেটারি দিদিমণি। কিন্তু পুরুষটি কে? কণ্ঠস্বরে চিনতে পারলাম না তাকে।
দুজনে আমাদের পূর্বের ঘরে আবার ফিরে এলাম।
ঘরে ফিরে এসে কিরীটী কিছুক্ষণ পায়চারিই করতে লাগল।
বুঝলাম পায়চারি করতে শুরু করেছে যখন-এখন ঘুমোবে না।
আমারও ঘুম চোখ থেকে পালিয়েছিল ইতিমধ্যে।
কিরীটী পায়চারি করতে লাগল আর আমি চেয়ারটায় গিয়ে বসলাম।
একসময় সহসা পায়চারি থামিয়ে কিরীটী আমার মুখের দিকে তাকাল, সুব্রত!
কি?
বর্ধমান গিয়েছিলাম কেন জানিস?
কেন?
একসময় মানে চাকরির শেষদিকে বছর দুই আগে আর্থার হ্যামিলটন বর্ধমান স্টেশনের এ. এস. এম. ছিল।
তাই নাকি!
হ্যাঁ। ওর অতীত সম্পর্কে খোঁজ করতে বলেছিলাম পুলিসকে। তারাই আমাকে সংবাদটা দিয়েছিল। দু বছর আগের ওর সার্ভিস রেকর্ড থেকে জানা যায় হ্যামিলটন কাজে ইস্তফা দেয়।
কেন?
কারণটা অবিশ্যি জানা যায়নি।কিন্তু সীতার সঙ্গে তখন ওররীতিমত নাকি সখ্যতাই ছিল।
তবে হঠাৎ গোলমালটা বাধল কেন?
সম্ভবত অতি লোভে।
অতি লোভে!
হ্যাঁ। তাঁতী নষ্ট হয়েছে অতি লোভেই। কিন্তু থাক সে কথা, আপাতত কাল সকালে তোকে একটা কাজ করতে হবে।
কি কাজ?
লাটুবাবুর গ্যারাজে!
তোকে একবার যেতে হবে।
লাটুবাবার গ্যারাজে!
হ্যাঁ।
কেন?
একটা সংবাদ তোকে যেমন করেই হোক যোগাড় করে আনতে হবে। লাটুবাবুর কারখানা ও গ্যারেজের বর্তমান মালিক কে?