চাবিটা বুঝি আপনার প্যান্টের পকেটেই ছিল?
হ্যাঁ-মানে ওটা—আলমারির একটা ড়ুপ্লিকেট চাবি আমার কাছে থাকত।
ড়ুপ্লিকেট কেন?
বিজির বড় ভুলো মন ছিল—কোথায় কি রাখত সব সময় মনে করতে পারত না, তাই তারই ব্যবস্থামত একটা চাবি আমার কাছে বরাবর থাকত।
ওতে বাইরের দরজার চাবিও আছে বোধ হয়?
হ্যাঁ—দরজায় গডরেজের লকের চাবি, একটা আমার কাছে থাকত একটা বিজির কাছে থাকত।
দেখলেন?
কি!
আলমারির ভিতর থেকে কিছু চুরি গেছে কিনা?
না-এখনো দেখিনি, দেখছি—
মণিশঙ্কর কথাটা বলে আলমারির ভিতরে সব কিছু নেড়েচেড়ে দেখতে লাগল। সুদৰ্শন আর রবীন দত্ত দরজার গোড়ায় দাঁড়িয়ে রইলো।
মিনিট দশ-পনের পরে মণিশঙ্কর ওদের দিকে তাকিয়ে বলল, বুঝতে পারছি না। মিঃ দত্ত—কিছু চুরি গিয়েছে কিনা। মানে আমি তো ঠিক জানতাম না কোথায় কি আছে— সব কিছুই তো আমার স্ত্রীই রাখত—
সুদৰ্শন বললে, গহনাপত্র-টাকাকড়ি—সব ঠিক আছে—
গহনাপত্র যা ওর গায়ে দেখছেন, এছাড়া তো আর বিশেষ কিছু ছিল না। আর টাকাপয়সা তো ব্যাঙ্কেই রাখা হয়।
ও। তাহলে–
তাই তো বলছিলাম, ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে মনে হচ্ছে কিছুই হয়তো চুরি যায়নি। দেখুন তো—বালিশের তলায় বা ড্রয়ারে অন্য চাবিটা আছে কিনা! সুদৰ্শন আবার বললে।
মণিশঙ্কর অতঃপর সুদর্শনের কথামত ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারগুলো ও শয্যার কাছে গিয়ে বালিশের তলা হাতড়ে দেখলো কিন্তু কোথাও কোন দ্বিতীয় চাবির রিং পাওয়া গেল না।
কি হল-পাওয়া গেল না? দত্ত জিজ্ঞাসা করল।
না। দেখছি না তো—
গেল কোথায় তবে চাবির রিংটা যেটা আপনার স্ত্রীর কাছে থাকত?
বুঝতে পারছি না। হয়তো—
কি? যারা এসেছিল চুরি করতে তারাই নিয়ে গিয়েছে—তাড়াতাড়িতে কিছু নিতে পারেনি—
তাই হয়তো হবে—সুদৰ্শন মৃদু গলায় বললে।
একসময় সুদৰ্শন বিদায় নেবার জন্য প্রস্তুত হল। সুটকেসটা হাতে নিয়ে দরজার দিকে এগুতে যাবে, তখন সুদৰ্শন বললে, চলুন মিঃ ঘোষাল, আমিই আমার জীপে আপনাকে পৌঁছে দেব।
আপনি দেবেন?
হ্যাঁ চলুন—তাহলে রবীন আমরা চলি—তুমি এদিককার ব্যবস্থা করে তারপর যেও–
তাই যাব স্যার–
সুদৰ্শন নিজের জীপে মণিশঙ্করকে কালীঘাট রোডে কালিকা বোর্ডিং হাউসে পৌঁছে দিয়ে লালবাজারে ফিরে এল।
লালবাজারে পৌঁছে দুজন প্লেন-ড্রেস সি. আই. ডির কর্মচারী সলিল ও সন্তোষকে ডেকে কিছু উপদেশ দিয়ে রবীনকে থানায় ফোন করল।
রবীন তখনো ফেরেনি জানতে পারল।
সেকেন্ড অফিসার ফোন ধরেছিল, সে শুধাল, মিঃ দত্ত এলে আপনাকে কি ফোন করতে
বলব স্যার?
হ্যাঁ, বলবেন।
ঠিক আছে স্যার—
সুদৰ্শন ফোনটা রেখে দিল।
ইতিমধ্যে বাইরে সন্ধ্যার অন্ধকার ঘন হয়ে এসেছে। পথে পথে আলো জ্বলে উঠছে।
একটা সিগারেট প্যাকেট থেকে বের করে সেটায় অগ্নিসংযোগ করে সুদর্শন।
সমীরণ দত্ত।
নামকরা রবীন্দ্ৰ-সংগীতশিল্পী। মণিশঙ্কর ও বিজিতার সঙ্গে বহুদিনকার আলাপ সমীরণ দত্তর।
থাকে বালিগঞ্জে, মণিশঙ্কর বলছিল।
একটিবার সমীরণ দত্তর সঙ্গে দেখা করে কথা বলা দরকার। কিন্তু তার ঠিকানা জানে না। সুদৰ্শন।
কোথায় পাওয়া যেতে পারে সমীরণ দত্তর ঠিকানাটা?
হঠাৎ মনে পড়লো সমীরণ দত্ত একজন রেকর্ড ও রেডিওর নামকরা আর্টিস্ট-রেডিও অফিস থেকেই তো তার ঠিকানাটা পাওয়া যেতে পারে।
কথাটা মনে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সুদৰ্শন লালবাজার থেকে রেডিও অফিসে নিজের পরিচয় দিয়ে ফোন করল।
স্টেশন-ডাইরেক্টর আছেন?
না-অ্যাসিস্টেন্ট স্টেশন-ডাইরেক্টর বোধ হয় আছেন।
তাঁকেই দিন ফোনটা।
সমীরণ দত্তর ঠিকানাটা পাওয়া গেল।
মনোহরপুকুর রোডে থাকে সমীরণ—তিনতলা একটা ফ্ল্যাট বাড়ির তিনতলার ফ্ল্যাটে। ফোনও সেখানে আছে, কিন্তু অনেকক্ষণ ফোনে রিং হল, কেউ ধরলে না।
হতাশ হয়েই একসময় সুদৰ্শন ফোনটা রেখে দিল।
০৪. একবার বাসায় যেতে হবে
আপাততঃ একবার বাসায় যেতে হবে—সেই সকাল সাড়ে সাতটায় বের হয়েছে, এখন রাত প্রায় পৌনে আটটা—একবার না ঘুরে আসলে সাবিত্রীর সঙ্গে অলিখিত চুক্তিটা ভঙ্গ হবে।
বিয়ের কিছুদিন পরেই সাবিত্রীর সঙ্গে সুদর্শনের অলিখিত চুক্তি হয়েছিল সকালে কাজে বেরুলে যেমন করেই হোক সময় করে সুদৰ্শনকে একবার মাঝখানে দেখা দিয়ে আসতেই হবে সন্ধ্যার আগে যদি ফেরা না সম্ভব হয়। [সুদর্শনের প্রথম কাহিনী পাওয়া যাবে ‘প্রজাপতি রঙ’ বইতে—লেখক।]
একবার সমীরণ দত্তর ওখানে যেতে হবে, কিন্তু তার আগে একবার যেতে হবে বাসায়। বাসা অবিশ্যি বেশী দূর নয়-শিয়ালদার কাছে—হ্যারিসন রোডের কাছাকাছি।
সুদৰ্শন বের হয়ে পড়ল।
জীপচালক সেপাই শুধায়, কোন দিকে যাব স্যার?
মোহন, একবার বাসায় চল তো-সেখান থেকে বালিগঞ্জ যাব।
বাসাটা একেবারে ঠিক বড় রাস্তার উপরে নয়, গলির ভিতর ঢুকতে হয়। তবে দক্ষিণ আর পুব দিকটা খোলা।
বাড়িটা নতুন।
দোতলার উপরে তিনখানা ঘর। হঠাৎ পেয়ে গিয়েছিল বাসাটা সুদৰ্শন।
বিয়ের পরে একটা ফ্ল্যাট খুঁজছে কলকাতা শহরে সর্বত্র যখন, তখনই এক অফিসার বন্ধু বাসাটার কথা সুদৰ্শনকে বলে। সেই অফিসারেরই মামাশ্বশুরের বাড়ি।
সুদৰ্শন একটু অন্যমনস্কই ছিল। নচেৎ জীপ থেকে শেষ গলিতে ঢুকবার মুখে কিরীটীর নতুন কালো রংয়ের ফিয়াটটা নজরে পড়ত।
বড় গাড়ি বিক্ৰী করে দিয়ে কিরীটী কিছুদিন হল ফিয়াট কিনেছে। অসুবিধা হয়েছে–ড্রাইভার হীরা সিংয়ের।
লম্বা মানুষ-চালাতে কষ্ট হয়।
তবে হীরা সিং মুখে কিছু বলেনি।