একটা কথা বলব দাদা। একসময় সুদৰ্শন বলে।
কি?
আপনি তখন ওই কথাটা বললেন কেন?
কোন কথাটা ভায়া?
ব্যাপারটা বোধ হয় খুব জটিল নয়!
তোমার কাহিনী শুনে তো তাই মনে হচ্ছে। কিরীটী বললে।
আপনি কি সমীরণ দত্তকেই তাহলে সন্দেহ করেন?
প্রেমের গতি বড় বিচিত্র, ভায়া।
কিন্তু–
বিশেষ করে যে প্রেম সর্বগ্রাসী। সামান্য একটু এদিক-ওদিক হলেও হিংসা তার কুটিল। নখর বিস্তার করে।
কিন্তু দাদা–
তাছাড়া ঠিক-অন্ততঃ মণিশঙ্কর ঘোষালের কথা যদি মিথ্যা না হয়-সামীরণ দত্তর ভালবাসা না হলেও বিজিতার ওপরে একটা দুর্বলতা ছিল।
তা তো বোঝাই যায়। সুদর্শন বললে।
অবিশ্যি তোমাকে জানতে হবে কথাটা কতখানি সত্য এবং যদি সত্যিই হয়ে থাকে। তবে সেই দুর্বলতাটা কোন পর্যায় গিয়ে পৌঁছেছিল। তবে এও ঠিক জেনো ভায়া
কি?
সমীরণ হয়ত অত সহজে মুখ খুলবে না।
কেন?
প্রথমতঃ আর্টিস্টরা একটু টাচি হয়–দ্বিতীয়তঃ দুর্বলতা বা ভালবাসা থাকা সত্ত্বেও যে তার প্ৰেমাস্পদকে অন্যের হাতে তুলে দিতে পারে তাদের পেট থেকে কথা বের করা খুব সহজ হবে না।–
আর মণিশঙ্কর?
সন্দেহের তালিকা থেকে সেও বাদ পড়ে না।
কিন্তু ঐভাবে নিজের স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যা করাটা—
যদি সে হত্যা করেই থাকে তাহলে যখন সে হত্যা করেছিল জানবে সে তখন স্বামী বা বাপ ছিল না। একটু আগে যে বলছিলাম মানুষের উদ্দাম মনের তলে চিরন্তন পশুবৃত্তির কথাটা-তখন জেনো সেই পশুটাই মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল। কিন্তু সে তো আরো পরের • কথা। তারও আগে তোমায় জানতে হবে–
কি?
কালো অ্যামবাসাডারে করে বেলা বারোটা সোয়া বারোটায় কে এসেছিল ঐ ফ্ল্যাট বাড়িটায়। তাছাড়া মকবুল মিস্ত্রীর কথাগুলোর মধ্যে লক্ষ্য করেছ নিশ্চয়ই ঠিক তেমন একটা সামঞ্জস্য নেই!
সামঞ্জস্য নেই?
হ্যাঁ। সে কি বলেনি কালো অ্যামবাসাড়ার থেকে নামতে দেখেছে-হাতে সুটকেসএকজন ধুতি পাঞ্জাবি-পরা ভদ্রলোককে যিনি গাড়িটা ঐখানে রেখে ঐ ফ্ল্যাট বাড়িতে ঢোকেন—তার কিছুক্ষণ বাদে স্যুট-পরিহিত এক ভদ্রলোক ফ্ল্যাট বাড়ি থেকে বের হয়ে এসে গাড়িটা চালিয়ে চলে গেল।
সত্যিই তো। তখন তো আমার কথাটা ঠিক মনে হয়নি!
পোশাকের বিভিন্নতা বাদ দিলে কালো রংয়ের অ্যামব্যাসাডার গাড়ি—একজন ভদ্রলোক ও একটা সুটকেস ঠিকই আছে। এর থেকে একটা কথাও কি তোমার মনে হয়নি?
কি?
যে ব্যক্তি অ্যামব্যাসাডারে করে এসে ঐ ফ্ল্যাট বাড়িটায় ঢুকেছিল এবং যে ব্যক্তি ফ্ল্যাট বাড়ি থেকে একটু পরে বের হয়ে এসে আ্যামব্যাসাডারটা চালিয়ে চলে গিয়েছে তারা একই ব্যক্তি, না দুজন! তাছাড়া মিস্ত্রীর কথাটাও কতখানি সত্য তারও যাচাই হওয়া দরকার, ঐ ব্যক্তির আইডেনটিটি ও গাড়িটার
হ্যাঁ-খোঁজ নিচ্ছি। আমি।
আরো আছে।
কি?
ঐ ইঞ্জিনীয়ার গোপেন বসু ভদ্রলোকটি—যিনি থানায় ফোন করেছিলেন—যিনি ঐ বাড়িরই আর একটা ফ্ল্যাটে থাকেন—তাকে তো তোমরা কোন জিজ্ঞাসাবাদই করনি!
ভুল হয়ে গিয়েছে দাদা।
খুনের ব্যাপারে এত বড় ভুল মারাত্মক ভায়া। তোমার জানা উচিত ছিল। বারোটা থেকে একটা পর্যন্ত এক ঘণ্টা উনি কোথায় ছিলেন—কি করছিলেন। সিঁড়ি দিয়ে তিনি নামছিলেন না। উঠছিলেন, যখন মণিশঙ্কর ঘোষালের সঙ্গে তার দেখা হয় সিঁড়িতে—।
আমি কালই সকালে তার সঙ্গে দেখা করব।
হ্যাঁ, ভুলো না। আর একটা কথা—
বলুন? মকবুল বলেছে সে বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ শম্ভুকে দেখেছে বাজারের দিকে যেতে এবং তার হাতে ঐ সময় একটা সাদা খাম ছিল।
হ্যাঁ, বলেছিল।
তাকে সে সম্পর্কে তোমার জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলে ঠিকই, কিন্তু—
কি? শম্ভু যে সব সত্যি কথাই বলেছে তারই বা ঠিক কি!
তা অবিশ্যি ঠিক, তবে—শম্ভু তো এখন লক-আপেই আছে!…
বুদ্ধিমানের কাজই করেছ। তাকে লকআপেই রেখো। আরও আছে—
বলুন?
যে অস্ত্রের দ্বারা হত্যা করা হয়েছে সেটাও তোমরা ভাল করে খুঁজে দেখনি! হয়ত ওই ফ্ল্যাটের মধ্যেই কোথাও সেটা এখনও থাকতে পারে–
কাল সকালেই আর একবার ওখানে যাব।
ভাল কথা, বিজিতার আত্মীয়স্বজন কেউ আছে কিনা বাংলাদেশে সংবাদটা জানিবার চেষ্টা করনি?
না–
সেটাও অবিশ্যি প্রয়োজন।
করব।
কিরীটী মনোহরপুকুর রোডেই সুদর্শনকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল।
সামনে গিয়ে দাঁড়াল, কিন্তু দরজা বন্ধ।
দরজায় তালা দেওয়া।
সুদৰ্শন কি করবে ভাবছে এমন সময় একজন তরুণ সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে এল। সুদৰ্শনকে দেখে জিজ্ঞাসা করে, কাকে চান?
সমীরণবাবুর কাছে এসেছিলাম-কিন্তু দেখছি। দরজায় তালা দেওয়া—
উনি তো আজ বিকেলের প্লেনে ম্যাড্রাস গেলেন
ম্যাড্রাস?
হ্যাঁ-কি গানের রেকর্ডিংয়ের ব্যাপারে—
কখন গিয়েছেন?
তা ঠিক জানি না। আমি যখন বের হই, সোয়া তিনটে, তখনো তাকে দেখেছি। কখন গিয়েছেন তা ঠিক বলতে পারব না।
আপনার সঙ্গে সমীরণবাবুর পরিচয় আছে?
হ্যাঁ—আমি তো এই পাশের ফ্ল্যাটেই থাকি। তাছাড়া ওঁর কাছে আমি রবীন্দ্ৰ-সংগীতের লেশেন নিই–
ও, তাহলে তো আপনি তঁর বিশেষ পরিচিতই—
আপনাকে তো চিনতে পারছি না, কখনো ওঁর কাছে আসতে তো দেখিনি।
না। আমি, মানে, কলকাতার বাইরে থাকি কিনা—
তাই—তা কি ব্যাপার বলুন তো? কোন কনফারেন্স নাকি?
সুদৰ্শন হাসে। বলে, না, অন্য একটু কাজ ছিল। তা উনি কবে আসবেন তা জানেন কিছু?
দিন পাঁচ-সাত দেরি হতে পারে।
আপনার নামটা কি জিজ্ঞেস করতে পারি?
দেবজ্যোতি আচার্য-তা সমীরণদা আসলে কি বলব? আপনার নাম, কোথা থেকে-, কিন্তু দেবজ্যোতির কথা শেষ হল না, সিঁড়িতে পায়ের শব্দ শুনে দুজনেই নীচের দিকে ঘুরে তাকায়।