সুশীল চক্রবর্তী এগিয়ে বললেন, আপনি বোধ হয় সুরজিৎ ঘোষাল?
-হ্যাঁ। ফোনে বলেছিলেন কে যেন খুন হয়েছে। রাতিমত উৎকণ্ঠা ঝরে পড়ল সুরজিৎ ঘোষালের কণ্ঠে।
—হ্যাঁ, ওপরে চলুন মিঃ ঘোষাল। আসুন।
সুশীল চক্রবর্তীর পিছনে পিছনে ওপরে উঠে মালঞ্চর শয়নকক্ষে ঢুকে থমকে দাঁড়ালেন সুরজিৎ ঘোষাল, এ কি! মালা নেই!
–না মিঃ ঘোষাল, she is dead.
—সত্যি সত্যিই মৃত?
–হ্যাঁ ঐ দেখুন, গলায় রুমাল পেঁচিয়ে ওঁকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে।
–হত্যা করা হয়েছে!
–হ্যাঁ।
—কে–কে হত্যা করল?
—সেটা এখনো জানা যায়নি?
-মালঞ্চকে হত্যা করা হয়েছে! সুরজিৎ ঘোেষাল যেন কেমন বিমূঢ় অসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকেন মালঞ্চর মৃতদেহটার দিকে।
—মিঃ ঘোষাল।
সুশীল চক্রবর্তীর ডাকে কেমন যেন বোবাদৃষ্টিতে সুরজিৎ তাকালেন তার মুখের দিকে।
—এ বাড়িটা কার? সুশীল চক্রবর্তীর প্রশ্ন।
–এই বাড়িটা—এটা—
—কার এ বাড়িটা? এ বাড়ির মালিক কে?
–ঐ মালঞ্চ।
—কিন্তু আপনিই এ বাড়িটা কিনে দিয়েছিলেন ঐ মালঞ্চ মল্লিককে, তাই নয় কি?
–কে বলল আপনাকে?
—আমি জেনেছি।
সুরজিৎ ঘোষাল বোবা।
—আর উনি আপনার keeping-য়ে ছিলেন, এটা কি সত্যি?
–হ্যাঁ-সুরজিৎ ঘোষাল কুণ্ঠার সঙ্গে মাথা নীচু করে বললেন।
—কত বছর উনি আপনার কাছে ছিলেন? সুশীল চক্রবর্তীর আবার প্রশ্ন।
—তা বোধ হয় বছর সাতেক হবে।
–Quite a long period, তা কখনও মনোমালিন্য বা ঝগড়া-টগড়া হয়নি। আপনাদের দুজনের মধ্যে?
—ঝগড়া? না। তবে ইদানীং কিছুদিন ধরে আমি ওর ওপরে অত্যন্ত বিরক্ত হয়েছিলাম। She was playing double role with me!
অন্য কোন পুরুষ?
—হ্যাঁ!
–কি নাম তার?
–দীপ্তেন ভৌমিক?
—তিনি বুঝি এখানে যাতায়াত করতেন?
—হুঁ এবং আমার অগোচরে।
—কথাটা কি করে জানতে পারলেন—if you dont mind মিঃ ঘোষাল!
–Somehow firt I smelt it. আমার কেমন সন্দেহ হয়–বুঝতেই পারছেন। I became alert—এবং ক্রমশ সবই জানতে পারি একটু একটু করে।
—আচ্ছা ঐ যে দীপ্তেন ভৌমিক, তিনি কি করেন, কোথায় থাকেন জানেন নিশ্চয়ই?
—হ্যাঁ, শুনেছিলাম তিনি বালিগঞ্জেই লেক রোডে থাকেন। বিলেত থেকে ম্যানেজমেন্ট কি সব পাস করে এসে বছর তিনেক হল একটা ফার্মে কাজ করছেন। মোটা মাইনে পান।
—তা দীপ্তেনবাবুর সঙ্গে মালঞ্চদেবীর আলাপ হল কী করে?
–বলতে পারেন আমারই নির্বুদ্ধিতায়।
–কি রকম?
—গত বছর আমরা পুরী বেড়াতে যাই, সেখানেই আলাপ।
–তার বাড়ির ঠিকানাটা জানেন?
—জানি।
সুরজিৎ ঘোষালের কাছ থেকে ঠিকানাটা শুনে সুশীল চক্রবর্তী লিখে নিলেন তার নোটবইয়ে।
–আচ্ছা মিঃ ঘোষাল, তিনি কি ভাড়াটে বাড়িতে থাকেন?
–না, ওটা একটা মাটি-স্টোরিড বিলডিংয়ের চারতলার ফ্ল্যাট, মনে হয় ফ্ল্যাটটা তিনি কিনেছেন।
বিক্রম সিং ঐ সময় একটা কাগজে করে কতকগুলো মুক্তো এনে সুশীল চক্রবর্তীর হাতে দিয়ে বলল, স্যার, ঘরের মধ্যে এই পঞ্চাশটা মুক্তো পাওয়া গিয়েছে। আর এই ছেড়া সিল্কের সুতোটা।
সুশীল চক্রবর্তী কাগজটা সবসমেত মুড়িয়ে পকেটে রেখে বললেন, আপনি কাল এখানে এসেছিলেন, মিঃ ঘোষাল?
—এসেছিলাম।
—কখন?
–রাত্রি সোয়া আটটা নাগাদ।
–তারপর কখন চলে যান?
–আধঘণ্টা পরেই।
—অত তাড়াতাড়ি চলে গেলেন যে?
–কাজ ছিল একটা।
—আচ্ছা মালঞ্চদেবীর স্বামী তো এই বাড়িতেই থাকেন। আপনি কোন আপত্তি করেননি?
—না।
—আপনার সঙ্গে তার পরিচয় আছে?
–থাকবে না কেন–
—লোকটিকে কি রকম মনে হয়?
–Most non-interfering, শান্তশিষ্ট টাইপের মানুষ।
–Naturally!
—আমি কি এখন যেতে পারি মিঃ চক্রবর্তী?
—হ্যাঁ পারেন, তবে আপনাকে আমার হয়তো পরে দরকার হতে পারে।
—সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার পর ফোন করলেই আপনি আমাকে বাড়িতে পাবেন। সুরজিৎ ঘোষালকে বিদায় দিয়ে রতনকে আবার ডাকলেন সুশীল চক্রবর্তী। প্রশ্ন করলেন—তোমার নাম রতন–কি?
–আজ্ঞে রতন সাঁপুই।
–তোমার দেশ কোথায়?
—মেদিনীপুর জেলায় আজ্ঞে—-পাঁশকুড়ায়।
–আচ্ছা রতন, ঐ সুরজিৎবাবু ছাড়া অন্য একজন বাবুও এখানে আসতেন, তাই?
–আজ্ঞে হ্যাঁ, দীপ্তেনবাবু।
–কাল রাত্রে দীপ্তেনবাবু এসেছিলেন?
—হ্যাঁ, সন্ধ্যার মুখেই এসেছিলেন।
—কখন চলে গেলেন?
—আজ্ঞে কখন গিয়েছিলেন বলতে পারব না—তাকে আমি যেতে দেখিনি।
—হুঁ। আচ্ছা দীপ্তেনবাবু থাকতে থাকতেই কি সুরজিৎবাবু এসেছিলেন?
-হ্যাঁ।
—তাহলে তো দুজনে খাও হতে পারে—
—বলতে পারব না আজ্ঞে দেখা হয়েছিল কিনা—
—হুঁ। কাল কত রাত পর্যন্ত তুমি জেগে ছিলে?
—আজ্ঞে মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছিল, তাই সদরে তালা দিয়ে দশটা নাগাদ শুয়ে পড়েছিলাম। তারপরই ঘুমিয়ে পড়েছি।
–আজ সকালে কখন ঘুম ভাঙল?
–ভোর ছটা সাড়ে ছটায় মা চা খেতেন এবং মার হাতমুখ ধোয়া হয়ে গেলেই রান্নাঘরের বেলটা বেজে উঠত, তখন মানদা চা নিয়ে ওপরে যেত।
–এ বাড়িতে রান্নাবান্না কে করে, তুমি না মানদা?
—আজ্ঞে আমিই।
–তারপর বল–
–সাতটা বেজে যেতেও যখন বেল বাজল না তখন মানদা চা নিয়ে ওপরে যায়, তারপর তো যা ঘটেছে আপনি সব শুনেছেন।
—হুঁ। তোমার মাইনে কত–কত পেতে এখানে?
–আজ্ঞে একশো টাকা, তাছাড়া দু-তিন মাস পর পর জামাকাপড় পেতাম, মাঝেমধ্যে বকশিসও—
দীপ্তেনবাবু যে এখানে যাতায়াত করতেন সে কথাটা তুমিই বোধ হয় সুরজিৎবাবুকে জানিয়েছিলে?
ছিঃ বাবু, চুকলি কাটা আমার অভ্যাস নয়—এ ঐ মানদার কাজ। ঐ মানদাই বলেছে, বুঝলেন বাবু, নচেৎ সুরজিৎবাবু জানলেন কি করে, আর তাইতেই তো এই বিভ্রাট হল।